আকাশ ছুঁতে চাই ১৭
2023-05-11 18:13:55

১. শহর থেকে গ্রামে

২. সাইকেলে ঘোরেন লি তংচু

৩. শিশু নাট্যদলে নারীর নেতৃত্ব

 

নারী ও শিশু বিষয়ক অনুষ্ঠান আকাশ ছুঁতে চাই থেকে সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আমাদের অনুষ্ঠানে আমরা কথা বলি নারী ও শিশুর অগ্রযাত্রা, বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ, সাফল্য, সংকট সম্ভাবনা নিয়ে। আমরা কথা বলি সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে মানুষের অধিকার নিয়ে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই শুনবো এমন একজনের কথা যিনি গ্রাম উন্নয়নের জন্য শহরের ক্যারিয়ার ত্যাগ করেছেন।

 

শহর থেকে গ্রামে

শহর থেকে গ্রামে ফিরে নিজের ও পরিবারের জীবন গড়ে নিয়েছেন সাহসী নারী লি সিউশুয়াং। তিনি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিবিজ্ঞান বিষয়ক ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর অন্য দশজনের মতো শহরে ক্যারিয়ার না গড়ে ফিরে আসেন গ্রামে। গড়ে নেন নিজের ভবিষ্যত। চলুন শোনা যাক এই নারীর গল্প।

বড় শহরের চাকচিক্যময় জীবণের আকর্ষণ ত্যাগ করে গ্রামে ফিরে নিজের ভবিষ্যত গড়ে নিয়েছেন সাহসী নারী লি সিউশুয়াং। লি সিউশুয়াংয়ের বয়স ৩৯ বছর। শানতং প্রদেশে তার জন্ম। ২০০৫ সালে ত্যচৌ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অ্যাগ্রোনমি বিষয়ে গ্র্যাজুয়েশন করেন। তার পাঠ্য বিষয় ছিল মাটি ব্যবস্থাপনা ও বিজ্ঞান এবং শস্য উৎপাদন।

২০১০ সালে তিনি চিন্তা করেন গ্রামের বাড়িতে ফিরে গিয়ে খামার গড়ে তুলবেন। স্বামীকে সঙ্গে নিয়ে তিনি ফিরে আসেন ত্যচৌ সিটির উছাং কাউন্টির লাওছাং গ্রামে।

এখানে প্রথমে গ্রিন হাউজভিত্তিক কৃষিকাজ শুরু করেন । লেটুসসহ বিভিন্ন সবজি উৎপাদন করতে থাকেন লি সিউশুয়াং।

সবজির পুষ্টিমান উন্নত করার জন্য তারা বিশেষ কিছু পদক্ষেপ নেন। এজন্য কুয়াংচৌ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে উদ্ভিদের পুষ্টি বিষয়ে পড়াশোনাও করেন এই দম্পতি। 

২০১৯ সালে হাইড্রোপনিক প্রযুক্তিতে সজ্জিত গ্রিন হাউজে তারা বাঁধাকপি উৎপাদন শুরু করেন।

পুষ্টিসমৃদ্ধ বাঁধাকপি জন্মাতে ২০ দিন লাগে। লি জানান, জলজ প্রক্রিয়ায় সবজি ও মাছ চাষ একই সঙ্গে  চাষ করা যায়। পানিটিও রিসাইকেল করে ব্যবহার করা যায়।

লি এবং তার স্বামী এখন পরিকল্পনা করছেন আরও ১০টি গ্রিনহাউজ ও ২ টি পুকুরে তাদের চাষাবাদ সম্প্রসারণ করবেন।

লি জানান তিনি তার সন্তানদের জন্যও দুটি গ্রিন হাউজ নিচ্ছেন যেখোনে তারা এবং অন্য শিশুরাও হাতে কলমে কাজ শিখতে পারবে।

এভাবেই শহর থেকে গ্রামে ফিরে এসে নিজের গ্রামকে গড়ে নিচ্ছেন লি। তিনি হলেন চীনের নতুন প্রজন্মের নারীর প্রতীক যারা গ্রামকে জাগিয়ে তুলছেন নতুনভাবে।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

 

সাইকেলে ঘোরেন লি তংচু  

 

মানসিক অবস্থার উন্নতির জন্য সাইকেল চালানো শুরু করেন চীনের বাসিন্দা লি তংচু। দীর্ঘ কয়েক বছর  সাইকেল চালিয়ে মানসিক অবস্থারও উন্নতিও করেছেন এই নারী। লি সাইকেল নিয়ে ঘুরেছেন দেশের বিভিন্ন প্রদেশ। শুধু দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি তার ঘুরে বেড়ানো। দেশ ছাড়িয়ে বিশ্বের ১২ টি দেশেও ঘুরেছেন এই নারী। কেন তার এই সাইকেল নিয়ে পথচলা, বিস্তারিত শুনবো প্রতিবেদনে।

হেনান প্রদেশের চেংচুর বাসিন্দা ৬৫ বছর বয়সী লি তংচু। প্রবীন এই নারী একজন ভালো সাইকেল চালক।

২০০৫ সালে বিবাহ বিচ্ছেদের পর মানসিকভাবে দূর্বল হয়ে পড়েন লি। তখন থেকেই সাইকেল চালানোর আগ্রহ জন্মে তার। তিনি মনে করতেন সাইকেল চালালে শুধু শারীরিক ভাবেই সুস্থ থাকা যায় এমন নয়, এটা মানসিকভাবে সুস্থ থাকার ভালো উপায়।

মানসিক বিষণ্ণতা কাটাতে সাইকেল চালানো শুরু করার আগেই লি শুরু করেন কম্পিউটার গেম খেলা। পাশাপাশি চালিয়ে যেতে থাকেন স্বেচ্ছাসেবামূলক নানা কাজ।

এভাবেই কেটে যায় বেশ কয়েক বছর। তবে মানসিক ভাবে সুস্থতা অনুভব করেননি তিনি।

লি তংচু বলেন,  " কখনও কখনও, আমি দিনে ২০ ঘন্টারও বেশি সময় গেম খেলতাম, যা আমার মানসিক অবস্থাকে আরও খারাপ করে তোলে কারণ আমি পর্যাপ্ত ঘুমাচ্ছিলাম না। আমি আমার নাতির যত্ন নেওয়ার চেষ্টাও করেছি কিন্তু পারিনি, যা আমাকে দুঃখিত এবং অসহায় করে তোলে। "

এরপর ২০১৩ সালের শেষের দিকে মায়ের মানসিক অবসাদ কাটাতে লির ছেলে কিনে দেন একটি সাইকেল।  ছেলের উপহার পেয়ে লি চালিয়ে যান চেষ্টা। 

এরপর থেকেই প্রতিদিন সাইকেল চালাতে শুরু করেন এই নারী। প্রথমদিকে বাড়ির চারপাশে সাইকেল চালাতেন । কিন্তু কয়েক দিনের অনুশীলনের পরে, তিনি শহরতলীর বিভিন্ন জায়গায় ঘোরেন।

লি তংচু বলেন,   "ধীরে ধীরে, সাইকেল চালানোর আনন্দ আমাকে শারীরিক এবং মানসিকভাবে স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করেছে," এর ফলে আমি অন্যান্য সাইক্লিং উত্সাহীদের সাথেও বন্ধুত্ব করেছি।"  

এরপর লি দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়ার জন্য পেশাদার গিয়ার কিনলেন ।  শুরু করলেন ভ্রমণ। দেশের ভেতরের বিভিন্ন প্রদেশ, শহর যেমন উইগুর স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল সিনচিয়াং , তিব্বত, কুয়াংসি চুয়াং , ছিংহাই, হাইনান, কুয়াংতং , হুবেই এবং চিয়াংসু প্রদেশ  , সেইসাথে দেশের বাইরে যেমন ফ্রান্স, থাইল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডসহ বিশ্বের ১২টি দেশ ঘুরেছেন তিনি।

লি বলেন, "প্রথমে, আমার ছেলে এবং পুত্রবধূ আমার বয়স এবং নিরাপত্তার জন্য আমাকে এভাবে ঘুরতে দিতে রাজি হন নি। কিন্তু তারা খুব তাড়াতাড়ি বুঝতে পেরেছিলো যে আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল। তাই তারা আমাকে পরবর্তীতে সমর্থন দিয়েছে’।

ইচ্ছা আর আত্মবিশ্বাস অনেকদূর নিয়ে এসেছে লি তংচুকে। নিজের মানসিক স্বাস্থের উন্নতির জন্য তার এই চেষ্টা অনুপ্রেরণা দিয়েছে অনেকে নারী ও পুরুষকে।

প্রতিবেদন ও কণ্ঠ: আফরিন মিম

সম্পাদনা: শান্তা মারিয়া

 

শিশু নাট্যদলে নারীর নেতৃত্ব

শিশুদের প্রতিভা ও সৃজনশীলতা বিকাশে গড়ে তোলা হয়েছে একটি নাট্যদল। এই নাট্যদলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন একজন নারী। তার নাম চাও সং। কেন গড়ে তোলা হয়েছে শিশু নাট্যদল এবং কিভাবে তা শিশুদের প্রতিভার বিকাশ ঘটাচ্ছে চলুন শোনা যাক একটি প্রতিবেদনে।

মঞ্চে অভিনয় করছে একদল শিশু কিশোর। তারা একটি সায়েন্স ফিকশন ধাঁচের কাহিনীর প্রেক্ষাপটে চীনের ঐতিহ্য তুলে ধরছে। সময় পরিভ্রমণ করে তারা পৌছে যায় মিং রাজবংশের আমলে। সেখানে চীনা চিকিৎসা বিজ্ঞানের সূত্রগুলো লিপিবদ্ধ হচ্ছে এমন একটা সময়কে তুলে ধরা হয়।

শিশুদের নাট্যদল এবং চায়না ন্যাশনাল ট্র্যাডিশনাল অর্কেস্ট্রা য়ৌথভাবে এই আয়োজন করেছে। যৌথভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ইয়থ থিয়েটার দল। এই অর্কেস্ট্রাদলের প্রধান একজন নারী। তার নাম চাও সং।

চাও সং বলেন, এটা খুব অনন্যসাধারণ বিষয় যে  শিশুরা প্রাচীন ক্ল্যাসিকগুলোকে সমসাময়িক প্রেক্ষাপটে উপস্থাপন করছে।

চাও মনে করেন এতে শিশুদের কল্পনাশক্তি বিকশিত হচ্ছে। যৌথভাবে ইয়থ থিয়েটার ট্রুপ গড়ে তোলার পিছনে এটা একটা বড় কারণ। এরমাধ্যমে সৃজনশীলতাও বৃদ্ধি পাবে।

চীনের বড় বড় শহরে এই নাট্যদল পরিবেশনা করবে। সেইসঙ্গে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের পরিকল্পনাও রয়েছে।

চাও মনে করেন এখন পর্যন্ত চীনের লোকসংগীত, ক্লাসিকাল মিউজিক অর্কেস্ট্রায় পরিবেশন করেছেন তিনি। এখন সময় এসেছে বিশ্বের কাছে চীনের গল্পগুলো তুলে ধরার।

অর্কেস্ট্রাপ্রধান চাও সং ভবিষ্যতে শিশুদের নাট্যদল নিয়ে আরো অনেকদূর এগিয়ে যেতে চান।

প্রতিবেদন: শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা: রহমান

কণ্ঠ: হাবিবুর রহমান অভি

সুপ্রিয় শ্রোতা আকাশ ছুঁতে চাই অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে পৌছে গেছি আমরা।

অনুষ্ঠানটি কেমন লাগছে সে বিষয়ে জানাতে পারেন আমাদের কাছে। আপনাদের যে কোন পরামর্শ, মতামত সাদরে গৃহীত হবে। আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি শান্তা মারিয়া। আবার কথা হবে আগামি সপ্তাহে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। চাই চিয়েন।

সার্বিক সম্পাদনা : ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী

লেখা, গ্রন্থনা ও উপস্থাপনা: শান্তা মারিয়া, 

অডিও এডিটিং: রফিক বিপুল