মরুভূমিতে নতুন জীবনের দুয়ার খুলেছেন আব্দুল ও তার ভাইয়েরা
2023-05-22 15:12:15

আফ্রিকার মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলীয় নাইজারে বিস্তৃত অন্তহীন মরুভূমিতে থিয়ানচিন দাগাং অয়েলফিল্ড গ্রুপ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন কম্পানি লিমিডেট (দাগাং)-নির্মিত নাইজার আগা-দেম দ্বিতীয় পর্বের একীকরণ প্রকল্পের নির্মাণকাজ চলছে তুমুল বেগে। প্রকল্পের নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবার পর আগা-দেম তেলক্ষেত্রের বার্ষিক উত্পাদন দক্ষতা ৫৫ লাখ টনে উন্নীত হবে। এ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ তাত্পর্য রয়েছে দেশটির কর্মসংস্থান এবং অর্থনৈতিক উন্নয়ন বেগবান করার ক্ষেত্রে।

 

নির্মাণসাইটে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন চীনা প্রকল্প ব্যবস্থাপনা কর্মী ও প্রযুক্তিবিদ ছাড়াও অনেক তরুণ নাইজেরিয়ান। এসব নাইজেরিয়ান দাগাং থেকে নিয়োগপ্রাপ্ত স্থানীয় কর্মী।

৩৪ বছর বয়সী আব্দুল দাগাংয়ের একজন জ্যেষ্ঠ স্থানীয় কর্মী। ২০১০ সালে তিনি প্রকল্পদলে যোগ দেন। তার পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭। পরিবারের বড় ছেলে হিসেবে তার কাঁধে অনেক দায়িত্বের বোঝা। মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সময় খণ্ডকালীন শিক্ষানবিশ হিসাবে গাড়ি চালাতে শেখেন। কয়েক বছর পর তিনি দাগাংয়ে আসেন। দশ-বার বছরের অভিজ্ঞতার কারণে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং, পচনরোধ ও পরীক্ষাসহ বিভিন্ন পেশাদার কাজে সুদক্ষ তিনি। এছাড়া ভাষাগত সুবিধার কারণে প্রশিক্ষণ সমন্বয় করা, নিরাপত্তা বিষয় ব্যাখ্যা করা এবং নতুন কর্মীদের নেতৃত্ব দেওয়াসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা পালন করছেন। তিনি নির্মাণসাইটে অপরিহার্য একজন জ্যেষ্ঠ কর্মী হিসাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করছেন।

 

“আগে আমি শুধু গাড়ি চালাতে পারতাম। এখন অনেক কাজ করতে পারি। আমি কিছু চীনা ভাষা বলতে পারি; নতুন কর্মীরা সেটা পারেন না। আমি তাদের নিয়ে কাজ করি।” আব্দুল গর্বিতভাবে বলেন, “পয়সাকড়ি রোজগার করার কারণে আমি বাড়ি বানাতে পেরেছি।”

 

দাগাং স্থানীয় প্রযুক্তিবিদদের প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্ব দেয় এবং আশা করে, আব্দুলের মতো আরও অনেক কর্মী প্রকল্পে যোগ দিবেন। ২০১৯ সালে স্থানীয় শিক্ষাদান সংস্থার সঙ্গে জিন্দার ভোকেশনাল টেকনিক্যাল ট্রেনিং ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করার মাধ্যমে দাগাং অধিকতরভাবে দেশটিতে তার মেধাশক্তি প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা সুসম্পূর্ণ করে। এ পর্যন্ত কোম্পানি প্রায় ৩শ’ দক্ষ কর্মী লালন করেছে।

 

জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজন এমন তরুণ কর্মীদের জন্য দাগাং নির্মাণসাইটে প্রাক-চাকরি প্রশিক্ষণের বন্দোবস্ত করেছে। ১ থেকে ২ মাসের বিনামূল্যের প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন কর্মীরা সিমুলেশনের সাহায্যে দ্রুত বাস্তব কার্যক্রম শুরু করতে পারেন। এবং প্রশিক্ষণ পরীক্ষায় পাস করার পর নতুন কর্মীরা আনুষ্ঠানিকভাবে কাজে যোগ দিতে পারেন। এছাড়া এ কোম্পানি শিক্ষানবিশ পরামর্শদাতাদের বাস্তব কার্যক্রমে নেতৃত্ব দেওয়ার ব্যবস্থা করে এবং নির্মাণসাইটে আরো ভালো শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলতে উত্সাহ দেয়।

কর্মী আদমু এসব প্রশিক্ষণ ব্যবস্থার সুবিধাভোগীদের অন্যতম। ভবিষ্যতের ব্যাপারে তার আকাঙ্ক্ষা পরিপর্ণ। কোম্পানিকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, “আমাদের নিয়ে কাজ করার জন্য আব্দুলকে ধন্যবাদ জানাই। আশা করি, আমার আরো বেশি অগ্রগতি হবে।”

 

ইথাকা ছ’মাস আগে আসা একজন নতুন কর্মী। তিনি বলেন, “এখানে আসার পর আমি অনেক নতুন কাজ করেছি। অনেক কাজের মাধ্যমে আমার কর্ম-অভিজ্ঞতা বেশ উন্নত হয়েছে। এখন অনেক কাজ ভালোভাবে করতে পারি।”

 

অন্য একজন স্থানীয় কর্মী কাকা জানান, এখানে আসার প্রথম দিকে শিখার সঙ্গে সঙ্গে কাজও করেছেন। এখন প্লাজমা কাটা, ইলেক্ট্রোওয়েল্ডিং ও ইস্পাত বার বাঁধাইয়ের পাশাপাশি গাড়িও চালাতে পারেন তিনি। আগে তার পরিবারে কিছুই ছিল না। কিন্তু এখন তার বাড়িঘর মেরামত করা হয়েছে। তিনি বিয়ে করেছেন এবং বাচ্চাও নিয়েছেন। বেতন নিয়ে খুশী – একথা জানিয়ে তিনি বলেন, বর্তমানে তিনি একজন সহায়ক। নির্মাণসাইটে দোভাষী হিসেবে কাজ করছেন। কারিগর হবার সময় বেতন বেড়েছিল এখন সহায়ক হিসেবে বেতন আরো বেশি হয়েছে।

 

নতুন দক্ষতা অর্জন নতুন জীবনের দুয়ার খুলে দেয়। এসব ছোট জিনিস মরুভূমির নির্মাণসাইটে আব্দুল ও তার নাইজেরিয়ান ভাইদের আরো বড়ো হয়ে ওঠার পথ তৈরি করেছে। এখানে তারা কেবল অনেক ব্যক্তিগত দক্ষতাই অর্জন করেননি, বরং ধাপে ধাপে তাদের নিজেদের ও পরিবারের সদস্যদের উচ্চাকাঙ্খী জীবন বাস্তবে পরিণত করছেন। (প্রেমা/রহমান)