আকাশ ছুঁতে চাই পর্ব ২১
2023-06-08 14:20:16

১. চাং কুইফাংয়ের গ্রামে ফেরা

২. আফ্রিকার নারী ও শিশুদের উন্নয়নে চীনের ফার্স্টলেডির ভূমিকার প্রশংসা

৩. নকশি কাছে মিলছে চাকরির সুযোগ

৪. ড্রোন চালিয়ে ভাগ্য ফিরিয়েছেন নুরিমেনগুল

 

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

চাং কুইফাংয়ের গ্রামে ফেরা

চীনের অনেক তরুণ তরুণী এখন গ্রামে ফিরে  গ্রাম পুনর্গঠনে ভূমিকা রাখছেন। এমনি একজন তরুণী চাং কুইফাং। তিনি তার গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি। কিভাবে গ্রামকে নতুনভাবে জাগিয়ে তোলার কাজে ভূমিকা রাখছেন তিনি শুনবো সেই গল্প।

চীনের হ্যনান প্রদেশের ছোট্ট শহর হ্যপি। এখানকার এক গ্রামের নাম সানচিয়া। সানচিয়া গ্রামের কমিউনিস্ট পার্টির সেক্রেটারি এবং ডিরেক্টর হলেন চাং কুইফাং নামে এক তরুণী।

আগে তার কোনো ধারণা ছিল না যে একজন পার্টি সেক্রেটারিকে কতটা পরিশ্রম করতে হয়। তাই সহজেই এই পদে নির্বাচন করতে রাজি হন তিনি।

                                             

চাং কুইফাংয়ের জন্ম নব্বইয়ের দশকে। মাত্র দশ বছর বয়সে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যান তিনি। লেখাপড়া করেছেন থিয়ানচিন এগ্রিকালচারাল ইউনিভার্সিটিতে। 

থিয়ানচিনে একটি বেড অ্যান্ড ব্রেকফাস্ট হোম স্টেও খোলেন তিনি। ২০২০ সালে তিনি জানতে পারেন যে গ্রাম গঠনের জন্য তরুণ প্রজন্মকে যার যার জন্মস্থানে ফিরে নতুন নির্মাণে আহ্বান জানানো হচ্ছে। গ্রাম পুনর্গঠনের জন্য তিনি নিজের জন্মস্থানে ফিরে আসেন। তার পরিবার খুব খুশি হয় এতে।

কিন্তু গ্রামের জন্য কাজ করতে গিয়ে তিনি দেখেন বিষয়টি যত সহজ ভেবেছিলেন ততো সহজ নয়। গ্রামে  পার্টি সেক্রেটারি হওয়ার পর যখন ভীষণ কঠিন পরিশ্রম করতে হয়, গ্রামের মানুষের উন্নয়নে নিজের সবটুকু শ্রম ও মেধা প্রয়োগ করতে হয় তখন তিনি ভেবেছিলেন এই কাজ ছেড়ে আবার শহরে চলে যাবেন। কিন্তু একদিন তিনি শোনেন তার বাবা এক পরিচিত জনের কাছে তার কাজের প্রশংসা করছেন।

মেয়ের জন্য বাবাকে এমন গৌরব বোধ করতে দেখে তিনি অনুপ্রাণিত হন। চাং বলেন,‘আমার বাবা সব সময় খুব গম্ভীর ও সিরিয়াস ধরনের মানুষ। যখন শুনলাম তিনি আমার কাজের প্রশংসা করছেন তখন নতুনভাবে উৎসাহ পাই আমি।’

২০২১ সালে  একটি বড় ঝড় হ্যনানে আঘাত হানে। সানচিয়া গ্রামের অবস্থা খুব খারাপ হয়ে পড়ে। দুর্গত গ্রামবাসীর সেবায় অক্লান্ত পরিশ্রম করেন চাং।

বর্তমানে সানচিয়া গ্রামের চেহারা বদলে গেছে। ২৬. ৬ হেক্টর পতিত জমিতে কুমড়া চাষ প্রবর্তন করেন চাং। সেখানে গ্রামবাসীদের জন্য ৩০টি চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হয়।চাংয়ের নেতৃত্বে গ্রামে রাস্তাঘাট তৈরি হয়েছে, নানা রকম প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। গ্রাম পর্যটন উন্নয়নে বিভিন্ন সৃজনশীল পদক্ষেপ নেন চাং। এখন এই গ্রামে অনেক পর্যটক আসেন। ফলে চাঙা হয়েছে অর্থনীতি। নিজেকে যোগ্য নেতা হিসেবে প্রমাণ করেছেন চাং।

তিনি সমাজের জন্য কাজ করে চলেছেন। চাং এখন চীনের সেইসব তরুণীর প্রতীক হয়ে উঠেছেন যারা গ্রামকে নতুনভাবে গড়ে তোলার জন্য জন্মস্থানে ফিরে এসে কাজ করছেন এবং গ্রামীণ অর্থনীতিকে জাগিয়ে তুলছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদন: রহমান

 

আফ্রিকার নারী ও শিশুদের উন্নয়নে চীনের ফার্স্টলেডির ভূমিকার প্রশংসা

 

আন্তর্জাতিক শিশু দিবস উপলক্ষে ১ জুন চীন জুড়ে ছিল নানা আয়োজন। চীনের বিভিন্ন স্কুলে শিশুদের জন্য আয়োজন করা হয় নানা রকম প্রতিযোগিতা, খেলাধুলা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। বিভিন্ন থিম পার্কে শিশুদের প্রবেশ ছিল ফ্রি। দেশজুড়ে আয়োজিত নানা ইভেন্টে আনন্দে মেতে ওঠে শিশুরা।

এদিকে আফ্রিকার এতিম শিশুদের জন্য গৃহীত একটি উদ্যোগের উদ্বোধন করেন চীনের ফার্স্ট লেডি ফংলি ইউয়ান। আফ্রিকার নারী ও শিশুদের উন্নয়নে ফংলি ইউয়ানের ভূমিকার প্রশংসাও  হয়।

 

আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের আগে  ৩১ মে  চীনের ফার্স্টলেডি ফংলি ইউয়ান ও আফ্রিকান ফার্স্ট লেডিস ডেভেলপমেন্ট ফেডারেশন যৌথভাবে, আফ্রিকার এতিম শিশুদের যত্নে গৃহীত একটি উদ্যোগের উদ্বোধন করে।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে, আফ্রিকান ফার্স্ট লেডিস ডেভেলপমেন্ট ফেডারেশনের পালাক্রমিক সভাপতি নামিবিয়ার ফার্স্টলেডি এবং ফেডারেশনের অন্যান্য সদস্যরা, আফ্রিকার নারী ও শিশুদের উন্নয়নে চীনা ফার্স্টলেডি ফং লি ইউয়ানের ইতিবাচক ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেন।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফং লি ইউয়ান বলেন, চীন আফ্রিকার চিরন্তন বন্ধু এবং আন্তরিক অংশীদার। চলতি বছর হচ্ছে আফ্রিকায় চীন সরকারের প্রথম চিকিৎসাদল বা মেডিকেল টিম পাঠানোর ৬০তম বার্ষিকী। চীনা  মেডিকেল টিমগুলো আফ্রিকার বিভিন্ন দেশের জনগণকে স্বাস্থ্যসেবা দিয়ে আসছে এবং চীন-আফ্রিকা বন্ধুত্বের দূত হয়ে উঠেছে। 

তিনি বলেন, নতুন উদ্যোগ আফ্রিকার এতিম শিশুদের  স্বাস্থ্যের যথাযথ যত্ন নিতে, তাদের কল্যাণ ত্বরান্বিত করতে, এবং চীন-আফ্রিকা অভিন্ন কল্যাণের সমাজ গড়ে তুলতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

নকশি কাছে মিলছে চাকরির সুযোগ

এমব্রয়ডারি বা নকশি কাজের মাধ্যমে চাকরির সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে নারীদের জন্য। ইউননান প্রদেশে এই সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। চলুন শোনা যাক একটি প্রতিবেদনে।

দক্ষিণ পশ্চিম চীনের ইউননান প্রদেশ। এখানে বাস করেন অনেক ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষ। প্রতিটি জাতির রয়েছে নিজস্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য। মিয়াও এথনিক গ্রুপের আছে এমব্রয়ডারি বা নকশি কাজের বৈশিষ্ট্য। মিয়াও এমব্রয়ডারি শুধু সাধারণ নকশা নয়। এর মাধ্যমে মিয়াও জাতির অনেক ইতিহাস ও কিংবদন্তিও তুলে ধরা হয়।

 

মিয়াও এমব্রয়ডারিতে তৈরি পোশাক, ব্যাগ, টুপি, কুশনকাভারসহ নানা রকম সামগ্রীরও চাহিদা আছে। মিয়াও এমব্রয়ডারি মূলত নারীদের শিল্প। মিয়া জাতির নারীরা এই নকশী কাজের বিদ্যা এক প্রজন্ম থেকে অন্য প্রজন্মে ছড়িয়ে দেন। মা , নানী দাদীর কাছ থেকে নকশী কাজ শেখে তরুণ প্রজন্ম।

এই নকশিকাজকে ব্যবহার করে চাকরির সুযোগও তৈরি হচ্ছে। ইউননানের ফিংবিয়ান মিয়াও স্বায়ত্তশাসিত কাউন্টিতে সম্প্রতি আয়োজন করা হয় এক কর্মশালা। এই কর্মশালায় নকশীকাজে দক্ষ মিয়াও নারীরা শিখিয়েছেন অন্যদের। এমব্রয়ডারি ইন্ডাস্ট্রিকে আরও বিকশিত করার জন্য এই কর্মশালার আয়োজন করে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ।

এরমাধ্যমে বাণিজ্যিকভাবে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে ব্যবহার করে মিয়াও নারীদের চাকরির সুয়োগ সৃষ্টি করা হয়।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

ড্রোন চালিয়ে ভাগ্য ফিরিয়েছেন নুরিমেনগুল

চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। এখানকার নারীরা এখন স্বাবলম্বী হচ্ছেন। তারা নিজেদের জীবন গঠনে খুঁজে নিচ্ছেন নতুন নতুন পেশা।  শুনবো একটি প্রতিবেদন।

 

সিনচিয়াংয়ের নারীরা অতীতে শুধু ঘরসংসার আর পরিবারিক কৃষিক্ষেত্রে ব্যস্ত থাকতেন। অর্থ উপার্জন বা নিজস্ব পেশা বেছে নেয়ার তেমন কোন সুযোগ তাদের ছিল না। কিন্তু গত কয়েক বছরে উন্নয়ন প্রক্রিয়ায়  নারীদের সম্পৃক্ত করার ফলে এখন সিনচিয়াংয়ের নারীরা স্বাধীনভাবে বিভিন্ন পেশা গ্রহণ করছেন। তারা নিজের ও পরিবারের অর্থনৈতিক উন্নতি অর্জন করেছেন। এমনি একজন নারী নুরিমেনগুল কাশিম।

চীনের উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের ইয়েনগিসার কাউন্টির এক ছোট্ট গ্রাম কেন্ট’আরিক। এই গ্রামের মেয়ে নুরিমেনগুল কাসিম। তিনি এই গ্রামের প্রথম নারী যিনি ড্রোন চালানো শিখেছেন। স্থানীয় কর্মকর্তাদের সহায়তায় তিনি একটি ড্রোন কিনেছেন। সেই ড্রোন দিয়ে ফসলের মাঠে কীটনাশক, বীজ, সার ইত্যাদি ছিটানোর কাজ নিয়েছেন তিনি।

গ্রামবাসীদের ফসলের ক্ষেতে কীটনাশক, বীজ, সার ছিটিয়ে তিনি আয় করছেন বেশ সন্তোষজনক অর্থ। গেল এক মাসে ৮০০০ ইউয়ান আয় হয়েছে তার। এর ফলে তার পরিবারে বাড়তি আয় যোগ হয়েছে।

নুরিমেনগুল বলেন, ‘আমি আমার এই কাজ বেশ পছন্দ করছি। আমার এই কাজের ফলে পরিবারে অনেক টাকা বাড়তি উপার্জন হচ্ছে।’

এভাবেই নতুন নতুন পেশা বেছে নিচ্ছেন সিনচিয়াংয়ের নারীরা।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল