চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সবসময় শিশু-কিশোরদের সুস্বাস্থ্যের সঙ্গে বেড়ে ওঠার ওপর গুরুত্ব দিয়েছেন। পহেলা জুন আন্তর্জাতিক শিশু দিবস হোক, বিভিন্ন স্থান পরিদর্শনের সময় শিশুদের সঙ্গে দেখা হোক, তারপর শিশুদের জবাবি চিঠি দেওয়া হোক—দশ বছরে, শিশুদের সঙ্গে সি চিন পিং অনেক সুন্দর এবং মনোমুগ্ধকর মুহূর্ত কাটিয়েছেন। এতে বড় বন্ধু সি দাদা এবং শিশুদের গভীর মৈত্রী প্রতিফলিত হয়।
আপনারা যে কথা শুনেছেন, তা হল ২০১৩ সালের পহেলা জুন, আন্তর্জাতিক শিশু দিবসের প্রাক্কালে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং-কে জানানো দেশের সব শিশুদের শুভেচ্ছা। দশ বছরে, শিশুদের সঙ্গে এই বড় বন্ধুর অনেক মনোমুগ্ধকর মুহূর্ত আমাদের মনে আছে।
শিশু ও শিক্ষকের সঙ্গে থাকার সময়, শিশুরা কি ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারছে, এটা সি চিন পিং-এর কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়। তিনি সবসময় শিশুদের সঙ্গে নিজের প্রিয় খেলা শেয়ার করেন, শিশুদের ভালোভাবে শরীরচর্চা করায় উত্সাহ দেন। তিনি জোর দিয়ে বলেন, শরীর মানুষের জীবনে সংগ্রাম করা এবং সফলতার ভিত্তি। শিশু ও যুবকদের উচিত খেলাধুলার প্রশিক্ষণ জোরদার করা। পরিবার, স্কুল ও সমাজের উচিত শিশুদের শরীরচর্চার জন্য উপযোগী পরিবেশ তৈরি করা। যাতে তারা চারা গাছের মত সুস্বাস্থ্য নিয়ে বেড়ে উঠতে পারে।
এখন আপনার শুনছেন, সি চিন পিং এবং শিশু খেলোয়াড়ের কথোপকথন। ছোট শিশু খেলোয়াড় শুভেচ্ছা জনিয়ে বলেন, সি দাদা, কেমন আছেন। জবাবে সি চিন পিং জিজ্ঞেস করেন, তোমারা কত বছর বয়স থেকে এখানে স্কি শিখতে শুরু করেছো? জবাবে শিশুরা বলে, তিন বছর হয়েছে। তারপর সি চিন পিং হাসিমুখে বলেন, তাহলে তোমরা সবাই প্রবীণ খেলোয়াড়।
এসব কথপোকথন হয় ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বেইজিংয়ের উ খ্য সুং স্টেডিয়ামে। সি চিন পিং স্টেডিয়ামে আইস হকি খেলোয়াড়দের দেখতে গিয়েছিলেন। তিনি ছোট শিশুদের জানান, তাঁর ছোটবেলায় বেইজিংয়ের কেন্দ্রস্থলের সি ছা হাই স্থানে স্কি করার কথা। শিশুরা তাঁর ছোটবেলার গল্প শুনতে অনেক পছন্দ করে। বিদায়ের সময় সি চিন পিং কোমর বাঁকিয়ে আইস হকি খেলোয়াড়ের বিশেষ পদ্ধতিতে শিশুদের বিদায় দিয়েছিলেন।
সি চিন পিং বলেন, তোমাদের ওপর আস্থা রাখি। আরো বড় হও। আশা করি, ভবিষ্যতে দেখবো যে তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ জাতীয় আইস হকি দলে খেলতে পারবে।
যুবকদের মনে সুদৃঢ় সংকল্প থাকলে দেশে আশা দেখা যায়। আদর্শ নির্ধারণের কথা সি চিন পিং সবসময় শিশুদের বলেন। প্রত্যেকবার শিশুদের মাঝে গেলে, তিনি শিশুদের ছোটবেলা থেকে দেশপ্রেমের চেতনা পোষণ করা, আদর্শ নির্ধারণ করে স্বপ্ন পূরণে উত্সাহ দেন। Young Pioneers দলের শিশুদের কাছে তিনি নিজের Young Pioneers দলে যোগদানের স্মৃতিও শেয়ার করেছেন।
তিনি বলেন, যখন আমি Young Pioneers দলে যোগ দেই, তখন আমি খুব উত্তেজিত ছিলাম। জানি না তোমাদের এখন সে অনুভূতি আছে কি না। শিশুরা জবাবে বলে, জ্বি, আছে...। সি চিন পিং তারপর বলেন, কেন এমন অনুভূতি হয়? কারণ, তা এক ধরনের গর্ববোধ। আমি তোমার মুখে আশার আলো দেখতে পাই। কারণ শিশুরা হল জাতির আশা, দেশের আশা। ঠিক যেন সেই কথার মত, সবসময় প্রস্তুত হও, পরবর্তীতে দেশের উন্নয়নে অবদান রাখবে। তোমার সেই আস্থা আছে কি?
শিশুরা জোরালো কণ্ঠে বলে: আছে!
যখন সি চিন পিং দেখেন, শিশুরা চীনের ঐতিহ্যবাহী ব্রাশ কলম দিয়ে ‘repay the country with supreme loyalty’ কথাটি লিখে, তিনি বলেন, এই কথাগুলো ছোটবেলা থেকে আমাকে উত্সাহ দিয়েছে। যখন আমার বয়স অনেক কম এবং কোনো চীনা অক্ষর চিনতে পারতাম না, প্রায় চার বা পাঁচ বছর বয়স হবে..., তখন আমার মা আমাকে একটি কার্টুনের বই কিনে দিয়েছিলেন, আমাকে repay the country with supreme loyalty- এই গল্পটি জানিয়েছিলেন। ছোটবেলায় মা সি-কে বই দোকানে নিয়ে যেতেন, তখন সি অলসতার কারণে হাঁটতে চাইত না। তাই মা শিশু সি-কে পিঠে নিয়ে বইয়ের দোকানে যেতেন এবং চীনের প্রাচীনকালের সুং রাজবংশের মহান বীর ইউয়ে ফেই-এর কাহিনীর কার্টুন বই কিনতেন। ইউয়ে ফেই সুং রাজবংশের সময় দেশ রক্ষায় প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধ করেন ও শত্রুদের পরাজিত করে এবং দেশ রক্ষা করেন। ইউয়ে ফেই যুদ্ধের মাঠে যাওয়ার আগে তাঁর মা সুই দিয়ে তাঁর পিঠে চারটি চীনা অক্ষর খোদাই করে দেন। এর অর্থ: দেশ রক্ষায় সর্বাত্মক চেষ্টা করা’। মা সি চিন পিংকে এই গল্প জানান। তখন ছোট সি চিন পিং মাকে জিজ্ঞেস করেন, সুই দিয়ে অক্ষর লিখেছিলো! কত ব্যথা লাগে! তবে তাঁর মা বলেন, হ্যাঁ, সত্যি ব্যথা, তবে এই ব্যথার কথাগুলো মনে থাকবে। তাই তখন থেকে সি চিন পিংও এই কথা নিজের মনে রেখেছেন, এটা হল সি চিন পিং-এর সারা জীবনের লক্ষ্য।
প্রাচীনকাল থেকে যুবকের মধ্যে বীরের লালন হত। সি চিন পিং আশা করেন, শিশুরা ছোটবেলা থেকে মনে দেশপ্রেমের চেতনা পোষণ করবে। ২০২০ সালে সি চিন পিং হু নান প্রদেশের রু ছেং জেলা পরিদর্শন করেন। তখন স্থানীয় শিশুরা সি চিন পিংকে নিজের পরিচিত লংমার্চের গল্প শেয়ার করে। সি চিন পিং তা শুনে খুব আনন্দিত হন এবং এর প্রশংসা করে বলেন,
তোমরা ছোটবেলা থেকে লংমার্চের বীরদের গল্প শিখেছো, তা দেখে আমি খুব আনন্দিত। তোমরা চারা গাছের মত, এখন আমরা তোমাদের জন্য পানি ঢালছি, বাতাস আসলে, বৃষ্টি আসলে তোমাদের আশ্রয় দিচ্ছি। তবে, পরে তোমরা আকাশের মত উঁচু বড় গাছ হবে, তোমরা চীনা জাতির বড় বনভূমি, মানবসম্পদ রক্ষার বনভূমি হবে।
ম্যাকাও বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল মাতৃভূমিতে প্রত্যাবর্তনের ২০তম বার্ষিকীতে, সি চিন পিং ম্যাকাওয়ে যান। সেখানকার একটি স্কুলের শিশুরা সি চিন পিংকে চিঠি দেয়। চিঠিতে মাতৃভূমির প্রতি তাদের ভালোবাসার কথা বর্ণনা করা হয়েছে। এবং শিশুরা সি চিন পিংকে আবারও ম্যাকাওয়ে আসার আমন্ত্রণ জানায়। সি চিন পিং শিশুদের বলেন, একজন চীনা মানুষ হিসেবে, চীনা জাতির একজন সদস্য হিসেবে, নিশ্চয় নিজের ইতিহাস, সংস্কৃতি ও চেতনা সম্পর্কে জানতে হবে। ৫ হাজার বছরের সভ্যতার ইতিহাস জানলে, আমাদের জাতীয় গর্ব ও আস্থা তৈরি হবে।
সি চিন পিং বলেন, সুন্দর জীবন তোমাদের, সুন্দর চীনা স্বপ্নও তোমাদের।