‘ঘুরে বেড়াই’ পর্ব- ১৮
2023-05-16 17:28:41


 

 

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে   

১। কফির রাজধানী শাংহাই

২। ঘুরার সময় চীনারা অনেক সহযোগিতা করেছে : ফখর উদ্দিন  

৩। ওয়াং ফুচিং: বেইজিংয়ে মজার স্থান

 

বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’  

‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।

দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।  

ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ১৮তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।   

১। কফির রাজধানী শাংহাই

পানীয় হিসেবে সারা বিশ্বে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় কফি। দীর্ঘ সময় কাজের পর এক কাপ কফি মুহূর্তেই চাঙ্গা করে দেয় মন। যেকোনো আড্ডাকে জমিয়ে তুলতে এই পানীয়ের যেন জুড়ি নেই।

বিশ্বে এখন কফি নিয়ে কোন আলোচনা হলেই চলে আসে চীনের শাংহাই শহরের নাম। সবশেষ তথ্য বলছে পূর্ব চীনের এই শহরে রয়েছে প্রায় ৮ হাজার কফি শপ।

অবাক করা ব্যাপার হলো কফি শপের এই সংখ্যা নিউইয়র্ক, লন্ডন ও টোকিও শহরের চেয়েও বেশি। এ কারণে কফির রাজধানী হিসেবে পরিচিত শাংহাই।

কফি শিল্পের একজন ব্যবসায়ী ছাং হং বলেন, শাংহাই শহরের কফির স্বাদ একদম অন্যরকম। এ শহরে আসলে কফি না খেয়ে কেউ যান না।

বেইজিং ভিত্তিক অর্থনীতিবিদ তিয়ান ইয়ুন মনে করেন, একটা শহরের অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার বুঝতে হলে এর কফির মার্কেট পর্যবেক্ষণ করা একটা ভালো পদক্ষেপ।

তিনি বলেন, "শাংহাইয়ে রয়েছে কফির আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক হাব, যার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে অসংখ্য তরুণের কর্মসংস্থান। এখানে রয়েছে গতিশীল শ্রম বাজার।

সব মিলিয়ে শহরে জীবনযাত্রার মান আগের চেয়ে অনেক সমৃদ্ধ হয়েছে"। চীনে বেশ কয়েকটি কফির ব্র্যান্ড রয়েছে এর মধ্যে অন্যতম মৌতাই কফি, মিষ্টি স্বাদের ওসমানথাস ল্যাটে এবং ব্ল্যাক সিসেম ল্যাটে।

প্রতিবেদন- হাবিবুর রহমান অভি

সম্পাদনা- আফরিন মিম

২। চীনের খাবার অনেক সুস্বাদু ও স্বাস্থ্যকর : ফখর উদ্দিন

চীনের খাবার অনেক সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর বলে মন্তব্য করেছেন চীনে পড়ুয়া বাংলাদেশি শিক্ষার্থী ফখর উদ্দিন।

বাংলাদেশের ঝিনাইদহ জেলার মহেশপুর উপজেলার খালিশপুর গ্রামে জন্ম ফখর উদ্দিনের। বর্তমানে চীনের চীনের হুবেই ইউনিভার্সিটি অফ টেকনোলজিতে মেকানিক্যাল ডিপার্টমেন্টে অধ্যায়নরত‌।

চীনের অধ্যয়নরত অবস্থার শুরু দিনগুলোতে চিনা খাবার খেতে কিছুটা অসুবিধা হলেও ধীরে খাবারের সাথে অভ্যস্ত হয়ে যায় ফখর উদ্দিন।

 

ফখর উদ্দিন

“ চীনের খাবার প্রথমদিকে খেতে পারতাম না। তবে এখন চীনা খাবার আমার খুব প্রিয়। এখানকার খাবার খুবই মুখরোচক, সুস্বাদু এবং স্বাস্থ্যকর”

 

ফখর উদ্দিন ইতিমধ্যে চীনের বেশ কয়েকটি জায়গায় ঘুরেছেন। তিনি চীনের উচান, ইয়েলো রিভার ইস্ট লেক ,প্রাচীন শহর।

ফখর উদ্দিন

 

এসব জায়গায় ঘুরার অভিজ্ঞতা নিয়ে তিনি জানান, “ চীনের যেখানেই আমি ঘুরতে গিয়েছি। আমি চীনাদের সহযোগিতা পেয়েছি। তারা কিভাবে যাবো ,খরচ কত, কোথায় থাকবো ইত্যাদি বিষয়গুলো সম্পর্কে ধারণা দিতে। আর যখন ঘুরতে গিয়েছি তখন সেখানে গিয়ে চীনাদের ব্যবহারে মুগ্ধ হয়েছি। চীনের প্রতিটি জায়গাই খুব সুন্দর। প্রতিটি শহরেই আছে পর্‍্যটন স্থান। যেকেউ সেখানে গেলে মুগ্ধ হয়ে যাবে”।

ফখর উদ্দিন

 

যারা চীনে ঘুরতে যেতে চায় তাদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “ বাংলাদেশি নাগরিক  চাইলেই চীনের যেকোন জায়গায় ঘুরতে যেতে পারে। চীনের যোগাযোগ ব্যবস্থা অনেক ভালো। চাইলেই খুব সহজে এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় চলে যাওয়া যায়। বাংলাদেশি যারাই আসবে তারাই খুব মুদ্ধ হবে চীনে ঘুরে”।

 

সাক্ষাৎকার গ্রহণ – আফরিন মিম

 

৩। ওয়াং ফুচিং: বেইজিংয়ে মজার স্থান

বেইজিংয়ের একটি বিখ্যাত পর্যটন স্থান হলো ওয়াং ফুচিং। এটি থিয়ান আনমেন স্কোয়্যার এবং ফরবিডেন সিটি থেকে খুব কাছে অবস্থিত এই পর্‍্যটন গন্তব্য।। এখানে রয়েছে চীনের ঐতিহ্যবাহী খাবার এবং সামগ্রীর দোকান।

ওয়াং ফুচিং একটি বিখ্যাত ফুডস্ট্রিট ও শপিং এলাকা। পুরো এলাকাটির নামই ওয়াং ফু চিং। তবে এর মূল আকর্ষণ হলো একটি দীর্ঘ আঁকা বাঁকা গলি। গলিটির প্রবেশ পথেই রয়েছে চীনা রীতির একটি বড় তোরণ। এই গলির দুপাশে রয়েছে রেস্টুরেন্ট এবং খাবারের স্টল। রেস্টুরেন্টের ভিতরেও বসা সম্ভব। আবার কেউ চাইলে ছোট ছোট খাবারের স্টলগুলো থেকে হালকা কিছু খেয়ে নিতে পারেন। এখানে চীনের ঐতিহ্যবাহী খাদ্য সামগ্রী পাওয়া যায়।

এখানে হালাল খাবারও রয়েছে। খাসির মাংসের শিককাবাব বা ইয়াংরো ছুয়ান, হটপট, বেইজিং ডাক ইত্যাদি খাবারও রয়েছে। সেদ্ধ ভুট্টা দানা, সবজির বারবিকিউ, মিষ্টি আলু, তৌফু ভাজা ইত্যাদি খাবার খেতে পারেন ভেজিটেরিয়ানরা।

ওয়াং ফু চিংয়ে রয়েছে প্রায় তিনশ বছরের পুরনো একটি চায়ের দোকান। ঐতিহ্যবাহী এই দোকানটিতে বিভিন্ন ধরনের চা পাতা পাওয়া যায়।  জেসমিন টি, লোংচিং টি এবং আরও অনেক বিখ্যাত চা পাতা মিলবে এখানে। চায়ের বাক্স ও কৌটাগুলোও দেখার মতো। খোলা অবস্থাতেও বিভিন্ন ফুলের ও অন্যান্য ধরনের চা আছে এখানে।

ওয়াং ফুচিংয়ে একটি ঐতিহ্যবাহী টুপির দোকান আছে। এখানে বিভিন্ন রকম হ্যাট, টুপি পাওয়া যায়। চীনের রেশম বা সিল্ক বিখ্যাত। এখানে রয়েছে ঐতিহ্যবাহী চায়না সিল্কের বেশ কয়েকটি দোকান। আরও আছে চীনের ঐতিহ্যবাহী কারুশিল্প সামগ্রীর অনেক বড় বড় দোকান। আবার রাস্তার পাশেও বেশ কিছু স্টল আছে যেখানে ঐতিহ্যবাহী চীনা কারুশিল্প সামগ্রী বিক্রি হয়।

ওয়াং ফু চিংয়ে ব্র্যান্ড শপের কমতি নেই। বিশ্বের বিভিন্ন দেশের নামিদামি ব্র্যান্ডশপের দেখা মিলবে এখানে। বেইজিংমল, ওরিয়েন্টাল প্লাজাসহ বিশ্বের বিখ্যাত সব শপিং মল রয়েছে এখানে।

ওয়াং ফুচিংয়ের রয়েছে দীর্ঘ ইতিহাস। মিং ও ছিং রাজবংশের সময় থেকেই এখানে বাজার চত্বর গড়ে উঠেছিল। এখানে এখন প্রায় সারা বছরই ছোট বড় বিভিন্ন মেলা বসে।

ওয়াং ফুচিংয়ে পাওয়া যায় হরেক রকম খেলনা। চীনা ঐতিহ্যবাহী খেলনা যেমন কাপড়ের পুতুল, ডোহ পুতুল , সিরামিকের পুতুল, বাঁশি ইত্যাদি যেমন আছে তেমনি আছে আধুনিক ও ইলেকট্রনিক খেলনার বিশাল সব দোকান। ড্রোন এরোপ্লেনসহ হরেক রকম তাকলাগানো খেলনা পাওয়া যায় এখানে।

ওয়াং ফুচিং এলাকাটিকে নব্বই দশক থেকেই হাঁটা পথ করে দেয়া হয়েছে। এর আশপাশে সাবওয়ে স্টেশন ও বাস স্টেশন আছে। কিন্তু মূল এলাকাটিতে পায়ে হেঁটে ঘুরে বেড়ান পর্যটক ও ক্রেতারা।

পথের ধারে বসার ব্যবস্থা আচে। আছে বেশ কিছু দৃষ্টি নন্দন ভাস্কর্য। ওয়াং ফুচিং পর্যটন এলাকা হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়। যারা স্বল্প সময়ের জন্যও বেইজিং যান তারাও একবারের জন্য হলেও ঢুঁ মারেন এখানে।

প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা- আফরিন মিম

 

 

ঘুরে বেড়াই অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী