হিমবাহের গায়ে কাপড় ও কম্বল দেওয়ার দরকার কী? ওয়াং ফেই থেং চীনের বিজ্ঞান-প্রযুক্তি একাডেমির একজন গবেষক। আজকের এ অনুষ্ঠানে আমরা হিমবাহের সঙ্গে তাঁর গল্প শোনাবো।
চীনের ভূখণ্ডে রয়েছে ৪৮ হাজার হিমবাহ, যার মোট আয়তন ৫০ হাজার বর্গকিলোমিটার। হিমবাহে বরফের পরিমাণ ৪৫শ কিউবিক কিলোমিটার। গত ৫০ বছরে বিশ্ব জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ৮ হাজার হিমবাহ বিলুপ্ত হয়েছে। বিশেষ করে অনেক ছোট হিমবাহের বিলুপ্তি অনেককে অবাক করেছে। কৃত্রিমভাবে এ নিয়ে কিছু করা না গেলে সব হিমবাহ বিলুপ্ত হয়ে যাবে।
ওয়াং ফেই থেং ৮০-এর দশকে জন্মগ্রহণ করেন। গত ২০ বছর ধরে তিনি হিমবাহ নিয়ে গবেষণা ও কাজ করছেন। ২০০৪ সালে মাস্টার অধ্যয়নকালে ওয়াং ফেই থেং তার শিক্ষকের সঙ্গে সিনচিয়াংয়ের উরুমুচি শহরের হ্য ইউয়ান নম্বর ওয়ান হিমবাহে উঠেছিলেন। এটি সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৪০০০ মিটার উঁচুতে অবস্থিত। এর মাধ্যমে শুরু হয় তাঁর হিমবাহ নিয়ে গবেষণা।
২০১৯ সালে ওয়াং ফেই থেং দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সি ছুয়ান প্রদেশের তা কু হিমবাহে একটি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন। তা কু হিমবাহ দেখে তিনি বলেন, ‘এ জায়গা হিমবাহ রক্ষা কাজের জন্য উপযোগী। এখানে আসার পরিবহন যোগাযোগ খুব সুবিধাজনক। শহরের কেন্দ্র থেকে অনেক কাছে।’
তা কু হিমবাহ তা কু তুষার পর্বতে অবস্থিত। এর উচ্চতা ৫ হাজার মিটারের বেশি। পর্বতের চূড়ায় সারা বছর তুষার থাকে। এটি বড় শহর থেকে অনেক কাছের একটি আধুনিক পর্বত হিমবাহ। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে জলবায়ু পরিবর্তন, ভূমিকম্প এবং মানুষের প্রভাবে এ হিমবাহটি গলে যাচ্ছে।
ওয়াং ফেই থেং’র মনে পড়ছে, যখন তিনি তা কু হিমবাহে পৌঁছান, তখন তার দর্শনীয় স্থানের এক কর্মী তাঁকে বলেছিলেন, ‘টিচার ওয়াং, আমাদের এ হিমবাহ কয়েক বছর পর বিলুপ্ত হয়ে যাবে। সে সময় এ স্থানের নাম পরিবর্তন হতে বাধ্য হবে।’
২০২০ সালের আগস্ট মাসে ওয়াং ফেই থেং দল নিয়ে তা কু হিমবাহে উঠেন এবং এখানে হিমবাহটির গায়ে কম্বল জড়িয়ে দেওয়ার পরীক্ষা চালান। বিশজন নিয়ে গঠিত এ পরীক্ষা দল ৫০০ বর্গমিটার আয়তনের একটি পরীক্ষা অঞ্চল গঠন করেছে। পরীক্ষা অঞ্চলে ওয়াং ফেই থেং ও গবেষকরা হিমবাহের পৃষ্ঠদেশকে একটি নিরোধক উপাদানে ঢেকে দেন। প্রতি ১৫ দিনে একবার এ স্থানে গিয়ে পরীক্ষা করেন। ২০২০ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত ওয়াং ফেই থেং ও তার দল টানা তিন বছর ধরে তা কু হিমবাহটির গায়ে কম্বল দিতে থাকেন। এক হাজার বর্গমিটার আয়তনের হিমবাহকে কম্বল দেওয়ার পর প্রতি বছর হিমবাহের এক মিটারের বেশি অংশকে গলন থেকে রক্ষা করা যায়। বর্তমানে এ কাজ অব্যাহত রয়েছে।
কাজের ফাঁকে ওয়াং ফেই থেং চীনের সিনচিয়াং ও কান সুসহ নানা স্থানে হিমবাহের জ্ঞান শিক্ষাদান করেন। হিমবাহ রক্ষাকে ওয়াং ফেই থেং ক্যারিয়ার হিসেবে নিয়েছেন। তবে এটি তাঁর একার নয়, বরং গোটা মানব জাতির কর্তব্য।
(রুবি/এনাম)