প্রকৃত চীনকে তুলে ধরেছেন জাপানি পরিচালক তাকেউচি রিও
2023-06-08 19:23:33

জাপানের তথ্যচিত্র পরিচালক তাকেউচি রিও সম্প্রতি তার তথ্যচিত্র ‘দ্য ইয়াংচি রিভার’র প্রিমিয়ারে জাপানে তথ্যচিত্রের সপ্তাহব্যাপী কার্যক্রম আয়োজনের উদ্দেশ্য তুলে ধরেন। তিনি বলেন, ‘জাপানে চীনের ব্যাপারে অনেক পক্ষপাতমূলক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। তাই আমি আশা করি, এসব চলচ্চিত্রের মাধ্যমে সবাই একটি সাধারণ এবং বাস্তব চীনকে দেখতে পাবেন। এসব বিষয়ে গণমাধ্যম সাধারণত রিপোর্ট করে না বা রিপোর্ট করা হয়নি।’

 

গত ১৯ মার্চ ‘দ্য ইয়াংচি রিভার’ নামের তথ্যচিত্রের ডাবিং অভিনেত্রী ও জাপানের বিখ্যাত শিল্পী কোজিমা রুরিকো তাকেউচি রিওয়ের সঙ্গে প্রিমিয়ারে আবির্ভূত হন। জাপানের ১৪টি টিভি কেন্দ্র এবং ৮০ জনেরও বেশি সাংবাদিক প্রিমিয়ারে অংশ নিয়েছেন। তাকেউচি রিও ঠাট্টা করে বলেন, ‘আশা করি, জাপানের গণমাধ্যম কোজিমা রুরিকোর সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর অবশ্যই আমার এ তথ্যচিত্র দেখতে আসবেন। আমি বিশ্বাস করি, এটি দেখার পর তারা নিঃসন্দেহে চীনের আকর্ষণীয় শক্তি প্রচার করবেন এবং এ বিষয়ে আমার আত্মবিশ্বাস আছে।’

 

১২৯ মিনিটের এ তথ্যচিত্রে তাকেউচি রিও সবাইকে নিয়ে শাংহাই রওনা হয়ে নানচিং, উহান ও ছোংছিংসহ ইয়াংসি নদীর বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট হয়ে সামনে এগিয়ে যান এবং প্রায় ৬৩০০ কিলোমিটার পথ অতিক্রম করে ইয়াংসি নদীর উৎসের সন্ধান করেন। তাছাড়া, তাকেউচি রিও ল্যান্সের মাধ্যমে দশ বছর আগে তার নির্মিত ইয়াংসি নদীর আরেকটি প্রামাণ্যচিত্রে সাক্ষাত্কারদাতাদের সঙ্গে আবার মিলিত হন।

 

তার নতুন এ তথ্যচিত্রে দর্শকেরা নানা দৃশ্যের মাধ্যমে চীনের সুন্দর পরিবেশ উপভোগ করার পাশাপাশি এক একটি সাক্ষাত্কারদাতার দশ বছর আগের এবং পরের জীবনের পরিবর্তন দেখতে পাবেন। তার মাধ্যমে গত দশ বছরে ঘটা চীনের উন্নয়ন দেখতে পাবেন। তাদের জীবনের নানা দিকের মাধ্যমে সত্যিকারের চীনকে তুলে ধরার চেষ্টা করেন তাকেউচি রিও।

 

অনেক জাপানি দর্শক প্রামাণ্যচিত্রটি দেখার পর চীনে আবার চলে যাওয়ার আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করেছেন। একজন দর্শক বলেন, ‘২০১৮ সালে যখন আমি প্রথমবার চীনে গিয়েছিলাম, তখন গভীরভাবে আকৃষ্ট হয়েছি। এবার পরিচালক তাকেউচি রিওয়ের তথ্যচিত্রের মাধ্যমে চীনের এত বেশি জায়গায় ঘুরে বেড়িয়েছি যে আমি সত্যিই খুব খুশি হয়েছি। আমি এখন চায়নিজ ভাষা শিখতে শুরু করেছি এবং যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আবার চীনে যাওয়া এবং ইয়াংসি নদী দেখার আশা পোষণ করছি।’

 

অনেক দর্শক তথ্যচিত্রটি দেখার পর চীনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করার কথা স্বীকার করেছেন। আর্থ-বাণিজ্যিক শিল্পের সঙ্গে জড়িত একজন দর্শক বলেন, ‘তিনটি গিরিখাত প্রসঙ্গে জাপানের তথ্যমাধ্যম একদা রিপোর্ট করেছিল যে সেখানকার অনেক বাসিন্দা বলপ্রয়োগে তাদের বাসা বদলাতে বাধ্য হন। তবে তথ্যচিত্রের মাধ্যমে আমি জানতে পারি যে সেখানকার বাসিন্দারা বাসা বদলানোর পর অন্য রকমের জীবনযাপন করতে এবং যুগের সঙ্গে তাল মেলাতে শুরু করেছেন। এ বিষয়ে আমি মুগ্ধ হয়েছি। আশা করি, আরও বেশি জাপানি লোক প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে এ মুভি দেখবেন এবং সার্বিকভাবে চীন সম্পর্কে জানবেন।’

 

উল্লেখ্য, তথ্যচিত্রটি কেবল তিনটি গিরিখাতের ব্যাপারেই নয়, বরং চীনের উন্নয়ন কীভাবে তার জনগণকে উপকৃত করছে- তাও জাপানিদের উপলব্ধি করার সুযোগ এনে দিয়েছে।

 

বেশ কয়েকজন দর্শক বলেন, তথ্যচিত্রের যে দৃশ্য তাদের মনে সবচেয়ে গভীর দাগ কেটেছে- তা হলো তিব্বতি মেয়ে রেনছিং সিমু’র জীবনের পরিবর্তন। এক জাপানি সাংবাদিক বলেন, ‘দশ বছর আগে নিজের বাসার সামনে বুকে ভেড়া নিয়ে পর্যটকদের সঙ্গে ছবি তুলতেন এ তিব্বতি মেয়ে। দশ বছর আগে সে আকাশচুম্বী ভবন দেখতেন না। তবে দশ বছর পর সে একটি হোটেলের মালিক হয়েছে। তা সত্যিই মনোমুগ্ধকর।’

 

দশ বছর আগে যখন তাকেউচি রিও তিব্বতি মেয়ে রেনছিং সিমু’র চিত্রগ্রহণ করেন, তখন তারা দু’জন ভিন্ন রকমের বিশ্বে থাকতেন। তবে গত দশ বছরে দূরবর্তী অঞ্চলে সবাই স্মার্ট ফোন ব্যবহার করে এবং সমানভাবে একই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ব্যবহার করে। আগের বিচ্ছিন্ন দু’টি জগত একত্রীত হয়েছে। এই বিশাল পরিবর্তন সত্যিই চিত্তাকর্ষক।

 

জাপান-চীন মৈত্রী সমিতির দায়িত্বশীল কর্মকর্তা এ তথ্যচিত্র দেখার পর আবেগের সঙ্গে সাংবাদিকদের বলেন, ‘এ প্রামাণ্যচিত্রের মাধ্যমে আমি আরও বিস্তৃতি ও বৈচিত্র্যময় চীনকে দেখেছি এবং চীনা জনগণের সরলতা ও দয়া দেখেছি। তাই এ তথ্যচিত্র দেখতে আমি সমিতির ৫০০ জনেরও বেশি সদস্যকে আমন্ত্রণ জানাবো। আশা করি, এ তথ্যচিত্র টোকিও ছাড়াও সারা জাপানে প্রদর্শিত হবে।’

 

গত ২৫ মে পর্যন্ত জাপানের বাজারের জন্য বিশেষ করে তাকেউচি রিও’র তৈরি মুভি সংস্করণের চারটি তথ্যচিত্র টোকিওয়ের প্রেক্ষাগৃহে প্রদর্শিত হয়। তাকেউচি রিও বলেন, ‘আমি আশা করি, সবাই নানান দিক থেকে বর্তমান চীনকে জানতে পারবেন। কারণ  আমি বেশ কিছু দেশে গিয়ে শুটিং করেছি, আমি সত্যিই চীনের মতো আকর্ষণীয় এবং অবিশ্বাস্য কোনো দেশ দেখিনি।’

 

লিলি/এনাম/রুবি