চীন ও মধ্য এশিয়া দেশগুলোর মৈত্রী জোরদারের কথা সি চিন পিং যেভাবে বলেছেন
2023-05-20 18:01:28

চীন ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোর হাজারেরও বেশি বছরের মৈত্রীর ইতিহাস আছে। দু’পক্ষ যৌথভাবে প্রাচীন রেশমপথের সুন্দর গল্পগুলো তৈরি করেছিল। ইতিহাসের দীর্ঘ নদীতে চীন ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো বিশ্বের পরিবর্তন, যুগের পরিবর্তন এবং ইতিহাসের পরিবর্তন দেখেছে। তারা উভয়ের জন্য কল্যাণের পথ উন্মোচন করেছে। সম্প্রতি চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষসম্মেলন চীনে অনুষ্ঠিত হয়েছে। চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং সবসময় দু’পক্ষের মৈত্রীর ওপর অনেক গুরুত্ব দিয়েছেন।

 

করোনাভাইরাসের মহামারির পর চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং ২০২২ সালের ১৪ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর তাঁর প্রথম সফরেই যান মধ্য এশিয়ার দেশে। যা প্রমাণ করে যে, মধ্য এশিয়ার দেশের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে তাঁর আগ্রহ অনেক বেশি। সফরকালে কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম-জোমার্ট টোকায়েভ সি চিন পিংকে সে দেশের সর্বোচ্চ পদক ‘সোনালি ঈগল’ প্রদান করেন। উজবেকিস্তানের প্রেসিডেন্ট শভকাত মির্জিওয়েভ সি চিন পিংকে দেশের সর্বোচ্চ মৈত্রী পদক প্রদান করেন। পদকটি সেবারই প্রথম প্রদান করে দেশটি। যা একদিকে সি চিন পিং-এর ব্যক্তিগত মর্যাদার স্বীকৃতি, অন্যদিকে ৩০ বছর ধরে চীন-কাজাখস্তান এবং চীন-উজবেকিস্তান সম্পর্ক উন্নয়নের স্বীকৃতি।

 

দেশের শীর্ষনেতার যত্নে, ২০১১ সাল থেকে চীন ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো কৌশলগত অংশীদারি সম্পর্ক স্থাপন করেছে এবং বন্ধুত্বপূর্ণ সহযোগিতা চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে।

২০২২ সালের ২৫ জানুয়ারি, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং চীন ও মধ্য এশিয়ার পাঁচটি দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক প্রতিষ্ঠার ৩০তম বার্ষিকীর ভিডিও সম্মেলনে বলেন, আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি পরিবর্তন যাই হোক না কেন, ভবিষ্যতে চীনের উন্নয়ন যে কোনো পর্যায়ে উন্নীত হোক না কেন, চীন সবসময় মধ্য এশিয়া দেশের নির্ভরযোগ্য ভালো প্রতিবেশী, ভালো অংশীদার, ভালো বন্ধু, ভালো ভাই হয়ে থাকবে।

 

চীন ও মধ্য এশিয়ার আর্থিক-বাণিজ্যিক সহযোগিতার বিরাট উন্নতি হয়েছে। চীন হল মধ্য এশিয়া দেশের বৃহত্তম বা প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারি। চীন ও মধ্য এশিয়া দেশের পণ্যের বৃহত্তম বা প্রধান রপ্তানিকৃত দেশ। চীন একই সঙ্গে কিরগিজস্তান এবং তাজিকিস্তানের বৃহত্তম পুঁজি বিনিয়োগকারী দেশ। চীন ও মধ্য এশিয়ার বাণিজ্যের পরিমাণ আগের দশ বারো কোটি মার্কিন ডলার বেড়ে ২০২২ সালের ৭০.২ বিলিয়ন মার্কিন ডলার হয়েছে। বৃদ্ধির হার একশ’ গুণেরও বেশি। মধ্য এশিয়ার দেশে চীনের বরাদ্দ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪০ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে।

 

একই সঙ্গে চীন ও মধ্য এশিয়ার দেশের সহযোগিতা ব্যবস্থা আরো সমৃদ্ধ হয়েছে। চীন সব মধ্য এশিয়া দেশের সঙ্গে আন্তঃসরকারি সহযোগিতা কমিশন স্থাপন করেছে। চীন ও কাজাখস্তানের প্রধানমন্ত্রীর নিয়মিত বৈঠক ব্যবস্থাও আছে।

চীনের শিল্পের ধরণ অনেকটাই সু-সম্পূর্ণ। যা মধ্য এশিয়া দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে খুব উপযোগী। যৌথভাবে এক অঞ্চল, এক পথ উদ্যোগ নির্মাণের মাধ্যমে মধ্য এশিয়ায় অনেক প্রকল্প চালু হয়েছে। বর্তমানে চীন ও মধ্য এশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প ইতোমধ্যে গাড়ি, জ্বালানি, চিকিত্সা ও ওষুধ বিভিন্ন ক্ষেত্রকে অন্তর্ভুক্ত করেছে। বিনিয়োগের পরিমাণ ২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে।

 

চীন ও মধ্য এশিয়ার পারস্পরিক যোগাযোগের মান অভূতপূর্ব পর্যায়ে উন্নীত হয়েছে। বর্তমানে চীন ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলো সড়ক, রেলপথ, বিমান চলাচল এবং তেল ও প্রাকৃতিক গ্যাসের নেটওয়ার্ক স্থাপন করার চেষ্টা করছে।

এ ছাড়া, দু’পক্ষ সবুজ উন্নয়নের ওপর গুরুত্বারোপ করেছে। ভবিষ্যতে দু’পক্ষ ডিজিটাল অর্থনীতি, আন্তঃদেশীয় ই-কমার্স এবং সবুজ অবকাঠামো নির্মাণসহ বিভিন্ন সহযোগিতা করবে। যাতে বিশ্ব অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে নতুন অবদান রাখা যায়।