আকাশ ছুঁতে চাই ১৮
2023-05-18 15:22:53

১. কৃত্রিম হাত নিয়ে প্রতিকূলতা জয় করছেন নারী

২.শিশুর জন্য  চিকিৎসা সেবা

৩. সংগীত ও ভালোবাসায় ঘরবসতি

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে।

 

কৃত্রিম হাত নিয়ে প্রতিকূলতা জয় করছেন নারী

 

অনুষ্ঠানের শুরুতেই বলবো এমন এক নারীর গল্প যিনি দুর্ঘটনায় এক হাত হারানোর পরও দমে যাননি। বরং কঠোর সংগ্রাম করে জীবন যুদ্ধে জয়ের পথ খুঁজে নিয়েছেন। চলুন শোনা যাক এই সাহসী নারীর কথা।

                                             

তার একটি হাত রোবোটিক। দেখে মনে হয় সাইফাই মুভির কোনো যোদ্ধা চরিত্র। এই অবস্থাতেই সাইবাথলন চ্যালেঞ্জ ২০২৩  এর চ্যাম্পিয়নশিপ শিরোপা জয় করেছেন সু মিন। তার এই জয়ে বড় ভূমিকা রেখেছেন চায়নিজ অ্যাকাডেমি অব সায়েন্সেসের সুচৌ ইন্সটিটিউট অব বায়োমেডিকেল ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড টেকনোলজি দলের সদস্যরা।

সাইবাথলন হলো একটি আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতা। সুইস ফেডারেল ইন্সটিটিউট অব টেকনোলজি (ইটিএইচ জুরিখ) এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করে। বিশেষ চাহিদা সম্পন্ন এবং অঙ্গহানির শিকার মানুষদের জন্য সহায়ক প্রযুক্তির উন্নয়ন এবং রিহ্যাবলিটেশন প্রযুক্তির প্রচার ও বিকাশের জন্য এই প্রতিযোগিতা। এতে বিশ্বব্যাপী সচেতনতার সৃষ্টি হয়। 

সু মিন ছিলেন অন্য দশজন নারীর মতোই একজন সাধারণ প্রাণচঞ্চল মানুষ। ১৯৯২ সালে একটি শিল্প কারখানার দুর্ঘটনায় ডান হাত হারান তিনি। পাল্টে যায় তার জীবন। তবে কারও করুণার প্রত্যাশী হয়ে থাকার ইচ্ছা ছিল না তার। বাম হাত দিয়ে খাওয়া, লেখা এবং মালপত্র বহন করার জন্য অনুশীলন শুরু করেন। অনেক কষ্ট হয়। কিন্তু হাল ছাড়েননি।

একহাত নিয়ে পুরনো চাকরিটা করা সম্ভব ছিল না। নিজের একটা রেস্টুরেন্ট দেন তিনি। মোটামুটি এক দশক সময়ে তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে ব্যবসায় সাফল্য এলেও একটা কষ্ট মনের ভিতর রয়েই গিয়েছিল। আগে যে চলাফেরায় আনন্দ ছিল, স্বাধীনভাবে স্বচ্ছন্দে সব কাজ করতে পারতেন সেটা পারছেন না বলে আক্ষেপা ছিল।

তিনি একটি ননফাংশনাল প্রসথেটিক হ্যান্ড কেনেন। কিন্তু সেটা দিয়ে ভালো কাজ হচ্ছিল না। গরমের মধ্যে ওটা পরে থাকাও বেশ সমস্যার ছিল।

এরপর প্রকৌশল বিজ্ঞানী হু সুহুইয়ের সঙ্গে আলাপ হয় তার। সুচৌ ইন্সটিটিউটে যাওয়া শুরু করেন তিনি। হু তার জন্য বিশেষ একটি রোবোটিক হাত তৈরি করেন। সুয়ের কথা, তার প্রয়োজন ও সুবিধা অসুবিধা অনুযায়ী হাতটিকে নানা রকমভাবে পরিবর্তন করেন হু এবং তার দল।

ধীরে ধীরে সু তার নতুন রোবোটিক হাত ব্যবহার করতে অভ্যস্ত হয়ে ওঠেন। এরপর সু এবং হু ঠিক করেন সাইবাথলনে অংশ নিবেন। এই প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় দুজনকে। সুইডেন, ফ্রান্স স্পেন, ইন্দোনেশিয়া, ইতালির সঙ্গে কঠিন প্রতিযোগিতা হয়।

প্রতিযোগিতায় সুকে রোবোটিক হাত দিয়ে চারটি ভারি বোতল একসঙ্গে তুলে বাস্কেটে রাখতে হয়। আবার ছোট্ট ছোট্ট পুতি তুলে নির্দিষ্ট স্থানে রাখতে হয়। এসবই করতে হয় খুব অল্প সময়ের মধ্যে।

সু যখন চ্যাম্পিয়ন তখন তখন শুধু তিনি নন, গোটা চায়নিজ টিম আনন্দে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। সু কখনও ভাবেননি তিনি বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হবেন, সাইবাথলন জয় করবেন।

এখন তার নিজের উপর বিশ্বাস অনেক বেড়েছে। এই রোবোটিক হাত দিয়েই জীবন যুদ্ধের জয় পতাকা ধরে এগিয়ে যাচ্ছেন তিনি।

প্রতিবেদন : শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

শিশুর জন্য চিকিৎসা সেবা

 

জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুরা পাচ্ছে বিনামূল্যে চিকিৎসা সেবা। বিশেষ এই উদ্যোগ নিয়েছে চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বত। যেখান থেকে ইতিমধ্যেই সেবা পেয়েছেন বেশ কয়েক জন শিশু। আর শিশুদের চিকিৎসা সেবা দিতে স্থানীয় চিকিৎসকের পাশাপাশি সাংহাই ও ফুচিয়ান প্রদেশ থেকেও আসছেন ডাক্তার। ফুচিয়ান প্রদেশে চলছে এই চিকিৎসা সেবা। এখানে তিব্বতের শিশুরা চিকিৎসার সুযোগ পাচ্ছে।

চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচিয়ান চিল্ড্রেন হাসপাতালের বেডে অপারেশন শেষে শুয়ে আছে চোখি ক্যালথসানের ১০ বছর বয়সী শিশু। তিন হাজার কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে ছেলেকে নিয়ে এই শিশু হাসপাতালে এসেছেন চোখি ক্যালথসান।

মাত্র দুই বছর বয়সে জন্মগত  হৃদরোগে আক্রান্ত হয় চোখির সন্তান। কিন্তু আর্থিক অস্বচ্ছলতায় তার চিকিৎসা করানোর সুযোগ হয়নি চোখির। তবে সম্প্রতি বিনামূল্যে চিকিৎসার পাওয়ার কথা শুনে ছুটে আসেন হাসপাতালে। ডাক্তারদের সহযোগিতায় সফল অপারেশন হয় তার ছেলের। এখন সে সুস্থ। বাসার ফেরার পালা তার।

শুধু চোখির সন্তানই না, তিব্বত স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের জন্মগত হৃদরোগে আক্রান্ত শিশুরা পাচ্ছে এখন বিনামূল্যে অপারেশন করার সুযোগ। এরইমধ্যে এক বছর বয়সীসহ মোট ১০ জনের অপারেশন সম্পন্ন হয়েছে। সবার এখন বাসায় ফেরায় অপেক্ষা।

এই শিশু হাসপাতালের চিকিতসকদের পাশাপাশি এই চিকিৎসায় নিয়োগ করা হয়েছে সাংহাই চিলড্রেনস মেডিকেল সেন্টারের মেডিকেল টিম।

ফুচিয়ান চিল্ড্রেন হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক সার্জারি বিভাগের পরিচালক চেন ছিয়াং বলেন,  "একটি হার্ট সার্জারির খরচ প্রায় ৩০ হাজার থেকে ৪০ হাজার ইউয়ান, যা চিকিৎসা বীমা এবং দাতব্য তহবিল থেকে পরিশোধিত হবে। আমরা আমাদের হাস্পাতালে অস্ত্রোপচারের আগে পরীক্ষা এবং অস্ত্রোপচারের পরেও ভালো সেবা দিয়ে যাচ্ছি”।

সাংহাই ও ফুচিয়ানে তিব্বতের শিশুদের স্বাস্থ্যসুরক্ষায় হৃদরোগের চিকিৎসায় সরকারি ভাবে যে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে তা এই  অঞ্চলের শিশুদের আশীর্বাদ বলে মনে করছেন পুরো তিব্বতবাসী।

প্রতিবেদন: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

সংগীত ও ভালোবাসায় ঘরবসতি

সংগীত ও ভালোবাসায় নিজেদের সংসার গড়ে নিয়েছেন শিল্পী দম্পতি ছাং ছিয়া হাও এবং লিন ছিয়াছেন। পূর্বচীনের ফুচিয়ান প্রদেশে নিজেদের নীড় বেঁধেছেন তারা।  তাদের ভালোবাসার ঘর বসতি নিয়ে রয়েছে একটি বিশেষ প্রতিবেদন।  

চীনের তাইওয়ানের তরুণী লিন ছিয়াছেন। সংগীত শিল্পী তিনি। তার জীবনসঙ্গী ছাং ছিয়া হাও।

এই দুজন তাদের সঙ্গীতময় জীবন গড়ে নিয়েছেন ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচৌ শহরে। তারা থাকেন ফুচৌ শহরের ফুচৌ চিনশান পার্কের একটি অ্যাপার্টমেন্ট ভবনে। তিন বেডরুম ও একটি লিভিং রুম নিয়ে তাদের ভাড়া করা অ্যাপার্টমেন্ট। এই বাসাকে তারা বলেন ভালোবাসার নীড় বা নেস্ট অব রোমান্স। এখানেই তাদের বসবাস পাশাপাশি সংগীত স্টুডিও ।

তাদের জীবনের গল্পটা দারুণ সুন্দর। তাইওয়ানের খাওসিউং এর ভায়োলিনশিল্পী তরুণী লিন। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংগীতে মাস্টার্স করে সংগীত শিক্ষিকার চাকরি করছিলেন। মাঝে মাঝে তিনি বিদেশেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানে অংশ নিতেন। ২০১৯ সালে তিনি কম্বোডিয়ায় একটি অনুষ্ঠানে অংশ নেন। সেখানেই তার পরিচয় ঘটে তরুণ শিল্পী ছাং এর সঙ্গে। তিনিও এসেছেন তাইওয়ান থেকে। বিভিন্ন ব্যান্ডে গিটার বাজান ছাং। পরিচয় জমে ওঠে। ২০২১ সালের এপ্রিলে তারা বিয়ে করেন। কোভিড ১৯ প্যানডেমিকের আগে এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে অনুষ্ঠানে অংশ নেন ছাং। তখন তাইওয়ানে ছাং বেশ নাম করেছেন। বেস গিটারিস্ট হিসেবে পুরস্কারও পেয়েছেন। তিনি ফুচৌতে একটা ভালো সুযোগ পেয়ে চলে আসেন। তিনি এখানে একটা শিক্ষা গ্রুপে সংগীত শিক্ষক হিসেবে কাজ করা শুরু করেন। লিন তার সিদ্ধান্তকে সমর্থন দেন।

ছাং একটু গুছিয়ে বসতেই লিন চলে আসেন তার কাছে ফুচৌতে। তিনি এখানে একটি অর্কেস্ট্রা দলে যোগ দেন। লিন মনে করেন মূল ভূখন্ডে কাজ করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তাইওয়ান প্রণালীর দুই তীরে একই পরিবার রয়েছে বলে তারা মনে করেন। লিন আরও মনে করেন চীনের মূল ভূখন্ড ও তাইওয়ানের তরুণ তরুণীদের মধ্যে যোগাযোগ দিনে দিনে আরও বেশি বাড়ছে। তারা একই চীনদেশের নাগরিক হিসেবে নিজেদের সুন্দর জীবন গড়ে নিচ্ছেন।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল