রোমানিয়ান মুভি ‘ম্যান অব নিডস’
2023-05-13 14:22:35

রোমানিয়ান মুভি ‘ম্যান অব নিডস’ ১৩তম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ইউনিটে অন্তর্ভুক্ত হয় এবং গত ২৩ এপ্রিল থেকে এ মুভিটি বেইজিংয়ের বেশ কয়েকটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে।

 

এতে জেলার একজন পুলিশের গল্প বলা হয়। ইলাই নামের একজন পুলিশ শহরে সুষ্ঠুভাবে চাকরি করতে না পারায় রোমানিয়ার উত্তর পূর্বাঞ্চলের একটি গ্রামে শেরিফের দায়িত্ব পালন করেন। সেখানে দুর্নীতি এক ধরণের জীবন পদ্ধতি।

 

তিনি একটি শান্তিপূর্ণ এবং একঘেয়ে জীবনযাপন করতে থাকেন। মধ্য বয়সে তিনি বিবাহবিচ্ছেদ করেন এবং একক জীবনযাপন করেন। তার চরিত্রের সঙ্গে আশেপাশের মানুষদের চরিত্রের সঙ্গে বড় পার্থক্য আছে। নিজেকে দিন দিন বড় হতে দেখে ইলাই একটি আরামদায়ক জীবনযাপন করার চেষ্টা করেন। তিনি একটি বাগান এবং একটি বাড়ি কিনতে চান।

 

সপ্তাহের দিনগুলোতে তিনি বারে ছোটখাটো বিবাদ মোকাবিলা করতেন, কিন্তু তিনি গ্রামের প্রধানের সন্দেহজনক আচরণ এবং গ্রামের অন্যান্য অন্ধকার ঘটনাগুলোকে অবজ্ঞা করেন। তবে যখন একটি হত্যাকাণ্ড ঘটে, তখন বছরের পর বছর ধরে জমে থাকা সমস্যাগুলো তাকে ধীরে ধীরে একটি হতাশাহীন পরিস্থিতিতে নিয়ে যায়। তার জীবন অশান্তিতে নিক্ষিপ্ত হয় যখন তাকে বন্দোবস্তে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করা হয়। উত্তর অনুসন্ধানের প্রক্রিয়ায় তিনি এমন কাজ করার চেষ্টা করছেন, যা তিনি আগে কখনও করেননি। তিনি ন্যায়বিচারের একজন দূত হয়ে উঠেন। একজন অক্লান্ত শেরিফ দোষীদেরকে বিচারের মুখোমুখি করাবেন।

 

এটি রোমানিয়ার দুর্নীতি নিয়ে একটি ফিচার ফিল্ম। চলচ্চিত্রটির চীনা নাম ‘সুও শু চি রেন’, যার ইংরেজি শিরোনাম ‘ম্যান অব নিডস’। চলচ্চিত্রটির রোমানিয়ান শিরোনাম ‘ওমেনি দে ট্রেবা’।  আক্ষরিক অর্থে অনুবাদ করা হয়েছে ‘সক্ষম মানুষ, চমৎকার মানুষ’। তার মানে সৎ লোক, পরিশ্রমী এবং নৈতিক ব্যক্তি। ফিল্মটির শিরোনাম বিদ্রুপাত্মকভাবে ব্যাখ্যা করে যে রোমানিয়ার সর্বস্তরের তথাকথিত সক্ষম ব্যক্তিরা ক্ষমতা ধরে রাখে, কিন্তু তারা ক্ষমতার অপব্যবহার করে, যাতে দুর্নীতি সৃষ্টি হয়।

 

মুভিটির পরিচালক পাউল নেগোএস্কু রোমানিয়ার গণমাধ্যমের কাছে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমাদের দেশে সক্ষম লোক অনেক; তবে যারা সত্যিকার অর্থে কাজ করতে সক্ষম, তাদের সংখ্যা অনেক কম।’

 

যদিও মুভি’র গল্পটি দুঃখজনক, তবে একটি হাস্যকর উপায়ে তা বর্ণনা করা হয়েছে। এটি রোমানিয়ার কিছু অংশকে প্রতিফলিত করে। শুধু গ্রামাঞ্চলই নয়, শহরগুলোতেও ছবিতে দেখানো দৃশ্যের মিল পাওয়া যায়। এটি রোমানিয়ার কিছু লোকের মানসিকতাকেও প্রতিফলিত করে। রোমানিয়ানরা বহু শতাব্দী ধরে এই মানসিকতা লালন করছেন। মুভি’র নায়ক ইলাইয়ের একটি নীতিবাক্য আছে: ‘যখন আপনি এমন কিছু দেখেন, যা আপনি দেখতে চান না, তখন আপনার চারপাশের বড় গাছগুলোর দিকে তাকাবেন।’ এটি সাসপেন্সে পূর্ণ একটি ডার্ক কমেডি, তবে এটিতে থ্রিলারের ছায়াও রয়েছে। পরিচালক পাউল নেগোএস্কু  আরও বলেন, ‘এমন একটি গুরুতর বিষয় অনেকের কাছে যথেষ্ট মজার নাও হতে পারে। আমি মনে করি, আপনি যদি শিথিল অনুভূতি নিয়ে গল্পটি দেখেন, তাহলে এটি আকর্ষণীয় হয়ে ওঠবে এবং আমাদের কষ্ট গ্রাস করার জন্য তাতে কিছু হাস্যরসেরও সন্ধান পাবেন।’

 

পরিচালক পাউল নেগোএস্কু ১৯৮৪ সালে জন্মগ্রহণ করেন এবং বুখারেস্টের ন্যাশনাল একাডেমি অব থিয়েটার অ্যান্ড ফিল্ম এর পরিচালনা বিভাগ থেকে স্নাতক হন। তার পরিচালিত স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে প্রদর্শিত হয়েছে। তার প্রথম ফিচার ফিল্ম ২০১২ সালে ভেনিস ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে প্রিমিয়ার হয়। তার পরিচালিত দ্বিতীয় ছবি রোমানিয়ার সর্বোচ্চ আয়কারী চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি। মুভিটি সপ্তম বেইজিং আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবের থিয়েনথান পুরস্কারের নির্বাচনে অন্তর্ভুক্ত হয়। তার তৃতীয় চলচ্চিত্র নেটফ্লিক্সের মাধ্যমে ৩০টিরও বেশি অঞ্চলে মুক্তি পেয়েছে।

 

‘ম্যান অব নিডস’ গত বছর মুক্তি পাওয়ার পর থেকেই দেশ-বিদেশের মিডিয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করছে। রোমানিয়ার দেশীয় চলচ্চিত্র সমালোচকেরা বলেছিলেন যে এটি একটি বিরক্তিকর চলচ্চিত্র যা একটি ছিদ্রপূর্ণ পরিবেশে নিজের ন্যায়বিচার ধরে রাখা কতটা কঠিন। ব্রিটিশ ফিল্ম ম্যাগাজিন ‘ইন্টারন্যাশনাল স্ক্রিন’ একে কোয়েন ব্রাদার্স বা কুয়েন্টিন ট্যারান্টিনোর শিল্পকর্মের সাথে তুলনা করেছে। প্রধান চরিত্রে অভিনয় করা অভিনেতা লুলিয়ান পোস্তেলনিকু’র অভিনয়ও খুব উল্লেখযোগ্য ও আকর্ষণীয়। ইউরোপের বিখ্যাত মুভি ওয়েবসাইট সিনেউরোপা বলেছে, তিনি খুব উজ্জ্বল, শুরু থেকে নতুন উচ্চারণ ও ভঙ্গিসহ ধারাবাহিক চিত্তাকর্ষক অভিব্যক্তির মাধ্যমে এমন একটি চরিত্র তৈরি করেছেন তিনি, যা দর্শকরা কখনই জানেন না যে সহানুভূতি বা ঘৃণা দেখাবেন।

 

লিলি/এনাম/রুবি