আকাশ ছুঁতে চাই ১৯
2023-05-25 18:43:13

কী আছে এবারের পর্বে

 

১. মধ্য এশিয়ার নেতাদের স্ত্রীদের নিয়ে ঐতিহাসিক থিয়েটার পরিদর্শন ফাং লিইয়ুয়ানের

২. অন্যরকম শিক্ষিকা

৩. আত্মপ্রত্যয়ী নারী ফু থিং

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

মধ্য এশিয়ার নেতাদের স্ত্রীদের নিয়ে ঐতিহাসিক থিয়েটার পরিদর্শন ফাং লিইয়ুয়ানের

অনুষ্ঠানের শুরুতেই জানাচ্ছি চীনের ঐতিহ্যবাহী থিয়েটার দারুণ উপভোগ করেছেন চীনা প্রেসিডেন্টের স্ত্রী ফাং লিইয়ুয়ান এবং মধ্য এশিয়ার দুই দেশের ফার্স্ট লেডি। সম্প্রতি চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের স্ত্রী ফাংলিইয়ুয়ান ও মধ্য এশীয় দুই দেশের ফার্স্টলেডি  ইসুশে থিয়েটার ও চীনের শা’য়ানসি অপেরা আর্ট মিউজিয়াম পরিদর্শন করেন। এসময় প্রাচীনতম চীনা অপেরাগুলোর মধ্যে ছিনছিয়াং অপেরা, শা’য়ানসি অপেরার উৎস সম্পর্কে জানতে পারেন তাঁরা।  পাশাপাশি অপেরার বিকাশের বিভিন্ন সময়কে চিত্রিত করে চমৎকার শিল্প প্রদর্শনী ও পারফরম্যান্স উপভোগ করেন তারা। 

কিরগিজস্তান ও উজবেকিস্তানের ফার্স্ট লেডিদের সঙ্গে নিয়ে উত্তর-পশ্চিম চীনের শা’য়ানসি প্রদেশের সিয়ানে ঐতিহাসিক ইসুশে থিয়েটার পরিদর্শন করেন  চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিংয়ের স্ত্রী ফাংলিইয়ুয়ান। গেল সপ্তাহে আমন্ত্রিত অতিথি কিরগিজ প্রেসিডেন্ট সাদির জাপারভের স্ত্রী আইগুল জাপারোভা এবং উজবেক প্রেসিডেন্ট শাভকাত মির্জিওয়েভের স্ত্রী জিরোতখোন মিরজিওয়েভাকে নিয়ে  তিনি এ পরিদর্শন করেন।       

 

এসময় তাঁরা ইসুশে থিয়েটার সাংস্কৃতিক ব্লকের ছিনছিয়াং অপেরা আর্ট মিউজিয়াম ঘুরে দেখেন, যেখানে তারা লোক অপেরা সম্পর্কিত চমৎকার বিষয় সম্পর্কে জানতে পারেন। একইসঙ্গে থাং রাজবংশের নানা ঐতিহ্য ঘুরে দেখেন তারা। পরে একটি প্রদর্শনী হলে নিজেরা ছায়া পুতুল তৈরির চেষ্টা করেন এবং প্রবীণ লোকশিল্পীদের সাথে কথা বলেন। 

 

ইসুশে থিয়েটারে, একটি ক্লাসিক্যাল ছিনছিয়াং পারফরম্যান্সও উপভোগ করেন ফাং ও আমন্ত্রিত অতিথিরা। চীনা অপেরা সংস্কৃতি এবং শিল্পের উত্তরসূরি হয়ে উঠতে জুনিয়র প্রশিক্ষণার্থীদের উৎসাহিত করেন চীনের ফার্স্ট লেডি ফাং।

এসময় ফাং লিইয়ুয়ান বলেন, চীন মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করতে প্রস্তুত, যাতে পারস্পরিক বোঝাপড়া বাড়ানো যায় এবং জনগণের মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধন তৈরি হয়।

এদিকে, পরিদর্শন শেষে জাপারোভা এবং মিরজিওয়েভা বলেন, সিল্ক রোড মধ্য এশিয়া এবং চীনের সংস্কৃতিকে সংযুক্ত করেছে। উভয় পক্ষই জনগণের মধ্যে বিনিময় এবং পারস্পরিক শিক্ষাকে আরও গভীর করবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন তাঁরা।

প্রতিবেদন: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

অন্যরকম শিক্ষিকা

 

একজন স্কুল শিক্ষিকা খো ছেউক কিউ। তিনি হাসপাতালের চিকিৎসাধীন শিশুদের জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন, তাদের লেখাপড়ার আনন্দময় ভুবনে প্রবেশে সহায়তা করছেন। চলুন শোনা যাক এই মমতাময়ী নারীর গল্প।

এমন একটা স্কুল যেখানে খেলার মাঠে শিশুদের ছোটাছুটি নেই, নেই ছুটির ঘন্টার আওয়াজ। এই স্কুল হাসপাতালের শিশুদের জন্য। এখানে মায়ের মমতায় শিশুদের শিক্ষার ভার নিয়েছেন খো ছেউক কিউ নামের এক তরুণী শিক্ষিকা।

তিনি চীনের বিশেষ প্রশাসনিক অঞ্চল হংকংয়ের রেড ক্রস হাসপাতাল স্কুলের একজন শিক্ষিকা। তিনি দিনের শুরুতে প্রথমেই খোঁজ খবর নেন প্রতিটি শিক্ষার্থীর। তার শারীরিক অবস্থা কেমন, সে লেখাপড়া শেখার মতো ভালো বোধ করছে কিনা।

হাসপাতালে এমন অনেক শিশু আছে যারা দীর্ঘমেয়াদী চিকিৎসা নিচ্ছে। বিভিন্ন কঠিন রোগে ভুগছে। অনেকে ক্যান্সার আক্রান্ত। সাধারণ স্কুলে এদের যাওয়ার কোন সুযোগ নেই।  এই শিশুরাও যেন কিছুটা শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে তাই এ ধরনের বিশেষ স্কুলের ব্যবস্থা। এসব স্কুলে শিক্ষিকাকেও হতে হয় বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। তাকে শিশুদেরকে স্নেহ ও ভালোবাসা দিয়ে শেখাতে হয় লেখাপড়া।

২০০৯ সালে খো যখন মাত্র মাস্টার্স ডিগ্রি পেয়েছেন তখন এই স্কুল বিষয়ে জানতে পারেন। তিনি বিশেষ ভাবে প্রশিক্ষণ নিয়ে তারপর চীনাভাষার শিক্ষিকা হিসেবে এখানে যোগ দেন।

২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে হাসপাতালের চিকিৎসাধীন শিক্ষার্থী রোগীদের জন্য সিনিয়র সেকেন্ডারি স্কুল কার্যক্রমও শুরু হয়েছে।

শিক্ষিকা খো তার দীর্ঘ কর্মজীবনে ছাত্রছাত্রীদের কাছ থেকে অসংখ্যা শুভেচ্ছা বার্তা, গ্রিটিংস কার্ড পেয়েছেন। তিনি তাদের যে স্নেহ মমতা দিয়েছেন, উৎসাহ দিয়েছেন তারই প্রতিদানে পেয়েছেন শ্রদ্ধা ও প্রীতি। শিশু কিশোর শিক্ষার্থীদের জন্য খোর শুভকামনা হলো তারা যেন সুস্থ হয়ে উঠে ঠিকমতো স্কুলে যেতে পারে, তাদের স্বপ্নকে সফল করতে পারে।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

 

আত্মপ্রত্যয়ী নারী ফু থিং

 

আইনজীবী পেশায় নারীরা আছেন বহুকাল আগে থেকেই। দিন যত যাচ্ছে এ পেশায় নারীদের আগ্রহ তত বাড়ছে। এই আইন পেশাতেই আছেন, সংগ্রামী নারী ফু থিং। ডান হাত হারিয়ে তিন বছর বয়স থেকেই কঠিন জীবন অতিবাহিত করছিলেন তিনি। কিন্তু আত্নপ্রত্যয়ী ফু থিং থেমে যান নি। হয়েছেন সেরা আইনজীবীদের একজন।

 

ফু থিং। একজন আইনজীবী। একটি প্রাথমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের শুনাচ্ছেন নিজের সংগ্রামী জীবনের গল্প। আর মুগ্ধ হয়ে সেই গল্প শুনছেন শিক্ষার্থীরা।

মাত্র তিন বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় ডান হাত হারান ফু। এরপর শুরু হয় তার কঠিন সময়। প্রতিটা মুহূর্ত নিজের সাথে যুদ্ধ করতে থাকে ফু।

তের বছর বয়সে সিয়াংথানের একটি স্পোর্টস স্কুলে ভর্তি হোন তিনি। শেখেন সাঁতার । এরপর একজন খেলোয়াড় হিসেবে অংশগ্রহণ করেন বিভিন্ন প্রতিযোগিতায়। ২০০৪ সালে প্যারালিম্পিক গেমসেও অংশগ্রহণ করেন ফু।  বিভিন্ন দেশি ও বিদেশি প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করে জিতে নেন ১৮টি স্বর্ণপদক।

২০০৪ সালে খেলা থেকে অবসর নেওয়ার পর একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে পড়ালেখা শুরু করেন। সেখান থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করে আইনজীবী হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন।

 ২০১৭ সালে ফু থিং আইনি পরামর্শ দেওয়ার জন্য একটি স্টুডিও স্থাপন করেন। সেখানে প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের জন্য বিনামূল্যে আইনী পরিষেবা এবং সহায়তা প্রদান করেন তিনি।

একই সময়ে, তিনি একটি স্বেচ্ছাসেবক আইনী পরামর্শক হিসেবেও কাজ শুরু করেন। প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে গল্প শেয়ার করেন, বিভিন্ন সভা-সেমিনারে আইনি বক্তৃতা এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের সাহায্য করার জন্য আরও বেশি লোককে উত্সাহিতও করতে থাকেন তিনি।

তিনি মনে করেন প্রতিবন্ধীদের সম্মান করা ও তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত সকলের।

ফু বলেন, " প্রতিবন্ধী মানুষদের আত্মবিশ্বাস বাড়াতে এবং সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে আমি আমার অভিজ্ঞতা তাদের সঙ্গে শেয়ার করি। যাতে করে তারা আমার গল্প শুনে অনুপ্রাণিত হতে পারে”।

সমাজের এ বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন মানুষদের জীবনমান ফিরিয়ে দেয়ার জন্য প্রয়োজন দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন। তাদের প্রতিবন্ধী হিসেবে নয়, দেখতে হবে মানুষ হিসেবে। পরিবার থেকে শুরু করে সমাজের প্রতিটি ক্ষেত্রে তাদের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করতে হবে। ফলে তারাও ফু থিংয়ের মতো স্বপ্ন পূরণ করে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে পারবে সমাজে।

প্রতিবেদন- আফরিন মিম

সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল