বিজ্ঞানবিশ্ব ২১তম পর্ব
2023-06-05 15:06:16

২১তম পর্বে যা থাকছে:

* নিজস্ব প্রযুক্তির বিমান এনে বিশ্বকে তাক লাগাল চীন!

* চংকুয়ানছুন ফোরামে ২০টি প্রধান বৈজ্ঞানিক অর্জন উন্মোচন

* মহাকাশ গবেষণায় একাধিক নজির স্থাপন করেছে শেনচৌ-১৫’র মহাকাশচারীরা

 

নিজস্ব প্রযুক্তির বিমান এনে বিশ্বকে তাক লাগাল চীন!

অসীম আকাশ থেকে গহীন সমুদ্র। সবত্রই পশ্চিমাদের টেক্কা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে চীন। পাল্লা দিয়ে এগোচ্ছে প্রযুক্তি নানা খাত। এবার মার্কিন প্রতিষ্ঠান বোয়িং ও ইউরোপীয় বিমান নির্মাতা এয়ারবাসের সাথে প্রতিযোগিতায় নেমেছে দেশটি। নিজেরাই তৈরি করেছে যাত্রীবাহী জেট বিমান। সম্প্রতি প্রথম বানিজ্যিক ফ্লাইটে ১৩০ জন যাত্রী নিয়ে চীনের সাংহাই থেকে বেইজিং পৌঁছায় চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্স পরিচালিত সি-৯১৯ মডেলের বিমানটি। আর এর মাধ্যমেই বিমান তৈরির স্বপ্ন বাস্তবায়িত হলো চীনের।

সাংহাইয়ের হংছিয়াও আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর। তখন স্থানীয় সময় সকাল ১০ টা ৪৫ মিনিট। ১৩০জন যাত্রী নিয়ে বেইজিংয়ের উদ্দেশ্যে রওনা হলো চীনের প্রথম যাত্রীবাহী বিমান সি-৯১৯। গন্তব্য বেইজিংয়ের ক্যাপিটাল এয়ারপোর্ট। এটি ছিল চীনের প্রথম নিজস্ব যাত্রীবাহী বিমানের প্রথম বাণিজ্যিক ফ্লাইট ।

সম্প্রতি এই ফ্লাইটের মাধ্যমেই আকাশে পশ্চিমা প্রতিদ্বন্দ্বীদের সাথে সহাবস্থানের সূচনা হয় চীনের। কয়েক দশকের দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর এ সফলতা পেল চীন। 

এই উড়োজাহাজ তৈরি করেছে কমার্শিয়াল এয়ারক্রাফ্ট কর্পোরেশন অব চায়না (কোম্যাক) । এয়ারবাস ও বোয়িংয়ের একক আধিপত্য কমানোর প্রত্যাশা নিয়েই এই উড়োজাহাজ তৈরি করেছে চীন। আর প্রথম ফ্লাইটে যাত্রা করে নিজেদের গর্বিত মনে করছেন বিমানে যাত্রা করা যাত্রীরা।

এক যাত্রী বলেন, "প্রকল্পটি চালু হওয়ার এক দশকেরও বেশি সময় হয়ে গেছে। একজন ভক্ত হিসাবে, আমি এটির জন্য অনেক দিন ধরে অপেক্ষা করছিলাম। তাই বিমানে উঠতে পেরে আমি উচ্ছ্বসিত।" 

আগামী পাঁচ বছর বার্ষিক দেড়শ’ বিমান তৈরির পরিকল্পনা আছে কোম্যাকের। এরইমধ্যে ১২০০ বিমানের ক্রয়াদেশও পেয়েছে এই নির্মাতা প্রতিষ্ঠান।

চীনের আকাশে আরও সি-৯১৯ দেখার স্বপ্ন প্রথম ফ্লাইটে অবতরণ করা যাত্রীদেরও।

"আমি খুবই সৌভাগ্যবান। কেননা আমি এই ফ্লাইটে প্রথম চেক ইন ও যাত্রা করতে পেরেছি। এই যাত্রার পুরো সময় আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম। এই যাত্রাটা ছিল খুব স্বস্তির। আমি প্রত্যাশা করি চীনের নীল আকাশে আরও সি-৯১৯ উড়বে,” বলেন আরেক যাত্রী।

উড়োজাহাজটি ২০১৫ সালে উৎপাদন লাইন থেকে বের হয় এবং ২০১৭ সালে প্রথম সফলভাবে উড্ডয়নে অংশ নেয়। ২০১৯ সাল থেকে চীনের সাংহাইসহ বিভিন্ন স্থানে ছয়টি সি-৯১৯ জেট বিমানের ধারাবাহিক স্থল ও ফ্লাইট টেস্ট পরিচালনা করা হয়। কোম্যাকের তথ্য অনুসারে, ১৯ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ হয় ছয়টি উড়োজাহাজের পরীক্ষামূলক ফ্লাইট ।

চীনের অন্যতম বৃহত্তম এয়ারলাইন্স চায়না ইস্টার্ন গত বছরের মার্চে পাঁচটি সি-৯১৯ জেটলাইনার কেনার চুক্তি স্বাক্ষর করে। এটি ছিল এ উড়োজাহাজ বিক্রির প্রথম চুক্তি। চায়না ইস্টার্ন কর্তৃপক্ষ বলছে, সি-৯১৯ উড়োজাহাজ দিয়ে শাংহাই থেকে বেইজিং, কুয়াংচৌ, শেনচেন, ছংতু, সিয়ামেন, উহান ও ছিংতাওসহ চীনের প্রধান শহরগুলোতে ফ্লাইট পরিচালনা করা হবে।

 

|| প্রতিবেদন: আফরিন মিম

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

চংকুয়ানছুন ফোরামে ২০টি প্রধান বৈজ্ঞানিক অর্জন উন্মোচন

 

নতুন প্রজন্মের কৃত্রিম সূর্য, সোডিয়াম-আয়ন ব্যাটারি ও ভাজ করে রাখা যায় এমন কাঁচের মতো মোট ২০টি প্রধান বৈজ্ঞানিক অর্জন তুলে ধরা হয় সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত চংকুয়ানছুন ফোরামের সমাপনী অনুষ্ঠানে। জনস্বাস্থ্য থেকে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পর্যন্ত বিভিন্ন হাই-টেক পণ্যের পসড়া সাজাতে সক্ষম হওয়ায় নানা মহল থেকে প্রশংসা কুড়িয়েছে ফোরামের আয়োজকরা।

চংকুয়ানছুন ফোরামের শেষদিনে তুলে ধরা হলো কার্বন নিরপেক্ষতা লক্ষ্য, খাদ্য ও জ্বালানী নিরাপত্তা, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, বায়োমেডিসিন, মহাকাশ সংক্রান্ত বিশটি বড় বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিগত অর্জন। 

এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ছিলো চীনের নিজেদের তৈরি করা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পন্ন সেগ জিপিটি। এটি একটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রযুক্তি যা শুধু চীনেই নয়, পুরো বিশ্বেই একটি আলাদা স্বীকৃতি ও মর্যাদা লাভ করেছে।

বেইজিং একাডেমি অব আর্টিফিশিয়াল ইন্টিলিজেন্সের প্রেসিডেন্ট হুয়াং থেইচুন বলেন সাধারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঠিক অগ্রভাগেই অবস্থান করছে সেগজিপিটি।

তিনি বলেন, “আমি বিশ্বাস করি চালকবিহীন গাড়ি, রোবোটিক্স ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন অন্যান্য সেবাগুলোকে বেগবান করবে এই সেগজিপিটি। শিল্পখাত ও পারিবারিক অঙ্গনে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘঠাতেও সাহায্য করবে এটি।”

সমাপনী অনুষ্ঠানে মাত্র কয়েক মিনিটের মধ্যে প্রধান অর্জনগুলো তুলে ধরা হয়। তবে এসব অর্জনের পেছনে আছে চীনা বিজ্ঞানীদের কয়েক দশকের নিরলস প্রচেষ্টা। সাম্প্রতিককালে উদ্ভাবনের জন্য নীতিগত সহায়তাও বাড়িয়েছে চীন।

চায়না ন্যাশনাল নিউক্লিয়ার করপোরেশনের সাউথ ওয়েস্টার্ন ইনস্টিটিউট অফ ফিজিক্সের প্রেসিডেন্ট লিউ ইয়ং বলেন, চীনা প্রযুক্তির প্রায় সব দিক তুলে ধরছেন তারা।

তিনি বলেন, “এই ফোরামটি চীনা প্রযুক্তির প্রায় সব দিক তুলে ধরেছে। পাশাপাশি পারমাণবিক শক্তির উদ্ভাবনী উন্নয়নে আমাদের আস্থা বাড়িয়েছে এই ফোরাম।”

ফোরামে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিকাশ অব্যাহত রাখতে ২০টিরও বেশি পদক্ষপ নেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন এই পদক্ষেপগুলো কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উন্নয়নকে আরো বেগবান ও শক্তিশালী করবে।

এদিকে ইন্নোকেয়ার ফার্মা’র বায়োলোজি এন্ড বিজনেস ম্যানেজমেন্টের ভাইস প্রেসিডেন্ট লিউ রুইছিন বলেন, এই ফোরাম তাদের দিয়েছে নতুন নতুন উদ্ভাবন সম্পর্কে মানুষকে জানানোর সুযোগ।

তিনি বলেন, “চংকুয়ানছুন ফোরামের মাধ্যমে আমরা আমাদের উদ্ভাবনী পণ্যগুলি প্রদর্শন করার সুযোগ পেয়েছি। বায়োমেডিসিন শিল্প কতটুকু এগিয়ে গেছে তা এখানে অংশগ্রহন করে সহজেই অনুভব করা যায়।”

চংকুয়ানছুনের অর্থ হলো ‘চীনের সিলিকন ভ্যালি’। একে বেইজিংয়ের উদ্ভাবন কেন্দ্রও বলা হয়ে থাকে। ২০০৭ সাল থেকে শুরু হওয়া চংকুয়ানছুন ফোরাম একটি জাতীয় পর্যায়ের উদ্ভাবন প্ল্যাটফর্ম। তবে বর্তমানে এটি একটি আন্তর্জাতিক ফোরামে পরিণত হয়েছে। এবারের ফোরামে ৮০টিরও বেশি দেশ ও অঞ্চলের দর্শনার্থীরা ভিড় জমান।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

মহাকাশ গবেষণায় একাধিক নজির স্থাপন করেছে শেনচৌ-১৫’র মহাকাশচারীরা

 

সম্প্রতি চীনের থিয়ানকং মহাকাশ কেন্দ্র থেকে পৃথিবীতে ফিরে এসেছে শেনচৌ-১৫’র তিন নভোচারী। চায়না ম্যানড স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে, রোববার সকালে চীনের অন্তর্মঙ্গোলিয়া স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের তংফেংয়ে অবতরণ করেন ফেই চুন লুং, তেং ছিংমিং এবং চাং লু। গত ৬ মাস তারা থিয়ানকং মহাকাশকেন্দ্রে গবেষণামূলক নানা পরীক্ষা চালিয়ে নজির স্থাপন করেছেন, পাশাপাশি গড়েছেন স্পেসওয়াকের নতুন রেকর্ড।

গত ছয় মাস শেনচৌ-১৫’র মহাকাশচারীরা তাদের অধিকাংশ সময়ই কাটিয়েছেন মহাকাশ স্টেশনের নির্মাণ-পর্বের চূড়ান্ত কাজের ধারাবাহিক দায়িত্ব পালনে। তবে এর পাশপাশি বেশ কিছু নজিরও স্থাপন করেছেন তারা। ঘুরে তাকালে দেখা যায়, প্রাপ্তির ঝুলিতে যোগ হয়েছে বেশ কয়েকটি সাফল্য। 

স্পেস স্টেশনে থাকাকালীন তিন মহাকাশচারী চারটি এক্সট্রাভেহিকুলার অ্যাক্টিভিটিস (ইভিএ) সম্পন্ন করেছেন, যা স্পেসওয়াকে চীনা মহাকাশচারীদের জন্য নতুন রেকর্ড।

চীনের তৈরি দুই-ফোটন মাইক্রোস্কোপ দিয়ে ইন-অরবিট যাচাই পরীক্ষাও সফলভাবে সম্পন্ন করেছেন মহাকাশচারীরা। পাশাপাশি তারা একটিউ ফ্রি পিস্টন থার্মোইলেক্ট্রিক কনভার্টারও পরীক্ষা করেছেন।

স্টিয়ারলিং থার্মোইলেক্ট্রিক কনভার্টার মহাকাশযানের নতুন শক্তি সরবরাহের প্রধান প্রযুক্তি। এর গঠন খুবই সাধারণ এবং ওজনে খুবই হালকা। এর আরো দুটি ভালো দিক হলো এটিতে শব্দ ও কম্পন খুবই কম হয়। এটি খুবই দক্ষতার সাথে তাপশক্তিকে বৈদ্যুতিক শক্তিতে রূপান্তর করতে পারে। এতে সৌর শক্তির উপর মহাকাশযানের নির্ভরতা অনেকটাই কমে আসে। সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, মনুষ্যবাহী ও গভীর মহাকাশ গবেষণা মিশনগুলোতে এই প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা প্রবল।

চায়না ম্যানড স্পেস এজেন্সি জানিয়েছে, গত শুক্রবার শেনচৌ ১৬’র ক্রু মেম্বারদের মহাকাশকেন্দ্রের সব দায়িত্ব বুঝিয়ে দিয়েছে শেনচৌ ১৫’র ক্রু মেম্বাররা।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

অডিও সম্পাদনা - রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা: সাজিদ রাজু, শিহাবুর রহমান

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী