‘তারুণ্যের অগ্রযাত্রা’ পর্ব ২১
2023-06-07 14:08:44

‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী।  দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।    

১.

বাংলাদেশের মেয়ে। কিন্তু নাম তার চীন। শুনতে অবাক লাগলেও এটাই সত্যি। মেয়েটি বাংলাদেশ ও চীনের বন্ধুত্বের দূত হতে চায়, এমন ইচ্ছার কথা জানিয়ে চিঠি লেখে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংকে। সম্প্রতি সেই চিঠির উওর দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং। বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে দেশটির উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রীর উপস্থিতিতে এই চিঠির উত্তর পড়ে শোনান বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন। এসময় উপপরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা নির্ভর করে তরুণ প্রজন্মের ওপর।

 

 

 

আলিফা চীন। হ্যাঁ ঠিকই শুনেছেন, বাংলাদেশি এই তরুণীর নাম রাখা হয়েছে চীন দেশের নামের সঙ্গে মিল রেখে। নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে মনে, কেন এই বাঙালি মেয়ের নাম চীন?

 

এই প্রশ্নের উত্তর আপনাকে নিয়ে যাবে এক দশকেরও বেশি সময় আগে, ২০১০ সালে।

 

চীনা গণমুক্তিফৌজের একটি অত্যাধুনিক ভাসমান মেডিকেল জাহাজ, নাম ‘পিস আর্ক’। একটি চিকিৎসক দল বাংলাদেশে আসে এই জাহাজে করে। এরপর জটিল রোগীর সন্ধান করলে চট্টগ্রাম নেভি হাসপাতালের চিকিৎসকরা শারীরিক জটিলতায় ভোগা ওই হাসপাতালেরই একজন স্বাস্থ্যকর্মীর কথা জানান।

 

জান্নাতুল ফেরদৌস নামের ওই অন্তসত্ত্বা নারীর শারীরিক নানা সমস্যার কথা মাথায় রেখে তাৎক্ষণিক চিকিৎসার সিদ্ধান্ত নেন পিস আর্কের মানবিক চিকিৎসকদল।

 

চীনা চিকিৎসকদের সফল অস্ত্রপচারেরর ১২ নভেম্বর জান্নাতুল ফেরদৌস জন্ম দেন এক ফুটফুটে নবজাতকের। এখান থেকেই গল্পের শুরু।

 

আনন্দে আবেগে আপ্লুত হন বাবা-মা। বাংলাদেশে আসা এই ভাসমান চীনা হাসপাতাল, চীনা চিকিৎসক দল ও চীনের প্রতি ভালোবাসা থেকেই মেয়েটির নাম রাখেন ‘আলিফা চীন’। আর সেই থেকেই চীন-বাংলাদেশের ভালোবাসার তরি হয়ে ওঠে আলিফা চীন।

 

জন্মের বছর তিনেক পর আলিফার সঙ্গে দেখা করেন চীনা অস্ত্রপচারকারী ডাক্তার শেন রুইফাং। তাঁর সঙ্গে আলিফার ভীষণ সখ্যতা গড়ে উঠে। ওই সময় থেকেই তাকে চীনা মা বলে ডাকে আলিফা।

 

সঠিক চিকিৎসা আর নিরাপদ জন্মের পরই থেমে থাকেনি চীনা পক্ষের দায়িত্ব।  পরবর্তীতে বাংলাদেশের চীনা দূতাবাস খোঁজ নেয় মেয়েটির, যোগাযোগ করে পরিবারের সঙ্গে। ১৩ বছর বয়সী আলিফা চীন বর্তমানে পড়ালেখা করে চট্টগ্রামের বিএএফ শাহিন কলেজে, ষষ্ঠ শ্রেণীতে। ২০২০ সাল থেকে আলিফা চীনের পড়াশোনাসহ অন্যান্য খরচ বহন করছে চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন কোম্পানি –সিসিসিসি। আর পুরো বিষয়টি তত্ত্বাবধান করছে চীনা দূতাবাস। 

 

চলতি বছর চীনা প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে চিঠি লেখে আলিফা চীন।

 

উচ্চ শিক্ষার জন্য আলিফার পছন্দ চীন। সেখানে পড়ালেখা করে দুইদেশের মানুষের চিকিৎসা সেবায় নিজেকে সম্পৃক্ত করার প্রত্যয় তার।

 

২৯ মে আলিফা চীনের বিশেষ দিন। এদিনই প্রেসিডেন্ট শি চিনপিংকে দেয়া আলিফা চীনের চিঠির উত্তর পড়ে শোনান চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন।

 

চিঠির জবাবে প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং বলেন, মেয়েটির নাম চীন রাখার মধ্য দিয়ে চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কের নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়েছে। বাংলাদেশ চীনের ভালো বন্ধু ভালো প্রতিবেশি উল্লেখ করে এই সম্পর্ককে চীন ও বাংলাদেশের বন্ধুত্বের প্রতীক হিসেবেও উল্লেখ করা হয়।

 

‘তুমি চীন বাংলাদেশের বন্ধুত্বের দূত হতে চাও, তোমার চীনা মায়ের মতো ডাক্তার হতে চাও। এসব জানতে পেরে খুশি হলাম। আমি আশা রাখি, ভালো পড়াশোনা করে তুমি তোমার স্বপ্ন পূরণ করতে পারবে। তোমাকে চীনে স্বাগতম।’

 

বাংলাদেশে অবস্থিত চীনের দূতাবাসের ওই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন দেশটির উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুন ওয়েইতোং। শত ব্যস্ততার মধ্যেও প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং আলিফা চীনের চিঠির উত্তর দিয়েছেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, এর মাধ্যমে বোঝা যায় প্রেসিডেন্ট সি বাংলাদেশ-চীন সম্পর্ককে অনেক গুরুত্ব দেন। পাশাপাশি চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্বের প্রতি তার আন্তরিক প্রত্যাশা এবং তরুণদের প্রতি তার আস্থা রয়েছে।

 

‘সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের অর্থনীতি ও সমাজের নানা বিষয়ে লক্ষণীয় সাফল্য অর্জিত হয়েছে। আমরা এজন্য আনন্দিত। চীন ও বাংলাদেশের মধ্যে প্রবল সহযোগিতা ও পরিপূরকতা রয়েছে। চীন-বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা নির্ভর করে তরুণ প্রজন্মের ওপর। আমরা আন্তরিকভাবে আশা করি যে, দু’দেশের তরুণ প্রজন্ম আরো নিবিড়ভাবে বন্ধুত্বপূর্ণ আদান-প্রদান, শিক্ষা গ্রহণ ও পরস্পরের কাছ থেকে জ্ঞানার্জন করবে, দু’দেশের উন্নয়নের জন্য নিজের প্রতিভা ও শক্তি ব্যবহার করে অবদান রাখবে।’

 

আলিফা চীনের মাধ্যমে বাংলাদেশ চীন বন্ধুত্বের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় হবে বলেও মনে করেন দেশটির উপ পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুন ওয়েইতোং। 

 

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ সাজিদ রাজু

 

২.  বেইজিং বৃত্তিমূলক শিক্ষার প্রসারের প্রচেষ্টা জোরদার করছে

কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, দারিদ্র্য বিমোচন, শ্রমের ঘাটতি পূরণ এবং স্থানীয় অর্থনীতিকে পুনরুদ্ধার করতে দেশ জুড়ে বিশেষ নিয়োগ অভিযান পরিচালনা করছে চীন সরকার। এই প্রকল্পের অংশ হিসেবে সম্প্রতি বেইজিং স্থানীয় সরকার বেশ কয়েকটি উদ্যোগ বাস্তবায়নে কাজ করছে।

শিক্ষাখাতকে সমৃদ্ধ করতে নানা রকম উদ্যোগ নিয়ে থাকে চীন সরকার। সম্প্রতি দেশটি নজর দিয়েছে বৃত্তিমূলক শিক্ষার মান উন্নয়নে। এজন্য বড় পরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে চীনের রাজধানী বেইজিং।  

শিল্প ক্ষেত্রে বিভিন্ন পদে নিয়োগের জন্য সম্প্রতি পাইলট স্কুলের তালিকা প্রকাশ করে বেইজিংয়ের পৌর সরকার। 


শিল্প উন্নয়নের পাশাপাশি বৃত্তিমূলক শিক্ষার বিষয়ভিত্তিক একটি প্রচারমূলক কার্যকলাপের অংশ হিসেবে এই তালিকা প্রকাশ করা হয়।     

এন্টারপ্রাইজ নিয়োগ এবং বৃত্তিমূলক স্কুল তালিকাভুক্তি একসঙ্গে করে, সরকার শিক্ষার্থীদের জন্য যৌথ লালনপালন এবং দ্বৈত মৌলিক ভিত্তি প্রশিক্ষণ মডেল চালু করার পরিকল্পনা করেছে। 

 

বেইজিং ইনফরমেশন টেকনোলজি কলেজ, বেইজিং ভোকেশনাল কলেজ অব লেবার অ্যান্ড সোশ্যাল সিকিউরিটি এবং বেইজিং ভোকেশনাল ট্রান্সপোর্টেশন কলেজ এই তিনটি পাইলট স্কুল তালিকায় স্থান পায়। যারা মূলত নতুন প্রশিক্ষণ মডেলের নেতৃত্ব দিতে সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রে নেতৃস্থানীয় উদ্যোগের সাথে সহযোগিতা করবে। 

 

বেইজিং ইনফরমেশন টেকনোলজি কলেজ এবং বেইজিং ইয়ানতং মাইক্রোইলেক্ট্রনিক্স কোম্পানির মধ্যে সহযোগিতা প্রকল্পের মতো এই স্কুলগুলোর বেশ কয়েকটি প্রধান প্রতিষ্ঠান এরইমধ্যে নতুন ছাত্রদের তালিকাভুক্তি শুরু করেছে।

এই প্রসঙ্গে বেইজিং ইনফরমেশন প্রযুক্তি কলেজের অধ্যক্ষ, লু সিয়াওফিং বলেন,

"এই প্রজেক্টটি আসলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যত চাকরি আগে থেকেই তাদের প্রস্তুত করছে। আমরা যে এন্টারপ্রাইজগুলি বেছে নিয়েছি তা হল বেইজিংয়ের সর্বোচ্চ স্তরের এবং সবচেয়ে প্রতিনিধিত্বমূলক উদ্যোগ, তাই, তারা শিক্ষার্থীদের কাছে খুব আকর্ষণীয় "।

 

বেইজিং ভোকেশনাল ট্রান্সপোর্টেশন কলেজে, প্রোগ্রামটির প্রশিক্ষণের ভিত্তি হল এর আধুনিক শিল্প বিভাগ। বৃত্তিমূলক শিক্ষার মান উন্নয়নে এ পর্যন্ত ভিত্তিমূলক ছয়টি প্রকল্প চালু করা হয়েছে।

প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদকঃ হাবিবুর রহমান অভি

 

আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।

 

পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল

সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে