বিজ্ঞানবিশ্ ১৮তম পর্ব
2023-05-15 15:59:40

 

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্

১৮তম পর্বে যা থাকছে:

* চীনে ড্রোনের মাধ্যমে ফুড ডেলিভারি!

* চ্যাটজিপিটিকে টেক্কা দিতে বাজারে এলো আইফ্লাইটেকের ‘স্পার্ক’

* চীনের সাফল্য ফুটে উঠেছে ডিজিটাল চায়না সামিটে

 

চীনে ড্রোনের মাধ্যমে ফুড ডেলিভারি!

 

প্রচণ্ড শীতে অনলাইনে এক কাপ কফি অর্ডার দিয়ে সেই কফি কী গরম গরম পান করা সম্ভব? ভাবছেন ডেলিভারি ম্যানের হাত ঘুরে কফি আপনার দরজায় আসতেই ঠাণ্ডা হয়ে যাবে!!

কিন্তু না, আজ থেকে কয়েকবছর আগেও যা ভাবা যেতো না তা’ই এখন বাস্তব চীনে। ফুড ডেলিভারির কাজে ড্রোনকে কাজে লাগাচ্ছে চীন।

ডেলিভারি ম্যানের আর কোনো প্রয়োজন পড়ছে না। অনলাইনে অর্ডার পেয়ে থারমাল প্যাকেজিং করে খাবারটি বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে ড্রোনে। সেই ড্রোন আকাশে উড়ে খাবার পৌঁছে দিচ্ছে ক্রেতার বাসায়।

শেনচেনে মেইথুয়ান কোম্পানি সর্বপ্রথম ফুড ডেলিভারিতে ড্রোনের পরীক্ষামূলক ব্যবহার চালায়। গত বছরের শেষদিকের তথ্য অনুযায়ী শেনচেনের ১৮টি কমিউনিটিতে প্রায় ১ লাখ ২০ হাজার অর্ডার সম্পন্ন হয় ড্রোনের সাহায্যে।  

মেইথুয়ানের ইউএভি ব্যবসার প্রধান মাও ইনিয়ান বলেন ৩ কিলোমিটারের মধ্যে ডেলিভারি সেবা প্রদানে ড্রোন বেশ ভালো কাজে আসছে।

তিনি বলেন, “আগামী ১০ বছরের মধ্যে ড্রোন দিয়ে ডেলিভারির খরচ ও ডেলিভারি ম্যানের সাহায্যে ডেলিভারির খরচের পরিমাণ সমান হয়ে যাবে।” 

মাও আরও বলেন তাদের ড্রোন সর্বোচ্চ ১২০ মিটার উচুঁতে উঠতে পারে এবং প্রতি সেকেন্ডে ১০ মিটার গতিতে উড়তে সক্ষম। পাশাপাশি তিনি এও জানান ড্রোনটি সর্বোচ্চ ৩কেজি ওজনের প্যাকেজ বহন করতে পারে এবং বাতাসে টানা ২০ মিনিট ভেসে থাকতে পারে।

এদিকে চেচিয়াং প্রদেশের ওয়েনচৌতে এসএফ এক্সপ্রেসের ড্রোন এখন বেবেরিস ফল ডেলিভারিতে যোগ করেছে নতুন মাত্রা। পাহাড়ের ওপর থেকে বেবেরিস ফলের প্যাকেজ নিয়ে ড্রোন উড়ে যাচ্ছে অনেক নীচে অবস্থিত ডেলিভারি পয়েন্টে।

পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে স্থানীয় কৃষকদের জন্য বেবেরিস ডেলিভারি করা খুবই কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার ছিলো কেননা এতে প্রচুর ফল ক্ষতিগ্রস্থ হতো। এসএফ এক্সপ্রেসের তথ্য অনুযায়ী আগে যেখানে ডেলিভারিতে সময় লাগতো ২ ঘন্টারও বেশি সেখানে ড্রোনের সাহায্যে এখন মাত্র আট মিনিটেই ডেলিভারি শেষ হয়ে যাচ্ছে। 

তবে এস্থার ক্যাপিটালের এক্সেকিউটিভ প্রেসিডেন্ট হে সিয়োংসং মনে করেন চালকহীন ডেলিভারি শিল্পের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এর খরচ। খরচ কমিয়ে এই শিল্পকে কীভাবে আরো সমৃদ্ধ করা যায় তা নিয়ে ভাববার পরামর্শ হে সিয়োংসংয়ের।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

চ্যাটজিপিটিকে টেক্কা দিতে বাজারে এলো আইফ্লাইটেকের ‘স্পার্ক’

 

চ্যাটজিপিটিকে টেক্কা দিতে সম্প্রতি নতুন একটি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট ‘স্পার্ক’ চালু করে চীনের টেক জায়ান্ট আইফ্লাইটেক। চীনের আনহুই প্রদেশের হেফেইতে আইফ্লাইটেকের চেয়ারম্যান লিউ ছিংফেং এক উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আনুষ্ঠানিকভাবে স্পার্ক’কে পরিচয় করিয়ে দেন বিশ্ববাসীর সঙ্গে। সেখানে সরাসরি প্রদর্শনীর মাধ্যমে নতুন চ্যাটবটের সক্ষমতা দেখান তিনি।

গেল বছরের নভেম্বরে আমেরিকাভিত্তিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা গবেষণা কোম্পানি ওপেনএআইয়ের তৈরি চ্যাটজিপিটি আত্মপ্রকাশ করে। এরপর থেকেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবটের প্রতি আগ্রহ বাড়ছে বিশ্ববাসীর। চ্যাটজিপিটি হলো একটি বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট যার মানুষের মতো করে গল্প, কবিতা, উপন্যাস লেখা থেকে শুরু করে ব্যবসার পরিকল্পনা বলে দেবার সক্ষমতা আছে। এর আত্মপ্রকাশের মধ্য দিয়ে পৃথিবী প্রবেশ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এক নতুন যুগে।

বিগত কয়েক মাসে চীনা টেক কোম্পানি পাইতু, আলীবাবা ও হুয়েই কাছাকাছি মডেলের নিজস্ব কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট আনার ঘোষণা করেছে।

এবার আরেকটি নতুন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট নিয়ে এলো চীন। চীনের টেক জায়ান্ট আইফ্লাইটেক প্রকাশ্যে আনলো তাদের তৈরি করা চ্যাটবট স্পার্ক। আইফ্লাইটেকের দাবি, চীনা ভাষায় চ্যাটজিপিটি থেকে অধিক পারদর্শী তাদের নতুন এই চ্যাটবট। পাশপাশি ইংরেজি ভাষাতেও এর ভালো দক্ষতা রয়েছে।

আইফ্লাইটেকের তৈরি আগের একটি পণ্য হলো আইফ্লাইরেক, যেটি মৌখিক বক্তব্য থেকে টেক্সট লিখতে পারতো। আইফ্লাইরেকের প্রোডাক্ট ম্যানেজার সু তিতি বলেন, নতুন মডেলে শুধু একটি ক্লিকের মাধ্যমেই পুরো প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা যাবে।

তিনি বলেন, “আইফ্লাইরেক ছিলো শুধু মৌখিক বক্তব্যকে লিখায় রূপান্তর করার একটি টুল। আগে এটি দিয়ে কাজ করতে কর্ম পরিকল্পনার সারমর্ম মুখে বলতে হতো বা লিখে দিতে হতো। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার নতুন মডেলে শুধু একটি ক্লিকের মাধ্যমেই প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা যাবে। এতে কাজের মান আরও বৃদ্ধি পাবে।”

আইফ্লাইটেকের চেয়ারম্যান লিউ ছিংফেং বলেন প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোর উচিৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার এই ট্রেন্ডকে সাগ্রহে গ্রহণ করা।

তিনি মনে করেন এটি খুবি ভাল বিষয় যে প্রত্যেকে একে একে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চ্যাটবট চালু করছে।

তিনি আরো বলেন, “নতুন একটি জিনিস বানাতে গিয়ে গবেষণা ও শেখার যে সুযোগটি তৈরি হচ্ছে তাও একটি ভাল ব্যাপার। শুধু মুষ্টিমেয় কয়েকটি সংস্থাই নয়, আমি মনে করি প্রত্যেকটি কোম্পানিরই উচিৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ট্রেন্ডকে সাগ্রহে গ্রহণ করা৷ কিন্তু এই প্রক্রিয়ার ভেতর দিয়ে যেতে বৈজ্ঞানিক চেতনার প্রয়োজন রয়েছে। এটি এমন একটি প্রক্রিয়া যার জন্য কেবল স্বল্পমেয়াদী বৈজ্ঞানিক অগ্রগতিই যথেষ্ট্য নয়। এর জন্য প্রয়োজন ক্রমাগত উদ্ভাবন ও দীর্ঘমেয়াদী স্থিতিস্থাপকতা।“

 

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, স্পার্ক অন্তত তিন দফা উন্নয়ন কার্যক্রমের মধ্য দিয়ে যাবে। বিশ্বে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তায় নিজেদের নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে কাজ করছে আইফ্লাইটেক।

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

চীনের সাফল্য ফুটে উঠেছে ডিজিটাল চায়না সামিটে

 

পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচৌতে সম্প্রতি অনুষ্ঠিত হলো ডিজিটাল চায়না সামিটের ষষ্ঠ আসর। চীনের ডিজিটাল অবকাঠামো, ডিজিটাল অর্থনীতি, ডিজিটাল সমাজ এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির উদ্ভাবন ক্ষেত্রের অগ্রগতি তুলে ধরা হয় এই প্রদর্শনীতে। ২৮টি প্রদেশ ও অঞ্চল থেকে মোট ৩২০টি সরকারি দপ্তর, উদ্যোক্তা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান যোগ দেয় এই প্রদর্শনীতে।

ডিজিটাল চায়না সামিটের ষষ্ঠ আসরের অংশ হিসেবে পূর্ব চীনের ফুচিয়ান প্রদেশের ফুচৌতে আয়োজন করা হয় একটি ডিজিটাল প্রদর্শনীর, যেখানে চীনের ডিজিটালাইজেশনের সর্বশেষ সাফল্যগুলো তুলে ধরা হয়।

পাঁচ দিন ধরে চলা এই প্রদর্শনিতে তুলে ধরা হয় চীনের ডিজিটাল উদ্যোগের সর্বশেষ অর্জনগুলো।  ডিজিটাল অবকাঠামো, ডিজিটাল অর্থনীতি, ডিজিটাল সমাজ এবং ডিজিটাল প্রযুক্তির উদ্ভাবন ক্ষেত্রের অগ্রগতি দর্শনার্থীদের সরাসরি প্রত্যক্ষ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়।

এই প্রদর্শনীতে মোট ১৬৮টি বুথ স্থাপন করা হয়, যেখানে অংশ নেয় ২৮টি প্রদেশ ও অঞ্চল থেকে মোট ৩২০টি সরকারি দপ্তর, উদ্যোক্তা এবং পাবলিক প্রতিষ্ঠান। প্রদর্শনীতে ডিজিটাল অবকাঠামো, তথ্য–প্রযুক্তি এবং ডিজিটাল অর্থনীতিসহ মোট ১১টি বিভাগ ছিল।

প্রদর্শনীর তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি কর্নারে তুলে ধরা হয় কমিউনিকেশন সেক্টরের সাফল্য। নিরাপদ, স্থিতিশীল ও রিয়েল-টাইম যোগাযোগের পাশাপাশি এই সেক্টরে বুদ্ধিমান ড্রাইভিং সিস্টেম ও বুদ্ধিমান কৃষি এবং টেলিমেডিসিনের বিকাশের নতুন সম্ভাবনাও তুলে ধরা হয়।

ডিজিটাল সামিটে এক প্রদর্শক হু লেই বলেন, “কমিউনিকেশন টেস্ট বেইজিং থেকে ফুচৌ পর্যন্ত হাজার হাজার কিলোমিটারে বিস্তৃত। এই দ্বিমুখী যোগাযোগ ব্যাবস্থার ট্রান্সমিশন বিলম্ব এখন মাত্র ৩৮ মিলি সেকেন্ড এবং নেটওয়ার্ক জিটারের সঠিকতা ১ মিলি সেকেন্ডেরও কম। এই দুটি জিনিস সব শিল্পের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

আমাদের এই আলট্রা লো ট্রান্সমিশন বিলম্ব নিশ্চিত করতে হবে এবং এই আলট্রা-লো জিটার নেটওয়ার্কের ও অপারেশনের নির্ভুলতা নিশ্চিত করে”।

ডিজিটাল গ্রামীণ এলাকায় মানুষের কায়িক শ্রমের ব্যবহার কমাতে এবং গ্রামীণ জনপদে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের দক্ষতা বাড়াতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার দেখানো হয়।

সাংস্কৃতিক বিভাগে তুলে ধরা হয় চিয়ান মিউজিয়ামের ধ্রুপদি সাংস্কৃতিক পরিবেশনাগুলো, যেখানে দর্শনার্থীরা ডাইনামিক মেটাভার্সের ভার্চুয়াল প্রদর্শনীর মাধ্যমে উপভোগ করেন পরিবেশনাগুলো। 

এই মেলায় দর্শক আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল চায়না জেনারেল টেকনোলজি গ্রুপ-নির্মিত একটি রেটিনাল স্ক্রীনিং সিস্টেম।

চীনের রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন এই সংস্থা-নির্মিত এই প্রযুক্তিটি মানুষের রেটিনার ছবি তোলার মাধ্যমে স্বয়ংক্রিয়ভাবে রেটিনাল রক্তনালী ও স্নায়ু বিশ্লেষণ করতে পারে। এছাড়াও এটি পুরো শরীরের রক্তনালীগুলোর অবস্থা মূল্যায়ন করে মাত্র এক মিনিটেই দিতে পারে ডায়াগনস্টিক রিপোর্ট।

চায়না জেনারেল টেকনোলজি গ্রুপের ডিজিটাল বিভাগের মহাব্যবস্থাপক লিউ হাইচৌ বলেন, "ডাটা শেয়ারিং এবং এআই অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে মানুষের চিকিৎসা খরচ কমিয়ে নিয়ে আসবে আমাদের এই প্রযুক্তি। তাছাড়া সহজে রোগ নির্ণয় ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনেও অবদান রাখবে।"

এছাড়াও দর্শনার্থীদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এক মিটার উচ্চতাবিশিষ্ট বুদ্ধিমান রোবট। মানুষের সাথে যোগাযোগের পাশাপাশি এই রোবটটি হাসপাতালের চিকিৎসা নির্দেশিকা ও অন্যান্য পরিষেবা প্রদান করতে পারে।

ইনস্পার গ্রুপের ভাইস প্রেসিডেন্ট সান ইয়েচি বলেন, "এই পণ্যগুলো তৈরি করার মূল উদ্দেশ্য হলো মানুষের দৈনন্দিন কাজগুলোকে আরও সহজ করা।"

অনলাইন বা অফলাইনে অংশগ্রহণ করে এই প্রদর্শনী উপভোগ করেন এক কোটিরও বেশি দর্শক। মেলায় ৬০০টিরও বেশি ডিজিটাল অর্থনীতি প্রকল্প স্বাক্ষরিত হয়, যাতে সংশ্লিষ্ট ৪ হাজার ৮শ কোটি ডলারেরও বেশি বিনিয়োগ।

 

|| প্রতিবেদন: হোসনে মোবারক সৌরভ

|| সম্পাদনা: শিহাবুর রহমান

 

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা: সাজিদ রাজু, শিহাবুর রহমান

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী