চীন ও চীনের বাইরের দুনিয়ার ‘ব্যবসা-অর্থনীতি-বানিজ্যের হালচাল নিয়ে সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান ‘চলতি বাণিজ্য’
2023-06-02 13:04:09

চলতি বাণিজ্যের ২০তম পর্বে থাকছে:

১. চাঙ্গা চীনের শুল্কমুক্ত কেনাকাটা

২. চীনে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোক্সভাগেন

৩. পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প: শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ কাজ

 

চাঙ্গা চীনের শুল্কমুক্ত কেনাকাটা

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: করোনা মহামারির পর চীনের বিভিন্ন সীমান খুলে দেওয়ার পর এসব এলাকায় শুল্কমুক্ত সুবিধা দেওয়ায় এসব এলাকায় জমে উঠেছে বেচাকেনা। দক্ষিণ চীনের কুয়াংতোং প্রদেশের শেনছেন শহরের বিমানবন্দর ও রেলওয়ে স্টেশনে দেখা মিলবে এমনই ব্যস্ত কেনাকাটার চিত্র।

করোনা মহামারি নিয়ন্ত্রণের পর সবার আগে খুলতে থাকে একের পর এক চীনের বিভিন্ন বন্দর। বিশেষ করে বিমান বন্দর ও সমুদ্র বন্দরগুলো খুলে দেওয়ায় বাড়তে থাকে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে চীনের যোগাযোগ। আবার চীনের বিভিন্ন প্রদেশের মধ্যকার যোগাযোগও বাড়তে থাকে। ফলে বিভিন্ন বন্দর দিয়ে মানুষের আনাগোনাও বাড়ে।

চীন সরকারের পরিসংখ্যান বলছে, শেনছেন সীমান্তে মানুষের আসা-যাওয়ার সংখ্যা কেবল এপ্রিল মাসেই ১৩ মিলিয়ন ছাড়িয়েছে। এর ফলে এখানকার শুল্কমুক্ত বাজারে বেচাকেনা বেড়েছে যে কোন সময়ের চেয়ে বেশি।

শেনঝেন ডিউটি ফ্রি গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট ছেন কুয়াংওয়েন জানান, ২০১৯ সালের তুলনায় চলতি বছর বিভিন্ন পণ্যের বিক্রি বেড়েছে ৬০ শতাংশ পর্যন্ত।

বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এতো দ্রুত বাজার ঘুরে দাড়াবে তা ছিলো তাদের ধারনারও বাইরে। বাজার সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বিভিন্ন রকমের প্রসাধনী পণ্যের বিক্রি বেড়েছে ২শ’ শতাংশ পর্যন্ত। বিশেষ করে দেশের সীমানা খুলে দেওয়া ও মানুষের যাতায়াত বেড়ে যাওয়ার ফলে করমুক্ত পণ্য বিক্রি বেড়েছে।

শেনঝেন কাস্টমসের উপপ্রধান হুই মিং জানান, সীমান্ত এলাকায় বিভিন্ন জায়গা থেকে আসা মানুষের ঢল নামে শুক্রবার সন্ধ্যা ৬টার দিকে। মানুষের এই আনাগোনা থাকে পুরো সপ্তাহের ছুটিজুড়ে। আমাদের করমুক্ত মার্কেটগুলোতে প্রধানত সিগারেট, খাদ্যসামগ্রী ও খেলনা বেশি বিক্রি হয়।

চীন সরকারের তথ্য অনুযায়ী ২০২৩ সাল থেকে ২০২৬ সাল পর্যন্ত সময়ে শুল্কমুক্ত মার্কেটগুলোকে কেনাকাটার হার অন্তত ৩৬ শতাংশ পর্যন্ত বাড়বে।

 

ভিনদেশে চীন:

পদ্মা রেলসংযোগ প্রকল্প: শেষ হয়েছে ৮০ শতাংশ কাজ 

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: নানা চ্যালেঞ্জ থাকলেও নির্ধারিত সময়েই শেষ হবে বাংলাদেশে নির্মাণাধীন পদ্মাসেতু রেলসংযোগ প্রকল্পের কাজ। সম্প্রতি চীনা উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে পদ্মাসেতু ও পদ্মারেলসেতু পরিদর্শন শেষে এ কথা বলেন প্রকল্প পরিচালক। তিনি জানান, সার্বিকভাগে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে প্রায় ৮০শতাংশ।

বাংলাদেশের স্বপ্নের পদ্মাসেতু। ঢাকা থেকে দক্ষিণাঞ্চলের যোগাযোগ সহজ করার এই সেতুটি আরও যে কারণে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ তা হলো রেল সংযোগ। এই রেল সেতুই ঢাকার সঙ্গে বাংলাদেশের দক্ষিণ অংশকে রেলপথে সংযুক্ত করে।

পদ্মাসেতু ও পদ্মা রেলসেতু এবং ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ করছে চীন। বিশেষ করে রেলপথ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিচ্ছে চীনা কোম্পানি চায়না রেলওয়ে গ্রুপ।

বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়নে চীনের এই অংশগ্রহণ দিয়েছে এক নতুম মাত্রা। তাই চীনও এসব উন্নয়ন প্রকল্পের কাজকে গুরুত্ব দেয় সবার আগে। এরই প্রতিফলন সম্প্রতি চীনা উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীর বাংলাদেশ সফরে পদ্মাসেতু পরিদর্শন।

চীনা উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী সেতু এলাকায় পৌছালে তাকে ফুল দিয়ে বরণ করে নেন প্রকল্প সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা। পদ্মাসেতুর নির্মাণ ও অবকাঠামোর নানা দিন নিয়ে চীনা প্রকৌশলীরা চীনা উপপররাষ্ট্রমন্ত্রীকে ব্রিফ করেন এবং নানা প্রশ্নের উত্তর দেন।

এরপর সেতু এলাকা ও রেলসেতুর নির্মাণ কাজের অগ্রগতি ঘুরে দেখেন চীনা উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ সময় প্রকল্পের নানা কার্যক্রমের খোজ খবর নেন তিনি। এ সময় বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত ইয়াও ওয়েন তার সঙ্গে ছিলেন।

প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানান, মূলত দুই এরইমধ্যে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৭২ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের কাজ ভাগ করা হয়েছে দুটি ভাগে। প্রথমভাগে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত আর দ্বিতীয় ভাগে কাজ চলছে ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত। ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে যশোর পর্যন্ত ১৬২ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণে ৪১ হাজার কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। এর মধ্যে ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে চীন ও ২০ হাজার কোটি বাংলাদেশের।

পদ্মা রেলসেতু নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আফজাল হোসেন সিএমজি বাংলাকে জানান, ঢাকা থেকে ফরিদপুরের ভাঙ্গা পর্যন্ত অংশের কাজ ৮৫ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত অংশের কাজ শেষ হয়েছে ৭১ শতাংশ।

                          আফজাল হোসেন, পরিচালক, পদ্মাসেতু রেল সংযোগ প্রকল্প

প্রকল্প পরিচালক জানান, প্রথম পর্বের কাজ শেষ করা ছিলো সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জিং। বিশেষ করে পদ্মাসেতু এলাকার মাটি নরম ও নিচু এলাকায় হওয়ায় সেখানে কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া ছিলো খুবই কঠিন। বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিলো বিভিন্ন সেবা সংস্থার ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা নানা পাইপলাইন ও সেগুলো সরানো। তবে তার মতে, চলতি বছর শেষে পুরো প্রকল্পের কাজ শেষ করার ব্যাপারে একটি পরিস্কার ধারনা পাওয়া যাবে।

রেলসেতুর নির্মাণ কাজের সঙ্গে জড়িতরা বলছেন, নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ হবে নির্মাণ কাজ, আর খুলে দেওয়া সম্ভব হবে রেল চলাচলের জন্য।

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোক্সভাগেন

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের বাজার ধরতে বিপুল অংকের বিনিয়োগ নিয়ে আসছে জার্মানির গাড়ি নির্মাতা জায়ান্ট প্রতিষ্ঠান ফোক্সভাগেন। সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে চীনে নতুন কোম্পানি গঠন ও ১ বিলিয়ন ইউরো বিনিয়োগের ঘোষণা দেয় এই কোম্পানিটি। সম্প্রসারণ কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সাংহাই অটো শো’তে প্রদর্শন করা হয় চলতি বছর বাজারে আসার অপেক্ষায় থাকা অত্যাধুনিক আইডি-সেভেন মডেলের সেডান গাড়ি।

চীনে দিন দিনই বাড়ছে পরিবেশবান্ধব বৈদ্যুতিক গাড়ির চাহিদা। সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তাই বৈদ্যুতিক গাড়ি উৎপাদনকারী কোম্পানিগুলোর মধ্যে প্রতিযোগিতাও বাড়ছে। এমন অবস্থায় চীনের বাজার ধরতে বিনিয়োগ বাড়াচ্ছে জার্মানির বিখ্যাত গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ফোক্সভাগেন।

এরই অংশ হিসেবে চলতি বছরের সাংহাই অটো শো তে প্রদর্শন করা হয় নতুন ডিজাইনের আইডি-সেভেন মডেলের সেডান গাড়ি। ফোক্সভাগেন জানায়, এ বছরের আগস্ট নাগাদ চীন ও ইউরোপের বাজারে পাওয়া যাবে এই গাড়ি। পাশাপাশি উত্তর আমেরিকার দেশগুলোতে এই গাড়ি পাওয়া যাবে আগামী বছরের শুরুর দিকে।

সম্প্রতি কোম্পানিটি ঘোষণা করে, পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশে গড়ে তোলা হবে একটি গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র। কেননা, আনহুই প্রদেশের রাজধানী হ্যফেই বর্তমানে পরিণত হচ্ছে ‘অটো হাব’ এ। এখানে গড়ে তোলা এই গবেষণা কেন্দ্রে সময়ের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে নানা রকম উদ্ভাবনের কাজ করা হবে।

কর্মকর্তারা জানান, চীনে গঠন করা কোম্পানির নাম হবে ‘হানড্রেড পারসেন্ট টেককো’। এরইমধ্যে বৈদ্যুতিক গাড়ির পূর্ণাঙ্গ সংযোজন ও অন্যান্য সেবা নিশ্চিতকরণ বিষয়ক একটি চুক্তি হয়েছে জার্মানির ফক্সভাগেন কোম্পানির সঙ্গে হেফেই অর্থনৈতিক উন্নয়ন অঞ্চলের। এই চুক্তি অনুযায়ী, নতুন কোম্পানি চালু করতে ২০২৪ সালের মধ্যে প্রায় ১ বিলিয়ন ইউরো বা ১ দশমিক শূন্য সাত বিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে ফক্সভাগেন। এই বিনিয়োগে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ তৈরি হবে তার ফলে অন্তত ২ হাজার গবেষক ও গাড়ি নির্মাণ সংশ্লিষ্ট কর্মীর কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি হবে।

ফোক্সভাগেন জানায়, চীনে গঠন করা কোম্পানির প্রধান নির্বাহী জিসেবে দায়িত্ব নিতে যাচ্ছেন চীনে ফোক্সভাগেনের বর্তমান প্রধান প্রযুক্তি কর্মকর্তা মার্কুস হাফকেমেয়ের।