উৎপাদন খরচ কমিয়েছে চীনের কৃষি প্রযুক্তি | শেকড়ের গল্প | পর্ব ১৯
2023-05-24 17:55:04

                                       

       

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে

১. দৃষ্টিনন্দন চেরি ফলে সমৃদ্ধ চীন

২. যেভাবে শীর্ষ গম উৎপাদনকারী দেশ হয়ে উঠলো চীন

 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

 

 

 

১. দৃষ্টিনন্দন চেরি ফলে সমৃদ্ধ চীন

বিশ্বজুড়ে বেশ কদর রয়েছে চেরি ফলের। কেকসহ নানা পদের খাবারে চেরি ফল ব্যবহার করা হয়। এছাড়া রান্না ও সালাদেও এর ব্যবহার দেখা যায়।  ভিটামিন এ, বি, সি এবং ই-সহ অনেক পদের খাদ্যপ্রাণে ভরপুর, অ্যান্টিঅক্সিডেন্টসমৃদ্ধ মজার ফল চেরি। তাইতো নানা কারণে আলোচনায় থাকে চেরি ফল। আর এই ফল বেশ বড় পরিসরে চাষ হয় চীনে। একেকটি বাগান থেকেই সংগ্রহ করা যায় কয়েক হাজার টন চেরি ফল। চেরির এই মৌসুমে জমে ওঠে স্থানীয় পর্যটনও।

চীনে এখন চেরির মৌসুম। কোমল ও টসটসে চেরি দেখতেও যেমন দৃষ্টিনন্দন, স্বাদেও তেমন মজার। তাইতো বিশ্বজুড়ে কদর রয়েছে গ্রীষ্মকালীন এই ফলের।

পূর্ব চীনের শানতুং প্রদেশের ছিংতাও সিটিতে এরমধ্যে চেরি ফল তোলা শুরু হয়েছে। তাইতো দূর দূরান্ত থেকে মানুষজন আসছেন চেরি ফলের বাগান দেখতে।

অনেকে আবার অবসর সময়ে বেছে নিয়েছেন চেরি ফল তোলার কাজ। ভালো রোজগারও হচ্ছে তাদের।

ছিংতাও সিটিতে প্রায় ৭০০ হেক্টর জায়গা জুড়ে চেরির বাগান রয়েছে। যেখানে রয়েছে প্রায় ৫ লাখ চেরি গাছ।

একেকটি গাছে কয়েক হাজার চেরি ফলের জন্ম হয়। গাছে থাকা লাল রঙের ফল দেখে অনেকেই আকৃষ্ট হোন। পরিবারের সদস্যদের নিয়ে ঘুরতে আসেন চেরির বাগানে।

বেইজিং থেকে ঘুরতে এসেছেন  মিস্টার ওয়াং নামের এই দর্শনার্থী

 

"চেরির এই বাগানে এসে আমাদের সত্যিই খুব ভালো লাগছে। এই ফলগুলো যেমন সতেজ তেমনি স্বাদেও অনন্য। এমন পরিবেশে ঘুরতে পেরে আমার পরিবারের সদস্যরাও ভীষণ খুশি"

 

এই বাগান থেকে প্রতিবছর প্রায় ত্রিশ হাজার টন চেরি ফল উৎপাদন করা হয় । এবছর উষ্ণ আবহাওয়ার কারণে অন্য বারের তুলনায় চেরি ফল আগেই পেকেছে এবং নির্ধারিত সময়ের আগেই মার্কেটে তুলতে পেরেছেন কৃষকরা।

স্থানীয় কৃষি সমবায় কর্মকর্তা ইয়ান ইয়ুফেং জানিয়েছেন তার অভিজ্ঞতার কথা

 

"এই ফলগুলো সকালে পাড়া হয়েছে এবং কৃষকরা এখানে পাঠিয়েছেন। আমরা এখন এগুলো প্যাকেট করে মার্কেট এবং সুপার মার্কেটে পাঠাবো। এবার ভালো লাভ হবে বলে আমরা আশা করছি"

 

বিশ্বজুড়ে প্রায় ১২০০ ধরনের চেরি ফল আছে। এর মধ্যে বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হয় ২০ ধরনের চেরি। জ্যাম জেলিসহ নানারকম কেক তৈরিতে ব্যবহার করা হয় এই ফল।  রয়েছে নানা রকম পুষ্টিগুণও।

 

প্রতিবেদন: এইচআরএস অভি

সম্পাদনা: রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

 

২. যেভাবে শীর্ষ গম উৎপাদনকারী দেশ হয়ে উঠলো চীন

বিশ্বের সবচেয়ে বেশি গম উৎপাদনকারী দেশ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে চীন। কিন্তু এত পরিমাণ গম উৎপাদন কিভাবে সম্ভব করছে দেশটি। আসলে দেশটির কৃষিক্ষেতে ব্যবহার হচ্ছে আধুনিক প্রযুক্তি। এতে করে ফসল ঘরে তুলতে একদিকে যেমন সময় কমেছে, তেমনি উৎপাদন খরচও আগের চেয়ে কয়েকগুন কমেছে। শুধু গম নয়, অন্যান্য ফসল উৎপাদনেও ব্যবহার হচ্ছে কৃষি প্রযুক্তি।

বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে সোনালী রঙের আধিপত্য। সময়টা এখন ফসল তোলার। তাই ফসল সংগ্রহকে কেন্দ্র করে সব ধরণের ব্যস্ততা চীনের কৃষকদের।

চীনের কৃষিক্ষেতগুলোর দিকে দৃষ্টি রাখলে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি লক্ষ্য করা যায় তা হলো আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার। যে প্রদেশগুলোতে আগে আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়া লাগেনি সেখানেও এর ব্যবহার শুরু হয়েছে।

এমনই এক কাউন্টি চিথং। দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের সিচুয়ান প্রদেশের এই কাউন্টটিতে রয়েছে হাজার হাজার হেক্টর জায়গা জুড়ে কৃষিক্ষেত। বেশিরভাগ জমিতে এখন ব্যবহার করা হচ্ছে অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি।

এই কাউন্টির প্রায় ১৬ হাজার হেক্টর জায়গা জুড়ে রোপন করা হয়েছিল গম, যেগুলো এখন পেকেছে। আর এসব জমিতে ব্যবহার করা হচ্ছে এক হাজারের বেশি হার্ভেস্টার মেশিন।

স্থানীয় একজন কৃষক চাং রংহং বলেন, এ ধরনের আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে তারা বেশ লাভবান হচ্ছেন।

মাঠের এপার থেকে ওপার অব্দি নিমিষেই কাভার করছে এই হার্ভেস্টার মেশিন। ফসল সংগ্রহ করা থেকে শুরু করে মাড়াই করা পর্যন্ত সব ধরনের কাজ শেষ করতে সময় লাগছে মাত্র কয়েক ঘণ্টা। আর খরচও কমেছে আগের চেয়ে কয়েকগুণ।

স্থানীয় কৃষি অফিসের কর্মকর্তা পেং ওয়ানলি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের ক্ষেত্রে কৃষকদের কারিগরি সহায়তা ও প্রযুক্তি জ্ঞান দিয়ে আসছেন তারা।

তিনি বলেন, "এক মু পরিমাণ জমি থেকে ফসল কাটতে তিন জন শ্রমিকের প্রয়োজন হয়। আর মাড়াই করতে আরো দুজন লাগে। সব মিলিয়ে তাদের জন্য খরচ করতে হয় ৫০০ ইউয়ান। আর এক্ষেত্রে আমরা যদি একটি বড় হারভেস্টার মেশিন ব্যবহার করি তাহলে খরচ হবে মাত্র ৮০ ইউয়ান। অর্থাৎ আগের চেয়ে ৬গুণ কম খরচ হবে।"

১৫ মু'তে এক হেক্টর এই হিসেবে নিজের মতামত জানিয়েছেন এই কৃষি কর্মকর্তা।

এদিকে তেল উৎপাদনকারী ফসল রেপসিডের বাম্পার ফলন হয়েছে মধ্যচীনের ইংছেং সিটিতে। স্থানীয় কৃষি কর্মকর্তারা এখানেও আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির ব্যবহার করছেন। বর্তমানে এখানে প্রযুক্তি ব্যবহারের হার ৯৫ শতাংশ ছড়িয়ে গেছে।

উত্তর পূর্ব চীনের কয়েকটি প্রদেশে এরইমধ্যে শুরু হয়েছে ধানের চারা রোপনের কাজ, যেখানে অধিকাংশ ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হচ্ছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি।

ধানের চারা রোপন করতে ব্যবহার করা হচ্ছে মানবহীন রাইস ট্রান্সপ্লান্টার। এই প্রযুক্তির সঙ্গে জড়িয়ে আছে পাইতু নেভিগেশন ড্রাইভিং সিস্টেম। 

স্থানীয় একজন কৃষক বলেন, "প্রযুক্তি ব্যবহার করে যেভাবে ধানের চারা রোপণ করা হচ্ছে, তা সত্যিই প্রশংসনীয়। এর মাধ্যমে খুবই কম সময়ে কাজ শেষ করা সম্ভব হচ্ছে। চারা রোপণের এই সময়ে আধুনিক মেশিনের সঙ্গে দুজন মানুষ থাকলেই সব কাজ সহজ হয়। ১০ হেক্টর জমিতে চারা রোপন করতে সব মিলিয়ে সময় লাগে মাত্র তিন দিন। আসলে চাষাবাদ এখন অনেকটাই নির্ভর করছে আধুনিক কৃষি প্রযুক্তির উপর।"

প্রচলিত মেশিনের সঙ্গে তুলনা করলে মানবহীন এই প্রযুক্তি কয়েকগুণ দ্রুত কাজ করতে পারছে। আর কম সময়ের মধ্যে ঘরে ফসল তুলতে পারছেন কৃষকরা।

 

প্রতিবেদন : এইচআরএস অভি

সম্পাদনা  : এইচ এম সৌরভ

 

 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা: এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান: ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী