এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও তিব্বতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর তিব্বত সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা তিব্বত নিয়ে কথা বলব।
পূর্ব গোলার্ধের জলবায়ুর ‘নিয়ন্ত্রক’
ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি এশিয়ার মধ্যাঞ্চলে, মাঝারি ও নিম্ন অক্ষাংশে অবস্থিত। এর অধিকাংশ অঞ্চলই পড়েছে উত্তর অক্ষাংশের ২৭ থেকে ৩৫ ডিগ্রির মধ্যে। এর মোট আয়তন ২৩ লাখ বর্গকিলোমিটার এবং সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে গড় উচ্চতা ৪৫০০ মিটার।
ভূখণ্ডের বিশালতা ও উচ্চতার কারণে ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির সাথে বিশ্বের অন্যান্য মালভূমির তুলনা চলে না। ছিংহাই-তিব্বত মালভূমি নিজের উচ্চতার কারণে, উত্তর গোলার্ধের পশ্চিমা বায়ুর পূর্ব দিকে যাওয়া এবং পূর্ব এশিয়ার মৌসুমি বায়ু নিয়ন্ত্রকের ভূমিকা পালন করে। ছিংহাই-তিব্বত মালভূমিকে চীন এবং পূর্ব গোলার্ধের জলবায়ুর ‘নিয়ন্ত্রক’ বলে অভিহিত করা হয়।
>> এয়ারফ্লো ব্রাঞ্চিং ও কনভারজেন্সের প্রভাব
শীতকালে ঠাণ্ডা আবহাওয়ার কারণে, উত্তর গোলার্ধের পশ্চিমা বায়ু দক্ষিণে প্রবাহিত হয়। বিশাল ও উচুঁ ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির কারণে, ৪০০০ মিটার নিচে পশ্চিম বায়ু দক্ষিণ ও উত্তরে দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে প্রবাহিত হয়। এর প্রভাব পড়ে মালভূমির উত্তরাঞ্চলে এবং সিনচিয়াংয়ের মধ্যাঞ্চলীয় থিয়ানশান অঞ্চলের ওপর। এ প্রভাবের মধ্যে আছে, এতদঞ্চলে কিছুটা আর্দ্রতার সৃষ্টি হওয়া।
দক্ষিণের বায়ুর প্রবাহ ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির দক্ষিণ-পশ্চিমে একটি উত্তর-পশ্চিম বায়ুপ্রবাহ গঠন করে, যা দক্ষিণ এশিয়ার শুষ্ক উত্তর-পশ্চিম অংশকে আরও শুষ্ক করে তোলে। এরপরে, বায়ুপ্রবাহ মালভূমির দক্ষিণ দিককে বাইপাস করে, একটি দক্ষিণ-পশ্চিম বায়ুপ্রবাহে পরিণত হয়। চীনের ইয়ুন-কুই মালভূমি অতিক্রম করার পরে, এটি ইয়াংজি নদীর মধ্য ও নিম্ন সীমা পর্যন্ত উত্তর-পূর্ব দিকে অগ্রসর হতে থাকে। নিম্ন অক্ষাংশ থেকে এই উষ্ণ বায়ুপ্রবাহ চীনের চিয়াং নান অঞ্চলে ‘উষ্ণ শীত’ আবহাওয়া গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ। এই দুটি বায়ুপ্রবাহ ইয়াংজি নদীর মাঝখানে এবং নিম্ন প্রান্তে পূর্ব দিকে একত্রিত হয়, যা উত্তর গোলার্ধের সবচেয়ে শক্তিশালী পশ্চিমাঞ্চলীয় বেল্ট গঠন করে। এই পশ্চিমী বায়ু পূর্ব চীনের আবহাওয়া পরিবর্তনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। একই সময়ে, ছিংহাই-তিব্বত মালভূমির পূর্ব দিকে সিছুয়ান বেসিন ও হানচুং অঞ্চল ঠিক এই দুটি উত্তর-দক্ষিণ বায়ুপ্রবাহের মধ্যে পড়েছে। এখানে বাতাস দুর্বল এবং বায়ু স্থিতিশীল। এখানে মেঘলা ও কুয়াশাচ্ছন্ন দিনের সংখ্যা বেশি।
গ্রীষ্মকালে, উত্তর গোলার্ধের পশ্চিমাঞ্চলীয় বায়ু উত্তরে প্রবাহিত হয় এবং প্রশান্ত মহাসাগর থেকে দক্ষিণ-পূর্ব মৌসুমী বায়ু দ্রুত উত্তর দিকে অগ্রসর হয়। এতে ঘন ঘন ঘূর্ণিঝড় হয়, যা ইয়াংজি নদীতে বর্ষার ভিত্তি সৃষ্টি করে। অক্টোবরের পরে, পশ্চিমাঞ্চলীয় বায়ুপ্রবাহ ধীরে ধীরে দক্ষিণে সরে যায়।
প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা: https://bengali.cri.cn/ সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন। (উর্মি/আলিম)