বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পে উদ্যোক্তা তৈরি করছে চীন | শেকড়ের গল্প | পর্ব ২০
2023-05-31 17:15:48

                     


                         


 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

১. বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্পে উদ্যোক্তা তৈরি করছে চীন

পোল্ট্রি শিল্পে নারী উদ্যোক্তা তৈরির লক্ষ্য নিয়ে প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে চীনের প্রতিষ্ঠান নিউ হোপ। প্রতিষ্ঠানটির তত্ত্বাবধানে বাংলাদেশের নরসিংদী জেলায় বেশ কয়েকটি জায়গায় প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন নারীরা।

এ কাজে অস্ট্রেলিয়ার এইড এজেন্সি কুফার প্রশিক্ষকরা পোল্ট্রি শিল্প নিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা শেয়ার করছেন নারী খামারিদের  সঙ্গে। প্রশিক্ষণে অংশ নেয়া নারীরা বলছেন, ৪দিন ব্যাপী এই কর্মশালা তাদেরকে সমৃদ্ধ করছে। এ শিল্পে অনেক দুর এগিয়ে যাওয়ার পথকে মসৃণ করেছে এই কার্যক্রম।

এখানকার আবহাওয়া ভালো হওয়ায় প্রায় প্রতিটি গ্রামেই গড়ে উঠেছে পোল্ট্রি খামার।  

নরসিংদীর রায়পুরা উপজেলার বাসিন্দা হাসিনা বেগম। ৫৬ বছর বয়সী এই নারী দীর্ঘ ২২ বছর ধরে কাজ করছেন পোল্ট্রি শিল্পে।

                         হাসিনা বেগম, খামারী

গেল ২ দশকে তিনি সাক্ষী হয়েছেন পোল্ট্রি শিল্পের উত্থান পতনের। অজানা নানান রোগে খামারের মুরগিগুলোকে আক্রান্ত হতে দেখেছেন। অভিজ্ঞতা কম থাকায় ক্ষতির মুখেও পড়েছেন বেশ কয়েকবার।

তার মতো গ্রামীণ নারীদের পোল্ট্রি শিল্পে দক্ষ করে গড়ে তুলতে ৪ দিনের বিশেষ প্রশিক্ষণ কর্মশালার আয়োজন করা হয়। এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাঙ্ক-এডিবির অর্থায়নে, অস্ট্রেলিয়ার এইড এজেন্সি কুফার বাস্তবায়নে এই কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করছে চীনের প্রতিষ্ঠান নিউ হোপ। 

মুরগীগুলো স্বাস্থ্যসম্মত রাখতে ঘরের লিটার পরিস্কার রাখতে হয়। উন্নত জীবাণুনাশক দিয়ে রাখতে হয় জীবাণুমুক্ত। তবে নানা কারণে রোগাক্রান্ত হয় মুরগী।

 কীভাবে মুরগীগুলো ভাইরাসে আক্রান্ত হয় এবং কীভাবে তা প্রতিরোধ করা যায় তা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেন প্রশিক্ষকরা।

                         ডাঃ হোসনে আরা, জাতীয় প্রশিক্ষক, কুফা, অস্ট্রেলিয়া

 

২০২২ সালের আগস্টে শুরু হওয়া এই প্রোগ্রাম চলবে ২ বছর। গেল ৮ মাসে প্রায় এক হাজার খামারীকে প্রশিক্ষণ কার্যক্রমের আওতায় আনে নিউ হোপ।

                         ডাঃ হোসাইন, ডিজিএম, নিউ হোপ ফিড মিল বাংলাদেশ লি.

ভবিষ্যতে পোল্ট্রি খাতে আরো বেশি নারী খামারিদের  দক্ষ করে গড়ে তোলার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে চীনের এই প্রতিষ্ঠান।

                        সিউয়ান লি, প্রধান, প্রশাসন ও মানবসম্পদ বিভাগ, নিউ হোপ বাংলাদেশ

 “নারীদের নিয়ে এ ধরনের প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম আমরাই বাংলাদেশে প্রথম বারের মতো চালু করেছি । আমরা লক্ষ্য করেছি এ ধরনের প্রশিক্ষণ পাওয়ার পর খামারিদের বেশ উপকার হচ্ছে। পোল্ট্রি শিল্প সম্পর্কে অনেক উচ্চ মানের ধারণা তৈরি হচ্ছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে কিভাবে মুরগির খামার করা হয় সে সম্পর্কেও ধারণা দেয়া হচ্ছে খামারিদের।“

একদম বিনামূল্যে এই প্রশিক্ষণ নিতে পারছেন নারী খামারিরা। তাদের চোখেমুখে এখন উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন।

শুধু নরসিংদী নয়, বাংলাদেশের যেসব জেলায় পোল্ট্রি শিল্পের সম্ভাবনা আছে সেসব জায়গায় প্রশিক্ষণ কার্যক্রম চালানোর পরিকল্পনা রয়েছে নিউ হোপের। এবং তাদের এই উদ্যোগের মূল লক্ষ্য হলো এ শিল্পে নারীদের অংশগ্রহণ বাড়ানো ও তাদেরকে খামার ব্যবস্থাপনায় দক্ষ করে তোলা। ।

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

 

 

২. চাহিদা বাড়ছে চীনের লাল মরিচের

এমন কোন রান্না নেই যেখানে মরিচের ব্যবহার হয় না। প্রায় সব দেশেই বিশাল চাহিদা রয়েছে এই মরিচের। চীনের উত্তর পশ্চিমের প্রদেশ উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ে লাল মরিচের চাষাবাদ বেশি হয়। বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এই মরিচের চাষ করেন স্থানীয় কৃষকরা।

 

সারি সারি সাজানো লাল মরিচ। নানান পদের রান্নায় এই মরিচের জুড়ি নেই।

কয়েক বছর ধরে প্রায় এক হেক্টর জমিতে মরিচের চাষ করছেন স্থানীয় কৃষক মা সিশিন। ফসল মাঠ থেকে না উঠাতেই এরই মধ্যে তার সব মরিচ অগ্রিম  কিনে ফেলেছেন ক্রেতারা। সিশিনের মতে, মরিচ চাষ করে কৃষকদের শুধু আয় উপার্জনই বাড়েনি বরং পাল্টে গেছে স্থানীয় অর্থনীতির সামগ্রিক চিত্র।

মা সিশিন বলেন, "এবছর মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে। গেলবারের চেয়ে আমরা বেশ ভালো আয় উপার্জন করেছি। আমার ধারণা ছোট্ট জমিতেও প্রতিবার মরিচ চাষ করে ১৫ হাজার ইউয়ানেরও বেশি আয় করা সম্ভব।"

জমি থেকে উঠানো তাজা মরিচ বিক্রির পাশাপাশি শুকনো মরিচও বেশ ভালো দামে বিক্রি করতে পারেন কৃষকরা।

বেচাকেনা বাড়াতে কৃষকদের সহযোগিতা করছে স্থানীয় কর্তৃপক্ষ। তাদের জন্য তৈরি করা হয়েছে অনলাইন প্লাটফর্ম। সব ধরনের প্রযুক্তিগত সুবিধা পাচ্ছেন কৃষকরা। ভালো মানের বীজ বেছে নেয়া, রোপন করা, সার ও পানি দেয়া এ ধরনের কাজেও এগিয়ে এসেছে স্থানীয় কৃষি বিভাগ।

বছর প্রতি ০.০৬ হেক্টর জমিতে তিন হাজার কেজি ফলন হবে বলে আশা করা হচ্ছে, যেখান থেকে ৫০০ কিলোগ্রাম শুকনো মরিচ পাওয়া যাবে।

 

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: আফরিন মিম

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী