জুন ৮: ৬ থেকে ৮ জুন পর্যন্ত মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টোনি ব্লিঙ্কেন সৌদি আরব সফর করেন। এর আগে গত এপ্রিলে মার্কিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা ব্যুরোর মহাপরিচালক নিকোলাস বার্নস ও মে মাসে মার্কিন রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা জ্যাক সুলিভান রিয়াদ সফর করেন। প্রশ্ন হচ্ছে: কেন এতো ঘন ঘন সৌদি আরব সফর করছেন মার্কিন কর্মকর্তারা? ব্লুমবার্গ মনে করে, যুক্তরাষ্ট্র তার মিত্রদেশ সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করতে চায়।
ব্লিঙ্কেনের সৌদি আরব সফরের দিনেই মধ্যপ্রাচ্যে দুটো ঘটনা ঘটে, যার একটি হচ্ছে সৌদি আরবে ইরানের দূতাবাস পুনরায় চালু হওয়া। একে সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অগ্রগতির পথে একটি পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। তা ছাড়া, ওই একই দিনে সৌদি আরবের ক্রাউন প্রিন্স ও প্রধানমন্ত্রী মুহাম্মাদ বিন সালমান রিয়াদে ভেনেজুয়েলার প্রেসিডেন্ট নিকোলাস মাদুরোর সঙ্গে বৈঠক করেন। তাঁরা দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা জোরদারের এবং বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারণের কথা বলেন।
দেখা যাচ্ছে, দীর্ঘকালের মিত্রদেশ সৌদি আরব বার বার যুক্তরাষ্ট্রের নির্দেশনা অমান্য করে যাচ্ছে। এ থেকে স্পষ্ট যে, মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের আধিপত্য ক্রমশ শিথিল হচ্ছে। সৌদি আরব ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনঃপ্রতিষ্ঠা নতুন মধ্যপ্রাচ্যের ইঙ্গিত দিচ্ছে। ইতোমধ্যেই তুরস্কের সাথে মিসরের কূটনৈতিক সম্পর্ক আগের চেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়েছে, আরব লিগে সিরিয়া ফিরে এসেছে, এবং জর্দানসহ বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ইরানের সম্পর্ক উষ্ণ হচ্ছে। এতে এক ঐক্যবদ্ধ ও স্বাধীন মধ্যপ্রাচ্য সৃষ্টি হচ্ছে বলে ধারণা করছেন বিশ্লেষকরা।
এমন এক পরিস্থিতি সকল শান্তিকামী মানুষ ও দেশের কাম্য। তবে, যুক্তরাষ্ট্র এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম। ব্লিঙ্কেনের এবারের সফর সম্পর্কে মার্কিন রাষ্ট্রীয় পরিষদের আরব উপদ্বীপবিষয়ক সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড্যানিয়েল বেনাইম বলেন, মধ্যপ্রাচ্যে মার্কিন উপস্থিতি অব্যাহত থাকবে; এখানে মার্কিন প্রতিদ্বন্দ্বীদের আসতে দেওয়া হবে না।
আস্থা একদিনে নষ্ট হয় না। মধ্যপ্রাচ্য ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত নতুন করে চিন্তা করা। তাকে বুঝতে হবে যে, মধ্যপ্রাচ্য পরিস্থিতির উন্নতি রাতারাতি ঘটেনি। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকেই মধ্যপ্রাচ্যে বাইরের শক্তি হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের অবস্থান একচেটিয়া। আধিপত্যবাদ রক্ষার জন্য দীর্ঘসময় ধরে মধ্যপ্রাচ্যে অশান্তি ও সহিসংতা জিইয়ে রেখেছে দেশটি।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের মিত্রদেশগুলোর সাথে যুক্তরাষ্ট্রের ‘তেলের বিনিময়ে নিরাপত্তা’ শীর্ষক সম্পর্ক শিথিল থেকে শিথিলতর হয়েছে। মার্কিন সুদের হার বৃদ্ধির ফলে মিসর ও লেবাননসহ বিভিন্ন দেশের ক্ষতি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্রের মদদে চলমান রুশ-ইউক্রেন সংঘর্ষ মিসরসহ বিভিন্ন দেশের খাদ্যশস্য আমদানিতে সমস্যা সৃষ্টি করছে। মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো উপলদ্ধি করছে যে, যুক্তরাষ্ট্রের ওপর নির্ভরশীল থাকা নিরাপদ নয়; নিজেদের ভাগ্য নিজেদের হাতেই গড়তে হবে।
২০২২ সালে ‘আরবনীতি ও গবেষণাকেন্দ্র’ ১৪টি আরব দেশের ওপর একটি জরিপ চালায়। এতে ৭৮ শতাংশ উত্তরদাতারা মনে করেন, মধ্যপ্রাচ্যের জন্য সর্বোচ্চ হুমকি হচ্ছে যুক্তরাষ্ট্র এবং এতদঞ্চলের অস্থিতিশীলতার উত্সও যুক্তরাষ্ট্র।
মধ্যপ্রাচ্যে সবচেয়ে অজনপ্রিয় চরিত্রে পরিণত হবার পর, মার্কিন সরকার একের পর এক উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সৌদি আরবে পাঠাচ্ছে। এর প্রধান উদ্দেশ্য, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মধ্যপ্রাচ্যের চলমান ভূ-রাজনৈতিক পরিবর্তন ঠেকানো এবং সৌদি আরবের সঙ্গে সম্পর্ক স্থিতিশীল করার মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে নিজের অবস্থান দৃঢ় করা। এই প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র কতোটা সফল হবে বলা মুশকিল। (ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)