পরমাণু নিরাপত্তা মানবজাতির ভবিষ্যত, রাজনৈতিক অস্ত্র নয়: সিআরআই সম্পাদকীয়
2023-06-10 20:08:22

জুন ১০: “বিস্ময়করভাবে ‘পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি’ এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে। যা গুরুতরভাবে আন্তর্জাতিক পরমাণু অবিস্তার ব্যবস্থাকে আঘাত করেছে।”সম্প্রতি আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা’র জুন মাসের সম্মেলনে, যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়া পরমাণু সাবমেরিন সহযোগিতার বিরুদ্ধে সভায় অংশগ্রহণকারীরা দৃঢ় বিরোধিতা জানান। এ বিষয়ে চীনা প্রতিনিধি সব পক্ষকে একযোগে আন্তসরকারি আলোচনার প্রক্রিয়া এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানান। রাশিয়া, পাকিস্তান, ইন্দোনেশিয়া, ব্রাজিলসহ মোট ২০টিরও বেশি দেশের প্রতিনিধিগণ চীনের আহ্বানে ইতিবাচকভাবে সাড়া দিয়েছেন। তারা আন্তর্জাতিক  পরমাণু অবিস্তার ব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক নীতি রক্ষা করতে অভিন্ন তাগিদ দিয়েছেন। সিআরআই সম্পাদকীয় এসব কথা বলেছে।


তিনটি দেশের পরমাণু সাবমেরিন সহযোগিতার তীব্র বিরোধিতা করার কারণ হলো তাদের আচরণ আইনসহ নানা খাতে খুব খারাপ উদাহরণ সৃষ্টি করেছে। আইনগত দিক থেকে দেখা যায়, যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়া পরমাণু সাবমেরিন  সহযোগিতা ‘পরমাণু অস্ত্র বিস্তার রোধ চুক্তি’সহ একাধিক আন্তর্জাতিক চুক্তি লঙ্ঘন করেছে। তিন দেশ পরমাণু সাবমেরিন সহযোগিতার কথা বললেও তার আসল বিষয় হচ্ছে পরমাণু অবিস্তারে বাধা।


সংশ্লিষ্ট আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের পরিকল্পনা অনুযায়ী, তারা অস্ট্রেলিয়াকে যে পরমাণু অস্ত্রের সামগ্রী দেবে, তা দিয়ে ৬৪ থেকে ৮০টি পরমাণু অস্ত্র তৈরি করা যাবে। এ পরিকল্পনা বজায় থাকলে তা গুরুতরভাবে আন্তর্জাতিক পরমাণু অবিস্তার চুক্তি ব্যবস্থা নষ্ট হবে এবং দক্ষিণপূর্ব এশিয়ায় পরমাণু মুক্ত এলাকা নির্মাণ বাধাগ্রস্ত হবে। ক্যাম্বোডিয়ার প্রধানমন্ত্রী হুন সেন ৫ জুন সতর্ক করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়া পরমাণু সাবমেরিন সহযোগিতা একটি বিপজ্জনক অস্ত্রের প্রতিযোগিতা শুরু করবে। যদি তা অব্যাহত থাকে বিশ্ব আরো বড় বিপদের মুখে পড়বে। আসিয়ান দৃঢ়ভাবে পরমাণু অস্ত্র বিস্তারের বিরোধিতা করবে। 


নীতিমালা অনুযায়ী আইএইএ-কে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র-ব্রিটেন-অস্ট্রেলিয়া পরমাণু সাবমেরিন সহযোগিতার বিষয়ে আলোচনা করতে চাইলে, প্রকৃত বহুপক্ষপাদ ধারণ করতে হবে। দেশ তিনটি মুখে ‘নীতি-ভিত্তিক আন্তর্জাতিক শৃঙ্খলার কথা বললেও তারা আসলে জোটগত সংঘাত ও ‘জোটের রাজনীতি’র কার্যক্রম চালাচ্ছে। তাদের এই দ্বৈতনীতির আচরণ তাদের আন্তর্জাতিক নীতি নষ্ট করার আরেকটি প্রমাণ। 


এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চল হচ্ছে সহযোগিতা ও উন্নয়নের এলাকা, বড় দেশের প্রতিযোগিতার এলাকা নয়। পরমাণু নিরাপত্তা মানবজাতির ভবিষ্যত লক্ষ্যের সঙ্গে জড়িত; এটা কিছু ব্যক্তির নিজের স্বার্থ হাসিলের রাজনৈতিক যন্ত্র নয়। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন ও অস্ট্রেলিয়ার ‘পরমাণু ষড়যন্ত্র’ তাদের নিজস্ব ব্যাপার নয়, তাদের আইএইএ’র সদস্য দেশের অভিন্ন ব্যবস্থাপনার অধীনে আসা উচিত। কেউ যদি প্রশান্ত মহাসাগরকে ঝড়-সংকটের মহাসাগরে পরিণত করতে চায়, প্রশান্ত মহাসাগর অঞ্চলের মানুষ তা কোনোভাবেই সহ্য করবে না।

(আকাশ/তৌহিদ/ফেইফেই)