চীনা তরুণের রোমাঞ্চকর ভ্রমণ কাহিনী
2023-05-24 19:18:38

শাংহাইয়ের একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র চিয়াং সিয়া। সম্প্রতি সে ইন্টারনেটে বিখ্যাত একজন মানুষে পরিণত হয়েছে। চিয়াং দু’বার বাসে করে ১৫০০ কিলোমিটার পথ ভ্রমণ করেছে। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে চিয়াং নয় দিনে বাসে করে শাংহাই থেকে বেইজিংয়ে আসে। দ্বিতীয়বার সে পাঁচ দিনে তার নিজ শহর হ্য ফেই থেকে শাংহাইয়ে ফিরে আসে।

 

দুই বারে সে মোট ১৫০০ কিলোমিটার পথ পারি দেয় এবং ২০০০টির বেশি বাস স্টপ অতিক্রম করে। তাতে কিন্তু তার ট্রেনের চেয়ে কম খরচ হয়নি। কখনো কখনো সে সময় মতো খেতে পারেনি। তার ভ্রমণের নোট ইন্টারনেটে প্রকাশ করেছে চিয়াং সিয়া। কিন্তু তার এ ভ্রমণ নিয়ে কেউ কেউ সন্দেহ প্রকাশ করেন, আবার  কেউ কেউও তাকে উত্সাহ দেন। তবে অন্যরা যা-ই বলুক, এ দু’বার ভ্রমণের মাধ্যমে শান্তি পেয়েছে বলে মনে করে চিয়াং সিয়া।

 

ছোট বেলা থেকেই স্থল পরিবহন অনেক ভাল লাগে চিয়াং সিয়ার। শৈশবে তার বাসার অদূরে ছিল পরিত্যক্ত রেলপথ। তাই ট্রেনে বসে ভ্রমণের প্রতি তার আগ্রহ জন্মায় তখনই। তারপর সে বাসকে ভালবাসে। কারণ বিমান ও সাবওয়ের তুলনায় বাসের জানালা দিয়ে সুন্দর দৃশ্য বেশি উপভোগ করা যায়।

 

চিয়াং সিয়ার জন্য বাস ভ্রমণ একটি বাতিক না। ভ্রমণে বের হওয়ার এক সপ্তাহ আগে থেকে সে দিনের বেলায় ক্লাসে যোগ দেয় এবং রাতে বাসের রুট নিয়ে পরিকল্পনা করে। সে ১১ পৃষ্ঠার একটি পরিকল্পনা লিখেছে। যাবার আগে সে নিজের পরিকল্পনা অনলাইনে শেয়ার করে। এ ক্ষেত্রে কোন কোন নেটিজেন তাকে বাসের আরও বেশি সুবিধাজনক রুটের কথা বলে দেন। কেউ কেউ আবার তাকে নিজের শহরে আমন্ত্রণ জানান। তারা তাকে বাসায় খাবারের দাওয়াত দিয়ে রাখেন।

 

কিছু পোশাক, বিস্কুট, পাওয়ার ব্যাংক এবং ওষুধ নিয়ে যাত্রা শুরু করে চিয়াং সিয়া। অতিরিক্ত জুতা নিয়ে আসেনি সে, তবে ‘অ্যা লং লং ওয়ে’ নামের একটি বই নিয়ে এসেছে।

 

পরিকল্পনা আগেই তৈরি করলেও চিয়াং সিয়ার যাত্রা এত সুষ্ঠু হয় না। যেমন: গ্রামে হাত না নাড়লে বাস থামে না। একবার যখন বাস আসে, তখন চিয়াং সিয়া ফোনে বাসের সময়সূচি দেখছিল, তাই হাত নাড়তে পারেনি। ফলে তাকে আরও এক ঘণ্টার মতো অপেক্ষা করতে হয়েছে পরের বাসের জন্য।

 

হ্য পেই প্রদেশের হুয়াং হুয়া থেকে থিয়ান চিন শহরের মধ্যে কোন বাসের ব্যবস্থা নেই। তাই তাকে ভোর থেকে বিকেল পর্যন্ত ৩০ কিলোমিটার হাঁটতে হয়। ক্লান্ত হয়ে মাঝেমাঝে সে সুটকেসে বসে বিস্কুট খায়। ত্রিশ কিলোমিটার তার জন্য সবচেয়ে কঠিন চ্যালেঞ্জ ছিল না; আসল সমস্যা ছিল সু চৌ শহরের বিমান বন্দরের কাছাকাছি ১ কিলোমিটার পথ পারি দেয়া। কারণ সেখানে ওই দিন প্রচুর বাতাস ছিল। সে সুটকেস নিয়ে হাঁটতে পারছিল না। শীত্কালের ঠাণ্ডা বাতাসে তার হাত রক্তবর্ণ হয়ে যায়। ওই দিন অনেক ভেবে সে হোটেলে থাকে। এ যাত্রায় সে মাত্র একবার হোটেলে থেকেছে। বাকি সময় সে সুবিধাজনক  স্টোর বা ইন্টারনেট ক্যাফেতে কেবল ৩০ ইউয়ান দিয়ে রাত কাটিয়েছে।

 

তার পরিবার তার এ যাত্রার কথা জানতো না,  তবে তারা অনলাইনে তার ভিডিও দেখেছে।  তার মা ফোনে শুরুতে তাকে বকা দেন, তবে অবশেষে তাকে নিরাপদে থাকার উপদেশ দেন। আর ফোনে বাবার প্রথম কথা ছিল তোমার কাছে কি টাকা আছে?

 

তার বাস ভ্রমণও ইন্টারনেটে অনেক বিতর্ক সৃষ্টি করেছে। কেউ কেউ বলেছেন, চিয়াং সিয়া ১৩ দিন কষ্ট করেছে। ধুলো এবং পেট্রোলের গন্ধ ছাড়া সে কী দৃশ্য দেখতে পেয়েছে? তবে চিয়াং সিয়ার মতে, ১৩ দিনে সে অনেক কিছু অর্জন করেছে। স্কুলে থাকলে সে ১৩ দিন গেমস খেলে এবং ঘুমিয়ে কাটাতো।

 

দু’বার যাত্রার মাধ্যমে বড় হয়েছে চিয়াং সিয়া। যাত্রা পথে সে তার বিশ্ববিদ্যালয়ের কথা ভুলে যায়নি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিরে ছবি তুলে সে অনলাইনে পোস্ট করেছে। যার ফ্যানের সংখ্যাও ১০০ থেকে বেড়ে ১০ হাজারে দাঁড়িয়েছে।

 

প্রথম যাত্রার শেষ স্টপ ছিল বেইজিংয়ের হিনা ইউনিভার্সিটি অব জিও-সাইন্স। ওই স্কুলের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে তার দেখা হয় এবং তারা পোস্ট কার্ড বিনিময় করে। এখনও তাদের সঙ্গে যোগাযোগ বাজায় রাখছে চিয়াং।

দ্বিতীয় যাত্রায় সে নান চিং শহরের সিয়ান লিন কলেজে যায়। সে তার নোটে লিখে, আমি এখানকার ছাত্রদের ঈর্ষা করি কারণ এখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ অনেক সুন্দর। পাশাপাশি, এখানকার শিক্ষার্থীরা তাকে জানায়, তুমি এমন কিছু করেছো- যা আমরা কখনো ভাবিনি, খুব চমৎকার।

 

দুবার বাস যাত্রা চিয়া সিয়াকে অনেক স্বীকৃতি এনে দিয়েছে। তার মতে, আমি কখনো এ ১৩ দিনের কথা ভুলব না। আমি কখনো ব্যর্থ হতে বা হারিয়ে যেতে শুরু করলে এ ১৩ দিনের অভিজ্ঞতাকে স্মরণ করবো।

 

দুবারের যাত্রায় সে দক্ষিণ থেকে উত্তর এবং পশ্চিম থেকে পূর্বের ৫টি প্রদেশের ২৪ শহর ও ২০০০টি বাস স্টপ অতিক্রম করেছে। বাসের বাইরের দৃশ্যের পাশাপাশি মানুষের অ্যাকসেন্ট পরিবর্তন হতে দেখেছে সে।

 

সে নৌকায় ইয়াংসি নদী অতিক্রম করেছে। থিয়ান চিন শহরে সমুদ্রের পাশে গিয়েছে। পাশাপাশি, বিভিন্ন শহরে সুস্বাদু খাবারও খেয়েছে। তার মতে, চীনের প্রতিটি শহরের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য আছে। শহরের সংস্কৃতি ও ইতিহাস তাকে আকর্ষণ করে। সে সব বাস স্টপের নামও নোটবুকে লিখে রেখেছে।

 

যাত্রা পথে অনেক দয়ালু ও আন্তরিক মানুষের সঙ্গে তার দেখা হয়েছে। বাসের চালক তাকে পথ দেখিয়েছেন। একবার থাই আন শহর থেকে চি নান শহরে যাবার সময়ে বাস নষ্ট হয়ে যায়। বাস কোম্পানি চিয়াং সিয়াসহ ৪জন যাত্রীর জন্য বিশেষ একটি বাসের ব্যবস্থা করে।

পরবর্তী ভ্রমণের পরিকল্পনা করছে চিয়াং সিয়া। তার জীবন আগের ভ্রমণের কারণে পরিবর্তন হয়নি। সে আগের মতোই নিজের স্কুলের জীবন উপভোগ করছে।

 

ছোটবেলায় তার নানী তাকে নিয়ে অনেক বার বাসে চরেছেন। কয়েক বছর আগে নানী হৃদরোগে মারা যান। সিয়াং সিয়া মেডিসিন স্কুলে পড়ার চেষ্টা করেছে। নানী তার বাস ভ্রমণে সমর্থন দিতেন। জীবন যাত্রার মতো,  আমাদের উচিৎ সব সময় পরবর্তী স্টেশনের উদ্দেশে সাহস নিয়ে যাওয়া। (শিশির/এনাম/রুবি)