চীন দেশের কৃষিতে স্যাটেলাইট প্রযুক্তি | শেকড়ের গল্প | পর্ব ১৭
2023-05-10 17:52:39

এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে

১. আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় চলছে কৃষিকাজ

২. চীনের উচ্চ ফলনশীল জাতে লাভবান হচ্ছে অন্য দেশ

৩. সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ধরে রাখতে চীনের উদ্যোগ

 

বিশ্ববাসীকে ক্ষুধামুক্ত রাখতে একটু একটু করে ভূমিকা রাখছে চীনের অত্যাধুনিক কৃষি প্রযুক্তি। পেছনে পড়ে থাকা ছোট ছোট গ্রামগুলো মুক্তি পাচ্ছে দারিদ্রের শেকল থেকে। দিনশেষে স্বল্প পরিসরের উদ্যোগগুলো দেখছে সফলতার মুখ, হয়ে উঠছে সামগ্রিক অর্থনীতির অন্যতম অনুসঙ্গ।

কিন্তু কম সময়ে এত বড় সফলতার গল্প কীভাবে সম্ভব করলো চীন দেশের কৃষকরা? সে গল্পই আপনারা জানতে পারবেন “শেকড়ের গল্প” অনুষ্ঠানে।

 

 

 

 

১.  আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায় চলছে কৃষিকাজ

কৃষিক্ষেত্রকে সমৃদ্ধ রাখতে দারুণ কিছু কার্যক্রম সামনে নিয়ে এসেছে চীন। পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশের সব ধরনের কৃষিকাজ চলছে আধুনিক প্রযুক্তির সহায়তায়। আবহাওয়ার গতিবিধি জেনে আগেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেন কৃষকরা। আর কম্পিউটার মনিটারের সামনে বসেই পর্যবেক্ষণ করতে পারছেন ফসলের বেড়ে ওঠা। সবই সম্ভব হচ্ছে বিগ ডেটা ও স্যাটেলাইট সিস্টেম সমন্বয় করে।

                                               

ফসল যেন ভালোভাবে বেড়ে ওঠে সেজন্য প্রয়োজন হয় সঠিক তথ্য। পূর্ব চীনের চিয়াংসু প্রদেশে গড়ে তোলা হয়েছে বিগ ডেটা প্রযুক্তি। বহুমুখী আবহাওয়া স্টেশনের সঙ্গে সমন্বয় করে কৃষকরা যেন ঠিকমতো তথ্য পায় এবং পরিস্থিতি বুঝে ব্যবস্থা নিতে পারে সেই ব্যবস্থা রাখা হয়েছে।

জাতীয় বিজ্ঞান প্রযুক্তি উদ্ভাবনী প্লাটফর্মের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে চিয়াংসু প্রদেশ একটি বিগ ডেটা কমান্ড সেন্টার স্থাপন করেছে। এর মাধ্যমে সারা বছরের কৃষি উৎপাদন মনিটর করা যায়।

বিগ ডেটা সেন্টারে তথ্য আসে সরাসরি কৃষিক্ষেত্র থেকেও। কৃষিক্ষেত্রেই রয়েছে আবহাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করার ব্যবস্থা। 

চীনে এখন পর্যন্ত আধুনিক কৃষি-আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ নেটওয়ার্ক পরিচালনার জন্য ৭০টি কৃষি আবহাওয়া পরীক্ষা কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে। ৬৫৩টি কৃষি-আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র এবং ২৭০০টি অটোমেটিক মাটি-আর্দ্রতা পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন করা হয়েছে।

 

প্রতিবেদন:  শান্তা মারিয়া

সম্পাদনা:   এইচ আর এস অভি

 

২. চীনের উচ্চ ফলনশীল জাতে লাভবান হচ্ছে অন্য দেশ

চীন উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল ক্যানোলা সিডের মাধ্যমে উপকৃত হয়েছেন বিভিন্ন দেশের কৃষকরা। বিশেষ করে পাকিস্তানের কৃষকরা বেশি লাভবান হয়েছেন। উৎপাদন খরচ কম হওয়ায় তাদের উপার্জন বেড়েছে। মূলত ক্যানোলা সিড থেকে ভালো মানের ভোজ্যতেল উৎপাদন করছে পাকিস্তানের উদ্যোক্তারা। আর এ কাজে সব ধরনের সহযোগিতা করছে চীনের গবেষকরা।

পাকিস্তানের সঙ্গে বেশ পুরনো সম্পর্ক চীনের। ১০ বছরের কৃষি বিষয়ক সহযোগিতার ফসল হিসেবে ‘এইচসি জিরো টু ওয়ান সি’ জাতের ক্যানোলা সিড উদ্ভাবন করেছেন দুই দেশের গবেষকরা।

বেল্ট অ্যান্ড রোড উদ্যোগের আওতায় এই প্রকল্পকে গুরত্বের সঙ্গে দেখছেন বিশ্লেষকরা। সম্প্রতি পাকিস্তানের পাঞ্জাব প্রদেশে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে চীনা কোম্পানি। উচ্চ-ফলনশীল জাতের ফসলের মাঠ ঘুরে দেখার জন্য পাকিস্তানী কৃষকদের দাওয়াত দেয়া হয় এই অনুষ্ঠানে।

রেপসিড ব্রিডিং প্রকল্পের কারিগরী পরিচালক ছেং ইয়াওতং বলেন, উচ্চ-ফলনশীল এই জাত পাকিস্তানের স্থানীয় আবহাওয়ার সঙ্গে বেশ মানানসই।

তিনি বলেন,” তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও সরিষার উচ্চ-ফলনশীল এই জাত আবহাওয়ার সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারে এবং এর উৎপাদনও ভালো হয়। পাকিস্তানে অনেক ধরনের সরিষার জাত আছে, তবে এগুলোর কোনটাই খুব একটা ভালো স্বাদের হয় না। তবে নতুন জাতের ফসলে দারুণ একটা স্বাদ পাওয়া যায়।” 

পাকিস্তানের গবেষকরা বলছেন, প্রতি হেক্টর ক্যানোলা বীজের ফসল থেকে প্রায় ১৭০০ ডলার উপার্জন করতে পারছেন কৃষকরা। ভালো মানের ফসল থেকে ভোজ্যতেল উৎপন্ন করা সম্ভব হচ্ছে এবং সব মিলিয়ে ভোজ্যতেল রপ্তানীর উপরও চাপ কমেছে।

 

প্রতিবেদন : এইচ আর এস অভি

সম্পাদনা  : রওজায়ে জাবিদা ঐশী

 

৩. সামুদ্রিক মাছের প্রজনন ধরে রাখতে চীনের উদ্যোগ

সামুদ্রিক মৎস্য সংরক্ষণের জন্য মাছ ধরার উপর নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে চীন।

মে মাসের শুরুতেই দেশের উত্তর, পূর্ব ও দক্ষিণ সাগরে দেয়া হয় এই নিষেধাজ্ঞা যা বলবৎ থাকবে আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত।

বোহাই সাগর, ইয়োলো সাগর, পূর্ব চীন সাগর এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় পড়েছে। এছাড়া দক্ষিণ চীন সাগরের ১২ ডিগ্রি উত্তর অক্ষাংশ পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞার মধ্যে পড়বে। চীনজুড়ে সব মিলিয়ে প্রায় দেড় লাখ মাছ ধরার জাহাজ এসময় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকবে। এরসঙ্গে জড়িয়ে রয়েছেন ১০ লাখেরও বেশি জেলে।

 

চীনের কৃষি মন্ত্রণালয়ের ফিসারিজ ব্যুরোর শাখা প্রধান চাং সিন’আন বলেন, মাছ ধরার উপর যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে এর ভালো প্রভাব পড়বে সামনের দিনগুলোতে। তিনি বলেন, “বসন্ত এবং গ্রীষ্মকাল মূলত সামূদ্রিক প্রাণীদের প্রজননের উত্তম সময়। লার্ভার বৃদ্ধিও হয় এই সময়ে। মাছ ধরার উপর যে নিষেধাজ্ঞা দেয়া হয়েছে তা সামুদ্রিক প্রাণীর প্রজননে সাহায্য করবে এবং একইসঙ্গে মাছের সংখ্যাও কার্যকরভাবে বৃদ্ধি পাবে। “

এ বছর নিষেধাজ্ঞা কার্যক্রম ভালোভাবে নজরদারি করছে চীনের কৃষি মন্ত্রণালয়।

নিষেধাজ্ঞা চলার সময়, সামুদ্রিক খাবারের সরবরাহ আসবে মূলত হিমাগার থেকে। মন্ত্রণালয় জানায় বর্তমানে, দেশের বাজারে সামুদ্রিক পণ্যের যথেষ্ট সরবরাহ আছে এবং দামও স্থিতিশীল।

প্রতিবেদন: এইচ আর এস অভি

সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

 


 

এটি মূলত চায়না মিডিয়া গ্রুপ-সিএমজি বাংলার বাংলাদেশ ব্যুরোর কৃষি বিষয়ক সাপ্তাহিক রেডিও অনুষ্ঠান। যা সঞ্চালনা করছেন ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট এইচ আর এস অভি।

এ অনুষ্ঠানটি আপনারা শুনতে পাবেন বাংলাদেশের রেডিও স্টেশন রেডিও টুডেতে।

শুনতে থাকুন শেকড়ের গল্পের নিত্য নতুন পর্ব । যেখানে খুঁজে পাবেন সফলতা আর সম্ভাবনার নানা দিক। আর এভাবেই চীনা কৃষির সঙ্গে শুরু হোক আপনার দিন বদলের গল্প।

 

পরিকল্পনা ও প্রযোজনা – এইচআরএস অভি

অডিও সম্পাদনা- রফিক বিপুল 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী