১০ জুনে চীনে উদযাপিত হয়েছ সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতি ঐতিহ্য দিবস। জাতির অমূল্য সাংস্কৃতিক নির্দশন সুরক্ষা ও ব্যবহার এবং সাংস্কৃতিক আস্থা ও শক্তি-এ প্রতিপাদ্যে দিবসটিতে চীন জুড়ে ছিল নানান সাংস্কৃতিক আয়োজন।
২০০৬ সাল থেকে, জুন মাসের দ্বিতীয় শনিবারকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য দিবস হিসেবে উদযাপন করছে চীনের মানুষ। ২০১৭ সালে, এটির নামকরণ করা হয় সাংস্কৃতিক ও প্রাকৃতিক ঐতিহ্য দিবস।
বর্তমানে জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সাংস্কৃতিক সংস্থা- ইউনেস্কোর অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় বিশ্বে চীনের রেকর্ড ৪৩টি আইটেম রয়েছে।
মহামূল্যবান এ সব সাংস্কৃতিক নিদর্শন রক্ষায় চীন সরকার- বিশেষ করে দেশটির সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অনুরাগী প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন।
প্রেসিডেন্ট সি’র কাছে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সুরক্ষা বিশেষ গুরুত্ব বহন করে। তিনি দেশের বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন সময়ে পরিদর্শনের সময় সাংস্কৃতিক নিদর্শনের সুরক্ষা সম্পর্কে খোঁজখবর করেন এবং নিজে সরেজমিনে তা পরিদর্শন করেন।
২০১৯ সালের আগস্টে উত্তর-পশ্চিম চীনের কানসু প্রদেশে তার পরিদর্শন সফরের প্রথমেই তুনহুয়াং শহরের মোকাও গ্রোটেস বা গুহা পরিদর্শন করেন এবং তুনহুয়াং একাডেমিতে বিশেষজ্ঞ, পণ্ডিত এবং সাংস্কৃতিক ইউনিটের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণে একটি সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করেন।
সেখানে ভাষণে তিনি গুরুত্বপূর্ণ দিকনির্দেশন দিয়ে বলেন, ‘বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রক্ষাকে পর্যটনের ঊর্ধ্বে রাখতে হবে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে হবে। আমাদের শুধু টিকিট বিক্রি এবং অর্থনৈতিক সুবিধার দিকে নজর দেওয়া উচিত নয়।‘
তুনহুয়াং মোকাও গুহাগুলো ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান- যেখানে বৌদ্ধ শিল্পকর্মের সমৃদ্ধ সংগ্রহ রয়েছে। সেখানে রয়েছে ২ হাজারের বেশি রঙিন ভাস্কর্য এবং ৪৫ হাজার বর্গ মিটারের ম্যুরাল, রয়েছে ৭৩৫টি গুহা।
২০১৬ সালের সেপ্টেম্বরে তুনহুয়াং-এ প্রথম সিল্ক রোড আন্তর্জাতিক সাংস্কৃতিক প্রদর্শনীতে তার অভিনন্দন পত্রে, সি তুনহুয়াং সংস্কৃতিকে ‘অনন্যভাবে কমনীয়’ বলে প্রশংসা করেছিলেন।
সিম্পোজিয়ামে সভাপতিত্ব করার সময়, সি তুনহুয়াং সংস্কৃতিকে ‘বিশ্ব সভ্যতার দীর্ঘ নদীতে একটি উজ্জ্বল মুক্তা এবং প্রাচীন চীনের বিভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর রাজনীতি, অর্থনীতি, সামরিক, সংস্কৃতি এবং শিল্প অধ্যয়নের জন্য মূল্যবান ঐতিহাসিক উপাদান’ বলে প্রশংসা করেন।
২০২০ সালে, রাজ্য কাউন্সিল গ্রোটো সংরক্ষণের একটি নির্দেশিকাও জারি করে।
২০২২ সালের শেষ নাগাদ, তুনহুয়াং একাডেমি ২৭৮টি গুহার উপর একটি ডিজিটাল ডেটা সংগ্রহ, এর মধ্যে ১৬৪টির জন্য ইমেজ প্রসেসিং, ১৪৫টি আঁকা ভাস্কর্য এবং সাতটি ধ্বংসাবশেষের থ্রিডি পুনর্গঠন, ১৬২টি গুহার জন্য একটি প্যানোরামিক ট্যুর প্রোগ্রাম প্রণয়নের কাজ শেষ করে।
শুধু তুনহুয়াং গুহার শিল্পকর্মই নয়, বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন উপলক্ষে প্রেসিডেন্ট সি চীনের মহামূল্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষায় দিকনির্দেশনা দিয়ে আসছেন। সি স্পষ্ট করে বলেন, ‘সংস্কৃতি হচ্ছে একটি দেশ ও জাতির আত্মা। আমাদের সংস্কৃতি এগিয়ে গেলে দেশও এগুবো; সংস্কৃতি শক্তিশালী হলে দেশও শক্তিশালী হবে। আমাদের সংস্কৃতির ওপর পূর্ণ আস্থা ছাড়া, একটি সমৃদ্ধ ও প্রাগ্রসর সংস্কৃতি ছাড়া চীনা জাতির পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়’।
শুধু দেশেই নয়, চীনের সাংস্কৃতিক নিদর্শন ফিরিয়ে আনতে প্রেসিডেন্ট সি ২০১৯ সালে ইতালি এবং গ্রিস সফর করেন এবং তার ঐকান্তিক প্রচেষ্ঠায় এক দশকে চীন ১৮ শ’ সাংস্কৃতিক নিদর্শন বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়।
সব শেষ ১ ও ২ জুন প্রেসিডেন্ট সি চীনের চীনের প্রকাশনা ও সংস্কৃতি বিষয়ক জাতীয় আর্কাইভ এবং চীনের ইতিহাস একাডেমি পরিদর্শন করেন এবং জাতির সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষায় সুস্পষ্ট দিক নির্দেশনা দেন।
চীনের বিশেষজ্ঞ ও পন্ডিতরা প্রেসিডেন্ট সি’র দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্যের সঙ্গে পুরোপুরি সহমত পোষণ করেন। বেইজিং নরমাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়াং কাং মনে করেন, প্রেসিডেন্ট সি’র প্রেরণাদায়ী বক্তব্য আধুনিক চীনা সভ্যতার ধারনাকে এগিয়ে নেবে। এতে, চীনের সংস্কৃতি বিশ্বঅঙ্গনে নতুন রূপে পরিচিতি পাবে।
প্রেসিডেন্ট সি মার্কসবাদের মৌলিক নীতির সঙ্গে চীনের বাস্তবতা এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির মেলবন্ধনের ওপর জোর দেন।
এ দুটির সমন্বয় আধুনিক চীনা সভ্যতা গড়ে তোলার পথে সহায়ক হবে বলে মনে করেন নানচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো লিফেং। এটি আধুনিক চীনা সভ্যতা তৈরির প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেবে এবং চীনা জাতির মহান পুনরুজ্জীবনকে সম্ভব করে তুলবে বলেও মনে করেন অধ্যাপক মো।
মাহমুদ হাশিম
ঢাকা স্টেশন, চীন আন্তর্জাতিক বেতার।