এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। একটি পরিবার নিয়েই চীনের যে গ্রাম
২। চীনাদের সাথে মিশে চীনা ভাষা শেখার আগ্রহ জন্মেছে : সাবরিনা লিজা
৩। চীনের ভাস্কর্য ভুবন
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ১৯ তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। একটি পরিবার নিয়েই চীনের প্রাচীন যে গ্রাম
চীনের ইউনান প্রদেশের প্রাচীন শহর লিছিয়াং থেকে মাত্র চার কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমেই অবস্থিত প্রাচীন শহর শুহে। আকারে ছোট হলেও এই শহর জড়িয়ে আছে চীনের হাজারো বছরের ইতিহাসের সাথে। প্রাচীন পথঘাট, বাজার এবং ঐতিহ্যবাহী বাড়ির জন্য বিখ্যাত এই শহর।
প্রাচীন শহর শুহের নির্মাণশৈলী অনেকটা লিছিয়াংয়ের মতো। স্থানীয়দের তৈরি বোনা নাসি কাপড় ও পণ্যের জন্য শহরটি বেশ পরিচিত। বোনা পণ্য ছাড়াও, খোদাই কাঠ, নাসি স্টাইলের মাটির পাত্র ও রূপার ফিলগ্রি গয়নার জন্য বিখ্যাত এই শহর।
স্থানীয় মানুষদের কাছে শুহে এখনো পরিচিত লংছুয়ান গ্রাম নামে। এ জায়গাটিকে বলা হয় নাসি ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর মু পরিবারের জন্মস্থান। শহরটির একদম মাঝখানে একটি পশম ও চামড়ার বেচাকেনার বাজার আছে। তাই প্রাচীন শহর শুহেকে ‘চামড়ার গ্রাম’ও বলা হয়ে থাকে। এছাড়া এখানকার বাজার প্রাচীনকাল থেকেই খোলা থাকে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত।
শুহের মূল রাস্তা দিয়ে উত্তরদিকে কিছুটা হাটলেই ছিউতিংলং পুলের উৎসমুখের দেখা মেলে। এটিকে স্থানীয়রা পবিত্রতার প্রতীক হিসেবে দেখে। যারা এই শহরে ঘুরতে আসেন তারা অন্তত একবার হলেও এই জায়গাটি দেখতে আসেন।
দিকের পর্বতগুলোতে লাল পাতার গাছ এক অনন্য দৃশ্যের সৃষ্টি করে। চোখ জুড়ানো এই সৌন্দর্য উপভোগ করতে শরৎকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করেন অনেক ভ্রমণপ্রেমী।
শুহেতে আরো একটি বিরল জায়গা রয়েছে যা ভ্রমণপিপাসুদের মনে আগ্রহ সৃষ্টি করে। শহরের পূর্ব দিকের সংইউন গ্রামের ঠিক পেছনে স্টোন লোটাস পর্বতে একটি গুহা রয়েছে। যেটি দেখতে একটি হা করে থাকা বাঘের মুখের মতো! এছাড়া রয়েছে গ্রীন ডাগ্রন ব্রীজ। যেটি ৪০০ বছর আগে পাথর দিয়ে তৈরি করেছিলেন মু পরিবাররা। ২৫ মিটার দীর্ঘ এ ব্রীজ দেখতেও এ গ্রামে ঘুরতে আসেন অনেক পর্যটক।
এই শহরে যারা ঘুরতে আসে তারা এখানকার স্থানীয় মানুষদের ঐতিহ্যগত জীবনধারা বেশ উপভোগ করে।
১৯৯৭ সালে প্রাচীন শহর শুহেকে বৈশ্বিক সাংস্কৃতিক স্থানের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
প্রতিবেদন- আব্দুল্লাহ আল মামুন
সম্পাদনা-আফরিন মিম
২। চীনাদের সাথে মিশে চীনা ভাষা শেখার আগ্রহ জন্মেছে : সাবরিনা লিজা
চীনা ভাষায় অনর্গল কথা বলতে পারেন বাংলাদেশের মেয়ে সাবরিনা লিজা। আর এই চীনা ভাষা শেখার আগ্রহ জন্মেছে চীনাদের সাথে মেশার পর।
সাবরিনা লিজা চীনের চিয়াংসু প্রদেশের হুয়াইয়ান ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি থেকে ফার্মাসিটিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ব্যাচেলর ডিগ্রী অর্জন করেছেন। বর্তমানে ইউননান প্রদেশের কুনমিং মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ছেন।
সাবরিনা লিজা
সাবরিনা লিজা চীনে থাকাকালীন ঘুরেছেন বিভিন্ন জায়গায়। চীনের বসন্ত উৎসবের সময় কুয়াংতং প্রদেশে থেকে বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ড দেখার সুযোগ হয়েছে তার।পাশাপাশি প্রাচীন গ্রামের সংস্কৃতি, আতিথেয়তা, খাবার মুগ্ধ করেছে তাকে। এছাড়া ঘুরেছেন আনহুই প্রদেশের রেইনবো ওয়াটার ফল, তাবিয়ে মাউন্টেইন ও গ্লাস ব্রীজ।
সাবরিনা লিজা ও তার বন্ধুরা
ঘুরেছেন চীনের সাংহাই মিউনিসিপালটিতে। সেখানকার বিখ্যাত সাংহাই টাওয়ার দেখেছেন তিনি।
চীনের একটি রেস্টুরেন্টে বসে চীনা খাবার খাচ্ছেন সাবরিনা লিজা ও তার বন্ধুরা
চীনের খাবার খাওয়ার অভিজ্ঞতা প্রসঙ্গে সাবরিনা বলেন, চীনের কেক, হটপট, হাঁসের মাংস, মাছ সবই আমার খুব পছন্দ। তবে সবচেয়ে বেশি ভালোলেগেছে শাকসবজি।
সাবরিনা লিজা
যারা চীনে ঘুরতে যেতে চান তাদের উদ্দেশ্যে সাবরিনা বলে, “ ঘুরার তালিকায় শুধু সাংহাই ও বেইজিং রাখবেন না। চীনের প্রতিটা প্রদেশ ও শহরেই দেখার মত বিভিন্ন জায়গা আছে। আর যার ভাষা জানেন না তাদেরও ভয় পাওয়ার কিছু নেই। চীনের মেট্রোতে সব লিখা থাকে। শপিং মল, হাসপাতাল, পর্্যটন স্থান সবকিছুর লিস্ট থাকে। তাই লোকেশন দেখেই আপনি পৌঁছে যেতে পারবেন সেখানে”
সাক্ষাৎকার গ্রহণ – আফরিন মিম
৩। চীনের ভাস্কর্য ভুবন
সবুজ ঘাসের উপর একটু পর সারি সারি ভাসর্কর্্য। ভাস্কর্যপ্রেমীদের জন্য এ স্বপ্নের জায়গা। যেখানে গেলে দেখা মেলে শতাধিক ভাস্কর্যের। এটি বেইজিং আন্তর্জাতিক ভাস্কর্য পার্ক বা বেইজিং ইন্টারন্যাশনাল স্কাল্পচার পার্ক।
বেইজিংয়ের শিজিংশান জেলায় অবস্থিত এই পার্ক। এটি বেইজিংয়ের দশটি সেরা পার্কের অন্যতম। ১৬২ হেকটর জায়গা নিয়ে গড়ে ওঠা এই পার্ক ২০০২ সালের সেপ্টেম্বর মাসে প্রথম যাত্রা শুরু করে। এখানে রয়েছে ৪০টি দেশের খ্যাতিমান ভাস্করদের নির্মিত ১৮০টির বেশি ভাস্কর্য ।
এই পার্কে শুধু ভাস্কর্যই নেই, আছে বড় লেক, দীর্ঘ হাঁটা পথ, শিশুদের জন্য খেলার জায়গা, লেকের উপর সুদৃশ্য সাঁকো। সারা পার্কে সবুজ গাছ ও ফুল অপরূপ সুন্দর দৃশ্যের জন্ম দিয়েছে। রয়েছে আলাদা গোলাপ ও পিওনি ফুলের বাগান।
পার্কের এক অংশে রয়েছে আলাদা কিছু রাইড। সেখানে শিশুদের চড়ার ব্যবস্থা। এই পার্কে রয়েছে বিশাল খোলা চত্বর। বিভিন্ন উৎসব উপলক্ষ্যে এখানে আয়োজন করা হয় মেলা ও প্রদর্শনীর।
শীতকালে এখানে লেকের পানি জমে বরফ হয়ে যায়। তখন এখানে স্কেটিং এবং স্লেজগাড়ি চড়ার ব্যবস্থা করা হয়। জমে যাওয়া লেকের উপর দিয়ে কুকুর টানা স্লেজ গাড়িতে চড়ে আনন্দ পান পর্যটকরা।
পার্কের একদিকে রয়েছে মানব সভ্যতার অগ্রগতিতে অবদান রেখেছেন এমন মনীষিদের ভাস্কর্য। আর বিমূর্ত শিল্পকলা, আধুনিক নাগরিক জীবনের অনুভূতি, ঐতিহ্য, বিপ্লব, নিঃসঙ্গতা, আনন্দ ইত্যাদি প্রকাশ করেছে এমন ভাস্কর্য রয়েছে দেড়শটি।
এই পার্কে সাইকেল চালনা ও হাঁটার জন্য প্রতিদিন বিকালে স্থানীয় বাসিন্দারা আসেন। এখানে থাইচি বা বিশেষ শরীরচর্চার আয়োজনও রয়েছে। গ্রীষ্মকালের সন্ধ্যায় এখানে নাচের আসর বসে । নাচের আসরে আশপাশের এলাকার বাসিন্দারা অংশ নেন।
এই পার্কে ঢুকতে ১০ ইউয়ানের টিকেট কাটতে হয়। বাবাওশান সাবওয়ে স্টেশনের খুব কাছেই অবস্থিত পার্কটি। কাছেই রয়েছে বিখ্যাত তাইওয়ান স্ট্রিট। সেখানে রয়েছে বিভিন্ন রেস্টুরেন্ট।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম ও রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী