জুন ৯: সম্প্রতি জাপানের টোকিও বিদ্যুত কোম্পানি ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্রের পারমাণবিক বর্জ্যপানি সমুদ্রের টানেলে ফেলেছে। একই সঙ্গে, পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র এলাকায় কিছু মাছের শরীরে তেজস্ক্রিয় উপাদান পাওয়া গেছে। এ প্রেক্ষাপটে, স্থানীয় সময় গত ৭ জুন সন্ধ্যায়, টোকিও বিদ্যুত কোম্পানির সদর দফতরের সামনে, বিক্ষোভ-সমাবেশ করে জাপানি জনতা। দূষিত পানি সমুদ্রে ফেলার এ কাজের তীব্র বিরোধিতা করেছে তাঁরা।
বিক্ষোভকারীরা মনে করেন, জাপানি সরকারের এহেন আচরণ খুবই দায়িত্বজ্ঞানহীন। তারা বলেন, পারমাণবিক বর্জ্যপানিকে ‘পরিষ্কার জল’ হিসেবে আখ্যায়িত করছে জাপানি সরকার। এই পানিতে কোনো সমস্যা নেই বলে দাবি করা হচ্ছে, যা খুবই হ্যাসকর। তেজস্ক্রিয় উপাদানসমৃদ্ধ এই পানি কোনো অবস্থাতেই নিরাপদ হতে পারে না।
প্রতিবাদী জনতা আরও বলেছে, সম্প্রতি ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র এলাকায় মাছের গায়ে তেজস্ক্রিয় উপাদান সিজিয়ামের পরিমাণ গ্রহণযোগ্য মাত্রার চেয়ে ১৮০ গুণ বেশি পাওয়া গেছে। পারমাণবিক বর্জ্যপানি স্থানীয়দের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর প্রমাণিত হবে।
একজন প্রতিবাদী মানুষ বলেন, “পারমাণবিক বর্জ্যপানি সমুদ্রে ফেলার ফলে, শুধু মাছ নয়, বরং গোটা মানবজাতিই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তবে, জাপানি সরকার বিষয়টিকে উপেক্ষা করছে। এ অবস্থায় জনতার প্রতিবাদ অব্যাহত রাখতে হবে।”
আরেকজন বিক্ষোভকারী বলেন, “পারমাণবিক বর্জ্যপানি বিপজ্জনক। এটা সহজেই উপলব্ধি করা যায়। টোকিও বিদ্যুত কোম্পানির কর্তৃপক্ষ নিশ্চয় জানে যে, এই দূষিত পানি খুবই বিপজ্জনক। আর এ কারণেই ফুকুশিমার পারমাণবিক বিদ্যুতকেন্দ্র এলাকার মাছে বিপজ্জনক উপাদানের মাত্রা পরীক্ষা করার ব্যবস্থা চালু করেছে তারা। প্রশ্ন হচ্ছে: কেন এটা করা হচ্ছে? বর্জ্যপানি যদি নিরাপদই হবে, তবে এই পরীক্ষার দরকার কী? আসলে, এ ব্যাপারে তারা নিজেরাও নিশ্চিত নয়। আমি মনে করি, নিরাপত্তার ব্যাপারে শতভাগ নিশ্চিত না-হয়ে পারমাণবিক বর্জ্যপানি সমুদ্রে ফেলা উচিত নয়।”
জাপানি সরকারের একগুঁয়ে মনোভাব এবং ইচ্ছাকৃতভাবে পারমাণবিক বর্জ্যপানি সমুদ্রে ফেলার সিদ্ধান্ত বিভিন্ন দেশের বিশেষজ্ঞদের তীব্র সমালোচনার মুখেও পড়েছে। জাপানের বিশেষজ্ঞ হিকারু আমানো মনে করেন, পারমাণবিক দূষিত পানি সমুদ্রে ফেললে পরিবেশে তেজস্ক্রীয় নিউক্লাইড উপাদানের পরিমাণ বেড়ে যাবে। এটি সামুদ্রিক পরিবেশ এবং মানবস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতির কারণ হবে। তিনি বলেন,
“পারমাণবিক বর্জ্যপানির মধ্যে কেবল যে তেজস্ক্রীয় নিউক্লাইড উপাদান রয়েছে, তা নয়; বরং টেলুরিয়াম ও অন্যান্য ক্ষতিকর উপাদানও রয়েছে। এসব উপাদান সাগরে কোন ধরনের প্রভাব ফেলবে, সে ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত নই। পারমাণবিক বর্জ্যপানি সমুদ্রে ফেলার বিরোধিতা করার জন্য এটকুই যথেষ্ট।”
জাপানের পারমাণবিক শক্তিসংক্রান্ত নাগরিক কমিটির বিশেষজ্ঞ গোটো মাসাশি বলেন, পারমাণবিক বর্জ্যপানি সমুদ্রে ফেলার নেতিবাচক প্রভাব অনস্বীকার্য। তিনি বলেন,
“পারমাণবিক বর্জ্যপানি সমুদ্রে ফেলার কী ধরণের প্রভাব হবে? তা কেউ নিশ্চিতভাবে বলতে পারে না। তবে, পরিবেশের ওপর এর গুরুতর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে, এটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়।” (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)