বিজ্ঞানবিশ্ব-পর্ব ২২
2023-06-12 14:25:27

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

২২তম পর্বে যা থাকছে:

* ফাইভ-জির হাত ধরে নতুন সম্ভাবনার পথে হাঁটছে চীন

* ধানের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটাচ্ছে ড্রোন!

* বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভূমিকম্পের পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে চীন

 

ফাইভ-জির হাত ধরে নতুন সম্ভাবনার পথে হাঁটছে চীন

সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত বার্ষিক আন্তর্জাতিক পোস্টাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রদর্শনীতে সবার বিশেষ নজর ছিলো উন্নত মানের ফাইভ-জি প্রযুক্তিপণ্যের ওপর। চীনের গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সব খাতেই এখন ব্যবহার করা হচ্ছে ফাইভ-জি প্রযুক্তি। প্রযুক্তি বিশ্লেষকদের মতে, ফাইভ-জি প্রযুক্তি চীনের সংযোগ ও যোগাযোগ পদ্ধতিতে বিপ্লব ঘটিয়েছে। লজিস্টিকে দক্ষতা বাড়ানো কিংবা লাইভ স্ট্রিমিং খাতের মতো সম্ভাবনাময় খাতের পেছনে চালিকাশক্তি হিসেবে কাজ করেছে ফাইভ-জি প্রযুক্তি।

ফাইভ-জি প্রযুক্তি আত্মপ্রকাশের ৪ বছরের মাথায় চীনজুড়ে ছড়িয়ে পড়েছে এর ব্যবহার। চীনের বার্ষিক আন্তর্জাতিক পোস্টাল ও টেলিকমিউনিকেশন প্রদর্শনীতে বিশ্লেষকরা তুলে ধরেছেন কীভাবে ফাইভ-জি প্রযুক্তি দৈনন্দিন জীবন সহজ করা থেকে শুরু করে বাণিজ্যিক খাতগুলোতে ইতিবাচক পরিবর্তন নিয়ে আসতে পারে।

প্রদর্শনীতে হুয়াইয়ের ওয়্যারলেস নেটওয়ার্ক মার্কেটিংইয়ের ভাইস-প্রেসিডেন্ট চু সিয়াওথান দেখিয়েছেন কীভাবে দ্রুতগতি সম্পন্ন ফাইভ-জি ইন্টারনেট লজিস্টিকস খাতে দক্ষতা বৃদ্ধি করতে এবং লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে বিক্রি বাড়িয়ে দিতে পারে।

চু বলেন, “ডিজিটাল বিশ্ব যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে তাতে বলাই যায়, অদূর ভবিষ্যতে একে অপরের সাথে সবাই ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের মাধ্যমে যুক্ত থাকবে। সেটা হতে পারে ডিভাইসের সাথে ডিভাইস, মানুষের সাথে মানুষ, গাড়ির সাথে গাড়ি। মানে এক কথায় সব কিছুই। সেলুলার আইওটি সংযোগের প্রসার ডিজিটাল বিশ্বের সাথে ভৌত জগতের সংযোগ স্থাপনের প্রধান ভিত্তি। তাই এক কথায়, বুদ্ধিমত্তা হলো ডিজিটাল বিশ্বের মস্তিষ্ক এবং ফাইভ-জি হলো তার দেহ ও নার্ভ সিস্টেম।”

চু আরো বলেন, ফাইভ-জি প্রযুক্তির উন্নত সংস্করণ হলো ফাইভ-জি এডভান্স।

তিনি বলেন, “ফাইভ-জি এডভান্স নেটওয়ার্কে প্রতি সেকেন্ডে ১০ গিগাবাইট ডাটা ডাউনলোড করা যাবে এবং আপলোড স্পিড পাওয়া যাবে প্রতি সেকেন্ডে ১ গিগাবাইট করে। এমনকি ১০০ বিলিয়ন সংযোগে একযোগে এই গতি  দেবার সক্ষমতা রাখে ফাইভ-জি এডভান্স। বর্তমানে পুরো ইন্ডাস্ট্রিই চেষ্টা করছে ফাইভ-জি এডভান্সে যেতে। পরিকল্পনা বলছে, আগামী বছরের বসন্তে প্রথম ফাইভ-জি এডভান্স স্ট্যান্ডার্ডের পণ্য বাজারে আসবে।”

চায়না টেলিকমের আনম্যানড টেকনোলজি ইনোভেশন সেন্টারের উপ-মহাব্যবস্থাপক লিউ চিং ই বলেন, চায়না টেলিকমও একই লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “চীনা মোবাইল কমিউনিকেশন প্রযুক্তি অনেকদূর এগিয়ে গেছে। থ্রি-জি ও ফোর-জি’র পর এখন ফাইভ-জি প্রযুক্তির মাধ্যমে নতুন সম্ভাবনার দিকে এগুচ্ছে চীন। এই অগ্রগতি থেকে আমরা বুঝতে পারি আমাদের মোবাইল যোগাযোগ নেটওয়ার্ক খাতে প্রযুক্তি ও পরিষেবার ব্যাপক উন্নতি সাধিত হয়েছে।”

বাজার সংশ্লিষ্টদের মতে, ফাইভ-জি প্রযুক্তি তার আত্মপ্রকাশের চার বছর পরেও সমান গতিতে সামনে এগিয়ে যাচ্ছে এবং কাজের প্রতিটি দিককে সংযুক্ত করে জীবনকে আরো সহজ করে চলেছে।

ফাইভ-জির হাত ধরে নতুন সম্ভাবনার জন্য চীনের অন্বেষণ এখানেই শেষ হয়ে যাচ্ছে না। ক্রমাগত নতুন নতুন ধারণা নিয়ে কাজ করছেন গবেষকরা। তারা আশাবাদী ফাইভ-জি নেটওয়ার্কের সাথে নতুন প্রযুক্তিপণ্যের মিশেলে তারা সামনে আরো নির্ঝঞ্জাট ও গতিশীল জীবন উপহার দিতে পারবেন জনসাধারণকে।  

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

ধানের ক্ষেতে কীটনাশক ছিটাচ্ছে ড্রোন

 

চীনে কৃষিপ্রযুক্তি ব্যবহারের কথা আসলেই চলে আসে ড্রোনের কথা। কেননা আধুনিক পদ্ধতিতে ড্রোন ব্যবহার করে জমিতে বীজ বপন থেকে শুরু করে সার প্রয়োগ ও কীটনাশক ছিটানোর চিত্র দেখা যায় হরহামেশাই।

বিস্তীর্ণ জায়গাজুড়ে সবুজ মাঠ। বাতাসে দোল খাচ্ছে চার মাসের চারা ধান গাছ। আর এই চারা ধান গাছে কীটনাশক ছিটাচ্ছে চীনের আধুনিক কৃষিপ্রযুক্তি ড্রোন। এটি দক্ষিণ চীনের কুয়াংসি প্রদেশের কুইকাং শহরের ছিংফেং এলাকার দৃশ্য। 

দক্ষিণ চীনের কুয়াংসিতে কীটনাশক ছিটাতে ড্রোনের ব্যবহার খুব বেশিদিন হয়নি। গেল কয়েক বছর ধরে পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হচ্ছিলো এই ড্রোন।

ড্রোনের সাহায্যে প্যানিকেল ইনিশিয়েশন স্টেজে এই কীটনাশক ছীটানো এখন জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে কুয়াংসি প্রদেশ জুড়ে। কেননা এটি একদিকে কৃষকের সময় যেমন বাঁচাচ্ছে, তেমনি কমিয়ে দিচ্ছে খরচ।

প্যানিকেল ইনিশিয়েশন স্টেজ বলতে সেই সময়কালকে বোঝায় যখন মাঠের প্রায় ৩০ থেকে ৫০  শতাংশ ধানের শীষ প্রায় ১  সেন্টিমিটার ফুটে ওঠে। এই সময়টায় পোকামাকড়ে সংক্রমিত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে।

স্থানীয় কর্তৃপক্ষ বলছে, এই প্রদেশের ছিংফেং এলাকায় দশ হাজার হেক্টরেরও বেশি জমিতে ধান প্যানিকেল পর্যায়ে প্রবেশ করেছে। তাই বিভিন্ন জায়গায়ই দেখা যাচ্ছে ড্রোনের ব্যবহার।

কৃষকরা বলেছেন, একটি ড্রোন দিনে ১৩ হেক্টরেরও বেশি জমিতে একই পরিমাণে কীটনাশক ছিটানো যায়, যা হাতে ছিটানোর তুলনা ২০গুণ বেশি কার্যকর।

কৃষিবিদ চেং কুয়াংহাও জানান, “ছিংফেং এলাকায় ৪হাজার হেক্টর জমিতে ধান রোপণ করা হয়েছে, যার মধ্যে ১ হাজার ৩০০ হেক্টর জমিতে রোপন করা হয়েছে ড্রোন ব্যবহার করে”।

২০২৩ সালে কুইকাং শহরজুড়ে কৃষকরা ১ লাখ ১০হাজার হেক্টর আগাম ধান রোপণ করেছে। আর ৩৩ হাজার হেক্টর জমির ফসলের ধুলা অপসারণে  ব্যবহার করা হয়েছে ড্রোন।

 

|| প্রতিবেদন: আফরিন মিম

|| সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভূমিকম্পের পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে চীন

 

বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভূমিকম্প-পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থাপনা এখন চীনে। ব্যবস্থাপনার মূল নির্মাণ কাজ এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। এ বছরের শেষদিকে এটির কাজ চূড়ান্তভাবে শেষ হয়ে যাবে এবং গ্রহণযোগ্যতা পাবে বলে আশা করছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ।

প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানেই জীবনহানির ভয় ও ক্ষয়ক্ষতির শঙ্কা। প্রকৃতির বিধ্বংসী শক্তির কাছে এখনো অসহায় মানব সম্প্রদায়। তাই প্রাকৃতিক দুর্যোগের পূর্বাভাস পাওয়া অত্যন্ত জরুরি। তাহলে অন্তত প্রাণহানি ও ক্ষয়ক্ষতির পরিমান কমিয়ে আনা সম্ভব হয় অনেকাংশে।

এ লক্ষ্যেই চীন বিশ্বের সর্ববৃহৎ ভূমিকম্প-পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থাপনা তৈরি করেছে। সম্প্রতি চায়না আর্থকোয়াক এডমিনেস্ট্রেশনের প্রধান মিন ইরিন এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।

চীন ভূমিকম্পের পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলার কাজ সর্বপ্রথম শুরু করে ১৯৯০ সাল থেকে। পরবর্তীতে ২০১৮ সালে চীন ভূমিকম্পের প্রাথমিক সতর্কতা এবং দ্রুত সময়ে ভূমিকম্পের তীব্রতা রিপোর্টিং ব্যবস্থাপনা তৈরির কাজ শুরু করে। এর লক্ষ্য ছিলো জনসাধারণকে ভূমিকম্পের আগেই কাউন্টডাউনের মাধ্যমে সতর্ক করে দেওয়া এবং ভূমিকম্পের এক মিনিটের মধ্যেই এর তীব্রতা সবাইকে জানিয়ে দেওয়া।

মিন দাবি করেন এটি পৃথিবীর সর্ববৃহৎ ভূমিকম্প-পূর্ব সতর্কীকরণ ব্যবস্থাপনা। তিনি বলেন আগে ভূমিকম্পের পর এর তথ্য পেতে সময় লাগতো এক মিনিটের বেশি। তবে নতুন এই ব্যবস্থাপনায় তথ্য পাওয়া যাবে ভূমিকম্প শুরু হওয়ার কয়েক সেকেন্ডর মধ্যেই।

নর্থওয়েস্টার্ন সিসমোলজিক্যাল জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণা অনুযায়ী, জনসাধারণ ভূমিকম্পের পূর্বাভাস তিন সেকেন্ড আগে জানতে পেলেও হতাহতের পরিমাণ ১৪ ভাগ কমে আসে। যদি ১০ সেকেন্ড আগে সতর্ক করা যায় তবে ৩৯ ভাগ এবং ২০ সেকেন্ড আগে সতর্কবার্তা পেলে হতাহতের পরিমাণ ৬৩ ভাগ পর্যন্ত কমানো সম্ভব।

বিভিন্ন ডিভাইসের মাধ্যমে সতর্কবার্তা পাঠাতে পারে এই আধুনিক সতর্কীকরণ ব্যবস্থাপনা, এটি হতে পারে মোবাইল ফোন, টেলিভিশন কিমবা অন্য কোনো ডিভাইস। চীনজুড়ে ১৫ হাজারের বেশি পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে এখন এ ব্যবস্থাপনা রয়েছে। পাশাপাশি তিনটি জাতীয় কেন্দ্র, ৩১টি প্রাদেশিক কেন্দ্র, ১৭৩টি প্রিফেকচারাল ও পৌরসভা তথ্য প্রকাশ কেন্দ্রতেও রয়েছে এই আধুনিক ভূমিকম্প সতর্কীকরণ ব্যবস্থাপনা।

মিন বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান ও ইউনান প্রদেশ, উত্তর চীনের বেইজিং ও থিয়ানচিন পৌরসভা এবং হেপেই প্রদেশ ও পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের কিছু ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায় পরীক্ষামূলক ভাবে ভূমিকম্প পূর্বাভাসের এই সেবা বর্তমানে চালু আছে।

মিন আরো বলেন, ব্যবস্থাপনাটি মাল্টি-নেটওয়ার্ক ইন্টিগ্রেশন ও এক সেকেন্ডে অনেক ব্যবহারকারীকে তথ্য প্রেরণ বিষয়ক প্রযুক্তিগত সমস্যা কাটিয়ে উঠেছে।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান, মাহমুদ হাশিম

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী