চীনের সংস্কৃতি, চীনের ঐতিহ্য-২০
2023-06-10 15:06:56

চীনের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার রক্ষায় প্রেসিডেন্ট সি’র যুগান্তকারী দিক-নির্দেশনা

চীনের রাজধানী বেইজিংয়ের উত্তরপ্রান্তে ইয়ানশান পাহাড়ের পাদদেশে অবস্থিত চীনের প্রকাশনা ও সংস্কৃতি বিষয়ক জাতীয় আর্কাইভ।

একাধারে লাইব্রেরি, জাদুঘর, আর্ট গ্যালারী, আর্কাইভ ও প্রদর্শনীকেন্দ্র সমৃদ্ধ এ জাতীয় আর্কাইভ চীনের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের আঁধার।

এখানে রয়েছে ১৬ মিলিয়ন কপি ঐতিহাসিক টেক্সট, ৩০ হাজার অতি উচ্চমানের আধুনিক চীন সম্পর্কিত বই। রয়েছে স্ট্যাম্প, প্রাচীন মুদ্রা এবং টেরাকোটা যোদ্ধার অমূল্য সাংস্কৃতিক নির্দশন।

১ জুন জাতীয় আর্কাইভ পরিদর্শনে এসে চীনা সভ্যতার ঐতিহাসিক এ সব অমূল্য সাংস্কৃতিক নির্দশন রক্ষায় সর্বোচ্চমাত্রায় উদ্যোগী হতে নির্দেশনা দেন প্রেসিডেন্ট সি।

প্রেসিডেন্টের নির্দেশনায় উ্জ্জীবিত জাতীয় আর্কাইভের ডেপুটি কিউরেটর ওয়াং নিং।  

তিনি বলেন- ‘সাধারণ সম্পাদকের সফরের সময় আমরা দেখেছি প্রাচীন বইপত্রের বিষয়ে তিনি কতটা গুরুত্ব দিয়েছেন। তিনি প্রতিটি নিদর্শন খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখেছেন এবং অমূল্য সম্পদ হিসেবে এগুলোর প্রশংসা করেছেন। সাধারণ সম্পাদকের নির্দেশনা অনুযায়ী আমরা একটা সমৃদ্ধ যুগের মূল্যবান এ সাহিত্যসম্পদকে খুব ভালোভাবে রক্ষা করবো এবং বিশ্বে একমাত্র প্রবহমান সভ্যতার গৌরবগাঁথা তুলে ধরবো।

২ জুন প্রেসিডেন্ট সি বেইজিংয়ে চীনের ইতিহাস একাডেমি পরিদর্শন করেন এবং সেখানে তিনি চীনের সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার ও উন্নয়ন বিষয়ক একটি সিম্পোজিয়ামে যোগ দেন।

প্রেসিডেন্ট একটি আধুনিক চীনা সভ্যতা গড়ে তুলতে নতুন সাংস্কৃতির মিশনের দায়িত্ব কাঁধে তুলে নিতে সংশ্লিষ্ট সকল মহলের প্রতি আহ্বান জানান।

বেইজিং নরমাল ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইয়াং কাং মনে করেন প্রেসিডেন্ট সি’র প্রেরণাদায়ী বক্তব্য আধুনিক চীনা সভ্যতার ধারনাকে এগিয়ে নেবে।

তিনি বলেন- ‘সাধারণ সম্পাদকের বক্তব্যে গভীরতা ও দূরদৃষ্টির ছাপ রয়েছে। এটি আধুনিক চীনা সভ্যতার নতুন ও গুরুত্বপূর্ণ ধারণাটিকে এগিয়ে নেবে। প্রেসিডেন্টে সির বক্তব্যের শুধু বাস্তবিক তাৎপর্য রয়েছে তা নয়, এর বড় একাডেমিক মূল্যও রয়েছে। চীনের সংস্কৃতি বিশ্বঅঙ্গনে নতুন রূপে পরিচিতি পেতে চলেছে’।

প্রেসিডেন্ট সি মার্কসবাদের মৌলিক নীতির সঙ্গে চীনের বাস্তবতা এবং সমৃদ্ধ ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির মেলবন্ধনের ওপর জোর দেন।

এ দুটির সমন্বয় আধুনিক চীনা সভ্যতা গড়ে তোলার পথে সহায়ক হবে বলে মনে করেন নানচিং বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মো লিফেং।

তিনি বলেন- ‘যখন মার্কসবাদের মৌলিক নীতি, চীনের প্রকৃত অবস্থা আর চমৎকার ঐতিহ্যিক সংস্কৃতির সম্মিলন ঘটবে তখন নতুন এক সংস্কৃতির অভ্যুদয় হবে। এটি আমাদের আধুনিক চীনা সভ্যতা তৈরির প্রচেষ্টাকে এগিয়ে নেবে’।

প্রেসিডেন্ট সি তার বক্তব্যে একে চীনের ইতিহাসের টার্নিং পয়েন্ট হিসেবে অভিহিত করেন।

২. বিদেশ থেকে সাংস্কৃতিক নিদর্শন ফিরিয়ে আনতে প্রেসিডেন্ট সি’র যুগান্তকারী উদ্যোগ

শুধু ২ জুন বেইজিংয়ে চীনের ইতিহাস একাডেমির সিম্পোজিয়ামেই নয়, চীনের সমৃদ্ধ সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকারের অনুরাগী প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বিভিন্ন উপলক্ষ্যে চীনের মহান পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে নতুন সাংস্কৃতিক মিশনের দায়িত্ব নিতে আহ্বান জানান স্বদেশবাসীর প্রতি। এ জন্য নিজস্ব সংস্কৃতির ওপর গভীর আস্থা থাকা জরুরি বলে মনে করেন তিনি।

তিনি বলেন- ‘সংস্কৃতি হচ্ছে একটি দেশ ও জাতির আত্মা। আমাদের সংস্কৃতি এগিয়ে গেলে দেশও এগুবো; সংস্কৃতি শক্তিশালী হলে দেশও শক্তিশালী হবে। আমাদের সংস্কৃতির ওপর পূর্ণ আস্থা ছাড়া, একটি সমৃদ্ধ ও প্রাগ্রসর সংস্কৃতি ছাড়া চীনা জাতির পুনরুজ্জীবন সম্ভব নয়’।

চীনের নিজস্ব সংস্কৃতির সংরক্ষণ ও উন্নয়নের পাশাপাশি হারিয়ে যাওয়া চীনা সাংস্কৃতিক নিদর্শন বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে উদ্যোগী হন প্রেসিডেন্ট সি নিজেই।

তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় এক দশকে ১৮ শ’ সাংস্কৃতিক নিদর্শন বিদেশ থেকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয় চীন।

২০১৯ সালের মার্চে প্রেসিডেন্ট সি’র ইতালি সফরের সময় সেখান থেকে ৭৯৬টি সাংস্কৃতিক নিদর্শনের সবচেয়ে বড় চালানটি ফিরিয়ে আনা হয় চীনে। এটি চীনের ইতিহাসে একসঙ্গে সবচেয়ে বেশি সাংস্কৃতিক নিদর্শন ফিরিয়ে আনার ঘটনা।

এ ঘটনায় প্রেসিডেন্ট সি খুব আনন্দ প্রকাশ করেন বলে জানান জাতীয় জাদুঘর বিভাগের উপ-পরিচালক উ মিন।

তিনি বলেন, ‘ইতালির প্রধানমন্ত্রীকে সাংস্কৃতিক নিদর্শনগুলোর পরিচয় দিতে গিয়ে এবং এগুলোর চীনে ফিরিয়ে আনার তাৎপর্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে সাধারণ সম্পাদককে খুব আনন্দিত দেখাচ্ছিল’।

সাংস্কৃতিক নিদর্শ উদ্ধারে একই বছর প্রেসিডেন্ট সি ছুটে গেছেন গ্রিসের এথেন্সে। এরই ধারাবাহিকতায় ২০২০ সালের ডিসেম্বেরে চীন ফিরে পায় ওল্ড সামার প্যালেসের সুবিখ্যাত ব্রোঞ্জের ঘোাড়ার মাথার ভাস্কর্য।

এ জন্য চীনা জাতিকে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১৬০ বছর।

বেইজিংয়ে এর প্রদর্শনীতে গোটা চীনা জাতির আবেগ ফুটে ওঠে একজন দর্শনার্থীর কণ্ঠে।

তিনি বলেন ‘আমাদের এমন একটা গৌরবের ইতিহাস রয়েছে। আজ আমরা আমাদের গৌরবের ইতিহাসের পুনরুজ্জীবন ঘটাচ্ছি। এ গৌরব ধরে রাখতে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে সচেতন হতে হবে’।

৩. অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের প্রসারে হাইনানে শপিং উৎসবে নানা আয়োজন   

সম্প্রতি দক্ষিণ চীনের হাইনান প্রদেশের হাইখৌ শহরে অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য তুলে ধরে একটি কেনাকাটা উৎসবের আয়োজন করা হয়।

এতে ২৬টি বুথের ব্যবস্থা করা হয়, যেখানে পারফর্মাররা তাদের ইন্টারেক্টিভ কার্যকলাপের মাধ্যমে পর্যটকদের বিনোদন দেন। 

অবৈষয়িক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রদর্শন ছাড়াও ঐতিহ্যবাহী যন্ত্র ব্যবহার করে সঙ্গীত পরিবেশন এবং জাতিগত সংখ্যালঘুদের লোকগানও পরিবেশন করা হয়।

আয়োজকরা জানান, পর্যটকদের স্থানীয় সংস্কৃতির সমৃদ্ধ বৈচিত্রের সঙ্গে পরিচয় করানোর পাশাপাশি কেনাকাটা, ক্যাটারিং এবং বিনোদনমূলক পরিষেবাগুলোও অন্তর্ভুক্ত থাকে এমন একটি প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা এই ধরনের ইভেন্টের লক্ষ্য। 

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী, মাহমুদ হাশি

অডিও সম্পাদনা: হোসনে মোবারক সৌরভ, রফিক বিপুল

প্রযোজনা ও উপস্থাপনা: মাহমুদ হাশিম

সার্বিক তত্ত্বাবধানে: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী।