এবারের পর্বে রয়েছে
১. আধুনিক প্রযুক্তি ধানের উৎপাদন বাড়িয়েছে কয়েকগুণ
২. আপেলের গুণগত মান নিশ্চিত করছে কৃষি প্রযুক্তি
৩. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে চীন সরকার
বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।
কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।
১. আধুনিক প্রযুক্তি ধানের উৎপাদন বাড়িয়েছে কয়েকগুণ
আগে যেখানে কয়েক হেক্টর জমি আবাদ করতে অনেক সময় লেগে যেত কৃষকদের, তারা এখন প্রযুক্তির সহায়তায় কয়েকশো হেক্টর জমিতে চারা রোপন করছেন। প্রযুক্তির এই সুফল জানার পর অনেকেই ঝুঁকছেন কৃষি কাজে। আর কৃষকদের এ ধরনের কাজে সব ধরনের সহযোগিতা নিয়ে পাশে রয়েছে চীন সরকার।
চীনজুড়ে বড় পরিসরে সবুজায়নের পেছনে অবদান রয়েছে আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতির। শস্য উৎপাদন থেকে শুরু করে, ফসল ঘরে তোলা পর্যন্ত প্রায় প্রতিটি পর্যায়ে ছোঁয়া থাকে প্রযুক্তির।
এই যেমন আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি পাল্টে দিয়েছে চীনের আনহুই প্রদেশের কৃষি চিত্র। এখানকার উহু সিটির জমিগুলো পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে প্রযুক্তির মাধ্যমে। সব মিলিয়ে ভালো জাতের ধান উৎপাদন সম্ভব হচ্ছে এখানে।
রোগ বালাই মোকাবিলা, মাটির উর্বরতা এবং কৃষি আবহাওয়াসহ ধানের জীবনচক্রের উপর বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করতে পারে আধুনিক প্রযুক্তি। স্থানীয় কৃষকরা এখন ডেডিকেটেড মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করে চাষাবাদ করছেন। এই উদ্ভাবন উল্লেখযোগ্যভাবে চাষের দক্ষতা বাড়িয়েছে আর উৎপাদন হয়েছে দশগুণ বেশি।
কুই ওয়ানফা নামের এই কৃষক জানিয়েছেন আধুনিক প্রযুক্তি কতটা কাজে এসেছে।
কুই ওয়ানফা, কৃষক
"আগে চার থেকে পাঁচ জন মানুষ মিলিয়ে ১৩ হেক্টর জমি চাষ করতে পারতো। আধুনিক প্রযুক্তির সহযোগিতায় এখন একই সংখ্যক মানুষ চাষ করতে পারছেন প্রায় ২০০ হেক্টর জমি।"
ধানের চারা বোনা থেকে শুরু করে সব ধরনের কাজেই প্রযুক্তি সহায়তা নিতে পারছেন তিনি। আর এজন্য থাকতে হয় সার্বক্ষণিক ইন্টারনেট সংযোগ।
"আগে আমার বাবা প্রচলিত পদ্ধতিতে কৃষিকাজ করতেন। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করেও তার লাভ হতো সামান্য। আমি নিজে দেখেছি সংসার চালাতে বাবার সত্যিই খুব কষ্ট হতো। তবে ২০১৮ সাল থেকে আমি জমিতে উচ্চ প্রযুক্তির যন্ত্রপাতির ব্যবহার শুরু করি। এর মাধ্যমে একরকম যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে কৃষি জমিতে। সম্প্রতি আমি চেষ্টা করছি স্মার্ট প্রযুক্তির আওতায় আমার জমিগুলোকে নিয়ে আসার। এতে একদিকে যেমন সময় কম লাগছে, তেমনি লাভ হচ্ছে কয়েকগুণ। ভবিষ্যতে চীনের কৃষি জগতে উজ্জ্বল সম্ভাবনা দেখছি।"
কুই ওয়ানফার এই সফলতার গল্প উৎসাহিত করেছে একশোরও বেশি কৃষককে। স্থানীয় একজন কৃষি কর্মকর্তা শি ইয়ুনফে জানিয়েছেন কৃষি বিভাগের পরিকল্পনার কথা।
"এবছর আমাদের লক্ষ্য হলো প্রায় ১৯ হাজার হেক্টর ধানের কৃষি জমিকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন প্রযুক্তির আওতায় আনা। আমাদের সরকারের বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনায় কৃষিক্ষেত্রে আধুনিক প্রযুক্তিকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। মানসম্মত উৎপাদন বাড়াতে আমরা প্রযুক্তির সবশেষ সংস্করণ ব্যবহার করব।"
কৃষিক্ষেত্রে নিত্য নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে পুরো বিশ্বকে প্রতিনিয়ত চমকে দিচ্ছে চীন। পরিবেশবান্ধব এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশও এখন অনুসরণ করছে চীনের পথ।
প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি
সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
২. আপেলের গুণগত মান নিশ্চিত করছে কৃষি প্রযুক্তি
পূর্ব চীনের শানতুং প্রদেশের ছিসিয়া সিটি হলো চীনের অন্যতম বড় আপেল চাষের এলাকা। এখানকার বেশিরভাগ আপেল বাগানে ব্যবহার করা হচ্ছে স্মার্ট প্রযুক্তি। ডিজিটাল ম্যানেজমেন্টের ফলে এখানকার আপেলের গুণগত মান যেমন বাড়ছে তেমনি বিক্রির ক্ষেত্রেও সুবিধা হচ্ছে।
রসালো আপেলগুলো দেখতে যেমন চমৎকার তেমনি খেতেও সুস্বাদু। শানতুং প্রদেশের ছিসিয়া সিটির বিভিন্ন আপেল বাগানে এমন আপেলের দেখা মিলছে। এগুলো গুণে মানে সেরা আপেল। এই এলাকায় রয়েছে চীনের অন্যতম বড় আপেল চাষ এলাকা।
এগুলো স্মার্ট আপেল খামার। ডিজিটাল পদ্ধতিতে এখানে আপেলের গুণগত মান ও আকার রক্ষা করা হয়।
রসালো আপেল পেতে হলে প্রাকৃতিক সম্পদ এবং ডিজিটাল ব্যবস্থাপনার সমন্বয় দরকার। এই খামারে স্মার্ট প্রযুক্তির মাধ্যমে আপেলের গুণগতমান নিয়ন্ত্রণ করা হয়। কখন পানি দরকার আর কখন সার দিতে হবে সেটা ডিজিটাল মনিটরিংয়ের মাধ্যমে স্থির করা হয়।
এসব খামারে লাইভ স্ট্রিমিংয়ের মাধ্যমে বাগান থেকে সরাসরি আপেল সরবরাহ করা হয়। এখান থেকে আপেল কেনা, বাজারে সরবরাহ সবকিছুই হয় স্মার্ট প্রযুক্তিতে।
আপেল বাগানে স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে গ্রামীণ কৃষির যেমন উন্নতি হচ্ছে তেমনি আয়ও বাড়ছে। গ্রাম উন্নয়ন ও দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে এই স্মার্ট আপেল খামারগুলো। কৃষিখাতকে সমৃদ্ধ রাখতে চীনের এই পথ অনুসরণ করছে বিশ্বের অন্যান্য দেশ।
৩.খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে কাজ করছে চীন সরকার
বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে চীন। আর পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করছে নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য। দর্শক, আমাদের এ পর্বে আপনাদের জানাবো কৃষিখাতকে কতটা গুরত্ব দিয়ে থাকে উন্নয়নে অগ্রগামী দেশ চীন। নাজমুল হক রাইয়ান।
দেশটির কৃষি ও গ্রামীণ বিষয়ক মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, গেল বছর বড় পরিসরে এরকম উচ্চমানের কৃষি জমি তৈরি করা হয়েছে, যার পরিমাণ প্রায় সাত মিলিয়ন হেক্টর।
বছর চারেক আগে দেশটির কৃষি বিভাগ থেকে পরিকল্পনা নেয়া হয়েছিল ২০২২ সালের মধ্যে এক বিলিয়ন মু অর্থাৎ প্রায় ৬৬.৭ মিলিয়ন হেক্টর উচ্চ-মানের কৃষিজমি প্রস্তুত করা।
নতুন বছরে দেশটির লক্ষ্য ৪৫ মিলিয়ন মু বা প্রায় তিন মিলিয়ন হেক্টর নতুন উচ্চ-মানের কৃষিজমি তৈরি করা এবং একইসঙ্গে ৩৫ মিলিয়ন মু বা প্রায় ২.৩৩ মিলিয়ন হেক্টর উচ্চ-মানের কৃষিজমি আপগ্রেড করা।
চীনে উচ্চমানের কৃষি জমির আয়তন এখন দেশের মোট আবাদি জমির অর্ধেকেরও বেশি।
আর এভাবেই বিশ্বের সবচেয়ে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে কৃষি ক্ষেত্রকে প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ করছে চীন। আর পর্যাপ্ত খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করছে নিজ দেশের নাগরিকদের জন্য।
প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি
সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান
এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।
এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।
শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী