২০তম পর্বে যা থাকছে:
* মস্তিষ্কের তরঙ্গ বুঝতে পারে নতুন প্রযুক্তি!
* বেইজিংয়ের সাবওয়েতে চালু হলো বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা
* কেমন হলো চীনের রোবট প্রতিযোগিতা?
মস্তিষ্কের তরঙ্গ বুঝতে পারে নতুন প্রযুক্তি!
ভাবুন তো, হুইলচেয়ারে করে ঘুরে বেড়াচ্ছে বয়স্ক বা শারীরিকভাবে চ্যালেঞ্জড কোনো ব্যক্তি, লাগছে না কোনো সাহায্যকারী। কেননা হুইলচেয়ারটি চালাচ্ছে হুইলচেয়ারে বসে থাকা ব্যক্তিটিই! অবাক হবার কিছু নেই, চীনে এ সবই এখন বাস্তব।
বাহ্যিক কোনো পরিচালনা ছাড়াই মানবমস্তিষ্কের নির্দেশনা অনুসরণ করতে পারে আধুনিক প্রযুক্তিতে চলা হুইলচেয়ার। এ প্রযুক্তির নমুনা দেখানো হয়েছে সম্প্রতি চীনে অনুষ্ঠিত সপ্তম ওয়ার্ল্ড ইন্টেলিজেন্স কংগ্রেসে। হুইল চেয়ারে বসে হুইলচেয়ারের সাথে যুক্ত একটি হেলমেট মাথায় পরে হুইল চেয়ার নিয়ন্ত্রণ করতে দেখা যায় সেখানে। অভিনব এ প্রযুক্তি নজর কাড়ে দেশ-বিদেশ থেকে আগত হাজারো দর্শনার্থীর।
হেলমেটটিতে এমন একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে যার সাহায্যে হেলমেটটি মানবমস্তিষ্কের তরঙ্গ ধরতে পারে এবং এর মানে বুঝতে পারে, এমনটিই বলা হয় প্রদর্শনীতে।
প্রদর্শনীতে আসা এক দর্শনার্থী বলেন, “আমি মনে করি এ প্রযুক্তি বয়স্ক ব্যাক্তিদের নিরাপদে ঘুরে বেড়ানোর চাহিদা মেটাবে। এটি একটি নতুন প্রযুক্তি এবং একে নানা আঙ্গিকে কাজে লাগানো যেতে পারে।”
মানবমস্তিষ্কের তরঙ্গ বুঝতে পারে এমন হুইলচেয়ারই শুধু না, থিয়ানচিনে মস্তিষ্কের সাথে যন্ত্রের একীকরণ নিয়ে কাজ করা গবেষকরা এমন এক প্রযুক্তি আবিষ্কার করেছেন যার মাধ্যমে কি-বোর্ডে আঙ্গুলের স্পর্শ ছাড়াই টাইপ করা যাবে!
এ প্রক্রিয়ায় লিখতে হলে শুধু কম্পিউটার স্কিনের দিকে তাকিয়ে থাকতে হবে। যে অক্ষরটি লিখতে চান সেটির দিকে তাকালে কম্পিউটার এই সিগনাল ধরতে পারবে এবং যা লিখতে চাচ্ছেন তা লিখে ফেলতে পারবে।
ল্যাবটির একজন গবেষক মেং চিয়াইউয়ান বলেন, “চোখের গতিবিধির সাথে মস্তিষ্কের তরঙ্গের যোগসূত্র রয়েছে। চোখের নড়াচড়া মস্তিষ্কে একটি ছাপ ফেলে যায়। আমাদেরে প্রযুক্তি সেই ছাপকে ডিকোড করে এর মানে বুঝতে পারে। তাই আপনি যখন ‘জেড’ অক্ষরটি লিখার কথা ভাবেন এটিও লিখে দেয় ‘জেড’।”
মেং আরো বলেন, মস্তিষ্কের তরঙ্গ দিয়ে যন্ত্র নিয়ন্ত্রণের প্রযুক্তি ভিডিও গেমেও ব্যবহার করা হয়।
“মস্তিষ্ক ও যন্ত্রের সংযোগস্থাপনের জন্য তৈরি এই প্রযুক্তি জীবনে সকল ক্ষেত্রেই কাজে লাগানো সম্ভব। পুনর্বাসন থেরাপি, শিক্ষা, আধুনিক গেমস ও বিনোদনে এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এটি আরো বিস্তৃত পরিসরে ব্যবহার করা যেতে পারে এবং সেই লক্ষ্যে পরিকল্পনামাফিক কাজও করছে আমাদের গবেষণা দল,” জানান মেং।
ওয়ার্ল্ড ইন্টেলিজেন্স কংগ্রেস চীনের একটি প্রধান কৃত্রিম বুদ্দিমত্তা নির্ভর ইভেন্ট যেখানে ২১টি দেশ এবং অঞ্চলের বিশেষজ্ঞ, শিক্ষাবিদ, উদ্যোক্তারা অংশ নেয়। এখানে বুদ্ধিমান বাহন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, মস্তিষ্ক ও যন্ত্রের ইন্টারেকশন এবং অন্যান্য আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে আলোচনা হয়ে থাকে।
|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন
বেইজিংয়ের সাবওয়েতে চালু হলো বায়োমেট্রিক ব্যবস্থা
যতই দিন যাচ্ছে, প্রতিনিয়ত সমৃদ্ধ হচ্ছে প্রযুক্তি ভাণ্ডার। শুধু অফিস আদালত নয় দৈনন্দিন জীবনেও ব্যবহার হচ্ছে প্রযুক্তির সবশেষ সংস্করণ। আর এভাবেই সহজ হচ্ছে প্রতিদিনের জীবনযাপন।
প্রযুক্তিতে এগিয়ে থাকা দেশ চীন সাবওয়েতে বায়োমেট্রিক পদ্ধতি সংযুক্ত করেছে। এর মাধ্যমে হাতের তালু স্ক্যান করেই সাবওয়েতে ভ্রমণ করতে পারবেন যাত্রীরা। সম্প্রতি রাজধানী বেইজিংয়ের সঙ্গে তাসিং ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট পর্যন্ত সংযুক্ত সাবওয়েতে চালু করা হয় এই পাইলট প্রোগ্রাম।
যাত্রীদের যাতায়াত সহজ করতেই এই উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানিয়েছে বেইজিং মিউনিসিপ্যাল কমিশন অব ট্রান্সপোর্ট। সংস্থাটি বলছে, ট্রেন ধরতে কিউআর কোড স্ক্যান করার ঝামেলা থেকে যাত্রীদের রেহাই দিতে তাসিং এয়ারপোর্ট এক্সপ্রেস সাবওয়ে লাইনে এ প্রোগ্রাম চালু করা হয়।
বেইজিং মেট্রো নেটওয়ার্ক কন্ট্রোল সেন্টারের বিশেষজ্ঞ চাং লি এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘যাত্রীরা সাবওয়ে স্টেশনে প্রবেশ করার সময় এবং বের হওয়ার সময় স্ক্যানিং মেশিনের উপরে হাতের তালু রাখবেন। যদি হাতের তালু স্বেচ্ছায় নিবন্ধিত পাম প্রিন্টের সাথে মিলে যায় তবে টিকিট গেটটি খুলবে। ট্রেন থেকে বের হওয়ার সময় স্বয়ংক্রিয় ভাবে ভাড়া কেটে নেওয়া হবে।’
নতুন এই সংস্করণের কিছু সুবিধার কথাও তুলে ধরেন তিনি।
‘আধুনিক স্ক্যানিং গেটগুলো যাত্রীর হাতের তালু ও শিরা কিছুটা দূর থেকেই শনাক্ত করতে পারে। গেটে স্পর্শ করার প্রয়োজন না থাকায় বিষয়টি স্বাস্থ্যসম্মত এবং নিরাপদ। আগের যে কোন পদ্ধতির তুলনায় নতুন এই ব্যবস্থায় খুব কম সময়ের মধ্যে ট্রেনে ওঠা যায়,’ বলেন চাং লি।
সংস্থার পক্ষ থেকে বলা হয়, যাত্রীদের হাতের তালুর প্রিন্টসহ অন্যান্য তথ্য সংরক্ষণে এনক্রিপশন টেকনোলজি ব্যবহার করা হয়েছে। অর্থাৎ অন্য কোন পক্ষ যাত্রীর তথ্য পাবে না।
১৪ বছর বা তার বেশি বয়সের যে কোনো যাত্রী নিবন্ধন করে সাবওয়েতে এ সুবিধে নিতে পারবেন। আর ভাড়ার টাকা কেটে নেয়ার জন্য নিবন্ধন করার সময় উই চ্যাট অ্যাপকে অনুমতি দিতে হবে।
উই চ্যাট পে’র জেনারেল ম্যানেজার সিন চিয়ানহুয়া অ্যাপটিকে নিয়ে ভবিষ্যত পরিকল্পনার কথা তুলে ধরেন।
তিনি বলেন, ‘হাতের তালুর মাধ্যমে পেমেন্ট করার বিষয়টি পর্যায়ক্রমে স্কুল-কলেজ, অফিস-আদালত, রেস্টুরেন্ট ও জিমনেসিয়ামে ব্যবহার করা হবে। কারণ এটি নিরাপদ এবং হাতের স্পর্শ ছাড়াও পেমেন্ট করা যায়।’
তিনি আরো বলেন, ‘বিশেষ করে যারা বৃদ্ধ এবং শারিরীক প্রতিবন্ধী, তাদের জন্য এই স্ক্যানিং সিস্টেমটি বেশি কাজে লাগবে। কারণ এই ব্যবস্থায় মোবাইল ফোন ছাড়াও স্ক্যানিং করা যায়। কোন কার্ডের প্রয়োজন নেই’।
সাধারণ মানুষের চলাফেরা সহজ করতে এভাবেই প্রযুক্তিকে কাজে লাগাচ্ছে চীন সরকার। আর চীনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশও বিভিন্ন সেক্টরে প্রযুক্তিতে সংযুক্ত করছে।
|| প্রতিবেদন: এইচ আর এস অভি
কেমন হলো চীনের রোবট প্রতিযোগিতা?
সম্প্রতি পূর্ব চীনের আনহুই প্রদেশের উহু শহরে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো রোবট প্রতিযোগিতা। ৬ হাজারেরও বেশি প্রতিযোগি নানা টাইটেলের লক্ষ্যে চায়না রোবোওয়ার্ক প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।
মোট ১৭২টি বিশ্ববিদ্যালয়, ভোকেশনাল কলেজ ও প্রতিষ্ঠান থেকে প্রতিযোগীরা অংশ নেয় তিন-দিনব্যাপী রোবট প্রতিযোগিতায়।
প্রতিযোগিতাটিকে চীনের সর্ববৃহৎ উদ্ভাবন প্রতিযোগিতা হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। মোট ২০টি ক্যাটাগরিতে রোবটদের মধ্যে প্রতিযোগিতা হয়েছে এবার। রোবট চালনা, বাতাসে রোবট পরিচালনা, রোবোটিক লজিস্টিকস এবং হিউম্যানয়েড রেসিংয়ের মতো প্রতিযোগিতাসহ সবগুলো প্রতিযোগিতাতেই ছিলো আলাদা আলাদা চমক।
চেচিয়াং বিশ্ববিদ্যালয়ের সায়েন্স এবং টেকনলোজির শিক্ষার্থী মিয়াও হাং ইউ অংশ নেন রোবট প্রতিযোগিতায়। তিনি জানান একটি রোবটকে নিখুঁত করতে নানা কাঠখড় পোড়াতে হয়, লেগে থাকতে হয়।
তিনি বলেন, “আমরা যখন রোবট তৈরি করছিলাম তখন আমরা অনেক ত্রুটি খুঁজে পেয়েছি। রোবটটিকে নিখুঁত করতে আমরা নতুন ধারণা অনুযায়ী সব ত্রুটি সারিয়ে এটিকে আর উন্নত করে তুলেছি।”
চায়না রোবোওয়ার্ক প্রতিযোগিতা সাধারণত ব্যবহারিক প্রকৌশল সমস্যা সমাধানের দিকে বিশেষ নজর দেয়। ২০১৪ সালে প্রথম এ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বছর এর ১০তম আসর গেলো।
|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন
অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।
পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আব্দুল্লাহ আল মামুন
অডিও সম্পাদনা - রফিক বিপুল
স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী