‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত জানাচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। দেশকে সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে নেওয়ার প্রধান হাতিয়ার তারুণ্য। তরুণরা চাইলেই পারে সমাজকে বদলে দিতে। এজন্য দরকার তাদের চিন্তা ও মেধার সমন্বয়। চীন ও বাংলাদেশের তরুণদের অফুরান সম্ভাবনার কথা তুলে ধরবো এই অনুষ্ঠানে। তরুণদের সৃজনশীলতার গল্পগাঁথা নিয়েই সাজানো হয়েছে আমাদের তারুণ্যের অগ্রযাত্রা।
১. কঠোর পরিশ্রম ফল দেয়, তরুণ প্রজন্মের মত
বলা হয়ে থাকে, কঠোর পরিশ্রম সফলতার চাবিকাঠি। আর যৌবনের পুরো সময়টাই কঠোর পরিশ্রমের সময়। চীনা তরুণ তরুণীরাও পরিশ্রম ও অধ্যবসায়কেই ভবিষ্যত সম্ভাবনার সহজ পথ বলে মনে করে , সম্প্রতি এমন একটি জরিপ প্রকাশিত হয়েছে।
সম্প্রতি পরিচালিত এক জরিপে উঠে এসেছে যে, নিজেদের ভবিষ্যতের ব্যাপারে কিছুটা উদ্বেগে থাকলেও, চীনা তরুণ তরুণীদের ৫৫ শতাংশেরও বেশি বিশ্বাস করে, কঠোর পরিশ্রম ও অধ্যবসায় তাদের ভবিষ্যত সম্ভাবনাকে বাড়াতে পারে।
“তরুণ চীনা নেটিজেনদের সামাজিক মানসিকতা (২০২২)” শীর্ষক ওই জরিপের ফল প্রকাশিত হয় গেল সপ্তাহে। জরিপের মতামতগুলো নেওয়া হয় গত দুই বছরে সামাজিক যোগযোগমাধ্যম সিনা ওয়েইবো এবং ভিডিও-শেয়ারিং ওয়েবসাইট বিলিবিলিতে সক্রিয় প্রায় সাড়ে ৫ হাজার তরুণ ইন্টারনেট ব্যবহারকারীদের পোস্ট ও মন্তব্য থেকে। এ যুবক ও তরুণদের বাছায় করা হয় চীনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এবং তাদের শিক্ষাগত পটভূমিও ভিন্ন।
ফুতান ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউটের সেন্টার ফর কমিউনিকেশন অ্যান্ড স্টেট গভর্নেন্স রিসার্চ, ফুতান বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্লোবাল কমিউনিকেশন অল মিডিয়া রিসার্চ ইনস্টিটিউট, বিলিবিলি পাবলিক পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট এবং শাংহাই ইনফরমেশন সিকিউরিটি অ্যান্ড সোশ্যাল ম্যানেজমেন্ট ইনোভেশন ল্যাবরেটরি যৌথভাবে জরিপ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করে।
এতে বলা হয়, অনেক তরুণ ও যুবক তাদের অবস্থার উন্নতির জন্য প্রচুর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন এবং তারা তাদের সমকক্ষদের উপর খুব বেশি মানসিক চাপ দিতে চান না; তারা তাদের অনলাইন মন্তব্যে একে অপরকে উৎসাহ দিতে চান।
যুবকদের মধ্যে যারা স্পষ্টভাবে তাদের সোশ্যাল মিডিয়া পোস্টে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন, তাদের মধ্যে ৭৭ শতাংশ বলেছেন, তারা তাদের পড়াশোনা ও চাকরি নিয়ে উদ্বিগ্ন, ৩০ শতাংশ জানিয়েছেন তারা তাদের স্বাস্থ্য নিয়ে উদ্বিগ্ন এবং ১৮ শতাংশ তাদের চেহারা নিয়ে উদ্বিগ্ন।
জরিপের ফলাফলে দেখা যায়, যারা স্নাতকোত্তর পর্যায় পর্যন্ত লেখাপড়া করেছেন, তারা যারা করেননি তাদের তুলনায় বেশি উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। এছাড়াও, নারীরা পুরুষদের তুলনায় বেশি উদ্বেগের আক্রান্ত হন।
বিলিবিলি’র উপাত্ত বলছে, অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলোতে বিভিন্ন কাজের দক্ষতা সম্পর্কে ভিডিও, আকর্ষণীয় জীবনবৃত্তান্ত লেখার নির্দেশিকা এবং চাকরির ইন্টারভিউয়ের অভিজ্ঞতা শেয়ার করা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে অধিকহারে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
তরুণ-যুবাদের মধ্যে অল্প সংখ্যক প্রেমের ব্যাপারে অনাগ্রহ ব্যক্ত করলেও, বেশিরভাগই বলেছেন, তারা প্রেম ও ঘনিষ্ঠতার জন্য উন্মুখ। তবে তাদের বিয়ে করার ইচ্ছা প্রেমের ইচ্ছার চেয়ে অনেক কম এবং এর অন্যতম প্রধান কারণ বিয়ে-সম্পর্কিত ও বিয়ে-পরবর্তী আর্থিক চাপ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, যুবকরা বর্তমানে একটি স্থিতিশীল চাকরি খোঁজা, বিয়ে করা এবং একটি পরিবার শুরু করার ক্ষেত্রে প্রথাগত ধারণার মধ্যে থাকতে চান না।
প্রতিবেদকঃ শিহাবুর রহমান
সম্পাদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
২. শতাধিক চীনা বিশ্ববিদ্যালয় ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার কোর্স স্থাপন করবে
ওপেন সোর্স সফটওয়্যার হলো এক ধরনের সফটওয়্যার যার সোর্স কোড সম্পূর্ণ উন্মুক্ত। এসব সফটওয়্যার নিয়ে বহুমুখী কাজ করার সুযোগ সৃষ্টিতে চীন জুড়ে বিভিন্ন প্রকল্প চালু করা হয়। এরই অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীদের আরো বেশি অভিজ্ঞ হওয়ার সুযোগ করে দিতে ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার কোর্স চালুর পরিকল্পনা করছে দেশটির শতাধিক বিশ্ববিদ্যালয়।
বেইজিংয়ের পেইহাং বিশ্ববিদ্যালয়ে সফ্টওয়্যার ক্ষেত্রে প্রতিভা বিকাশের জন্য দেশব্যাপী একটি প্রকল্প চালু করার পর ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার কোর্স অফার করার জন্য গতিশীল পরিকল্পনা করেছে ১০০টিরও বেশি চীনা বিশ্ববিদ্যালয়।
বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জানায়, আগামী তিন বছরে পেইহাং ইউনিভার্সিটি, বেইজিং ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি, বেইজিং ইউনিভার্সিটি অব পোস্টস অ্যান্ড টেলিকমিউনিকেশনস এবং বেইজিং ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজিসহ এ বিশ্ববিদ্যালয়গুলো পর্যায়ক্রমে ওপেন সোর্স টেকনোলজি এবং ডিজিটাল পাবলিক গুডসের মতো মৌলিক কোর্সগুলো স্থাপন করবে।
তারা শিক্ষার্থীদের দক্ষতা বাড়াতে সাহায্য করার জন্য উদ্যোগ নেয়ার পাশাপাশি সহযোগিতা করতে ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার ফিল্ড প্রকল্প চালু করার পরিকল্পনা করেছে বলেও জানান কমিউনিস্ট পার্টি অব চায়না পেইহাং ইউনিভার্সিটি কমিটির সচিব চাও ছাংলু। একটি ওপেন সোর্স শিক্ষা ব্যবস্থা গড়ে তোলার জন্য, আমরা আমাদের শিক্ষার্থীদের জন্য ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার কোর্স চালু করব এবং তাদের স্বাধীন ওপেন সোর্স প্রকল্পগুলোতে অংশগ্রহণ করতে উৎসাহিত করব
ওপেন সোর্স সফ্টওয়্যার ডেভেলপমেন্ট কনসেপ্ট অনুশীলনের মতো বিশ্ববিদ্যালয় এবং উদ্যোগগুলোর মাধ্যমে যৌথভাবে তৈরি কিছু কোর্স এরইমধ্যে সারা দেশের কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতক ছাত্রদের নিয়ে সম্পন্ন করা হয়েছে।
বৈশ্বিক প্রবণতার উপর ভিত্তি করে, ওপেন সোর্স বিশ্বের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিজ্ঞান-প্রযুক্তি উদ্ভাবন ক্ষেত্র এবং প্রবণতার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। এই প্রকল্পটি ওপেন সোর্স প্রতিভা বিকাশে এবং প্রতিভা সমৃদ্ধ করার ক্ষেত্রে একটি প্রদর্শনমূলক এবং অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে বলে করেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
প্রতিবেদকঃ রওজায়ে জাবিদা ঐশী
সম্পাদকঃ মাহমুদ হাশিম
৩. স্বেচ্ছাসেবী চীনা তরুণী চান ইউ চেন
মানুষের জন্য কাজ করার মানসিকতা থেকেই স্বেচ্ছাসেবী হয়ে ওঠেন অনেকে। কেউ বিপদে পড়লে নিজের সবটুকু দিয়ে পাশে থাকেন তারা। বন্ধু হয়ে ওঠেন অসহায় মানুষের। এমনই একজন স্বেচ্ছাসেবী চীনা তরুণী চান ইউ চেন। নিজ দেশের সীমানা পেরিয়ে অন্য দেশেও স্বেচ্ছাসেবক হিসেবে কাজ করছেন তিনি।
অসহায় মানুষের হাত শক্ত করে ধরে রাখবার সাহস বুকে নিয়েই একজন হয়ে ওঠেন স্বেচ্ছাসেবী। এ জন্য দক্ষতার পাশাপাশি থাকতে হয় অন্যের জন্য কাজ করার অদম্য ইচ্ছাশক্তি।
যুদ্ধ কিংবা বড় কোন প্রাকৃতিক দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় ত্রাণ সহায়তা পৌঁছে দেয়া খুব একটা সহজ কাজ নয়। এই কঠিন কাজটাই সম্ভব করেছেন চীনা তরুণী চান ইউ চেন।
২০২০ সালের ৪ আগস্ট। লেবাননের রাজধানী বৈরুতের সমুদ্রঘেঁষা এলাকায় ঘটে যায় স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ বিস্ফোরণ। এতে ঘরবাড়ি হারায় তিন লাখেরও বেশি মানুষ। বিস্ফোরণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয় চারপাশ। সেখানকার অসহায় মানুষদের পাশে দাঁড়াতে ছুটে আসেন চান ইউ চেন। পরিস্থিতি মোকাবেলায় বড় ভূমিকা রাখেন চান ইউ ও তার ওয়ার্কিং টিম।
লেবাননের বাসিন্দাদের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়েছেন চান ইউ। তাদের সঙ্গে কাটিয়েছেন দীর্ঘ সময়। শুনেছেন অজানা নানা গল্প। তারাও সাদরে গ্রহণ করেছেন এই চীনা তরুণীকে। অসহায় মানুষদের বিধ্বস্ত ঘরবাড়ি মেরামতে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছেন তারা।
বিশাল মঞ্চে তাদের গল্পগুলো সবার সামনে তুলে আনেন চান ইউ। এ রকম ১০টিরও বেশি জনকল্যাণমূলক কর্মসূচিতে অংশ নিয়েছেন তিনি। সেখানে লেবাননের নাগরিকরা পরিচিত হয়েছেন একে অপরের সঙ্গে। সাহস পেয়েছেন সামনে এগিয়ে যাবার।
স্বেচ্ছাসেবী হওয়ার ব্যাপারে আগ্রহ বাড়ছে চীনা তরুণদের। হৃদয়ের উষ্ণতা দিয়ে বিশ্ব মানবতার কল্যাণে নিজেদের নিয়োজিত রাখতে চান তারা।
প্রতিবেদকঃহাবিবুর রহমান অভি
সম্পাদকঃমাহমুদ হাশিম
আমাদের ‘তারুণ্যের অগযাত্রা’ আজ এই পর্যন্তই । পরবর্তী অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ জানিয়ে আপনাদের কাছ থেকে বিদায় নিচ্ছি আমি রওজায়ে জাবিদা ঐশী। সবাই ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন। শুভকামনা সবার জন্য।
পরিকল্পনা ,পরিচালনা ও সঞ্চালনা : রওজায়ে জাবিদা ঐশী
অডিও সম্পাদনা: রফিক বিপুল
সার্বিক সম্পাদনা: ইয়ু কুয়াং ইউয়ে আনন্দী