‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ২০
2023-05-30 13:01:43

 

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। চীনের বিস্ময়কর সাতরঙের পাহাড়

২। প্রাণশক্তিতে ভরপুর ছংতুর চিনলি সড়ক

৩। মজার জায়গা নানফিং চিয়ে

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ২০তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।   

 

১। চীনের বিস্ময়কর সাত রঙের পাহাড়

১২৪ বর্গমাইল জায়গা জুড়ে আকাশে দেখা রংধনু ছড়িয়ে আছে মাটিতে। ছিলিয়ান পর্বতমালার পাদদেশে অবস্থিত এই পাহাড়। চীনের উত্তর-পশ্চিমের কানসু প্রদেশের এই পাহাড়কে বলা হয়  চাংইয়ে  তানসিয়া ন্যাশনাল পার্ক। যা সারা বিশ্বের কাছে একটি বিস্ময়।



এখানে পা রাখা মাত্রই পর্যটকদের চোখে ঝলসে ওঠে বেগুনি-নীল-আশমানি-সবুজ-হলুদ-কমলা-লালের বাহারে। তবে তা আকাশে নয়, এই রংমহল পাহাড়ের গায়েই। দেখে মনে হয় শিল্পী তার মনের মাধুরী দিয়ে রাঙিয়েছে এই পাহাড়কে।


চীনের এই বিস্ময়কর পর্বতশ্রেণি নিয়ে ভূবিজ্ঞানীরা বলেন, এই রঙিন পাহাড় তৈরি হতে সময় লেগেছে ২৪ মিলিয়ন বছর। টেকটনিক প্লেটের সরণের ফলে এই পাহাড়ের ঢালগুলো তৈরি হয়। কিন্তু তার গায়ে এই বিচিত্র রঙের বাহার ধরে অন্য কারণে। এই পর্বত মূলত বেলেপাথরে তৈরি। হিমালয় গঠনের অনেক আগে থেকেই এই পাহাড় তৈরি শুরু হয়েছিল। বালি পাথরে জমাট বাঁধার সময়ে তাতে মিশে গিয়েছিল বিভিন্ন খনিজ, গাছপালার অবশেষ ইত্যাদি। সেই মিশ্রণগুলোই এই রঙিন দুনিয়া তৈরি করে।


এই পাহাড়ের প্রাথমিক রংটি কিন্তু একদমই লাল। তার উপরেই জমেছে অন্য রঙের উপকরণ। ক্রমাগত রঙের পরিবর্তনে এই পাহাড় তার বর্তমান রূপটি পেয়েছে বলেও জানান ভূ-বিজ্ঞানীরা।

এই পর্বতশ্রেণির কোথাও সমতল, কোথাও বা উঁচু-নিচু আবার কোথাও মসৃণ যেখানে সবুজের পশরা বসিয়ে রেখেছে নানা রকমের গাছপালা। পাহাড়ের পাথরের সজ্জাগুলি বিভিন্ন রঙের পশরা সাজিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে। যদি দিনের শুরুতে বৃষ্টি হয় প্রকৃতি তাহলে আরো জাঁকজমক রুপ ধারণ করে।

তানসিয়া ভ্রমণের সবথেকে উপযোগী সময় হল জুন-সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়টি। সে সময়ে গগণে সূর্যতাপ ও মাঝে মাঝে হওয়া গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি প্রকৃতির আসল রঙ বের করে আনে।

সকাল বেলা ও গোধূলির শুরু তানসিয়া ভ্রমণের জন্য অন্যতম সময়। কারণ এই সময়েই চারপাশের আলোর খেলায় পাহাড়ের রঙ পরিবর্তন হতে শুরু করে। সকাল এবং গোধূলিতেই হলুদ ও রক্তিম লাল বর্ণের পাহাড়গুলো ধীরে ধীরে হাল্কা ধূসর রঙে বদলাতে শুরু করে। 

সে সময়ে পাহাড়গুলো দেখলে চোখ ধাঁধিয়ে যায়। একটি গোটা পর্বতশ্রেণি যে এভাবে রঙের মিশেল হয়ে উঠতে পারে ভাবলেও অবিশ্বাস্য লাগে।

২০০৯ সালে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট হিসাবে তালিকাভুক্ত করে এই পার্ককে। এটি চীন ও বিশ্বের 'সবচেয়ে সুন্দর' স্থানের তালিকাভুক্ত হয়েছে বহুবার। উত্তর-পশ্চিম চীনের এই অঞ্চল এখন জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা-শান্তা মারিয়া

 

২। প্রাণশক্তিতে ভরপুর ছংতুর চিনলি সড়ক

৫৫০ মিটার দীর্ঘ সড়ক। সড়কের দুই ধারে ছিং রাজবংশের সময়কার স্থাপত্যশৈলীতে গড়া বেশ কিছু ভবন। আর সেই ভবনের সামনে ঝুলছে চীনের ঐতিহ্যবাহী রঙ বেরঙের লণ্ঠন। এটি চীনের ছংতু শহরের চিনলি সড়ক।

চিনলি সড়ক ছংতুর একটি জনপ্রিয় পর্যটন আকর্ষণের নাম। কারণ সড়কটি একইসাথে ছংতুর ঐতিহ্যবাহী ও আধুনিক দিকগুলো দর্শনার্থীদের সামনে চীনের প্রাচীন সংস্কৃতি তুলে ধরে। পাশাপাশি এই সড়ক জড়িয়ে আছে চীনের দীর্ঘ ইতিহাসের সাথে। তাই ২০০৪ সালে সড়কটি পুনরায় মেরামত করে জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়।

ছংতু শহরের সমৃদ্ধ ইতিহাস ও সংস্কৃতিকে তুলে ধরার জন্য ‘থ্রি কিংডম’-এর সংস্কৃতি এবং স্থানীয় লোক সংস্কৃতির থিমে সাজানো হয়েছে চিনলি সড়ক। সড়কটির কাছেই রয়েছে উহৌ মন্দির। এখানেও ‘থ্রি কিংডমের’ প্রাচীন নির্দশন সমূহ দেখতে পাওয়া যায়।

ছংতু শহরজুড়ে রয়েছে প্রচুর কেনাকাটার মার্কেট, চা ঘর,বার ও রেস্তোরাঁ। এখানে আরো দেখতে পাওয়া যায় সিচুয়ান অপেরা মুখোশ, ছায়া পুতুল এবং পান্ডা ও অন্যান্য স্মারক থিমযুক্ত পণ্য।

সারাদিন ঘুরে বেড়াবার ক্লান্তি কাটিয়ে উঠতে এখানে স্থানীয় চীনা চা পানের সংস্কৃতি রয়েছে। যারা এখানে ঘুরতে আসেন সন্ধ্যায় তারা ঐতিহ্যবাহী চীনা চায়ের স্বাদ নিতে চা ঘরগুলোতে আড্ডা জমান।  

২০০৫ সালে চিনলি সড়ককে “ন্যাশনাল টপ টেন সিটি কমার্শিয়াল পেডেস্ট্রিয়ান স্ট্রিট” হিসেবে নামকরণ করা হয়।

প্রতিবেদন- আব্দুল্লাহ আল মামুন

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

৩। মজার জায়গা নানফিং চিয়ে

চীনের ইউননান প্রদেশের রাজধানী কুনমিংয়ের একটি আকর্ষণীয় স্থান হলো নানফিং চিয়ে। নান ফিং হাঁটাপথও বলা হয় একে। শহরের প্রাণকেন্দ্রে এর অবস্থান।

যারা কুনমিং শহরের বিভিন্ন এলাকায় থাকেন তারা অনেকেই বিকেলের দিকে বেড়াতে আসেন  এখানে। কুনমিং শহরের জনবহুল এলাকা তংফেং স্কোয়ার। এখান থেকে খুব কাছেই নান ফিং স্ট্রিট। এটি ৬৮৫ মিটার লম্বা একটি বড় রাজপথ। মাঝখানে বিশাল প্রশস্ত চত্বর। চত্বরের শুরুতেই রয়েছে একটি তোরণ।

তোরণের পাশেই রয়েছে ১০ মিটার গুণ ১০ মিটার আয়তনের একটি মানচিত্র। মানচিত্রটি পুরনো কুনমিং শহরের। চত্বরে রয়েছে বেশ কয়েকটি ভাস্কর্য। অনেকখানি জায়গা ফুল দিয়ে সাজানো।

চত্বরের দুই পাশে রয়েছে অনেক ব্র্যান্ড শপ, বড় বড় কয়েকটি শপিংমল । এখানে রয়েছে অনেকগুলো রেস্টুরেন্ট। একটি ফুড স্ট্রিটও আছে। সেখানে চীনের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য থেকে শুরু করে ফাস্টফুড এবং পাশ্চাত্যের খাবারও পাওয়া যায়।

এখানে পোশাক, অলংকার, চীনা ঐতিহ্যবাহী মেডিসিন, চীনা চাসহ রয়েছে বিভিন্ন সামগ্রীর দোকান।

এছাড়া নানফিং স্ট্রিটে পথের দুপাশে আছে বসার ভালো সুব্যবস্থা। চত্বরে প্রায় সারা বছরই কোন না কোন মেলা ও প্রদর্শনী  থাকে।

চত্বরে প্রায়ই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়। বিশেষ করে চীনের ঐতিহ্যবাহী লোকজ সংস্কৃতির নাচ গান পরিবেশিত হয়। নানফিংচিয়ের সঙ্গেই রয়েছে কুনমিংয়ের সবচেয়ে বড় মসজিদ। এখানে আশপাশে হালাল খাবারের রেস্টুরেন্টও রয়েছে।

সন্ধ্যার পর থেকে এই এলাকা বেশি জমজমাট হয়ে ওঠে। শপিং, খাওয়া, মেলা দেখা এবং স্রেফ বেড়ানোর জন্যও এখানে আসেন অনেক ক্রেতা, দর্শক ও পর্যটক

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী