আকাশ ছুঁতে চাই ২০
2023-06-01 13:07:56

 

                                         

   

 

 


 

১. চীন বাংলাদেশ একে অপরের সহযোগী : হংমেই লি

২. অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নারীর শক্তি

৩. বয়স কোনো বাধা নয়

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

চীন বাংলাদেশ একে অপরের সহযোগী : হংমেই লি

 

চীন ও বাংলাদেশের যোগাযোগ বৃদ্ধি  হওয়া প্রয়োজন। দুই দেশের নারীরা  দুই দেশের উন্নয়নে কাজ করছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ সফরে চায়না মিডিয়া গ্রুপের সঙ্গে  এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে এমন কথা বলেছেন সাংহাই ইনস্টিটিউটস ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক হংমেই। তিনি চীন ও বাংলাদেশের নারীদের আত্মবিশ্বাসী বলেও মনে করেন। দুই দেশের নারীদের চেষ্টার মধ্যে একটা মিল আছে বলে মনে করেন হংমেই লি।

চীন তার অর্থনীতিকে আধুনিকীকরণে কাজ করছে আর বাংলাদেশ তার অর্থনীতিকে উন্নতকরণে কাজ করছে বলে মন্তব্য করেছেন সাংহাই ইনস্টিটিউটস ফর ইন্টারন্যাশনাল স্টাডিজের গবেষক হংমেই লি। সম্প্রতি চায়না মিডিয়া গ্রুপের বাংলা বিভাগকে দেয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এ মন্তব্য করেন। এ সময় তিনি আরো বলেন, দু'দেশই উভয়দিক থেকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে সহযোগী হয়ে কাজ করছে। এ তরুণী গবেষক আরো বলেন,  ‘ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের উন্নয়নে চীন সহযোগী হতে ইচ্ছুক। দু'দেশ একসাথে কাজও করছে। বাংলাদেশে আসলে নানা ধরনের সমস্যা আছে। তবে প্রতিবন্ধকতা দূরে ঠেলে এ দেশ এগিয়ে যাচ্ছে। চীনসহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক কমিনিউটি তাদের সহায়তা করছে। ’  

হংমেই লি বলেন, মানুষে মানুষে সম্পর্ক তৈরি করাটা অনেক জরুরি। অনেক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী চীনে পড়াশোনা করছেন, কাজ করছেন। আবার চীনা শিক্ষার্থী ও ব্যবসায়ীরাও বাংলাদেশে আসছেন এবং কাজ করছেন। তবে এটি আরো বাড়ানো উচিত বলে মনে করেন তিনি। 

চীন ও বাংলাদেশের নারীদের প্রসঙ্গে হংমেই লি বলেন, চীনা নারীরা তাদের উচ্চমানের শিক্ষাকে প্রসারে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘বন্ধু-বান্ধব, আত্মীয় ও চারপাশে যাদের দেখেছি তারা অনেকেই বাইরে কাজ করেন, স্বাধীনভাবে জীবনযাপন করেন এবং তারা খুব আত্মবিশ্বাসী। আবার বাংলাদেশের নারীদের দেখেও আমার মনে হয়েছে যে, তারা খুব আত্মবিশ্বাসী, তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তনের জন্য প্রচুর চেষ্টা করছেন। ’

দুই দেশের নারীর মধ্যেই চেষ্টার একটা মিল আছে বলেও মন্তব্য করেন হংমেই লি।

সাক্ষাৎকার গ্রহণ: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

 অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নারীর শক্তি

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিতে নারীর অগ্রযাত্রা অবদান রাখছে চীনের সামগ্রিক উন্নয়নে। বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়নেও অবদান রাখছেন নারী বিজ্ঞানীরা। এসব কথাই উঠে আসে বেইজিংয়ের চোং কুয়ান ছুন ফোরামের মধ্যে আয়োজিত নারীদের বিশেষ ফোরামে। এই বিশেষ ফোরামের প্রতিপাদ্য ছিল ‘অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নারীর শক্তি’। এই ফোরামে বিশ্বের অনেক শীর্ষ পর্যায়ের নারী বিজ্ঞানী অংশ নিয়েছেন। ফোরামটি সম্পর্কে বিস্তারিত শুনবেন প্রতিবেদনে।

অত্যাধুনিক প্রযুক্তিতে নারীর শক্তি এই প্রতিপাদ্য নিয়ে বেইজিংয়ে চোং কুয়ান ছুন ফোরামে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হয় নারীদের বিশেষ ফোরাম। চীনের জাতীয় রাজনৈতিক পরামর্শ সম্মেলনের ভাইস চেয়ারম্যান ও জাতীয় উইমেনস ফেডারেশনের চেয়ারম্যান শেন ইউয়ে ইউয়ে ফোরামে উপস্থিত ছিলেন ও ভাষণ দিয়েছেন।

ভাষণে তিনি বলেন,  প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেছেন, উচ্চ মানের বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত স্ব-নির্ভরতা চীনা বৈশিষ্ট্যময় আধুনিকায়নের মূল চাবিকাঠি। তিনি আশা করেন, চীনের নারী বৈজ্ঞানিক ও প্রযুক্তিগত ব্যক্তিরা প্রেসিডেন্ট সির উত্থাপিত চেতনা বাস্তবায়ন করবে, কঠিন সমস্যা সমাধান, গবেষণা ও আন্তর্জাতিক সহযোগিতায় ভূমিকা পালন করবে এবং মানবজাতির অভিন্ন লক্ষ্যের কমিউনিটি প্রতিষ্ঠা ও বৈশ্বিক টেকসই উন্নয়নের জন্য অবদান রাখবে।

দেশ-বিদেশের অনেক শীর্ষস্থানীয় নারী বিজ্ঞানী এতে বক্তৃতা দিয়েছেন, গোলটেবিল আলোচনায় অংশ নিয়েছেন এবং গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প প্রকাশ করেছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

বয়স কোনো বাধা নয়

 

মানুষের জীবনে কোন কিছু শেখার বা জানার আগ্রহের কোন শেষ নেই। কিন্তু অনেক সময় মনে হতে পারে অনেক বয়স বেড়ে গেছে এখন আর এই বিষয়টি শেখা সম্ভব নয়। এই ধারণাকে ভুল প্রমাণ করেছেন একজন প্রাণশক্তিতে শক্তিময়ী নারী। তিনি প্রমাণ করেছেন বয়স কোন বাধা নয়। এই উদ্যমী নারীর নাম চেন শাওছিন।  তিনি প্রবীণ বয়সেও তরুণদের মতো সমান উদ্দীপনা নিয়ে এগিয়ে চলছেন যা অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণা বয়ে এনেছে।

চলুন শোনা যাক তার গল্প।

 

বেইজিংয়ের নারী চেন শাওছিন। বয়স তার ৭৩ বছর। তিনি তার সংগ্রামী জীবনের মাধ্যমে অন্যদের জন্য অনুপ্রেরণার উৎস হয়েছেন। তরুণ বয়সে চেন শাওছিনের শিক্ষাগত যোগ্যতা ছিল মিডল স্কুল অবধি। তিনি ছিলেন বেইজিংয়ের একটি কারখানার শ্রমিক।  তিনি চেয়েছিলেন আরও উন্নতি করতে। কিভাবে হোয়াইট কলার জব পাওয়া যায় সে চেষ্টা করতে থাকেন তিনি। এরপর তার মনে হয় চাকরিতে পদোন্নতির জন্য শিক্ষাগত যোগ্যতা বাড়াতে হবে, ইংরেজিভাষাটাও শিখতে হবে।

 

৪০ বছর বয়সে তিনি ইংরেজিভাষা শিখতে শুরু করেন। সেই বয়সে নতুন করে আবার  কলেজে প্রবেশের পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে থাকেন। কলেজে ভর্তিও হতে পারেন নিজের অক্লান্ত চেষ্টার ফলে।

 চাকরির পাশাপাশি কলেজে লেখাপড়া চালিয়ে তিনি শিক্ষাগত যোগ্যতা বৃদ্ধি করেন। একটি আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের উঁচু পদে যোগ দেন। হোয়াইট কলার জব বা কর্মকর্তা স্তরে কাজ করার স্বপ্ন পূরণ হয় তার। কিন্তু সেখানেই থেমে থাকেননি তিনি।

চাকরি থেকে অবসর নেয়ার পর চেন নতুন শিক্ষা গ্রহণ শুরু করেন। তিনি শিল্পকলা বিষয়ে লেখাপড়া শুরু করেন। তার ইচ্ছা হয় তিনি শিল্পকলা বিষয়ক জ্ঞানকে কাজে লাগিয়ে আর্ট গাইডের কাজ করবেন।

৬৭ বছর বয়সে তিনি আর্ট গাইডের কাজ শুরু করেন। বেইজিংয়ে দেশি বিদেশি দর্শকদের প্রাচীন ও সমকালীন চীনা শিল্পকলা বুঝিয়ে বলেন তিনি। গেল পাঁচ বছরে তিনি আর্ট গ্যালারিগুলোতে গড়ে সপ্তাহে তিনদিন হিসেবে ৩ হাজার ৫০০ ঘন্টা কাজ করেছেন। শুধু চীনা শিল্পকলাই নয় আধুনিক পাশ্চাত্য শিল্পকলা বিষয়েও লেখাপড়া করেন তিনি। তিনি বিখ্যাত শিল্পী চং ফানচি, সু বিং, ছিউ চিচিয়ে এবং পাবলো পিকাসোর শিল্পকর্ম প্রদর্শনীর গাউড হিসেবেও কাজ করেছেন।

চেন মনে করেন যদি কেউ কোন কিছু শিখতে চায় বা নতুনভাবে জীবন গড়তে চায়, কোন যোগ্যতা অর্জন করতে চায় তাহলে বয়স কোনো বাধা নয়। বিশেষ করে জ্ঞান অর্জনের পথে বয়স কোন বাধা নয়। জানার আগ্রহ এবং এগিয়ে চলার উদ্যম এ দুটি যে কোন বয়সেই মানুষকে অনুপ্রাণিত করতে পারে।

চেন মনে করেন মানুষের বয়স একটি সংখ্যা মাত্র। তিনি আরও মনে করেন মানুষ পৃথিবীতে একবারই জন্মগ্রহণ করে। এই মানব জীবনে কোন বিষয়ে খেদ রাখা উচিত নয়। যার যেদিকে আগ্রহ সেদিকে চলার চেষ্টা করা উচিত।

নারীদের জন্য তার মনে হয় যে, অনেক নারী জীবনের শুরুতে নানা প্রতিকূলতার কারণে তার অভীষ্ট লক্ষ্যে এগিয়ে যেতে পারেন না। এজন্য পরেও যদি সুযোগ পাওয়া যায় তাহলে সেদিকে অগ্রসর হতে পারেন। নারীদের ক্ষেত্রে আরও একটি বিষয়ে মনোযোগ দেয়া প্রওেয়াজন বলে তিনি মনে করেন। চেন মনে করেন অনেক নারী সংসার ও গৃহকর্মে খুব বেশি মনোযোগ দিতে গিয়ে নিজের কাংখিত লক্ষ্য অনুযায়ী ক্যারিয়ার গড়তে পারেন না। এক্ষেত্রে তার পরামর্শ হলো দৃঢ়ভাবে সব বাধা অতিক্রম করে এগিয়ে যেতে হবে। একজন নারীকে যদি পুরুষের তুলনায় দ্বিগুণ বাধাও পার হতে হয় তাহলে সেটাও করতে হবে বলে মনে করেন এই উদ্যমী নারী।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল