সিনচিয়াং থেকে তিব্বত: হ্রদ সর্বাঙ্গে
2023-05-24 15:56:06

এ অনুষ্ঠানে আমরা পালাক্রমে সিনচিয়াং ও তিব্বতসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করে থাকি। আশা করি, এর মাধ্যমে শ্রোতারা চীনের সুন্দর সিনচিয়াং ও সুন্দর তিব্বত সম্পর্কে আরও ভালো ধারণা পাচ্ছেন। তাহলে দেরি না করে শুরু করি আমাদের আজকের অনুষ্ঠান। আজকে আমরা তিব্বত নিয়ে কথা বলব।

 

>> হ্রদ সর্বাঙ্গে

চীনে সবচেয়ে বেশি হ্রদ আছে তিব্বতে। এখানে ছোট-বড় হ্রদের সংখ্যা দেড় সহস্রাধিক। সবচেয়ে বিখ্যাত হ্রদের মধ্যে রয়েছে ‘নামুছুও’, ‘ইয়াং চুওইয়ুংহু’, ‘মাফাংইয়ুংছুও’, ‘পানকুংছুও’, ‘পাসুংছুও’ এবং ‘সেনলিনছুও’। তিব্বতের হ্রদগুলোর মোট আয়তন ২৪ হাজার ২০০ বর্গকিলোমিটার, যা গোটা চীনের হ্রদের মোট আয়তনের ৩০ শতাংশ। তিব্বতে এক বর্গকিলোমিটারের বেশি আয়তনের হ্রদের সংখ্যা ৬১২টি, ৫ বর্গকিলোমিটারের চেয়ে বেশি আয়তনের হ্রদের সংখ্যা ৩৪৫টি, ৫০ বর্গকিলোমিটারের চেয়ে বেশি আয়তনের হ্রদের সংখ্যা ১০৪টি, ১০০ বর্গকিলোমিটারের চেয়ে বেশি আয়তনের হ্রদের সংখ্যা ৪৭টি, ৫০০ বর্গকিলোমিটারের চেয়ে বেশি আয়তনের হ্রদের সংখ্যা ৭টি। ‘নামুছুও’, ‘স্যলিনছুও’ ও ‘’চারিনানমুছুও’—এই তিনিটি হ্রদের প্রত্যেকটির আয়তন ১০০০ বর্গকিলোমিটারের চেয়ে বেশি। এর মধ্যে ‘নামুছুও’ হ্রদের আয়তন ১৯৬১ বর্গকিলোমিটার। এটি তিব্বতের বৃহত্তম হ্রদ। এটি চীনে সবচেয়ে সুন্দর হ্রদগুলোর অন্যতম।

 

তিব্বতের হ্রদগুলোর মধ্যে বিশুদ্ধ পানির হ্রদের সংখ্যা কম এবং লবণাক্ত পানির হ্রদের সংখ্যা বেশি। প্রাথমিক জরিপ অনুযায়ী, তিব্বতে লবণাক্ত পানির হ্রদের সংখ্যা প্রায় ২৫১টি, যার মোট আয়তন ৮০০০ বর্গকিলোমিটার। এসব হ্রদের কাছাকাছি চারণভূমি রয়েছে, যেগুলোতে বিভিন্ন বন্যপ্রাণী ঘুরে বেড়ায়।

 

তিব্বতের সংখ্যাগরিষ্ঠ মাঝারি আকারের হ্রদের পানির গুণগত মান ভালো, রঙ গভীর নীল, এবং স্ফটিকের মতো পরিষ্কার। এ পানিতে তুষার-পর্বতের ছবি প্রতিফলিত হয়, যা দর্শকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। ‘হু পিন’ হচ্ছে একটি সমৃদ্ধ চারণভূমি।  এটা জলপাখি ও মাছের নিরাপদ আবাস। কিছু বড় আকারের হ্রদের আবার দ্বীপপুঞ্জ  আছে। ছোট দ্বীপগুলো হচ্ছে ‘পাখীদের রাজ্য’। এর মধ্যে আলির পশ্চিমের ‘পানকুংছুও’ দ্বীপ সবচেয়ে বিখ্যাত।

>> জটিল ও  বৈচিত্র্যময় মালভূমি জলবায়ু

তিব্বতের ভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত। জলবায়ু ঠাণ্ডা। তবে টপোগ্রাফি, ল্যান্ডফর্ম, এবং বায়ুমণ্ডলীয় প্রচলনের প্রভাবে, তিব্বতের জলবায়ু অনন্য ও জটিল। তিব্বতের উত্তর-পশ্চিম দিকে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা ও শুষ্ক এবং দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে উষ্ণ ও আর্দ্র। এই জন্য জলবায়ুর রকমও দক্ষিণ ও পূর্ব দিক থেকে উত্তর ও পশ্চিম দিকে পৃথক পৃথকভাবে গ্রীষ্মমন্ডলীয়, উপক্রান্তীয়, মালভূমি নাতিশীতোষ্ণ, মালভূমি উপআর্কটিক, মালভূমি হিমশীতল,প্রভৃতি। তিব্বতের দক্ষিণ ও পূর্ব  দিক এবং হিমালয়ের দক্ষিণাঞ্চলীয় আলপাইন উপত্যকা অঞ্চলে তাপমাত্রা ধীরে ধীরে কমে যায়।

 

তিব্বত মালভূমি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে অনেক উঁচুতে অবস্থিত। কম ধুলো ও আর্দ্রতার কারণে এখানে মেঘ দেখা যায় খুবই কম।  সূর্যের আলো পড়ার দিক দিয়েও তিব্বত সবচেয়ে এগিয়ে আছে।  তিব্বতের দিনের বেলা গোটা চীনে সবচেয়ে লম্বা, বার্ষিক সূর্যালোক-ঘন্টার মোট সংখ্যা ৩১০০ থেকে ৩৪০০টি। মোদ্দকথা, তিব্বতে বসবাসকারীরা সূর্যের তাপ বেশি পায় এবং তা চোখের জন্য আরামদায়ক ।

 

চীনের মূল ভূভাগের তুলনায় তিব্বতের সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলের তাপমাত্রা বেশ নিম্ন পর্যায়ের। এখানে বার্ষিক গড় তাপমাত্রা -২.৯ থেকে ১১.৯ ডিগ্রি সেলসিয়াসের মতো। লাসা ও রিকাজের বার্ষিক গড় তাপমাত্রা তাদের একই অক্ষাংশের ছুংছিং, উহান ও শাংহাই’র চেয়ে ১০ থেকে ১৫ সেলসিয়াস ডিগ্রী কম। আলি অঞ্চলের সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৫০০০ মিটারেরও বেশি জায়গায় অগাস্টে দিনের তাপমাত্রা শুধু ১০ সেলসিয়াস ডিগ্রীর কাছাকাছি থাকে। এমনকি, রাতে এর তাপমাত্রা  ০ ডিগ্রী সেলসিয়াসের নিচেও নেমে আসে।  

 

তিব্বতের দক্ষিণাঞ্চল ও পূর্ববাঞ্চলে তাপমাত্র বেশি এবং উত্তর ও পশ্চিমে কম। তিব্বতে বার্ষিক পৃষ্টিপাতের পরিমাণ ৩০ থেকে ৪৪৯৫ মিলিমিটারের মধ্যে। শীতকালের পশ্চিম বাতাস এবং গ্রীষ্মকালের দক্ষিণ ও পশ্চিম বাতাসের পর্যায়ক্রম প্রভাবে তিব্বতে শুষ্ক মৌসুম ও বর্ষাকালের পার্থক্য খুবই স্পষ্ট; সাধারণত প্রতিবছরের অক্টোবর থেকে দ্বিতীয় বছরের এপ্রিল পর্যন্ত এই সময়পর্ব হচ্ছে শুষ্ক মৌসুম; মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময়পর্ব হচ্ছে বর্ষাকাল। বর্ষাকালেই বছরের ৯০ শতাংশ বৃষ্টিপাত হয়।

 

দক্ষিণ তিব্বত ও উত্তর তিব্বতের জলবায়ু মধ্যে পার্থক্য বিশাল। ভারত মহাসাগরীয় উষ্ণ ও আর্দ্র বায়ু প্রবাহের প্রভাবে দক্ষিণ তিব্বতে জলবায়ু হালকা ও বৃষ্টি বেশি, বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস, সবচেয়ে নিম্ন মাসিক গড় তাপমাত্রা -১৬ সেলসিয়াস ডিগ্রী, সবচেয়ে উচ্চ মাসিক গড় তাপমাত্রা ১৬ ডিগ্রী সেলসিয়াসের ওপর। উত্তর তিব্বতের মালভূমি আদর্শস্থানীয় মহাদেশীয় জলবায়ু, বার্ষিক গড় তাপমাত্রা ০ সেলসিয়াস ডিগ্রীর নিচে, বরফ জমে থাকার সময় অর্ধেক বছর, সবচেয়ে উচ্চ তাপমাত্রা জুলাইতে।  

 

প্রিয় শ্রোতা, আমাদের হাতে আর সময় নেই। আজকে এখানেই শেষ করতে হচ্ছে। আজকের ‘সিনচিয়াং থেকে তিব্বত’ এ পর্যন্তই। তবে, আগামী সপ্তাহে আমরা আবার আপনাদের সামনে হাজির হবো সিনচিয়াং ও তিব্বতের কোনো গল্প বা তথ্যভান্ডার নিয়ে। আপনারা আমাদের লিখুন। আমাদের ইমেইল ঠিকানা ben@cri.com.cn  আমাদের ওয়েবসাইটেও আপনারা অনুষ্ঠান শুনতে পারেন। আমাদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা:  https://bengali.cri.cn/  সবাই ভাল থাকুন, সুন্দর থাকুন।

(ওয়াং হাইমান/আলিম/ছাই)