‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. স্থানীয় পণ্যের প্রসারে লাইভস্ট্রিম ও ই-কমার্স ব্যবসা শুরু করেছেন উইগুর তরুণরা
স্থানীয় কৃষিপণ্যের প্রচার ও ব্যবসা বাড়াতে সিনচিয়াংয়ের তুরপানের স্থানীয় তরুণরা এখন শুরু করেছে ই-কমার্স ব্যবসা ও লাইভস্ট্রিমিং। তেমনই একজন তরুণ উবাইদুল্লা উমার। তিনি ওউবাই কোম্পানির ম্যানেজার। উবাইদুল্লাহ একটি মজবুত ব্যবসার মডেল দাড় করিয়েছেন যা দিয়ে লাভবান হচ্ছেন তিনি, সুফল পাচ্ছেন এলাকার কৃষকরা এবং প্রচার পাচ্ছে তার স্থানীয় কৃষিপণ্যও।
তরুণ উদ্যোক্তা উবাইদুল্লার জন্ম ১৯৯৫ সালে। তিনি স্নাতক শেষ করেছেন আরো ৮ বছর আগে। এরপর ই-কমার্স নিয়ে পড়াশোনা করতে হাংচৌ ও ছাংশা শহরও ঘুরেছেন তিনি।
প্রথমদিকে যদিও শহরেই চাকরি খোঁজার পরিকল্পনা ছিলো উবাইদুল্লাহর, তবে ই-কমার্স ব্যবসা একবার বুঝে যাওয়ার পর তিনি সিদ্ধান্ত নেন তিনি গ্রামে ফিরে যাবেন। নিজ গ্রাম তুরপানের কৃষকদের ফলানো স্থানীয় কৃষি পণ্য অনলাইনের জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্মগুলোতে প্রচারের ব্রত নিয়ে গ্রামে ফিরে যান তিনি।
‘আমি বিশ্বাস করি উপকূলীয় শহরগুলোর মতো চীনের পশ্চিমাঞ্চলেও ই-কমার্স ব্যবসার উন্নয়ন সম্ভব। আর এখন এমন অনেক সামাজিক যোগযোগ মাধ্যম আছে যেগুলির মাধ্যমে খুব সহজেই চীন ও বহির্বিশ্বের সাথে যোগাযোগ বজায় রাখা যায়। অন্যান্য দেশ ও জাতির মানুষরা এই সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলো থেকে আমাদের জীবনধারা ও বিশেষ স্থানীয় পণ্য সম্বন্ধে জানতে পারে। পাশাপাশি লাইভস্ট্রিমের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন ফল যেমন হামি তরমুজ ও আঙুর বিক্রি করতে পারছি।’
উবাইদুল্লা তার নিজের ই-কমার্স কোম্পানি শুরু করেন ২০১৭ সালে। শুরুটা সহজ ছিলো না। প্রথমদিকে সে এবং তার দলের সবাই মিলে স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে মাসিক চুক্তিতে ফল সংগ্রহ করে চীনের জনপ্রিয় সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইচ্যাটে বিক্রি করতে শুরু করেন। তবে এই উপায়ে খুব একটা সুবিধা করে উঠতে পারেননি উবাইদুল্লা। তাই তিনি একটি নব্য-বিবাহিত দম্পতিকে ফল বিক্রির প্রমোশনাল লাইভস্ট্রিম করতে নিয়োগ দেন।
ম্যানেজার, ওউবাই কোম্পানি
‘আমাদের লাইভস্ট্রিম করার অভিজ্ঞতা ছিলো না। আমাদের উপস্থাপকরা জানতো না কীভাবে লাইভে পণ্যের প্রচার করতে হয়। আরো ভয়াবহ একটি ব্যাপার ঘটলো তখন। বেশি পারিশ্রমিকের আশায় তাদের মধ্যে কয়েকজন চাকরি ছেড়ে অন্য কোম্পানিতে জয়েন করে ফেললো। তবে পরবর্তীতে আমরা উপস্থাপকদের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করেছি যা ধীরে ধীরে আমাদের খ্যাতি বাড়াতে সাহায্য করেছে।’
একটা সময় উবাইদুল্লা একটি সমবায় চালু করে যেখানে ১২৫টি পরিবার যোগ দেয়। পাশাপাশি চলতে থাকে ডেলিভারি কোম্পানিগুলোর সাথে দীর্ঘমেয়াদী সম্পর্ক উন্নয়নের কাজ। কোম্পানিগুলোর সাথে তুরপানের ফল চীনজুড়ে যেকোনো স্থানে পৌঁছে দেওয়ার চুক্তি করেন উবাইদুল্লা।
এমনকি উবাইদুল্লার বাবা উমার রিক্সিতও ক্যামেরার সামনে কাজ শুরু করে নিজের কারিশমা দেখান! তাদের পণ্যের প্রচারের পাশপাশি স্থানীয় সংস্কৃতি এবং রীতিনীতিকেও পুরো বিশ্বের সামনে তুলে ধরা ও সবাইকে আগ্রহী করে তোলা এখন তাদের ব্যবসার মূল লক্ষ্য বলে জানান উমার রিক্সিত।
‘আমি একজন কৃষক। কৃষিপণ্য নিয়ে আমার যথেষ্ট ধারণা রয়েছে। প্রথমদিকে আমরা শুধু টাটকা ফল ও শুকনো ফলের ভিডিও করে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিতাম। তবে এখন আমরা আমাদের তুরপানের দৈনন্দিন জীবনধারা ও ঐতিহ্যবাহী নানা কর্মকান্ডও ভিডিও করে প্রচার করি।’
বর্তমানে ৭ জন অভিজ্ঞ উপস্থাপক কাজ করছে উবাইদুল্লার কোম্পানিতে। পাশাপাশি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে তাদের ভিডিওর নিয়মিত দর্শক প্রায় ৩০ লাখের মতো। চলতি বছর মোট বিক্রির পরিমাণ ১৪ মিলিয়ন ডলার হবে বলে আশা প্রকাশ করেন উবাইদুল্লা।
প্রতিবেদকঃ আব্দুল্লাহ আল মামুন
সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. সাক্ষাৎকার
চিকিৎসা ব্যবস্থায় চীনের মতো বাংলাদেশকে সাফল্য পেতে হলে প্রযুক্তিগত ও কর্মমুখী শিক্ষায় আরো বেশি জোর দিতে হবে: ডা.আরিফুল হক।
ডা: আরিফুল হক। নর্থ চায়না ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলোজিতে পাবলিক হেলথ এন্ড প্রিভেনটিভ মেডিসিনে পিএচডি করছেন। তার গবেষণার বিষয় হাড়ের রোগজনিত মৃত্যু। এর আগে তিনি নর্থ চায়না ইউনিভার্সিটি অব সাইন্স এন্ড টেকনোলোজি থেকে এম বি বি এস শেষ করে কুনমিং মেডিকেল ইউনিভার্সিটি থেকে অর্থোপেডিক্স সার্জারীতে উচ্চতর ডিগ্রী নেন। তিনি স্বাস্থ্য ও সুস্থতায় বিশেষ অবদানের জন্য নেপাল-বাংলাদেশ ফ্রেন্ডশিপ অ্যাওয়ার্ড-২০২৩ অর্জন করেন।
ডা: আরিফুল হককে আমরা তারুণ্যের অগ্রযাত্রা অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানিয়েছি। তিনি অনলাইনে আমাদের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার পেশা, অর্জন, অভিজ্ঞতা ও চিন্তা ভাবনা শেয়ার করেছেন।
সাক্ষাৎকার গ্রহণঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
৩.
প্রতিভা বিনিময়ের প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে বেইজিং আন্তর্জাতিক যুব উদ্ভাবন ও উন্নয়ন ফোরাম
সম্প্রতি অনুষ্ঠিত বেইজিং আন্তর্জাতিক যুব উদ্ভাবন ও উন্নয়ন ফোরাম বিশ্বব্যাপী প্রতিভা বিনিময়ের একটি প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছে।
প্রতিভার উপর দৃষ্টি নিবদ্ধকারী এ ফোরামটির প্রতিপাদ্য ছিল "একসঙ্গে উদ্ভাবনী শক্তি আনা এবং যুবউন্নয়নকে শক্তিশালী করা"। ফোরামের লক্ষ্য হলো আন্তর্জাতিক যুব উন্নয়নের সমর্থনে একটি ঐকমত্যে পৌঁছানে এবং বৈশ্বিক উদ্ভাবনী সম্পদ ভাগাভাগি করার জন্য একটি সহযোগিতামূলক প্রচেষ্টাকে উত্সাহিত করা।
চীনের শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি, ইংরেজি সংবাদপত্র চায়না ডেইলির প্রতিনিধি, বেইজিং পৌরসভার নেতা এবং একজন নোবেল বিজয়ীসহ সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যক্তিরা ফোরামে বক্তব্য রাখেন।
এ ফোরামে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতা ও উদ্ভাবনী সম্পদের বিনিময়, আন্তর্জাতিক উদ্ভাবনী প্রতিভা বিকাশের মডেল অন্বেষণ এবং প্রতিভার অধিকারী বিদেশিদের বিষয়ে বেইজিংয়ের দৃষ্টিভঙ্গির ওপর আলোকপাত করা হয়।
ফোরাম চলাকালে চায়না স্কলারশিপ কাউন্সিল (সিএসসি) এবং বেইজিং ওভারসিজ ট্যালেন্টস সেন্টার রাজধানীতে সরকারি অর্থায়নে একটি প্রতিভা প্রশিক্ষণ প্রকল্প প্রতিষ্ঠার জন্য একটি সমবায় কাঠামো চুক্তি স্বাক্ষর করে। এর মধ্য দিয়ে বিদেশে পড়াশোনার ক্ষেত্রে জাতীয় বৃত্তির জন্য স্থানীয় সহযোগিতা প্রদানে সিএসসি ও কোনও অ-শিক্ষামূলক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সহযোগিতা শুরু হলো।
এটি সিএসসির একটি পরীক্ষামূলক উদ্যোগ, যাতে বেইজিংকে একটি পাইলট শহর হিসাবে বেছে নেওয়া হয়েছে।
রাজধানী বেইজিংয়ে কাজ এবং ব্যবসা শুরু করার জন্য আরও প্রতিভা আকৃষ্ট করতে বেইজিং ইনস্টিটিউট অব ট্যালেন্ট ডেভেলপমেন্ট স্ট্র্যাটেজি এবং পিকিং ইউনিভার্সিটির কুয়াংহুয়া স্কুল অব ম্যানেজমেন্ট যৌথভাবে "গ্লোবাল সিটি ট্যালেন্ট রিটেনশন ইনডেক্স (২০২২)" প্রকাশ করে এ ফোরামে। প্রতিবেদনে দেখা যায়, বেইজিং বিশ্বব্যাপী শহরগুলোর মধ্যে এক্ষেত্রে সামগ্রিক স্কোরে ষষ্ঠ স্থানে রয়েছে এবং টানা তৃতীয় বছর চীনের শীর্ষস্থানীয় শহরের মর্যাদা ধরে রেখেছে।
প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনের ক্ষেত্রে প্রখ্যাত বিজ্ঞানী, উদ্যোক্তা ও অসামান্য প্রতিভার অধিকারী যুব প্রতিনিধিদের নেতৃত্বের ভূমিকাকে সম্পূর্ণভাবে কাজে লাগাতে আয়োজকরা এনওয়াইইউ সাংহাইয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর এবং চীন সরকারের বন্ধুত্ব পুরস্কার বিজয়ী জেফরি লেহম্যানকে, চীনের বিজ্ঞান একাডেমির শিক্ষাবিদ এবং সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজির প্রেসিডেন্ট সুয়ে ছিকুন, এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের মানবসম্পদ বিভাগের মহাপরিচালক আসমা শেখ এবং ইউরোপীয় ইউনিয়ন চেম্বার অব কমার্সের ভাইস-প্রেসিডেন্ট মিগুয়েল মন্টোয়াকে আমন্ত্রণ জানান ফোরামে। এ বিশেষজ্ঞরা উদ্ভাবনী উন্নয়নের ক্ষেত্রে যুব প্রতিভাদের ক্ষমতায়নের বিষয়ে বক্তব্য রাখেন।
এছাড়া চায়না ডেইলির জ্যেষ্ঠ সাংবাদিক এবং চীন সরকারের মৈত্রী পুরস্কার বিজয়ী এরিক রবার্ট নিলসন, আইবির প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও লিন ইউয়ানছিং, কোয়োট বায়োসায়েন্সের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও লি জিয়াং, প্রভিডেন্স একাডেমির সহ-প্রতিষ্ঠাতা ইয়াং ফান এবং পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়েনচিং স্কলারের প্রতিনিধি অ্যান্ডি এনজি আলোচনায় অংশ নেন।
বেইজিং ওভারসিজ ট্যালেন্টস সেন্টার ২০২১ সালে বেইজিং আন্তর্জাতিক যুব উদ্ভাবন ও উন্নয়ন ফোরাম শুরু করেছিল। ফোরামের লক্ষ্য হলো যুব উদ্ভাবন উপাদানগুলোকে একত্রিত করা, যুব উদ্ভাবনের প্রাণশক্তিকে উদ্দীপিত করা, এবং তরুণ উদ্ভাবন প্রতিভা ও সম্পদ বিনিময়ের একটি বিশ্বব্যাপী প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা।
প্রতিবেদকঃ শিহাবুর রহমান
সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল/রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী