চীনে গোলাপ চাষে গ্রামীণ সমৃদ্ধি
2023-06-09 19:24:56


সম্প্রতি চীনের ইউন নান প্রদেশের চিন নিং অঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে চায়নিজ গোলাপ ফুটেছে। ফুলের সুগন্ধি বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। ফুলের গ্রীনহাউসগুলোতে চাষিরা ফুল সংগ্রহ ও প্যাকেট করাসহ নানা কাজে ব্যস্ত রয়েছেন।

 

প্রতিদিন এখান থেকে দশ লাখের বেশি ফুল হাজার হাজার পরিবারে পাঠানো হয়। চিন নিং অঞ্চলের ছিং শুই হ্য গ্রামে রয়েছে বিরল ভৌগলিক সুযোগসুবিধা। স্থানীয় সরকার মাটির উর্বরতাকে কাজে লাগিয়ে গ্রামীণ প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা সম্প্রসারণের পাশাপাশি গবেষণা দল এনে ফুলের অর্থনীতির উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করছে। ফলে এ গ্রামটি ‘চায়নিজ গোলাপের গ্রাম’ হিসেবে খ্যাতি অর্জন করেছে।

 

 

চিন নিং অঞ্চলের খুন ইয়াং ইয়ু লিয়ান ফুল সমবায়ের পরিচালক চৌ ই লিয়ান বলেন, ‘অতীতে চাষিদের ভালো ফুলও ভালো দাম পেতো না। কারণ তখন মন্দ ও ভালো ফুল পৃথক করা হতো না। মন্দ ফুলের কারণে ভালো ফুলও কম দামে বিক্রি হতো।”

 

এ সমস্যা সমাধানে সমবায় চায়নিজ গোলাপের গুণ অনুযায়ী শ্রেণী বিন্যাস করে। বিভিন্ন পর্যায়ের ফুল বিভিন্ন দামে বিক্রি হয়। ভালো ফুল ভালো দামে বিক্রি হলে সমবায়ের সদস্যদের উপার্জন বাড়ার পাশাপাশি তাজা ফুলের গুণের ওপর সদস্যদের গুরুত্বারোপ বৃদ্ধি করে। এটি পাইকারি ব্যবসায়ীদের স্বীকৃতি পায় এবং চিন নিং অঞ্চলের চায়নিজ গোলাপ স্বতন্ত্র ব্র্যান্ড তৈরি হয়।

 

চিন নিং অঞ্চলের খুন ইয়াং ইয়ু লিয়ান ফুল সমবায় কেবল পরিচালনা ও বিক্রি নয়, গাছের চারা লালন এবং রোপণের প্রযুক্তিসহ নানা ক্ষেত্রে ফুল চাষিদের সাহায্য করেন।

 

চৌ ই বলেন, ‘আমরা মাটির অবস্থা অনুযায়ী চাষিদের উপযোগী প্রজাতির ফুল গাছ লাগাতে পরামর্শ দিই। যেমন: পুরোনো মাটিতে পুরোনো প্রজাতির ফুল চাষ এবং উৎপাদনের পরিমাণ বাড়ানোর পরামর্শ দিই। নতুন মাটিতে আমরা নতুন প্রজাতির ফুল, যার অর্থনৈতিক মূল্য বেশি, চাষের পরামর্শ দিই। ফলে সদস্যদের উপার্জন বৃদ্ধি পায়।’

 

চিন নিং অঞ্চলে এমন ফুল সমবায়ের সংখ্যা একশ’র বেশি। এসব সমবায়ের নেতৃত্বে ফুল চাষিদের আয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। মোটরসাইকেল থেকে গাড়ি, কাঁচা ঘর থেকে অ্যাপার্টমেন্টের মালিক হয়েছেন স্থানীয় গ্রামবাসীরা।

 

বর্তমানে ফুল চিন নিং অঞ্চলের গুরুত্বপূর্ণ কৃষি শিল্পে এবং কৃষকদের উপার্জন বাড়ার স্তম্ভে পরিণত হয়েছে। ২০২২ সালের শেষ দিক পর্যন্ত পুরো অঞ্চলে ফুল চাষের পরিমাণ ৪০৬৬ হেক্টর ছাড়িয়েছে। ফুল শিল্পের উত্পাদন মূল্য ৩৪০ কোটি ইউয়ান। মোট ২২ হাজার পরিবারের ৫৫ হাজার মানুষ ফুল শিল্পে নিয়োজিত রয়েছেন।

 

অনলাইন ও অফলাইনে চিন নিং অঞ্চলের চায়নিজ গোলাপ দেশ-বিদেশের নানা শহরে বিক্রি হয়। তবে অধিকাংশ প্রজাতির ফুল বিদেশি কোম্পানি দ্বারা উদ্ভাবিত। ফলে একটি ফুল বিক্রি হলে কমপক্ষে ৩ শতাংশ অর্থ কোম্পানিগুলোকে প্রদান করতে হয়। নিজেদের উদ্ভাবিত প্রজাতির ফুল চাষ করতে ২০২০ সালে ইউন নান প্রদেশের কৃষি একাডেমির গবেষক লি শু বিন একটি দল নিয়ে ছিং শুই হ্য গ্রামে গবেষণা ও পরীক্ষাগার প্রতিষ্ঠা করেন। চায়নিজ গোলাপের জিন বীজ লালনকারী বিশেষজ্ঞ হিসেবে লি শু বিন তার দল নিয়ে চায়নিজ গোলাপের বীজ সম্পদ সংরক্ষণ, জিনের অবস্থান ও নতুন প্রজাতির বীজ বাছাই ও লালনসহ নানা ক্ষেত্রে লক্ষণীয় অগ্রগতি অর্জন করেছেন।

 

প্রাচীন ও আধুনিক প্রজাতির মিশ্র লালন পদ্ধতিতে লি শু বিনের দল প্রতিবছর ২ লাখ চায়নিজ গোলাপের বীজ সংগ্রহ করে। তা থেকে প্রতিবছর ৩ থেকে ৫টি সুষ্ঠু প্রজাতির ফুল বাছাই করে তারা। এর মধ্যে চিন নিং’র ছুই হুয়া প্রজাতি জাতীয় বন ও তৃণভূমি ব্যুরোর প্রাপ্ত উদ্ভিদের নতুন প্রজাতির স্বীকৃতি পেয়েছে এবং নিখিল চীনের বিভিন্ন স্থানে জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

 

সুগন্ধযুক্ত ও সুন্দর চায়নিজ গোলাপের সৌন্দর্য নানা স্থান থেকে আসা পর্যটকদেরকে আকর্ষণ করে, যা ছিং শু হ্য গ্রামের পর্যটন শিল্পের উন্নয়ন বেগবান করেছে। গ্রামবাসীরা মাটি ভাড়া দেওয়া এবং নেতৃস্থানীয় প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে সহযোগিতা গড়ে তোলার মাধ্যমে নিজেদের উপার্জন বাড়িয়েছেন; এমনকি কিছু কিছু গ্রামবাসী গ্রামীণ বিনোদনমূলক ব্যবস্থাপনা এবং হোমস্টেই হোটেল তৈরি করেছেন। ফলে এ গ্রামের গড় আয় ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। এভাবেই সুন্দর চায়নিজ গোলাপ থেকে সুন্দর জীবন সৃষ্টি করেছেন চিন নিং অঞ্চলের অধিবাসীরা।

 

(রুবি/এনাম)