‘চলতি বাণিজ্য’
2023-05-26 18:46:32

চলতি বাণিজ্যের ১৯তম পর্বে থাকছে:

১. সিনচিয়াংয়ে সর্ববৃহৎ সোলার প্যানেল, রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা

২. 'মোবাইল উৎপাদনের হাব হতে পারে বাংলাদেশ'

৩. চীনে যৌথ অংশীদারিত্বে ব্রাজিলের জায়ান্ট খনি শিল্প প্রতিষ্ঠান ভ্যালে

 

সিনচিয়াংয়ে সর্ববৃহৎ সোলার প্যানেল, রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে আদর্শ হয়ে উঠছে চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং। এখানকার হোতান প্রিফেকচারের মরুময় বিস্তীর্ণ বালুকারাশিতে স্থাপন করা সোলার প্যানেল থেকে উৎপাদন হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ। শুধু তাই নয়, কর্মসংস্থান তৈরি সহ এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতি পাল্টে দিতেও ভূমিকা পালন করছে এসব বিদ্যুৎকেন্দ্র।

বিশাল মরুভূমির ভেতর দিয়ে চলে গেছে কালো রেখার মতো পাকা রাস্তা। দুই পাশে যতোদূর চোখ যায় পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনের সোলার প্যানেল।

চীনের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উইগুর স্বায়ত্বশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াংয়ের চোখে পড়বে দেশটির সবচেয়ে বড় এই সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদন পার্ক। সিনচিয়াংয়ের হোতান প্রিফেকচারে অবস্থিত চীনের সবচেয়ে বড় মরুভূমি তাকলিমাকান।

এখানে প্রতি বছর পাওয়া যায় ২ হাজার ৮শ’ ঘণ্টা সূর্যালোক। বিশাল এই এলাকার ফাঁকা ভূমি ব্যবহার করা হচ্ছে সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন করার কাজে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, কার্বন নিঃসরণ কমানো, এই অঞ্চলের আর্থ-সামাজিক অবস্থার পরিবর্তন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে বিপুল ভূমিকা পালন করছে এসব বিদ্যুৎ কেন্দ্র।

পেশায় ইলেক্ট্রিশিয়ান এমনই একজন স্থানীয় বাসিন্দা আব্দুর রশিদ জামাল। তিনি জানান, সহকর্মীদের নিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলোর নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন তদারকি করেন তারা।

 

আব্দুর রেশিত জামাল, ইলেক্ট্রিশিয়ান

“আমি এখানে ২০২১ সাল থেকে কাজ করি। আমার সহকর্মী ও নেতারা আমাকে খুবই সাহায্য করে কারণ আমি রাসায়নিক শিল্পে কাজ করি। তারা আমাকে প্রশিক্ষণ দিয়েছে যার কারণে বিদ্যুৎ বিভাবে কাজ করার মতো আমার কিছু যোগ্যতাও তৈরি হয়েছে। আমি নিজে নিজেই বেশ কিছু জটিল সমস্যা সমাধানও করতে পারি। এর কারণে কোম্পানি আমাকে ভালো বেতন দেয়, আর আমাকে অন্য কিছু নিয়ে ভাবতে হয়না।”

এই সৌর বিদ্যুৎ উৎপাদন পার্কের আয়তন ৬ হাজার হেক্টর। ৪ লাখ কিলোওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার এই বিদ্যুৎ উৎপাদনকেন্দ্রটির নির্মাণ কাজ এখনো চলছে। লওপু ফটোভোল্টাইক পাওয়ার স্টেশনের প্রধান তিয়ান চুসিয়ং জানান, সবগুলো কাজ শেষ হলে রেকর্ড বিদ্যুৎ উৎপাদনই কেবল নয় বরং এই অঞ্চলের অর্থনীতি ও মানুষের জীবন মান পাল্টে দিতেও সমান ভূমিকা পালন করবে এই শিল্পপার্ক।

তিয়ান চুসিয়ং, প্রধান, লওপু ফটোভোল্টাইক পাওয়ার স্টেশন

“সবগুলো প্রকল্প থেকে যখন বিদ্যুৎ উৎপাদন শুরু হবে তখন বছরে ৩০০ মিলিয়ন কিলোওয়াট বিদ্যুৎ পাওয়া সম্ভব। এই পরিমাণ বিদ্যুৎ ৩ লাখ ৩০ হাজার টন কার্বন-ডাই-অক্সাইড নির্গমন কমাতে সাহায্য করবে। রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন দ্য স্টেট পাওয়ার ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন ২০১১ সাল থেকে এখানে বিনিয়োগ করছে। তারা যেসব পরিবেশবান্ধব প্রকল্পে বিনিয়োগ করছে তা বিদ্যুৎ শিল্পের উন্নয়নে ভালো ভূমিকা পালন করবে। বিশেষ করে শিল্পখাতে পরিবেশবান্ধব বিদ্যুৎ উৎপাদনে এটি গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।“

এরই মধ্যে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি মাসে ২০০ মেগাওয়াট ক্ষমতার একটি প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে। এই প্রকল্প এরইমধ্যে পুরোদমে উৎপাদনেও এসেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এখন পর্যন্ত যতোটা কাজ হয়েছে তার উৎপাদন ক্ষমতা ৬ লাখ ৬০ হাজার কিলোওয়াট।

 

 

 

 

ভিনদেশে চীন:

'মোবাইল উৎপাদনের হাব হতে পারে বাংলাদেশ'

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: উৎপাদনকারীরা আন্তরিকতার সাথে দায়িত্ব পালন করলে দেশের চাহিদা মিটিয়ে মোবাইল উৎপাদনের হাব হতে পারে বাংলাদেশ। বুধবার মেঘনা ইকোনমিক জোনে চীনা কোম্পানি ট্রানশান হোল্ডিংস এর মালিকানাধীন একটি মোবাইল ফোন কারখানার কার্যক্রম উদবোধন অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ কথা বলেন বাংলাদেশের টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তফা জব্বার। এ সময় বাংলাদেশের সঙ্গে চীন কৌশলগত সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায় বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর সং ইয়াং।

বাংলাদেশ টেলিকমিউনিকেশনরেগুলেরটি অথরিটি -বিটিআরসির হিসেবে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১৮ কোটি এবং ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সংখ্যা ১২ কোটির বেশি। বাড়ছে স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা।ক্রমবর্ধমান এই চাহিদার কথা মাথায় রেখেই বাংলাদেশে 'আই স্মার্ট ইউ' নামের মোবাইল উৎপাদনকারী কোম্পানির  উদবোধন করেছে চীনের শীর্ষস্থানীয় আর্ট ডিভাইস ও মোবাইল সার্ভিস প্রদানকারী ট্রানশান হোল্ডিংস।

নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইকোনমিক জোনে ২০ হাজার বর্গমিটার জায়গাজুড়ে অবস্থিত ফ্যাক্টরিটি বুধবার উদবোধন করা হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে অনলাইনে যুক্ত ছিলেন টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার। মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে বিভিন্ন ডিভাইস তৈরি করা সরকারের লক্ষ্য ছিলো, এখন তা বাস্তবায়ন হচ্ছে।

ট্রানশান হোল্ডিংসের চেয়ারম্যান ও জেনারেল ম্যানেজার জর্জ জু বাংলাদেশকে তাদের ব্যবসার প্রসারে একটি কৌশলগত বাজার হিসাবে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, গ্রাহক পর্যায়ে সাশ্রয়ী ও উন্নতমানের ফিচারসহ মোবাইল ফোনের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। যার ফলে বাংলাদেশে নতুন সম্ভবনাময় বাজার তৈরি হচ্ছে। জু আশা প্রকাশ করেন বাংলাদেশে তাদের বিনিয়োগ স্থানীয় উন্নয়নের পাশাপাশি ডিজিটালাইজেশন ও আধুনিকায়নেও ভূমিকা রাখবে।

জর্জ ছু, চেয়ারম্যান ও মহা-ব্যবস্থাপক, ট্রান্সন হোল্ডিংস

< আমরা বিক্রয় ও বিক্রয়োত্তর নেটওয়ার্ক স্থাপন করেছি। বর্তমানে এখানকার ৯৫ শতাংশ কর্মীই স্থানীয়। বিশেষ করে আমরা এখানকার মোবাইল যোগাযোগ শিল্পের বিকাশে স্থানীয় মেধাবীদেরও কাজে লাগাচ্ছি। এ লক্ষ্যে আমরা ২০১৮ সালেই মোবাইল ফোন ও এক্সেসরিজ উৎপাদন করতে স্থানীয় কারখানা স্থাপন করি। >

 

মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান মোস্তফা কামাল বলেন, স্থিতিশীলতা ও বিনিয়োগবান্ধব পরিবেশের জন্য ক্রমেই বিদেশি বিনিয়োগকারীদের নিরাপদ গন্তব্য হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ।

মোস্তফা কামাল, চেয়ারম্যান, মেঘনা গ্রুপ অব ইন্ড্রাস্ট্রিজ

“অর্থনৈতিক অঞ্চলে গ্যাস-বিদ্যুৎসহ সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা থাকায় বিনিয়োগকারীরা এখানে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হচ্ছে। মোটকথা এখানে ঝামেলাবিহীন বিনিয়োগের পরিবেশ বিরাজ করছে। আমি বিশ্বাস করি চীন জ্ঞানের দেশ এবং সারা বিশ্বকে তাদের চমৎকার সব প্রযুক্তি ও উদ্ভাবন দিয়ে বিষ্মিত করছে। আমাদের উন্নয়ন কর্মসূচিতে চীনের বিনিয়োগকে আমরা স্বাগত জানাই।“

বাংলাদেশ সরকারের নেওয়া ভিশন ২০৪০ অনুযায়ী স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে চীনা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিকল্পনা থেকে শুরু করে বাস্তবায়ন সব পর্যায়ে ভূমিকা পালন করতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের কমার্শিয়াল কাউন্সিলর সং ইয়াং। তিনি বলেন, বাংলাদেশের সঙ্গে চীন কৌশলগত সহযোগিতা নতুন উচ্চতায় নিয়ে যেতে চায় চীন সরকার।

সং ইয়াং কমার্শিয়াল কাউন্সিলর, বাংলাদেশে অবস্থিত চীনা দূতাবাস

"চীন বাংলাদেশের বিশ্বস্ত কৌশলগত বন্ধু। তথ্য প্রযুক্তিখাতে দুই দেশের সাধারণ মানুষের উন্নয়নের জন্যই বাংলাদেশ-চীন কৌশলগত সহযোগিতা দরকার। বিশেষ করে স্মার্ট বাংলাদেশ নির্মাণে চীন বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করতে চায়। একইসঙ্গে কৌশলগত সহযোগিতার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছাতে চায়।"

আই স্মার্ট ইউ বাংলাদেশে প্রথম ধাপের ২২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করছে উল্লেখ করে কোম্পানিটি। বিশেষ করে বাংলাদেশে গ্রাহক পর্যায়ে যে সাশ্রয়ী ও উচ্চমানের ফিচারসহ মোবাইল ফোনের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে সেই চাহিদা পূরণ করবে এই কোম্পানিটি। আই স্মার্ট ইউ বলছে, ফ্যাক্টরিতে গুণগত মান ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে থাকছে উন্নত ও আন্তর্জাতিক মানের প্রযুক্তির ব্যবহার। উৎপাদন প্রক্রিয়াকে নিরবিচ্ছিন্ন রাখতে নজর দেওয়া হচ্ছে টেকসই মান ও দক্ষতার দিকে।

 

 

কোম্পানি প্রোফাইল:

চীনে যৌথ অংশীদারিত্বে ব্রাজিলের জায়ান্ট খনি শিল্প প্রতিষ্ঠান ভ্যালে

সাজিদ রাজু, চীন আন্তর্জাতিক বেতার: চীনের অংশীদারদের সঙ্গে সহযোগিতা চুক্তি সই করেছে ব্রাজিলের জায়ান্ট খনি শিল্প প্রতিষ্ঠান ভ্যালে। এটি চীনা কোম্পানির সঙ্গে ৭ম সহযোগিতা চুক্তি। এই চুক্তির মাধ্যমে চীনের সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরির উদ্যোগ নিলো কোম্পানিটি।

বিশেষ করে চীনের ইস্পাত শিল্পে কার্যক্রম বাড়াতে বেশ কিছু শিল্পের সঙ্গে যৌথ কার্যক্রমে যাচ্ছে ব্রাজিলের সবচেয়ে বড় খনি শিল্প গ্রুপ ভ্যালে। সম্প্রতি চীনের স্থানীয় শিল্প প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ৭টি চুক্তি সই করেছে তারা। স্থাপন করেছে যৌথ কারখানা।

এর মধ্যে একটি চীনের সাংহাইভিত্তিক পাওউ স্টিল গ্রুপ। গ্রুপের পাওশান কারখানায় ব্যবহার করা হয় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নানা প্রযুক্তি।

চুক্তি হয়েছে চীনের তাইউয়ুন আইরন ও স্টিল গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড, শানতোং সিনহাই টেকনোলজি কোম্পানি লিমিটেড এবং পাওশান আয়রন অ্যান্ড স্টিল কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে। এসব চুক্তির লক্ষ্য প্রযুক্তির সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত মানের পণ্য তৈরি করা।

কোম্পানির নির্বাহী ভাইস প্রেসিডেন্ট সিলভা ডি-অ্যামব্রোসিও জানান, চীনের সবচেয়ে বড় নির্মাণ মেশিনারি উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান এক্সসিএমজি মেশিনারির সঙ্গে যৌথ চুক্তি সই করেছেন তারা। এ চুক্তির লক্ষ্য বিশ্বের সবচেয়ে বড় রাস্তা গ্রেডিংয়ের কাজ করার যন্ত্র তৈরি করা।

চীনে কাঁচামাল সরবরাহ ও স্টিল শিল্পে যৌথ অংশীদারিত্বের ৫০ বছরের ঐতিহ্য আছে ব্রাজিলের এই কোম্পানিটির। কোম্পানিটি বলছে, কম কার্বন নিঃসরণ হয় এমন প্রযুক্তি ব্যবহার করে চীনের সঙ্গে এ শিল্পের উন্নয়নে কাজ করবে তারা।