ছোটবেলায় থাই মেয়ে পান্নালো দেখেছেন রেলপথ তার নিজের ও নানীর বাড়িকে সংযুক্ত করেছে। ওই পথে ট্রেন যখন ধীরে ধীরে চলতে থাকতো, তখন তিনি আরও দ্রুত পৌঁছানোর প্রত্যাশা করতেন। চীন-থাই রেলপথ নির্মাণের অগ্রগতি তাঁর সেই আশা বাস্তবতায় পরিণত হচ্ছে।
উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডের নাখোন রাতচাসিমা প্রদেশের পাক চোং জেলায় চীন-থাই রেলপথ নির্মাণসাইটে যন্ত্রপাতিগুলো খুবই ব্যস্ত রয়েছে। ভারী ট্রাক যাতায়াত করছে। পান্নালো চীনা ও থাই প্রকৌশলীদের সাথে ব্যস্ত আছেন। তিনি চীনা সংস্কৃতি পছন্দ করেন এবং চীন-থাই আর্থ-বাণিজ্যিক সহযোগিতার ভবিষ্যৎ খতিয়ে দেখার কারণে পান্নালো বহু বছর ধরে চীনে লেখাপড়া করেছেন। তিনি চীনের অনেক জায়গায় গিয়েছেন এবং দ্রুতগতির ট্রেন বরাবর জনগণের জীবন ও অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য ডেকে আনা লভ্যাংশ স্বচক্ষে দেখেছেন। চীনের নানখাই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ভাষাবিজ্ঞানে ডক্টরেট অর্জন করার পর তিনি স্বদেশে গিয়ে চীন-থাই রেলপথে ফেজ-১ প্রকল্প বিভাগের পূর্ণকালীন অনুবাদক হন। তিনি তাঁর কাজে ধৈর্যশীল ও যত্নশীল এবং সহকর্মীদের কাছ থেকে ভাল পর্যালোচনা পান।
তিনি বলেন, চীন-থাই রেলপথ থাইল্যান্ডের গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প। চীনা সহকর্মীদের উষ্ণ সাহায্য পেয়ে তিনি আরও বেশি ভূমিকা পালন করার প্রত্যাশা করেন।
কাজের সুবিধার জন্য বর্তমানে তিনি নাখোন রাতচাসিমা প্রদেশে তাঁর নানা-নানীর বাসায় থাকেন। প্রদেশটি চীন-থাই রেলপথ ফেজ-১-এর গন্তব্যস্থল এবং রাজধানী ব্যাংকক থেকে প্রায় ২শ’ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শত বছর আগে নির্মিত পুরনো রেলপথ ব্যবস্থার কারণে বর্তমানে দু’টো জায়গার মধ্যে একমুখী যাতায়াত করতে চার ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। ফেজ-১-এর প্রকল্প চালু হবার পর তা এক ঘণ্টার কিছু বেশি হয়ে দেশটির রেলপথের জন্য মহান অগ্রগতি ডেকে আনবে। পান্নালো ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা চীন-থাই রেলপথের ফেজ-এ প্রকল্প যত তাড়াতাড়ি সম্ভব চালু হবার প্রত্যাশা করেন।
তিনি জানান, ব্যাংকক থেকে নাখোন রাতচাসিমা পর্যন্ত রেলপথটি অনেক ছোট স্টেশনে থামবে। চালু হবার পর এসব জায়গার জন্য বিরাট সুবিধা ডেকে এনে পর্যটকদের আকর্ষণ করে স্থানীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।
থাইল্যান্ডের পরিবহন মন্ত্রণালয়ের মূল্যায়ন অনুযায়ী, ফেজ-১ প্রকল্প ২০২৬ সালে সম্পন্ন হয়ে চালু হবে বলে অনুমান করা হচ্ছে। ফেজ-২ প্রকল্প ২০২৯ সালে সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। চীন ও থাইল্যান্ড যৌথভাবে “এক অঞ্চল এক পথ” নির্মাণে ফ্ল্যাগশিপ প্রকল্প এবং দেশটির প্রথম স্ট্যান্ডার্ড গেজ দ্রুতগতি রেলপথ হিসেবে চীন-থাই রেলপথে চীনা স্ট্যান্ডার্ড ডিজাইন ও নির্মাণ ব্যবহার করা হয়। ফেজ-১ প্রকল্প ব্যাংকক ও নাখোন রাতচাসিমাকে সংযুক্ত করেছে। ফেজ-২ প্রকল্প চীন-লাওস রেলপথের সঙ্গে সংযুক্ত হবে। লাওসের বোটেন এবং চীনের মহানের মধ্য দিয়ে খুনমিংয়ে পৌঁছানো যাবে।
পান্নালো জানান, ২০১২ সালে কোচে করে খুনমিং থেকে ছিয়াংমাই যেতে তার ২০ ঘণ্টার বেশি লেগেছে। যাত্রাটি খুবই কষ্টকর ছিল। কিন্তু ভবিষ্যতে চীন-থাই রেলপথ চালুর পর তিনি দ্রুতগতির ট্রেনে করে আরামে খুনমিং যাবেন। তিনি শীঘ্রই নিজের অংশগ্রহণ করা রেলপথটি অনুভব করার প্রত্যাশা করেন।
(প্রেমা/এনাম)