চীন-মধ্য এশিয়া সহযোগিতা জোরদারে সি চিন পিংয়ের আট দফা প্রস্তাব
2023-05-19 16:17:27

মে ১৯: ১৯ মে সকালে, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, শাআনসি প্রদেশের সি’আন শহরের আন্তর্জাতিক সম্মেলনকেন্দ্রে, চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে সভাপতিত্ব করেন। মূল বক্তব্যে তিনি চীন ও মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে সহযোগিতা জোরদারে "আট দফা প্রস্তাব" পেশ করেন।

সি চিন পিং উল্লেখ করেন যে, এই শীর্ষ সম্মেলন একটি নতুন প্ল্যাটফর্ম তৈরি করেছে এবং চীন ও মধ্য-এশিয়ার মধ্যে সহযোগিতার নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছে। চীন এই শীর্ষ সম্মেলনটিকে চীন-মধ্য এশিয়া সহযোগিতার পরিকল্পনা, নির্মাণ ও বিকাশের জন্য সব পক্ষের সাথে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করার সুযোগ হিসেবে নিতে ইচ্ছুক।

তাঁর প্রথম প্রস্তাব হল, যান্ত্রিক নির্মাণকে শক্তিশালী করা। চীন ও মধ্য-এশিয়ার মধ্যে  সহযোগিতার জন্য ইতোমধ্যে কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক, কাস্টমস এবং উদ্যোক্তা ও শিল্পপতি কমিটি গঠিত হয়েছে। তা ছাড়া, চীন শিল্প ও বিনিয়োগ, কৃষি, পরিবহন, জরুরি ব্যবস্থাপনা, শিক্ষা এবং রাজনৈতিক দল পর্যায়ে সভা ও সংলাপব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব করেছে, যাতে সংশ্লিষ্ট দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিক কল্যাণকর সহযোগিতার জন্য একটি বিস্তৃত প্ল্যাটফর্ম সৃষ্টি করা যায়।

দ্বিতীয় প্রস্তাবটি হলো, অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণ করা। চীন আরও বাণিজ্য সহজীকরণ ব্যবস্থা প্রবর্তন করবে, দ্বিপাক্ষিক বিনিয়োগচুক্তি উন্নত করবে, উভয় পক্ষের সীমান্তবন্দরে কৃষি ও সংশ্লিষ্ট পণ্যের দ্রুত ক্লিয়ারেন্সের জন্য "সবুজ চ্যানেল"-এর ব্যবস্থা সম্পূর্ণ করবে, "মধ্য-এশিয়ার পণ্যের ক্লাউড মেলা" আয়োজন করবে, এবং বড় ধরণের পণ্য বাণিজ্যকেন্দ্র তৈরি করবে ও বাণিজ্যের আকার একটি নতুন স্তরে উন্নীত করবে।

তৃতীয় প্রস্তাবটি হল, সংযোগ আরও গভীর করা। চীনা পক্ষ ব্যাপকভাবে আন্তঃসীমান্ত পরিবহনের পরিমাণ বৃদ্ধি করবে, চীন-কিরগিজস্তান-উজবেকিস্তান এবং চীন-তাকিস্তান-উজবেকিস্তান মহাসড়কের পরিবহনক্ষমতা বাড়াবে, এবং চীন-কিরগিজস্তান-উজবেকিস্তান রেলওয়ে সংযোগ প্রকল্পের উন্নয়ন ঘটাবে। চীন বিদ্যমান বন্দরগুলোর আধুনিকীকরণকে ত্বরান্বিত করবে, বিমান পরিবহন খাতের উন্মুক্তকরণকে জোরালোভাবে প্রচার করবে। চীন-ইউরোপ ট্রেন সমাবেশকেন্দ্রের নির্মাণকে এগিয়ে নেওয়া হবে এবং একটি ব্যাপক ডিজিটাল পরিষেবা প্ল্যাটফর্ম তৈরি করা হবে।

চতুর্থ প্রস্তাবটি হল, জ্বালানি খাতে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করা। চীন একটি ‘চীন-মধ্য এশিয়া জ্বালানি-শক্তি উন্নয়ন অংশীদারিত্ব’ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব দেয়। এর লক্ষ্য চীন-মধ্য এশিয়া প্রাকৃতিক গ্যাস পাইপলাইনের ‘ডি-লাইন’ নির্মাণকাজ ত্বরান্বিত করা, দুই পক্ষের মধ্যে তেল ও গ্যাস বাণিজ্যের স্কেল প্রসারিত করা, জ্বালানি খাতে শিল্প চেইন সহযোগিতার বিকাশ ঘটানো, এবং নতুন শক্তি ও পারমাণবিক শক্তির শান্তিপূর্ণ ব্যবহারে সহযোগিতা জোরদার করা।

পঞ্চমটি হল, সবুজ উদ্ভাবন প্রচার করা। চীন মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোর সাথে লবণাক্ত-ক্ষারীয় ভূমি ব্যবস্থাপনা ও উন্নয়ন, জল-সাশ্রয়ী সেচ, আরাল সাগরের পরিবেশগত সংকট সমাধান, এবং উচ্চ-প্রযুক্তি উদ্যোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মধ্য-এশিয়া শিল্প পার্ক প্রতিষ্ঠায় সহায়তা করতে ইচ্ছুক। টেকসই উন্নয়ন-প্রযুক্তি, উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা, এবং মহাকাশ তথ্যপ্রযুক্তিসহ ‘এক অঞ্চল, এক পথ’ উদ্যোগের আওতায় বিশেষ সহযোগিতা কর্মসূচিতে অংশ নিতে মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোকে চীন স্বাগত জানায়।

ষষ্ঠটি হল, উন্নয়ন-সক্ষমতা বৃদ্ধি করা। চীন ও মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিভিত্তিক দারিদ্র্যবিমোচনের জন্য একটি বিশেষ সহযোগিতা পরিকল্পনা প্রণয়ন করবে বেইজিং, "চীন-মধ্য এশিয়া প্রযুক্তি ও দক্ষতা উন্নয়ন পরিকল্পনা" বাস্তবায়ন করবে, মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোতে আরও বেশি লুবান কর্মশালা স্থাপন করবে, এবং চীনা কোম্পানিগুলোকে মধ্য-এশিয়ায় আরও বেশি স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য উত্সাহিত করবে। চীন মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা ত্বরান্বিত করবে এবং মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোর বিকাশে সহায়তার জন্য, মোট ২৬০০ কোটি ইউয়ানের আর্থিক সহায়তা দেবে।

সপ্তমটি হল, বিভিন্ন সভ্যতার মধ্যে সংলাপ জোরদার করা। চীন মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোকে "সাংস্কৃতিক রেশমপথ" প্রকল্পে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়। চীন মধ্য-এশিয়ায় আরও বেশি ঐতিহ্যবাহী চিকিত্সাকেন্দ্র স্থাপন করবে, সাংস্কৃতিককেন্দ্রগুলোর কার্যক্রম আরও গতিশীল করবে, মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের জন্য সরকারি বৃত্তি অব্যাহত রাখবে, চীন-মধ্য এশিয়া গণসংস্কৃতিবর্ষ সুষ্ঠুভাবে আয়োজন করবে, এবং মধ্য-এশিয়ায় সাংস্কৃতিক পর্যটনের জন্য বিশেষ ট্রেন চালু করবে।

অষ্টম প্রস্তাব হল, আঞ্চলিক শান্তি বজায় রাখা। চীন মধ্য-এশিয়ার দেশগুলোকে তাদের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর সক্ষমতা জোরদারে সহায়তা দিতে, স্বাধীনভাবে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও সন্ত্রাসদমনের জন্য তাদের প্রচেষ্টাকে সমর্থন করতে, এবং সাইবার নিরাপত্তা খাতে সহযোগিতা করতে ইচ্ছুক। চীন যৌথভাবে আফগানিস্তানের শান্তিপূর্ণ পুনর্গঠনে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতেও ইচ্ছুক।

(ইয়াং/আলিম/হাইমান)