জুন ২: গতকাল (বৃহস্পতিবার) চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় বেইজিংয়ে এক নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলন আয়োজন করেছে। মুখপাত্র সু ইয়ু থিং চীন-মার্কিন আর্থ-বাণিজ্যিক সম্পর্ক, এশিয়া ও প্যাসিফিক সহযোগিতা সংস্থা এপেকের বাণিজ্যমন্ত্রী সম্মেলনের সুফলসহ বিভিন্ন বিষয়ে সাংবাদিকের প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন। সাংবাদিক সম্মেলনে মুখপাত্র সু ইয়ু থিং উল্লেখ করেন, এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলের সমৃদ্ধি, স্থিতিশীলতা ও উন্মুক্ত অর্থনৈতিক উন্নয়ন এবং সহযোগিতার ভিত্তিতে সম্ভব হবে। চীন রুদ্ধদ্বার ও বৈরিতামূলক ‘ছোট চক্রের’ বিরোধিতা করে।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটের তথ্য অনুযায়ী, এবার এপেকের বাণিজ্যমন্ত্রী সম্মেলন চলাকালে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন থাও এবং মার্কিন বাণিজ্যমন্ত্রী গিনা রেইমন্ডো চীন-মার্কিন বাণিজ্য সম্পর্ক এবং অভিন্ন স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে আন্তরিক, পেশাদার ও গঠনমূলক বিনিময় করেছেন। চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন আর্থ-বাণিজ্যিক নীতি, সেমি-কন্ডাক্টর নীতি, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা, বৈদেশিক পুঁজি বিনিয়োগ যাচাইসহ বিভিন্ন বিষয়ে চীনের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এদিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নিয়মিত সাংবাদিক সম্মেলনে সু ইয়ু থিং বলেন,
যুক্তরাষ্ট্রের ‘চিপ ও বিজ্ঞান আইন’সহ সেমি-কন্ডাক্টর শিল্পের নীতি এবং রপ্তানির নিষেধাজ্ঞা নিয়ে চীন অনেক উদ্বেগ প্রকাশ করে। যা চীনা বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন থাও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল। দু’পক্ষ এসব বিষয়ে গভীরভাবে মতবিনিময় করেছে এবং পরবর্তীতে আলোচনার জন্য একমত হয়েছে।
সম্মেলনকালে দুইপক্ষ একমত হয়েছে যে, যোগাযোগের পদ্ধতি স্থাপন করা, আর্থ-বাণিজ্যের বিস্তারিত বিষয় এবং সহযোগিতার বিষয়ে বিনিময় জোরদার করা উচিত।
বুধবার টেসলার সিইও ইলোন মাস্ক চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন থাও-এর সঙ্গে সাক্ষাত্ করেছেন। দু’পক্ষ চীন-মার্কিন আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতাসহ বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপকভাবে মতবিনিময় করেছে। এর আগে মন্ত্রী ওয়াং ওয়েন থাও শাংহাই শহরে আলোচনা আয়োজন করে, জনসন, থ্রিএমসহ বিভিন্ন মার্কিন পুঁজি প্রতিষ্ঠানের চীনে ব্যবসার অবস্থা এবং চীনের বাণিজ্যিক পরিবেশ সুসংহত করায় তাদের মতামত শুনেছেন। চীন ও যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিক আর্থ-বাণিজ্যিক বিনিময় বিভিন্ন পক্ষ লক্ষ্য করেছে। এই সম্বন্ধে মুখপাত্র সু ইয়ু থিং বলেন,
চীন আশা করে, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে পারস্পরিক সম্মান, সহাবস্থান ও সহযোগিতা করে যৌথ কল্যাণের ভিত্তিতে, মতভেদ নিয়ন্ত্রণ করবে, যৌথভাবে দু’দেশের আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতা জোরদার করবে, দু’দেশ ও দু’দেশের জনগণের জন্য কল্যাণ আনবে এবং বিশ্ব অর্থনীতির উন্নয়ন এগিয়ে নেবে।
এবার এপেকের বাণিজ্যমন্ত্রীদের সম্মেলনকালে চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী ওয়াং ওয়েন থাও চিলি, নিউজিল্যান্ড, সিংগাপুরসহ সদস্য দেশগুলোর প্রতিনিধির সঙ্গে চীন ও ‘ডিজিটাল অর্থনীতি অংশীদারি সম্পর্ক চুক্তি অর্থাত্ ডিইপিএ’ সদস্যদেশের মন্ত্রী পর্যায়ের সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন। সু ইয়ু থিং বলেন, বর্তমানে চীনের বেশ কিছু জায়গা সক্রিয়ভাবে ডিইপিএ’র সঙ্গে যোগাযোগ করছে এবং কিছু প্রকল্পে অগ্রগতি অর্জিত হচ্ছে।
সু ইয়ু থিং বলেন, চীন আশা করে, সদস্য দেশ হওয়ার আলোচনায় বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাস্তব সহযোগিতা জোরদার করা যাবে, বিভিন্ন প্রকল্প আরো দ্রুত বাস্তবায়িত হবে। ডিইপিএ সদস্য দেশ চীনের কাজের ভূয়সী প্রশংসা করেছে, তারা চীনের সঙ্গে সার্বিকভাবে বিভিন্ন স্তরের আলোচনা জোরদার করা, ডিজিটাল অর্থনীতি সংশ্লিষ্ট সহযোগিতা বাড়ানো এবং আরো বেশি সহযোগিতার সুযোগ আবিষ্কার করতে চায়।
২০২১ সালের ১ নভেম্বর চীন আনুষ্ঠানিকভাবে ডিইপিএ-তে যোগ দেয়ার আবেদন জানায়। এরপর সদস্য দেশের সঙ্গে বেশ কয়েক দফা আলোচনা হয়। গত বছরের ১৮ অগাস্ট চীনের যোগদানের কর্মদল আনুষ্ঠানিকভাবে গঠিত হয়, চীনের ডিইপিএ-তে যোগ দেওয়ার আলোচনা আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে।
সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের উত্থাপিত তথাকথিত ‘ইন্দো-প্যাসিফিক অর্থনীতি কাঠামোয়’ ১৪টি সদস্য দেশ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে, এতে চিপ ও প্রধান খনিজ পদার্থের সরবরাহ চেইন শক্তিশালী করতে একমত হয়েছে।
(শুয়েই/তৌহিদ/জিনিয়া)