শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণে আরও বেশি সহায়তা প্রয়োজন
2023-06-01 11:12:10


আজ (১ জুন) আন্তর্জাতিক শিশু দিবস। সবাইকে শিশু দিবসের শুভেচ্ছা। বড় হয়েও আমাদের সবাইকে শিশুসুলভ নিষ্পাপ থাকার চেষ্টা করতে হয়, তাই না?

 

কিভাবে শিশুদের জন্য আরও বেশি ভালো মুভি তৈরি করা যাবে? কি ধরণের উষ্ণ ও ভালোবাসায় পূর্ণ মুভি উপহার দেয়া যাবে? আজকের আলোছায়া অনুষ্ঠানে তা নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

 

১৯২২ সালে চীনের প্রথম শিশু চলচ্চিত্র ‘দুষ্টু ছেলে’ তৈরি হয়েছিল। এটি চীনের শিশুতোষ চলচ্চিত্রের শতাব্দী প্রাচীন বিকাশের সূচনা করেছিল। গত একশ’ বছরে চীনা শিশু চলচ্চিত্রগুলো ছোট থেকে দীর্ঘ, সাদা-কালো থেকে রঙিন, এবং নির্বাক থেকে সবাক পর্যন্ত একটি অসাধারণ পথ অতিক্রম এবং বহু প্রজন্মের মানুষের বড় হওয়ার প্রক্রিয়া রেকর্ড করেছে।

 

চায়না চিলড্রেনস অ্যান্ড টিনএজার্স ফিল্ম সোসাইটির পরিসংখ্যান অনুসারে, চীনে শিশু চলচ্চিত্রের বার্ষিক সংখ্যা দেশীয় চলচ্চিত্রের বার্ষিক মোট সংখ্যার প্রায় ১০ শতাংশ। বিশেষজ্ঞদের মতে, চীনের বিপুল সংখ্যক শিশুর সাথে তুলনা করলে শিশুদের জন্য নির্মিত চলচ্চিত্রের সংখ্যা আসলে বেশি নয় এবং বাজারে উচ্চ মানের শিশু চলচ্চিত্র খুবই কম। তাছাড়া, অনেক শিশুতোষ চলচ্চিত্র স্যুট হওয়ার পরে মুক্তি পায় না বা কোনো কোনোটি আবার কেবল একদিনের জন্য প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পায়। তেমন লাভজনক না বলে অনেক প্রযোজকই শিশুতোষ মুভি নির্মাণ করতে অনিচ্ছুক।

 

একজন ব্যক্তির বয়স যতই হোক না কেন, সে সর্বদা এমন একটি চলচ্চিত্র চায়, যেটি তার স্মৃতির গভীরে গেঁথে থাকবে এবং শৈশবের স্মৃতি এবং বিশ্ব নিয়ে তার প্রাথমিক ছাপ বহন করবে।

 

চায়না চিলড্রেনস অ্যান্ড টিনএজার্স ফিল্ম সোসাইটির মহাপরিচালক হুয়াং চুনের মতে, শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্র শিশুদের জন্য একটি জানালা, যার মাধ্যমে তারা পর্দার মাধ্যমে দুর্দান্ত এবং সর্বদা পরিবর্তনশীল জীবন দেখতে পারে। চলচ্চিত্রে তুলে ধরা সবকিছুই শিশুদের হৃদয়ে প্রবেশ করে এবং একজন সুস্থ মানুষে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়ায় তাদেরকে সাহায্য করে। তাই শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্রগুলোকে অবশ্যই শিশুদের হৃদয়ে সত্য, মঙ্গল ও সৌন্দর্যের বীজ বপন করতে হবে। তাদেরকে শিকড় গজাতে, ফুল ফুটতে এবং ফল দিতে হবে। এটিই শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণের সবচেয়ে বড় লক্ষ্য। এই লক্ষ্য বাস্তবায়নে শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণ করতে নিঃসন্দেহে শিশুদের দৃষ্টিকোণ থেকে শিশুদের জীবনকে দেখতে এবং শিশুদেরকেই পুরো গল্পের প্রধান চরিত্রগুলোতে অভিনয় করতে হবে।

 

বেইজিং ফিল্ম একাডেমির পরিচালনা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং চলচ্চিত্র পরিচালক ফাং কাং লিয়াং মনে করেন, শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণের জন্য একটি পূর্ণাঙ্গ ও পরিপক্ব সৃজনশীল পদ্ধতি এবং শৈল্পিক প্রকাশের পাশাপাশি শিশুর মতো চিন্তাভাবনা প্রয়োজন। নির্মাণের প্রক্রিয়ায় গভীর আগ্রহ এবং উদ্দীপনা থাকা ছাড়াও নির্মাতাদের মনোযোগ দিয়ে গবেষণা এবং সঠিকভাবে শিশুদের নান্দনিক মনোবিজ্ঞান উপলব্ধি করা উচিৎ।

 

শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্রগুলোকে শিশুদের সমাদর পেতে চাইলে প্রথমে ‘মজার’ হতে হবে। ‘মজা’ মানে কি?  কিছু শিশু মার্শাল আর্টস মুভি এবং ভয়ানক লড়াইয়ের দৃশ্যসহ অ্যাকশন মুভি দেখতে পছন্দ করে। বর্তমানে জমকালো মুভি স্পেশাল এফেক্ট প্রযুক্তি শক্তিশালী এবং উত্তেজনাপূর্ণ ভিজুয়াল ইফেক্ট তৈরি করার অনেক সুবিধা প্রদান করে।

 

বেইজিং ফিল্ম একাডেমি’র চীনের অ্যানিমেশন বিভাগের উপ-পরিচালক ছাও সিও হুই বলেন, শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্র কর্মীদের সৃষ্টির মূল উদ্দেশ্যটি মনে রাখা উচিৎ এবং শিশু চলচ্চিত্রের শিক্ষামূলক বিষয়গুলোকে ভুলে যাওয়া উচিত নয়। তাই শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্রগুলোকে কেবল মজার করে তোলা নয়, বরং তাদেরকে আরও উষ্ণ এবং প্রেমময় করে তুলা উচিৎ।

 

চায়না চিলড্রেন অ্যান্ড টিনএজার্স ফিল্ম সোসাইটির অনারারি পরিচালক হৌ খ্য মিং বলেন, চমৎকার শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্র শিশুদের জন্য আধ্যাত্মিক খাদ্য, তাই এর শিক্ষামূলক ফাংশন যে কোনো সময়ে হারিয়ে যাবে না।

 

চায়না ফিল্ম অ্যাসোসিয়েশনের ভাইস চেয়ারম্যান এবং পরিচালক ইন লি শুরু থেকে শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণ করে আসছেন। তার প্রথম চলচ্চিত্র ‘মাই সেপ্টেম্বর’ ১১তম চায়না ফিল্ম গোল্ডেন রোস্টার অ্যাওয়ার্ডে সেরা শিশু চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ অনেক পুরস্কার জিতেছে। এটিকে এখনও কিছু মানুষ চীনের সেরা শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম হিসেবে মূল্যায়ন করেন। এ চলচ্চিত্রের তরুণ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সবাই ছিলেন অ-পেশাদার, কিন্তু মুভিটি অনেক প্রাণবন্ত এবং শিশুদের মধ্যে খুবই জনপ্রিয় হয়েছিল।

 

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে যেগুলো সবচেয়ে বেশি আয় করেছে, সেগুলো মূলত অ্যানিমেটেড মুভি। চীনে বর্তমানে ২০ কোটিরও বেশি শিশু আছে। তাই শিশুবিষয়ক চলচ্চিত্র নির্মাণের ক্ষেত্রে সমর্থনের মাত্রা বাড়ানো উচিৎ।