‘আমার পিছনে রয়েছে ‘তোং পাও শ্রদ্ধাঞ্জলি’ ধান চাষ ঘাঁটি। কয়েক মাসের মধ্যে এসব ধানের শীষ পরিপক্ব হবে। তখন সবাইকে ধান কাটতে আমন্ত্রণ জানানো হবে।’
চীনের সি ছুয়ান প্রদেশের কুয়াং ইউয়ান শহরের শুয়াং সি গ্রামের ধানক্ষেতে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলেছেন গ্রাম কমিটির সদস্য এবং কুয়াং ইউয়ান কেং সিন কৃষি কোম্পানি লিমিটেডের মহাব্যবস্থাপক তেং সিয়াও ইয়ান। তিনি তখন তার শুটিং দল নিয়ে একটি প্রচারণা ভিডিও তৈরি করছিলেন।
তেং সিয়াও ইয়ানের শহর থেকে ফিরে এসে গ্রামে ধান চাষের কথা শুনে শুরুতে হাসতেন গ্রামবাসীরা। তাই তাকে সমর্থন করার লোক অনেক কম ছিল।
তেং সিয়াও ইয়ান বলেন, ‘অন্যরা কি বলেন- তা আমি গুরুত্ব দিই না। ধানের ভালো ফলন হলে উপার্জন বাড়বে এবং গ্রামবাসীরা তখন আমাকে অনুসরণ করবে।’
বেশ কয়েকজন কৃষক তেং সিয়াও ইয়ানের আন্তরিকতায় মুগ্ধ হন। তারা তখন তার সঙ্গে ধান চাষের চুক্তি স্বাক্ষর করেন।
‘তোং পাও শ্রদ্ধাঞ্জলি’ চাল অনেক বছর ধরে বিখ্যাত। স্থানীয় উপযোগী আবহাওয়া এবং দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যাপক ব্যবধানের কারণে এখানকার চাল খেতে খুব নরম ও সুগন্ধি হয়। চীনের মিং ও ছিং সাম্রাজ্যের সময় এ চালকে রাজাদের কাছে শ্রদ্ধাঞ্জলি হিসেবে নিবেদন করা হতো, তাই একে এ নামে ডাকা হয়। আগে ঐতিহ্যবাহী চাষবাসের পদ্ধতিতে এ চালের ফলন কম ছিল। তাই তা থেকে উপার্জনও কম হতো।
স্নাতক ডিগ্রি লাভ করার পর চীনের উপকূলীয় অঞ্চলে একটি ভালো চাকরি পেয়েছেন তেং সিয়াও ইয়ান। তবে জন্মস্থানের স্বল্প উন্নতিতে তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তাই কয়েক বছর পর তিনি চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামের উন্নয়নে ব্যবসা শুরু করেন।
প্রথম বছর তেং সিয়াও ইয়ান ৬.৬ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করে ব্যর্থ হন। তবে তেং সিয়াও ইয়ান হাল ছাড়েন নি। তিনি নানা স্থান পরিদর্শন করে শিক্ষা গ্রহণ করেন। পাশাপাশি, গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের কাছ থেকে ভালো প্রজাতির ধান সংগ্রহ করেন। তিনি খড় টুপি পরে ধানক্ষেতে আরও বেশি মনোযোগী হন।
দ্বিতীয় বছর অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে চাষ করা ধানের বাম্পার ফলন এবং ভালো বিক্রি হয়। ফলে আরও বেশি গ্রামবাসী তেং’র দলে যোগ দেন। তেং সিয়াও ইয়ান জৈব মানদণ্ড অনুসরণ করে কৃষি কোম্পানি এবং নিজের ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করেন। লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে ভালো বিক্রির চেষ্টা চালান তেং। একত্রে উৎপাদনের পরিকল্পনা, প্রযুক্তিগত প্রশিক্ষণ, ব্র্যান্ড প্যাকেজসহ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার ফলে সুষ্ঠু ধান চাষের পথে আরও এগিয়ে যান তেং সিয়াও ইয়ান।
বর্তমানে ‘তোং পাও শ্রদ্ধাঞ্জলি’ চালের দাম প্রতিকেজি ২০ ইউয়ানের মতো। সুষ্ঠু চাল চাষের পরিমাণ ৬৬৬ হেক্টর ছাড়িয়েছে। পার্শ্ববর্তী ৮টি উপজেলার ২ হাজারের বেশি গ্রামবাসীর বার্ষিক গড় উপার্জন বেড়েছে ১২ হাজার ইউয়ান।
তেং সিয়াও ইয়ান বলেন, “চাল সবচেয়ে সাধারণ কৃষিপণ্য। তবে তার দাম অনেক কম। গ্রামবাসীদের উপার্জন বাড়াতে আরও বেশি কৃষিপণ্য উন্নয়ন করতে হবে।”
একই কারণে তেং সিয়াও ইয়ান’র লাইভে ‘তোং পাও শ্রদ্ধাঞ্জলি’ চাল ছাড়াও তেল ও মাংসসহ স্থানীয় বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন পণ্য স্থান পায়। প্রতিবছর লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে ৫ হাজার টন কৃষিপণ্য বিক্রি করতে পারেন তেং সিয়াও ইয়ান।
বর্তমানে তেং সিয়াও ইয়ান তার দল নিয়ে ‘ইন্টারনেটে গ্রামীণ বাজার’ প্রকল্প চালু করেছেন। তাঁরা নানা জেলা ও থানায় কৃষকদের চাল, শাক-সবজি ও হস্তশিল্প ইন্টারনেটে বিক্রি করতে সাহায্য করেন। তাদের চেষ্টায় কৃষিপণ্য বিক্রির কঠিনতা কাটিয়ে উঠে নিজস্ব ব্র্যান্ড প্রতিষ্ঠা করতে পারছেন অনেকে।
তেং সিয়াও ইয়ান তার অবদানের মূল্যও পেয়েছেন। গত কয়েক বছরে তিনি চীনের জাতীয় তরুণ কৃষক নেতৃত্ব এবং সি ছুয়ান প্রদেশের দারিদ্র্যবিমোচনের অসামান্য ব্যক্তিত্বের স্বীকৃতি পেয়েছেন। সম্প্রতি তিনি চীনের তরুণদের ‘চৌঠা মে’ পুরস্কার পেয়েছেন। তেং সিয়াও ইয়ানের প্রভাবে আরও বেশি তরুণ-তরুণীরা জন্মস্থানে ফিরে এসেছেন।
(রুবি/এনাম)
(রুবি/এনাম)