চীনা-কাজাখ প্রেসিডেন্ট বৈঠক অনুষ্ঠিত
2023-05-18 14:47:15

মে ১৮: ১৭ মে বিকেলে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং কাজাখস্তানের প্রেসিডেন্ট কাসিম জোমার্ট টোকায়েভের সাথে সি’আনে এক বৈঠকে মিলিত হন। প্রেসিডেন্ট টোকায়েভ চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দিতে বর্তমানে চীনে রাষ্ট্রীয় সফর করছেন।

চীন সফরের জন্য সি চিন পিং প্রথমে প্রেসিডেন্ট টোকায়েভকে উষ্ণ অভ্যর্থনা জানান। ১৭ মে প্রেসিডেন্ট টোকায়েভের ৭০তম জন্মদিন ছিল। চীনের প্রেসিডেন্ট জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানিয়ে বলেন, এই বিশেষ দিনে আপনি চীন সফর করছেন, যেটা দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের উচ্চ স্তরের প্রতীক।

সি চিন পিং উল্লেখ করেন যে, চীন ও কাজাখস্তান বিশ্বস্ত ভালো বন্ধু, ভালো ভাই এবং ভালো অংশীদার। চীন নিজস্ব-শৈলীর আধুনিকীকরণের মাধ্যমে সর্বাঙ্গীণভাবে চীনা জাতির মহান পুনর্জাগরণকে এগিয়ে নিচ্ছে এবং কাজাখস্তান একটি দ্রুত বর্ধনশীল এবং সমৃদ্ধ ‘নতুন কাজাখস্তান’ নির্মাণ করছে। চীন ও কাজাখস্তান উভয়ই উন্নয়ন ও পুনর্জীবনের একটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে রয়েছে।

সি চিন পিং জোর দিয়ে বলেন যে, একটি স্বাধীন, নিরাপদ, স্থিতিশীল, উন্নত ও সমৃদ্ধ কাজাখস্তান চীন ও কাজাখস্তানের জনগণের সাধারণ স্বার্থের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। চীন জাতীয় স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও আঞ্চলিক অখণ্ডতা রক্ষায় কাজাখস্তানকে দৃঢ়ভাবে সমর্থন করে। পাশাপাশি জাতীয় অবস্থার সাথে মানানসই উন্নয়নের পথ অনুসরণেও কাজাখস্তানকে সমর্থন করে চীন।

তিনি বলেন, ১০ বছর আগে তিনি কাজাখস্তানে ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’ উদ্যোগের আওতায় যৌথ নির্মাণের প্রস্তাব দিয়েছিলেন এবং চীন ও কাজাখস্তান সফলভাবে কয়েক ডজন গুরুত্বপূর্ণ সহযোগিতা প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে। এতে দুই দেশের জনগণ উপকৃত হয়েছে এবং দু’পক্ষের অভিন্ন উন্নয়ন বাস্তবায়িত হয়েছে। উভয় পক্ষের উচিত অর্থনীতি, বাণিজ্য, বিনিয়োগ, কৃষি ও অটোমোবাইল উত্পাদন ও জ্বালানি-শক্তি ক্ষেত্রে সহযোগিতা সম্প্রসারিত করা, সংযোগ আরও গভীর করা, স্থল-সমুদ্র সম্মিলিত পরিবহনকে আরও উঁচু পর্যায়ে উন্নীত করা, ই-কমার্স, উদ্ভাবন ও বিগ ডেটার মতো নতুন ক্ষেত্রে সহযোগিতা প্রসারিত করা, অবিলম্বে এক দেশে অন্য দেশের সাংস্কৃতিক কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা এবং লুবান ওয়ার্কশপ খোলার উদ্যোগ দ্রুত বাস্তবায়ন করা। এছাড়া পারস্পরিক ভিসা-ছাড় চুক্তি স্বাক্ষরের সুযোগ কাজে লাগিয়ে জনগণের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও সহযোগিতাকে শক্তিশালী করা এবং জনমতের ভিত্তি গভীরতর করা উচিত। ২০২৪ সালে চীনে কাজাখস্তান পর্যটন বর্ষের আয়োজনকে স্বাগত জানায় চীন। সি’আনে কাজাখস্তানের কনস্যুলেট জেনারেলের উদ্বোধন কার্যকরভাবে দুই দেশের মধ্যে স্থানীয় বিনিময়কে বেগবান করবে। দুই পক্ষের উচিত মিডিয়া ক্ষেত্রে বিনিময় ও সহযোগিতা জোরদার করা এবং যৌথভাবে চীন-কাজাখস্তান বন্ধুত্বের গল্প বলা।

সি চিন পিং উল্লেখ করেন যে, চীন-মধ্য এশিয়া ব্যবস্থার লক্ষ্য উভয় পক্ষের চাহিদা এবং ভবিষ্যত উন্নয়নের দিকে মনোনিবেশ করা, পারস্পরিক কল্যাণের সহযোগিতা জোরদার করা এবং অভিন্ন সমৃদ্ধি এগিয়ে নেওয়া। আসন্ন চীন-মধ্য এশিয়া শীর্ষ সম্মেলন একটি মাইলফলক এবং এটি চীন-মধ্য এশিয়া সহযোগিতাকে একটি নতুন যুগে প্রবেশ করাবে। চীন কাজাখস্তান ও মধ্য এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলির সাথে একত্রে কাজ করতে ইচ্ছুক এবং যৌথভাবে চীন-মধ্য এশিয়া ব্যবস্থাকে ছয়টি দেশের মধ্যে গভীর সহযোগিতা সম্প্রসারণের একটি গুরুত্বপূর্ণ প্ল্যাটফর্ম হিসাবে গড়ে তুলতে ইচ্ছুক।

টোকায়েভ বলেন, কাজাখস্তান-চীন সম্পর্কের বিষয়ে প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের মূল্যায়ন এবং দুই দেশের মধ্যে সহযোগিতা আরও জোরদার করার বিষয়ে তার পরামর্শের সাথে তিনি সম্পূর্ণ একমত। কাজাখস্তানের বৈদেশিক নীতিতে চীনের একটি বিশেষ ও গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানে রয়েছে। কাজাখস্তান-চীন সম্পর্ক গভীর বন্ধুত্ব ও দৃঢ় পারস্পরিক বিশ্বাসের ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত এবং এটি অভিন্ন উন্নয়ন লক্ষ্য বহন করে। কাজাখস্তান চীনের সঙ্গে স্থায়ী সার্বিক কৌশলগত অংশীদারিত্বকে আরও জোরদার করতে, বাণিজ্য, পর্যটন, সংস্কৃতি ও স্থানীয় বিভিন্ন ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতা প্রসারিত করতে এবং দু’দেশের মধ্যে পরবর্তী ‘সোনার ৩০ বর্ষ’ সহযোগিতার জন্য শক্ত ভিত্তি স্থাপন করতে ইচ্ছুক। চীন একটি নতুন ‘গোল্ডেন থার্টি ইয়ার’ শুরু করবে।

তিনি বলেন, তিনি অত্যন্ত আনন্দিত যে কাজাখস্তান ও চীন পারস্পরিক ভিসা-ছাড় চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে, যা কার্যকরভাবে দ্বিপাক্ষিক বিনিময়কে উন্নত করবে। ‘বেল্ট অ্যান্ড রোড’-এর যৌথ নির্মাণ একটি মহান উদ্যোগ, এবং কাজাখস্তান এতে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে থাকবে। বর্তমান জটিল আন্তর্জাতিক পরিস্থিতিতে, প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের জন্য বিশ্ব উন্নয়ন উদ্যোগ, বিশ্ব নিরাপত্তা উদ্যোগ এবং বিশ্ব সভ্যতার উদ্যোগ অতন্ত তাত্পর্যপূর্ণ। কাজাখস্তান তাদের সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে এবং এই বিষয়ে চীনের সাথে যোগাযোগ ও সমন্বয় জোরদার করতে ইচ্ছুক। আঞ্চলিক নিরাপত্তা, স্থিতিশীলতা ও উন্নয়নের জন্য কাজাখস্তান যৌথভাবে চীনের সাথে চীন-মধ্য এশিয়া ব্যবস্থার আধীনে কাজ করতে ইচ্ছুক।

আলোচনার পর, দুই রাষ্ট্রপ্রধান ‘চীন ও কাজাখস্তান যৌথ বিবৃতি’তে স্বাক্ষর করেন এবং যৌথভাবে অর্থনীতি, বাণিজ্য, জ্বালানি, পরিবহন, কৃষি, সংযোগ, সংস্কৃতি ও স্থানীয় ক্ষেত্রে দ্বিপাক্ষিক সহযোগিতার বেশ কয়েকটি চুক্তিতে সই করেন।

(ইয়াং/রহমান/হাইমান)