ভেজানো, রং করা, গরম করা, স্টিমিং... কুয়াংসি প্রদেশের হ্যছি শহরের ইয়াও জাতি’র ফেংজেন ইন্ডিগো ডাইং ওয়ার্কশপে, এ অঞ্চলের বিমূর্ত সংস্কৃতির উত্তরাধিকারী লি ফেংজেন দুটি বড় ডাইং ভ্যাটের সামনে দাঁড়িয়ে কাপড় রং করার ক্রিয়াটি পুনরাবৃত্তি করছেন। ঘরের সামনে কাপড় ঝুলিয়ে দেওয়া হয়েছে শুকানোর জন্য।
একসময় তিনি একা কাজ করতেন। এখন ১৫৪ জন পাইখু ইয়াও নারী তার সঙ্গে কাজ করছে। লি ফেংজেন গ্রামে একটি ছোট ওয়ার্কশপ গড়ে তুলেছেন, যার নাম "নানদান জেলা ফেংজেন ইন্ডিগো ডাইং ওয়ার্কশপ"। পরে তিনি "নানদান জেলা দুওনু হস্তশিল্প কর্মশালা”এবং “পাইখু ইওয়া ডাইং ওয়ার্কশপ" নামে আরও দুটি কর্মশালা গড়ে তোলেন। এখানকার কর্মীরা প্রধানত পাশের দুটি গ্রাম থেকে এসেছে।
লিহুর ইয়াও গ্রামের ডুওনু কমিউনিটির গ্রামবাসী হে ফেই শৈশব থেকেই সূচিকর্মের কাজ পছন্দ করতেন। গত কয়েক বছর ধরে তিনি জীবিকার জন্য গ্রামের বাইরে ছিলেন। ২০১৮ সালে তিনি জানতে পারেন যে, তার নিজের গ্রামে হস্তশিল্প কর্মশালায় কারিগর নিয়োগ করা হয়। তখন তিনি সাহস করে চাকরি ছেড়ে দেন এবং পাইখু ইয়াও মানুষের আসল কাপড় তৈরির প্রযুক্তি ও সূচিকর্মের দক্ষতা শিখতে লি ফেংজেনের কাছে আসেন, শিক্ষাগ্রহণ করেন।
"আমার নিজের হাতে তৈরি পোশাক পরা মানুষ দেখলে শুধু সুন্দরই লাগে না, আমার মনও এতে ভালো হয়ে যায়।" নিজের হাতে তৈরি ইয়াও পোশাক সম্পর্কে কথা বলতে গিয়ে হে ফেইকে গর্বিত লাগছিল।
হে ফেই তার পছন্দের একটি চাকরি পেয়েছেন এবং তার দোরগোড়ায় কাজ করতে পেরে তার আনন্দও অপরিসীম। হস্তশিল্প কর্মশালাটি "কৃষক + ভিত্তি + কোম্পানি" মডেল গ্রহণ করে। এখানে কর্মীরা আলাদাভাবে কাপড় তৈরী করে, কর্মশালা তাদের অর্ডার দেয়, এবং কোম্পানি বিক্রয় ও পরিচালনা করে। এতে পুনর্বাসন সাইটে সংখ্যালঘু জাতির নারীদের কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধান হয়েছে। হস্তশিল্প কর্মশালা প্রতিষ্ঠার পর থেকে মাসভিত্তিতে কাজ করা শ্রমিকের সংখ্যা ৭০ জনে পৌঁছেছে।
"আমার আয় খুব বেশি নয়। আমাদের সূচিকর্ম কর্মশালায় আরও দক্ষ নারী মাসে ৩ হাজার ইউয়ানের বেশি উপার্জন করতে পারেন।" হে ফেই বলছিলেন যে, নারী-কর্মীরা তাদের বাচ্চাদের কাছের স্কুলে নিয়ে যেতে পারেন এবং তাদের অবসর সময়ে এই নৈপুণ্যের ওপর নির্ভর করে নিজের জীবনযাত্রার ব্যয় নির্বাহ করতে পারেন।
লি ফেংজেনের মেয়ে লি ছিউ ই দুওনু হস্তশিল্প কর্মশালায় সূচিকর্মীদের সাথে পাইখু ইয়াও সাংস্কৃতিক উদ্ভাবনশীল পণ্যের নকশা নিয়ে আলোচনা করছিলেন। তিনি শুধুমাত্র নানদান জেলার বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের উত্তরাধিকারী নন, নানদান জেলার বৃহত্তম পাইখু ইয়াও প্রাক্তন দারিদ্র্যবিমোচন স্থানান্তর ও পুনর্বাসন স্থান দুওনু সম্প্রদায়ের শাখার সচিবও। জাতীয় পোশাকের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্পের সুরক্ষা ও উত্তরাধিকারের ভিত্তিতে, তিনি সাংস্কৃতিক ও পর্যটন শিল্পের বিকাশ এবং স্থানীয় জনসাধারণের আয় বৃদ্ধির জন্য চেষ্টা করেন।
জাতীয় পোশাক হল পাইখু ইয়াও সংস্কৃতির একটি উজ্জ্বল মুক্তা। এ ছাড়া, পাইখু ইয়াও-এর অনেক লোকপ্রথা জাতীয় বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য উত্তরাধিকার হিসাবে তালিকাভুক্ত করা হয়েছে। এ সুযোগটি কাজে লাগিয়ে, দুওনু কমিউনিটি সাংস্কৃতিক ও পর্যটন শিল্পকে চাঙ্গা করার জন্য লোকসংস্কৃতিকে কাজে বিভিন্ন ওয়ার্কশপ ও হস্তশিল্প প্রদর্শনী কর্মশালা প্রতিষ্ঠা করেছে। পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বর্তমানে চালু হওয়া বিভিন্ন কর্মশালা দেখতে সারা দেশ থেকে ২০ হাজারেরও বেশি পর্যটক এসেছেন। সাংস্কৃতিক পর্যটন শিল্পের মানসম্মত উন্নয়নের জন্য, দুওনু কমিউনিটি ছিয়ানচিয়া ইয়াওজাই সাংস্কৃতিক পর্যটন কৃষক সমবায় প্রতিষ্ঠা করেছে, যা ২০২০ সালের এপ্রিল মাসে আনুষ্ঠানিকভাবে চালু হয়। যদিও মহামারীর কারণে সমবায়টি বছরের শেষ ৮ মাস ধরে চালু ছিল, তবে এ ৮ মাসেই ১ লাখ ইউয়ানের বেশি আয় করেছে। এর ফলে স্থানীয় জনগণের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে।
আজ, দুওনু কমিউনিটির একটি নতুন দর্শনীয় স্থান প্রকল্প নির্মাণ করছে-ইয়াও রাজা দর্শনীয় স্থান। "এ প্রকল্প অল্প সময়ের মধ্যে সম্পূর্ণরূপে খোলা হবে বলে আশা করা হচ্ছে। আরও বেশি পর্যটক আসলে আমাদের ব্যবসা আরও ভাল হবে।" ২০২৩ সালের নববর্ষের মেলার সময় তাদের জাতীয় পোশাক স্টোর খুব জনপ্রিয় হয়েছিল। পর্যটকরা পাইখু ইয়াও পোশাকের ছবি তোলার জন্য ভাড়া নিয়েছেন এবং অনেকেই সরাসরি কাপড় কিনেছেন।
"এখন আমরা পারফরম্যান্স টিমের কাছে পোশাক ভাড়া দিই, এবং অনেক অর্ডার পাই। ইউনান, হুনান এবং অন্যান্য স্থান থেকে প্রতিবছর অনেক শিক্ষার্থী আমাদের এখানে হস্তশিল্পের কর্মশালায় বিমূর্ত সংস্কৃতি উত্তরাধিকার অধ্যয়নের জন্য আসেন।” ক্রমবর্ধমান হস্তশিল্প কর্মশালা দেখে লি ফেংজেন আনন্দে আত্মহারা। ২০২০ সাল থেকে তিনি ধীরে ধীরে তাদের ব্যবসার পরিধিকে সাধারণ হস্তনির্মিত পোশাক থেকে সাংস্কৃতিক ও সৃজনশীল পণ্যের নকশা ও উত্পাদন পর্যন্ত প্রসারিত করেছেন। লি ছিউ ই’র তৈরি বালিশ, টুপি, কানের দুল এবং অন্যান্য পণ্য ঐতিহ্যগত হাতের সূচিকর্মের ফ্যাশন উপাদানকে অন্তর্ভুক্ত করে। এতে কেবল জাতীয় সংস্কৃতির স্বাতন্ত্র্য বজায় থাকে তা নয়, বরং বাজারের চাহিদাও পূরণ হয়। পর্যটকরা এসব পণ্য খুব পছন্দ করেন। ২০২২ সালে ডাইং ওয়ার্কশপের আয় ১৬ লাখ ইউয়ানের বেশি হয়েছে। (ইয়াং/আলিম/ছাই)