ঐতিহ্যিক সংস্কৃতি সংরক্ষণের কথা সি চিন পিং যেভাবে বলেছেন
2023-06-09 10:38:33

যে মানুষ চীনা জাতিকে ভালোবাসে, সে নিশ্চয় এই দেশের প্রত্যেকটি নদী, প্রত্যেক ইঞ্চি জমি, প্রত্যেক মুহূর্তের ইতিহাসও ভালোবাসে।

এটি হল তিন দশকেরও বেশি সময় আগে সি চিন পিং-এর বলা একটি কথা।

চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সবসময় চীনা জাতির সংস্কৃতি ও সভ্যতা রক্ষা এবং উন্নয়নের ওপর অনেক গুরুত্বারোপ করেন। ২০০৩ সালের জুলাই মাসে, যখন সি চিন পিং চ্য চিয়াং প্রদেশের সিপিসি’র সম্পাদক ছিলেন, তখন তিনি সেই প্রদেশের লিয়াংজু ধ্বাংসাবশেষ পরিদর্শন করেছেন। তখনকার লিয়াংজু সংরক্ষণ এবং উন্নয়নের বিষয়ে দ্বন্দ্ব ছিল। ধ্বংসাবশেষে ৩০টিরও বেশি পাথরের খনি ছিল। দূষণ খুব বেশি হতো। সি চিন পিং এ অবস্থা দেখে বলেছিলেন, লিয়াংজু ধ্বংসাবশেষ হল চীনা জাতির ৫ হাজার বছরের বেশি পুরানো সভ্যতার প্রমাণ, যা অমূল্য সম্পদ, আমাদের উচিত ভালোভাবে তা রক্ষা করা।

তখন থেকে লিয়াংজু ধ্বংসাবশেষের পরিবেশ সংরক্ষণের কাজ শুরু হয়েছে, পাহাড় আবার সবুজ হয়ে উঠেছে।

 

২০১৬ সালে চারজন প্রত্নতাত্ত্বিক সি চিন পিংকে চিঠি লিখে লিয়াংজু ধ্বংসাবশেষটি দ্রুত সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে আবেদন করার কথা জানান। তখন সি চিন পিং বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা দিয়ে বলেন, প্রাচীনকালের ধ্বংসাবশেষের সংরক্ষণ কার্যকরভাবে জোরদার করা উচিত, যাতে অব্যাহতভাবে চীনা জাতির সুদীর্ঘ ইতিহাস উপলব্ধি করা যায়।

তিন বছর পর লিয়াংজু প্রাচীন নগর ‘বিশ্ব উত্তরাধিকার তালিকায়’ অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। যা চীনা জাতির ৫ হাজারেরও বেশি বছরের সভ্যতার ইতিহাসের সবচেয়ে সরাসরি ও শক্তিশালী প্রমাণ। এটা তখন থেকে আন্তর্জাতিক সমাজের আরো বেশি দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

 

যত আগের ইতিহাস দেখা যায়, তত দূরের ভবিষ্যতে তাকানো যায়।

২০১৩ সালের শেষ দিক, সি চিন পিং মাত্র ছয় মাস ধরে চীনের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, তিনি কনফুসিয়াসের জন্মস্থান এবং কনফুসিয়ানবাদের জন্মস্থান সান তুং প্রদেশের ছুই ফুতে কনফুসিয়াস ম্যানশন এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট পরিদর্শন করেছিলেন।

সি চিন পিং বলেন, আমি বিশেষভাবে ছুই ফুতে এসেছিলাম কনফুসিয়াস ম্যানশন এবং কনফুসিয়াস ইনস্টিটিউট দেখার জন্য। যাতে কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতির প্রচারে গুরুত্বারোপ করা যায়।

২০১৪ সালের সেপ্টেম্বর মাসে সি চিন পিং বিশ্বজুড়ে অতিথিদের স্বাগত জানাতে তাঁর উদ্বোধনী বক্তব্য হিসাবে "কনফুসিয়াসের অ্যানালেক্টস" থেকে এই কথাগুলি উদ্ধৃত করেছিলেন। এই প্রথম কোন দেশের শীর্ষনেতা কনফুসিয়াসের জন্ম উপলক্ষ্যে আন্তর্জাতিক সেমিনারে যোগ দেন এবং ভাষণ দেন।

 

চীনের সানসি প্রদেশের পিংইয়াও প্রাচীন নগরের ২৮০০ বছরের ইতিহাস আছে। ২০২২ সালের বসন্ত উত্সবের আগে সি চিন পিং প্রাচীন নগরটি পরিদর্শন করেছেন। তিনি হেঁটে হেঁটে প্রাচীন নগরে প্রবেশ করে ইতিহাসের চিহ্ন উপভোগ করেন, প্রাচীন দেয়ালের ওপর উঠে পুরো শহরের চেহারা দেখেন। তিনি পিংইয়াও—এর ইতিহাস জেনে নেন। তিনি বলেন, ইতিহাসকে সম্মান করতে হয়, সংস্কৃতিকে সম্মান করতে হয়, প্রকৃতিকে সম্মান করতে হয়।

ইতিহাসের মূল চেতনা রক্ষা করা- সি চিন পিং-এর চোখে গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। তিনি বলেন, একটি ব্যবস্থা, একটি শক্তি—তা ইতিবাচক নাকি নেতিবাচক- তা বুঝতে হয়। একটি ভূখণ্ড স্থানীয় মানুষদের লালন করে। বর্তমান উন্নয়ন ইতিহাসের ভিত্তিতে সম্ভব হয়। কোনো জায়গার নেতা বা প্রধান হতে নিশ্চয় স্থানীয় ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহাসিক ব্যক্তিত্ব সম্বন্ধে জানতে হয়। কিছু কিছু বিষয় মুখস্থ হতে হয়। এসব সংস্কৃতি একটি জায়গার নেমকার্ড হতে পারে।

ইতিহাসকে মনে রাখলেই আমরা ভবিষ্যৎ উন্মোচন করতে পারব। ভালোভাবে লালন ও ধারণ করতে পারলে ভালোভাবে উদ্ভাবন করা যায়। সূক্ষ্ম ঐতিহ্যবাহী সংস্কৃতি- এটি দেশ বা জাতির উত্তরাধিকার এবং উন্নয়নের মৌলিক ভিত্তি। এটি হারালে দেশ বা জাতির আধ্যাত্মিক জীবনরেখা কেটে যায়।