‘দেহঘড়ি’র এ পর্বে থাকছে ট্যাডিশনাল চাইনিজ মেডিসিন বা টিসিএম নিয়ে আলোচনা ‘ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাধারা’ এবং চীনে ‘জাতীয় চক্ষুসেবা দিবস’ পালনের খবর।
#খবর
চীনে পালিত হলো ‘জাতীয় চক্ষুসেবা দিবস’
অন্যান্য বছরের মতো এবারও ৬ জুন চীনে পালিত হলো ‘জাতীয় চক্ষুসেবা দিবস’। চোখের স্বাস্থ্যের গুরুত্বের কথা তুলে ধরা এবং চোখের যত্ন সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মধ্যে সচেতনতা বাড়ানোর লক্ষ্যে ১৯৯৬ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে চীনে।
চলতি বছরেরটি ছিল ২৭তম জাতীয় চক্ষুসেবা দিবস। এবার এ দিবসের প্রতিপাদ্য ছিল ‘সর্বজনীন চক্ষুস্বাস্থ্যকে অগ্রাধিকার দিন এবং যৌথভাবে স্বাস্থ্য গড়ে তুলুন’। জনগোষ্ঠি হিসাবে শিশু-কিশোর ও বয়স্কদের উপর এবং রোগ হিসাবে মায়োপিয়া, অন্যান্য চক্ষু ত্রুটি, ছানি, ফান্ডাস রোগ, গ্লুকোমা ও কর্নিয়াল অন্ধত্বের ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয় এ বছরের প্রতিপাদ্যে। এবারের কার্যক্রমের অন্যতম লক্ষ্য ছিল এই ধারণা প্রচার করা যে, ‘প্রত্যেকেই তার নিজের চোখের স্বাস্থ্যরক্ষার জন্য দায়ী প্রথম ব্যক্তি’।
সরকারি তথ্য বলছে, চীনে গত ৩ দশকে বিভিন্ন বয়স-ভিত্তিক জনসংখ্যার মধ্যে অন্ধত্বের হার প্রায় এক চতুর্থাংশ হ্রাস পেয়েছে। ওই সময় চীনে চক্ষুস্বাস্থ্য নীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন হয়েছে। এ নীতিতে গুরুত্ব প্রদানের ক্ষেত্র অন্ধত্ব প্রতিরোধ থেকে চক্ষুস্বাস্থ্য উন্নয়নের দিকে পরিবর্তিত হয়েছে। চক্ষুস্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনার নাম পরিবর্তনের মধ্যেও এ নীতি-পরিবর্তন প্রতিফলিত হয়েছে। আগে এটির নাম ছিল ‘অন্ধত্ব প্রতিরোধ ও চিকিত্সা বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা’ এবং ২০১৬ সালে এটি পরিবর্তিত হয় ‘চক্ষুস্বাস্থ্য বিষয়ক জাতীয় পরিকল্পনা’য়।
গুরুত্বের ক্ষেত্র পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে ‘জনস্বাস্থ্য চক্ষুবিদ্যা’ ধারণাটি উত্থাপিত হয় এবং ২০১৮ সালে ‘জনস্বাস্থ্য চক্ষুবিদ্যা’ সম্পর্কিত প্রথম জাতীয়-স্তরের একাডেমিক প্রতিষ্ঠান - চাইনিজ সোসাইটি অব পাবলিক হেলথ অফথালমোলজি - প্রতিষ্ঠিত হয়।
এবারের জাতীয় চক্ষুসেবা দিবসের একদিন আগে ৫ জুন চীনের জাতীয় স্বাস্থ্য কমিশন প্রকাশিত এক শ্বেতপত্রে বলা হয়েছে, চীনে শিশু ও কিশোর-কিশোরীদের সামগ্রিক মায়োপিয়ার হার বর্তমানে ৫৩ দশমিক ৬ শতাংশ। তাদের মধ্যে, ৬ বছর বয়সী শিশুদের মধ্যে এ হার ১৪ দশমিক ৫ শতাংশ, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ছাত্রদের মধ্যে ৩৬ শতাংশ, হাই স্কুলের ছাত্রদের মধ্যে ৭১.৬ শতাংশ এবং কলেজ ছাত্রদের জন্য ৮১ শতাংশ।
দৃষ্টি সম্পর্কে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার এক প্রতিবেদনে দেখা যায়, বিশ্বের কমপক্ষে ২২ কোটি মানুষ দৃষ্টি প্রতিবন্ধকতা বা অন্ধত্বে ভুগছে, যাদের মধ্যে ১০ কোটি মানুষের অন্ধত্ব প্রতিরোধ করা যেতো।
চীনের সরকার বলছে নীতিনির্ধারক, জনস্বাস্থ্য কর্মী, চক্ষু বিশেষজ্ঞ, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকর্মী এবং স্বাস্থ্য পেশাদারজীবীদের বাইরে অন্যান্য কর্মীরা যাতে ‘জনস্বাস্থ্য চক্ষুবিদ্যা’ সম্পর্কে আরও ভাল পান, সেজন্য এ বছরের ‘জাতীয় চক্ষু যত্ন দিবসে’ প্রথম ‘জনস্বাস্থ্য চক্ষুবিদ্যা’ বিষয়ে চীনা মনোগ্রাফ প্রকাশিত হয়েছে। মনোগ্রাফটি চিকিৎসক, চক্ষুস্বাস্থ্য খাতের কর্মী, চক্ষুস্বাস্থ্য ব্যবস্থাপনা কর্মী, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, গবেষক ও পরিসংখ্যানবিদরা প্রণয়ন করেছেন এবং এ কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন চাইনিজ সোসাইটি অব পাবলিক হেলথ অফথালমোলজির প্রেসিডেন্ট অধ্যাপক নিংলি ওয়াং। মনোগ্রাফে বলা হয়েছে, প্রবীণ জনসংখ্যা বৃদ্ধি এবং মানুষের জীবনধারার পরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে চোখের স্বাস্থ্য সমস্যাগুলোকে জাতীয় পর্যায়ে মোকাবেলা করা প্রয়োজন।
#ঐতিহ্যবাহী_ চিকিৎসাধারা
হিট স্ট্রোকের চিকিৎসায় টিসিএম
তীব্র তাপদাহের কারণে অনেকে এই সময় হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হচ্ছে। হিট স্ট্রোক হলো তাপ-জনিত অসুস্থতার সবচেয়ে গুরুতর রূপ। হিট স্টোক হলে শরীরের তাপমাত্রা দ্রুত বাড়ে, কিন্তু ঘামের প্রক্রিয়াটি কাজ করে না বলে শরীর ঠান্ডা হতে পারে না। দেহের তাপমাত্রা যদি ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার বেশি হয় এবং আপনি সময়মতো চিকিৎসা না পান, তাহলে এর পরিণতি হতে পারে মৃত্যু বা স্থায়ী অক্ষমতা।
হিট স্ট্রোকের বেশ কতগুলো লক্ষণ আছে। এগুলো হলো দেহে অতি উচ্চ তাপমাত্রা, শুষ্ক ত্বক বা কোনও কোনও ক্ষেত্রে প্রচুর ঘাম, বিভ্রান্তি, খিঁচুনি, কথায় জড়তা, মানসিক অবস্থার পরিবর্তন ও চেতনা হ্রাস। ঐতিহ্যবাহী চীনা চিকিৎসা ব্যবস্থা বা টিসিএমে মনে করা হয়, হিট স্ট্রোক হলো তাপ ও ক্লেদের কারণে প্রাণশক্তি বা ‘ছি’ এবং ‘ছি’র ঠান্ডাশক্তি ‘ইয়িন’র ক্ষতির ফল।
সিঙ্গাপুরের রিয়েল হেলথ মেডিকেলের জ্যেষ্ঠ টিসিএম চিকিৎসক ব্র্যান্ডন ইয়ুউ মনে করেন, দীর্ঘ সময় আর্দ্রতা বা উচ্চ তাপমাত্রার মধ্যে থাকলে শরীরে তাপ ও ক্লেদ বাড়তে পারে। বায়ু চলাচল কম এমন পরিবেশে মোটা বা আঁটসাঁট পোশাক পরাও হিট স্ট্রোকের কারণ হতে পারে। একজন ব্যক্তি প্রচুর পরিমাণে ঘামলে তার শরীরের ‘ছি’ ও ‘ইয়িন’-এ নিয়ন্ত্রণ আসে, যার ফলে হিট স্ট্রোকের ঝুঁকি কমে।
হিট স্ট্রোকে হলে কী করবেন?
কোন ব্যক্তি যদি তীব্র সূর্যালোক বা গরম পরিবেশের মধ্যে পড়ন, তবে অবিলম্বে তাকে একটি একটি শীতল ও ছায়াযুক্ত জায়গায় নিন এবং পোশাকের বাইরের অংশটি সরিয়ে ফেলুন।
এর পর শরীর পানি ঢালুন। শীতলায়ন প্রক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে তার চারপাশে পর্যাপ্ত বায়ু চলাচলের ব্যবস্থা করুন। যদি সম্ভব হয় তাহলে মাথা, বগল, ঘাড় ও কুঁচকির অংশে বরফের টুকরো রাখুন।
হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত ব্যক্তিকে এরপর যত দ্রুত সম্ভব হাসপাতালে নিয়ে যান। মনে রাখতে হবে, শরীরের তাপমাত্রা ৩৮ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে না আসা পর্যন্ত আক্রান্ত ব্যক্তির প্রতি নজর রাখতে হবে।
হিট স্ট্রোকের চিকিৎসা কী?
চিকিৎসক ব্র্যান্ডন ইয়ুউ মনে করেন, হিট স্ট্রোকের চিকিৎসায় সবচেয়ে ভাল ফল পাওয়া যায় ক্লিনিকাল চিকিৎসা এবং ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসা ব্যবস্থার সংমিশ্রণে চিকিৎসা দেওয়া গেলে। টিসিএম চিকিৎসায় ভেষজ ফরমুলেশনগুলোর প্রধান লক্ষ্য থাকে হিট স্ট্রোক-পরবর্তী জটিলতাগুলো উপশম করা। চিকিৎসক ব্র্যান্ডন সতর্ক করে দেন যে, ক্লিনিকাল স্বাস্থ্যসেবা এবং লাইসেন্সপ্রাপ্ত টিসিএম চিকিৎসকের সঙ্গে পরামর্শ ছাড়া নিজে নিজে ওষুধ নির্বাচন করলে বা নিজে নিজের চিকিৎসা নিলে ফলাফল উল্টো হতে পারে।
হিট স্ট্রোকের চিকিৎসায় সাধারণত যেসব টিসিএম ফরমুলেশন ব্যবহার করা জানিয়ে দিচ্ছি সেগুলো সম্পর্কে:
সিয়াং রু সান: এ ফরমুলেশনটি শরীরের ক্লেদ দূর করতে দারুণ কাজ করে।
লিউ ইয়ি সান ও কুই লিং কান লু ইয়িন: এটি শরীর থেকে তাপ ও ক্লেদ দূর করে।
শাং মাই ইয়িন: এ ফরমুলেশনটি হার্ট ও ফুসফুসের ‘ছি’ ও ‘ইয়িন’-এ ভারমাস্য আনে এবং ঘামের সমস্যা দূর করে।
ছি সিং হারবাল টি: এ চা ফুসফুসে পুষ্টি জোগায় এবং সেখান থেকে অতিরিক্ত তাপ দূর করে।
ছিং শু ইয়ি ছি থাং: এ ফরমুলেশনটি ‘ছি’ ও ‘ইয়িন’-এ ভারমাস্য আনে এবং শরীর থেকে তাপ ও ক্লেদ দূর করে।
হিট স্ট্রোক কি প্রতিরোধ করা যায়?
ক্লিনিক্যাল ও ঐতিহ্যবাহী চিকিৎসাসেবা প্রদানকারীরা মনে করেন, বেশ কয়েকটি অভ্যাস হিট স্ট্রোক প্রতিরোধে সাহায্য করতে পারে। চলুন জেনে নি-ই সেগুলো:
• গরম পড়লে প্রচুর তরল খেতে হবে।
• চিনি বা অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় একদম এড়িয়ে চলতে হবে।
• বাইরে যাওয়ার সময় সানগ্লাস, হ্যাট বা ছাতা ব্যবহার করতে হবে।
• নিয়মিত গোসল শরীর ঠান্ডা রাখতে সাহায্য করতে পারে।
• হালকা ও ঢিলেঢালা পোশাক পরতে হবে।
• রোদে কায়িক পরিশ্রম এবং আউটডোর ব্যায়াম কমাতে হবে।
• শরীরের লবণ ও খনিজগুলোর ঘাটতি পূরনে লবণের ট্যাবলেট বা স্পোর্টস ড্রিংক ব্যবহার করা উচিৎ।
• যদি ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ থাকে, তবে একজন চিকিৎসকের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখতে হবে।
• ত্বকের সুরক্ষা দিতে পারে এমন সানস্ক্রিন প্রয়োগ করতে হবে।
‘দেহঘড়ি’ অনুষ্ঠান সম্পর্কে আপনাদের মতামত ও পরামর্শ জানতে চাই আমরা। আমাদের ফেইসবুক পেইজ facebook.com/CMGbangla অথবা ওয়েবসাইট bengali.cri.cn’র মাধ্যমে জানাতে পারেন আপনাদের মতামত বা পরামর্শ।