আসলে কতটা সত্য ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’?
2023-05-10 14:20:15

 

গত ২৭ এপ্রিল বাংলাদেশের ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকায় ‘সব সুতা দৃঢ়ভাবে সংযুক্ত,বাংলাদেশ কি চীনা ঋণের ফাঁদ এড়াতে পারবে?’ শিরোনামে একটি প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে। এতে চীনা ঋণের ফাঁদের কথা উল্লেখ করা হয়। আসলে বাংলাদেশের তথ্যমাধ্যমে আমি প্রথমবারের মতো এমন খবর দেখেছি- তা কিন্তু নয়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে চীন ও বাংলাদেশের সম্পর্ক স্থিতিশীলভাবে এগিয়ে যাচ্ছে এবং দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতা দিন দিন বাড়ছে। এমন সময়ে আমরা কিছু বিতর্কও শুনেছি। তাহলে চীন ও বাংলাদেশ কী কী বিষয়ে সহযোগিতা করে? কীভাবে সহযোগিতা করে? এবং তথাকথিত ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ কি আসলে সত্য? আজকের অনুষ্ঠানে আমরা এসব বিষয়ে আলোচনা করব।

 

প্রথমে আমরা দেখি চীন ও বাংলাদেশ কী কী বিষয়ে সহযোগিতা করে। গত বছরের ২৮ ডিসেম্বর বাংলাদেশে প্রথম মেট্রোরেল তথা ঢাকা মেট্রোরেল (এমআরটি লাইন ৬) চালু হয়েছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একে দেশের উন্নয়নের একটি মাইলফলক হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। চালু হবার পর প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ বাংলাদেশের নানা জায়গা থেকে এ লাইনটি দেখতে আসছেন। এটি একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থানে পরিণত হয়েছে। চীন ও থাইল্যান্ডের দুটি কোম্পানি এ লাইনের নির্মাণ কাজে অংশগ্রহণ করেছে। ঢাকা বিশ্বের সবচেয়ে ঘনবসতিপূর্ণ শহরের অন্যতম। অনেক বাংলাদেশী মনে করেন, মেট্রোরেল একদিকে পরিবহনের চাপ কমিয়েছে,  অন্যদিকে বায়ু দূষণ নিয়ন্ত্রণের জন্যও সহায়ক হবে। সবাই এমন প্রকল্প থেকে উপকৃত হবে।

 

অবকাঠামো ক্ষেত্রে চীন ও বাংলাদেশ নানা সহযোগিতা করে আসছে। যেমন: দশেরগান স্যুয়ারেজ ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, হাতিরঝিল-আমুলিয়া-ডেমরা সড়ক পথ এবং আসন্ন রাজশাহী সারফেস ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট প্রকল্প ইত্যাদি। এসব প্রকল্প সাধারণ মানুষের জীবিকার মান উন্নয়নের সঙ্গে জড়িত আছে। কোটি কোটি মানুষ এসব থেকে উপকৃত হবে। পাশাপাশি, এ প্রকল্পগুলো স্থানীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি করছে। আসলে প্রতিটি উদ্যোগ নানা সুবিধা বয়ে আনে।

 

তারপর দ্বিপক্ষীয় সহযোগিতায় চীনের চরিত্র আমি তুলে ধরছি। অধিকাংশ প্রকল্পে চীনের কোন শেয়ার নেই এবং দ্বিপক্ষীয়  সহযোগিতায় বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বকে সম্মান করে আসছে চীন। ঋণ দেয়ার চুক্তিতে থাকে না কোন রাজনৈতিক শর্ত। ঋণের পরিমাণ ও চুক্তির বিষয়বস্তু দুপক্ষের আলোচনার মাধ্যমে ঠিক করা হয়। অন্যদিকে, বাংলাদেশের অর্থনীতির দ্রুত উন্নয়ন হচ্ছে এবং দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতি উন্নয়নের  সবচেয়ে ভাল প্রবণতা বজায় রাখছে। বাংলাদেশের সব ঋণের মধ্যে মাত্র ৬ শতাংশ চীন থেকে আসে এবং ঋণ পরিশোধের মেয়াদ গড়ে ৩১ বছর। তাই ঋণ পরিশোধ বাংলাদেশকে আর্থিক চাপে ফেলবে না। বাংলাদেশকে মাঝারি আয়ের দেশ হতে চাইলে বিদেশী বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং চীন এমন একটি বিশ্বাসযোগ্য বিনিয়োগকারী ও অংশীদার।

 

গত মার্চ মাসে সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্দুল মোমেনও ‘চীনা ঋণের ফাঁদ’ ধারণাকে খণ্ডন করেছেন। তিনি বলেছেন, চীন একটি বন্ধুপ্রতিম দেশ এবং আমাদের ঘনিষ্ঠ বন্ধু। অনেক মানুষ ভুল একটি ধারণা পোষণ করেন যে বাংলাদেশ চীনা ঋণের ফাঁদে পড়তে পারে, তা ঠিক নয়। বাংলাদেশের ঋণ মূলত আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে আসে। এমনকি সবচেয়ে বড় ঋণদাতা দেশ চীন নয়- জাপান। তাই আমি মনে করি, এ বিষয়ে আর আলোচনার দরকার নেই।

 

সিএনএনের সাংবাদিক কেন এমন প্রশ্ন করেন? তা আমরা সবাই বুঝি। যারা সবচেয়ে বেশি চীনা ঋণের ফাঁদের কথা বলেন - তারা চীনের বিরুদ্ধে সবচেয়ে কুসংস্কার লালন করেন। আর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের কথা আবার প্রমাণ করেছে যে শতবার একটি মিথ্যা বলা হলেও – তা কখনোই সত্য হবে না। চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতার ওপর এটি কোন প্রভাব ফেলতে পারবে না এবং ফেলা উচিতও নয়।

 

অবশেষে আমি বলতে চাই, গত ৫ মে বাংলাদেশে চীনা অর্থনৈতিক ও বাণিজ্য পরামর্শদাতা সং ইয়াংও ঢাকা ট্রিবিউন পত্রিকায় একটি প্রবন্ধ প্রকাশ করেন। তাতে তিনি বলেছেন, চীন ও বাংলাদেশের সহযোগিতা ‘সৌভাগ্য’ বয়ে এনেছে। চীনা ঋণের সহায়তা প্রকল্প বাংলাদেশ সরকার ও মানুষের জন্য কল্যাণ বয়ে এনেছে এবং দু দেশের মৈত্রী এসব প্রকল্পের মাধ্যমে আরও জোরদার হয়েছে।

(শিশির/এনাম)