এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। ছংতু ইতিহাসের সাক্ষী খুয়ানচাই অ্যালী
২। ৬ দশক ধরে আধুনিক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে ম্যান্ডারিন হোটেল
৩। থিয়ানচিন কালচারাল স্ট্রিট
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ২২তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। ছংতু ইতিহাসের সাক্ষী খুয়ানচাই অ্যালী
সিচুয়ান প্রদেশের ছংতু শহরের কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত খুয়ানচাই অ্যালী। শহরের তিনটি প্রধান ঐতিহাসিক ব্লকের মধ্যে একটি এটি। একটি ল্যান্ডমার্ক সাংস্কৃতিক ল্যান্ডস্কেপ হিসাবে এর রয়েছে ৩০০ বছরেরও বেশি ইতিহাস।
খুয়ানচাই অ্যালী ১৭১৮ সালে ছিং রাজবংশের সম্রাট খাংসি (১৬৪৪-১৯১১) তিচুঙ্গার বাহিনীর বিদ্রোহের পর ছংতুকে রক্ষা করার জন্য সৈন্য প্রেরণ করেছিলেন। সৈন্যদের থাকার জন্য করেছিলেন বিশেষ ব্যবস্থা। এভাবে হুথং বা গলিপথের একটি সিরিজ তৈরি হয়েছিল। ৩০০ বছরেরও বেশি সময় পরে, খুয়ানচাই অ্যালী, চাই অ্যালি এবং চিং অ্যালি নামে মাত্র তিনটি গলিপথ অবশিষ্ট ছিল।
তিনটি সমান্তরাল গলিপথ ২০০৫ সালে সংস্কার করা হয়। এরপর দূর-দূরান্ত থেকে পর্যটকদের কাছে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে থাকে। তাই ২০০৮ সালে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়।
খুয়ানচাই অ্যালীতে এই অঞ্চলে সবচেয়ে বেশি ছিং রাজবংশের সময়কার ভবন রয়েছে। যেখানে ২০টিরও বেশি ভালভাবে সংরক্ষিত করা হয়েছে। সেসব বাড়ির রয়েছে আলাদা আলাদা উঠোন। যা পর্যটকদের জন্য সবচেয়ে জনপ্রিয় স্থান।
চাই গলিতে ছিং রাজবংশ এবং পশ্চিমা ধাঁচের ভবন উভয়েরই নজর কাড়ে দর্শনার্থীদের। এখানে ঘুরতে আসা পর্্যটক পশ্চিমা খাবারের রেস্তোরাঁ, ক্যাফে তে যেতে। উপভোগ করতে পারে মজাদার সব খাবার। যারা স্ন্যাকস ও স্থানীয় লোক সংস্কৃতির অভিজ্ঞতা নিতে চান তাদের জন্য উপযুক্ত পর্্যটন গন্তব্য হচ্ছে এই চিং অ্যালি ।
বছরের পর বছর ধরে, খুয়ানচাই অ্যালি এখন ছংতুর অন্যতম পর্্যটন গন্ত্যব্য। প্রতি বছরই প্রচুর দর্শক আসে এইখানে। ২০২২ সালে ঐতিহাসিক ব্লকটি চীনের একটি জাতীয় পর্যায়ের পর্যটন রাস্তা হিসাবে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরে নতুন উন্নয়ন গতি অর্জন করেছে স্থানটি।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
২। ৬ দশক ধরে আধুনিক সুবিধা দিয়ে যাচ্ছে ম্যান্ডারিন হোটেল
৬০ বছরে পা দিয়েছে হংকংয়ের বিখ্যাত ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হোটেল। চীনা নববর্ষের সময় হোটেলের পূর্ব দিকের লবিতে ম্যান্ডারিন উন্মোচনের মাধ্যমে শুরু হয় ৬ দশক পূর্তি উদযাপন।
হোটেলের কর্তৃপক্ষের ভাষ্যমতে, ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে হোটেলটি ক্লাব রুমে টানা দুই রাত থাকার বিশেষ অফার দিয়েছে। অফাওরটি আগামী ৩১ অক্টোবর পর্যন্ত চলবে।
ম্যান্ডারিন ওরিয়েন্টাল হংকংয়ের জেনারেল ম্যানেজার আমান্ডা হিন্ডম্যান বলেন এই বছর ম্যান্ডারিন হোটলের ৬০তম বার্ষিকী হংকংয়ে উদযাপন করতে পেরে তিনি খুবই আনন্দিত।
আমি বলতে চাই আপনার প্রিয় শহরটিকে পুনরায় ঘুড়ে দেখার জন্য এর চেয়ে ভাল সময় আর হয় না। পুরো বিশ্ব থেকে অতিথিদের আপ্যায়নের জন্য আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি। আমরা আশা করছি আমাদের বর্ষব্যাপী উদযাপনে আপনারাও সামিল হবেন।
বিগত বছরগুলোতে অতিথিদের কাছে ম্যান্ডারিন হোটেল বিশেষ আকর্ষণের জায়গা হয়ে উঠেছে কারণ এখানে রয়েছে নয়টি স্বতন্ত্র রেস্টুরেন্ট এবং বার, যেখানে খাবার তৈরি করেন আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত শেফরা।
দীর্ঘসময় ধরে পছন্দের খাবারের জায়গা হিসেবে হংকংয়ে বিখ্যাত ম্যান্ডারিন গ্রিল ও বার। এই রেস্টুরেন্ট মিশেলিন স্টার পেয়েছে ২০০৯ সালে।
উদযাপনের অংশ হিসেবে তিনজন নামকরা শেফ, এন্টোনিও গুইডা, এলাইন রৌক্স ও ডেইনিওল প্রিটচার্ডকে হোটেলটিতে আমন্ত্রণ জানানো হয় তাদের ব্যতিক্রমী খাবার পরিবেশনার জন্য।
আরো একটি বহুল প্রতীক্ষিত আয়োজন ৬০তম বার্ষিকী গালা উদযাপিত হতে যাচ্ছে চলতি বছরের অক্টোবরে।
হোটেলটির একজন এক্সেকিউটিভ বলেন ৬০তম বার্ষিকী উপলক্ষ্যে ‘হংকং কে ফিরিয়ে দেওয়া’ মূলক জনহিতকর প্রচারণা শুরু করেছে এবং স্থানীয় চ্যারিটিগুলোর সাথে অংশীদারিত্বে সামিল হয়েছে।
হোটেল কর্তৃপক্ষের জানায়, হোটেলের কর্মীরা প্রচারণার শুরু থেকে প্রায় ৫ হাজার ঘন্টা কমিউনিটি পরিষেবা প্রদান করেছে এবং ৬০তম বার্ষিকী উদযাপনে আরও ১৭ হাজার ঘন্টা পরিষেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।
প্রতিবেদন- আব্দুল্লাহ আল মামুন
সম্পাদনা- আফরিন মিম
৩। থিয়ানচিন কালচারাল স্ট্রিট
উত্তরচীনের একটি বিখ্যাত বন্দর নগরী হলো থিয়ানচিন। এই শহরেই রয়েছে বিখ্যাত পর্যটন কেন্দ্র কালচারাল স্ট্রিট। বিশাল এক এলাকা নিয়ে কালচারাল স্ট্রিট গড়ে তোলা হয়েছে শুধুমাত্র পর্যটকদের মনোরঞ্জনের জন্য।
কালচারাল স্ট্রিট হলো আঁকাবাকা গলি। রাস্তার দু’পাশে ছোট ছোট দোকান। এগুলো চীনের মধ্যযুগের স্থাপত্যরীতিতে নতুনভাবে নির্মিত। দেখলে মনে হয় হঠাৎ যেন অষ্টাদশ শতকের চীনে চলে এসেছি। বিভিন্ন দোকানে বিক্রি হচ্ছে চীনা হস্তশিল্পজাত সামগ্রী। চীনা পোর্সেলিনের তৈরি চায়ের কাপ, কেতলি, ফুলদানি, প্লেটসহ নানা রকম শোপিস পাওয়া যায় এখানে। আরও রয়েছে চীনের ঐতিহ্যবাহী পোশাক, তামা ও পিতলের সামগ্রী। প্রত্যেকটি সামগ্রীই দৃষ্টিনন্দন।
তিব্বতি হস্তশিল্পের দোকানও রয়েছে। তিব্বতি হস্তশিল্পের একটি দোকানের সামনে আস্ত এক চমরী গাইয়ের পুতুল। দেখলে মনে হয় যেন জীবন্ত। আরও আছে তিব্বতি সংস্কৃতির প্রতীক বিভিন্ন পুতুল। কোনো কোনো দোকানে বাজছে তিব্বতি মহামন্ত্র ‘ওম মনি পদ্মে হুম’।
ইনার মঙ্গোলিয়ার ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির পরিচয়বাহী বেশ কিছু দোকান রয়েছে। আরও আছে উইগুর, তাজিক ও হুই জাতির সংস্কৃতির পরিচয়বাহী দোকান। মিয়াও জাতির ঐতিহ্যবাহী অলংকারও পাওয়া যায় এখানে।
চীনা সংস্কৃতির গুরুত্বপূর্ণ অংশ সিল্কের উপর পেইন্টিং, ক্যালিগ্রাফি, ইংক পেইন্টিং, বাঁশের ও কাগজের পাখা, ছবি আঁকা ছাতা ইত্যাদি আছে। কত যে শিল্পসামগ্রী তা দেখে শেষ করা যায় না। দোকানের সাজসজ্জা, গলির দু’পাশে বাড়িঘরের চেহারা ফিরিয়ে নিয়ে যায় মধ্যযুগের চীনে। অথচ এর সবটাই তৈরি করা হয়েছে আধুনিক প্রযুক্তির বলে। ভবনগুলো চীনা ঐতিহ্যবাহী স্থাপত্যরীতিতে তৈরি। এলাকার প্রবেশপথে রয়েছে চীনা রীতিতে তৈরি তোরণ।
চীনের ঐতিহ্যবাহী খাবার দাবারও বিক্রি হচ্ছে দেদার। এখানে চীনের ঐতিহ্যবাহী হটপট বা হুয়োকুয়ো, বেইজিং ডাক, সিনচিয়াংয়ের বিশেষ রুটি ও কাবাব, থিয়ানচিনের বিশেষ ঐতিহ্যবাহী ডাম্পলিং থেকে শুরু করে নানা রকম খাদ্য পাওয়া যায় যা পর্যটকরা দারুণ উপভোগ করেন।
কালচারাল স্ট্রিট পুরো এলাকাটি হেঁটে বেড়ানোর জন্য। এখানে গাড়ি ঢোকা নিষেধ। তবে চীনের বিগত যুগের সাইকেল রিক্সা রয়েছে। অনেক পর্যটক রিক্সায় চড়েও ঘুরতে পারেন। এই রিক্সাগুলোও আগের যুগের মতো করে সাজানো।
কালচারাল স্ট্রিটে প্রায়ই বিকেলবেলা বিভিন্ন রকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন থাকে। পুরো এলাকায় প্রবেশের জন্য কোন টিকেট কাটতে হয় না।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী