এবারের পর্ব সাজানো হয়েছে
১। বিস্ময়কর চীনের পাথরের বন
২। মে দিবসের ছুটিতে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় ছিল ৭টি চীনা শহর
৩। বেইজিং চিড়িয়াখানা
বিশ্বব্যাপী অপরূপ সৌন্দর্যের চাদর বিছিয়ে রেখেছে বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কতো-শতো দেশ, কতো সংস্কৃতি, কতো ভাষা, কতো পেশা,.... কিন্তু আর্থিক অসঙ্গতি কিংবা সময়ের টানাটানিতে দেখা হয় না, ‘ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া’
‘একটি ধানের শিষের উপরে একটি শিশির বিন্দু...’সেই অদেখাকে দেখাতেই আমাদের আয়োজন "ঘুরে বেড়াই"।
দেশ-বিদেশের দর্শনীয় স্থান, সেখানে ভ্রমণের অভিজ্ঞতা, এবং সেই স্থানকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা অর্থনীতি নিয়ে আমাদের অনুষ্ঠান ‘ঘুরে বেড়াই’।
ঘুড়ে বেড়াই অনুষ্ঠানের ১৭তম পর্ব আজ। আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি আমি, আফরিন মিম।
১। বিস্ময়কর চীনের পাথরের বন
চারিদিকে পাথরের অভূতপূর্ব সব কারুকার্য। বলা যায় প্রকৃতির এক অদ্ভুত খেয়াল এই পাথরের বন বা স্টোন ফরেস্ট। চীনের ইউনান প্রদেশের চিরবসন্তের শহর কুনমিং থেকে ৮৫ কিলোমিটার দূরে ই স্বায়ত্তশাসিত সিলিন কাউন্টিতে অবস্থিত এই বন।
চীনের ইউনান প্রদেশের এই পর্বতমালাটি হিমালয় পর্বতমালারই একটি অংশ। ছোট বড় উঁচু নিচু বিচিত্র পাথর দিগ্বিদিক এমনভাবে ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে যেন এক গভীর জঙ্গল , যে জঙ্গলে পাতায় ছাওয়া সবুজের পরিবর্তে বিশাল সব পাথুরে বৃক্ষ সদম্ভে দাঁড়িয়ে আছে।
পাথরের বনের আজকের এই অবস্থায় পৌছতে লেগেছিলো প্রায় ২৭০ মিলিয়ন বছর। শত শত বছর ধরে সাগরের তলদেশে জমা হচ্ছিল চুনাপাথর। ভূ-তত্ত্ববিদদের মতে এই পাথরের বন কারস্ট টপোগ্রাফির এক নান্দনিক উদাহরণ।
প্রকৃতির বিচিত্র খেয়ালে কোন এক সময় হয়তো এখানে বয়ে গিয়েছিল বড়সড় কোনো ভূমিকম্প, কিংবা রহস্যময় কোনো কারণে অত্র অঞ্চলে ঘটে এক ভৌগোলিক পরিবর্তন, সাগরের তলদেশের পানি শুকিয়ে যেতে থাকে আর সাগরের তলদেশ থেকে বেরিয়ে আসে লক্ষ বছরের পুরনো বৈচিত্রময় চুনাপাথরের পাহাড়। পাহাড়গুলো আজো তার বুকের মধ্যে ধারণ করে আছে নানাবিধ সামুদ্রিক ফসিল।
প্রচলিত লোককাহিনী অনুসারে, প্রেমিককে বিয়ে করতে চেয়েছিল উই আদিবাসী এক মেয়ে। কিন্তু সমাজের বাধার মুখে প্রতিষ্ঠা করতে পারেনি ভালোবাসার দাবি। শোকে জমে পরে পাথর হয়ে যায় আশিমা। মাথায় স্কার্ফ এবং হাতে ঝুড়ি নিয়ে ঘুরতে থাকা মেয়ের মতো দেখতে এ পাথরটির সামনে প্রতিবছর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে উই আদিবাসীরা। ২০০৭ সালেই ইউনেস্কো শিলিন পাথুরে বনকে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট বা বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হয়।
প্রতিবেদন- আফরিন মিম
সম্পাদনা- শান্তা মারিয়া
২। মে দিবসের ছুটিতে পর্যটকদের পছন্দের তালিকায় ছিল ৭টি চীনা শহর
এবারের মে দিবসের ৫ দিনের ছুটিতে নিজেদের মতো করে অবকাশ যাপনের সুযোগ পেয়েছিল চীন দেশের নাগরিকরা। একটানা পাঁচ দিনের ছুটিতে দেশের বিভিন্ন প্রান্তের পর্্যটন গন্তব্যে ছুটে তারা। এবারের ছুটিতে শীর্ষ ৭ পর্যটন শহরের তালিকার প্রথমেই এসেছে রাজধানী বেইজিংয়ের নাম।
বেইজিং…
একটি ঐতিহাসিক এবং সাংস্কৃতিক শহর হিসাবে, নিঃসন্দেহে চীনের রাজধানী অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন গন্তব্য। বেইজিংয়ের প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ, রাজকীয় উদ্যান, পার্ক, জাদুঘর এবং অলিম্পিক গেমস এবং শীতকালীন অলিম্পিকের স্থান সব সময় দেশ-বিদেশের পর্যটকদের আকর্ষণ করে। গ্রেট ওয়াল, প্যালেস মিউজিয়াম, সামার প্যালেস এবং ন্যাশনাল স্টেডিয়াম বার্ডস নেস্ট ছিল রাজধানীর শীর্ষ পর্যটন স্পট।
সাংহাই…
রাজধানীর পরেই চীনের অন্যতম পর্যটন শহর ইয়াংজি নদী ডেল্টার মূল অঞ্চলে অবস্থিত সাংহাই শহর। বোস্টিং দ্য বুন্ড, ওরিয়েন্টাল পার্ল টাওয়ার এবং সাংহাই ডিজনি রিসোর্টসহ অন্তত ১০টি আকর্ষণীয় স্থান বিপুল সংখ্যক পর্যটক আকর্ষণ করেছে এবারে মে দিবসের ছুটিতে।
শিয়ান…
৩ হাজার ১০০ বছরের প্রাচীন ঐতিহাসিক শহর উত্তর-পশ্চিম চীনের শাআনসি প্রদেশের শিয়ান শহর। এখানকার টেরাকোটা ওয়ারিয়র্স, ওয়েইয়াং প্রাসাদ এবং মিং রাজবংশের প্রাচীন নগর প্রাচীর অন্যতম পর্যটন আকর্ষণ। রয়েছে অ্যাক্রোবেটিক ও ঐতিহ্যবাহী সিংহনৃত্য উপভোগের সুযোগ।
কুয়াংচৌ….
দক্ষিণ চীনের কুয়াংতং প্রদেশের কুয়াংচৌ শহর পর্যটকদের আকর্ষণ করে তার ল্যান্ডমার্ক কুয়াংচৌ টাওয়ার, পুরানো এবং বিখ্যাত ক্যান্টোনিজ রেস্তোরাঁ, স্ট্রিট নাইট মার্কেট এবং চুচিয়াং নদীতে নাইট-ক্রুজ ট্যুর দিয়ে।
কুয়াংচৌ চিমেলং ট্যুরিস্ট রিসোর্ট শিশুদের সাথে নিয়ে পরিবারের জন্য একটি অবশ্যই দর্শনীয় গন্তব্য। দর্শনার্থীরা সাফারি পার্কে দৈত্যাকার পান্ডাসহ প্রায় ২০ হাজার বন্যপ্রাণী দেখতে পাবেন।
ছোংছিং….
‘পাহাড়ের শহর’ হিসাবে পরিচিত, দক্ষিণ-পশ্চিম চীনের ছোংছিং তার সুন্দর ভূ-প্রকৃতি, পাহাড় এবং ইয়াংজি নদীর ধারে নির্মিত অসম রাস্তা এবং নান্দনিক দালানকোঠা দিয়ে পর্যটকদে মন ভোলায়। এখানকার বিখ্যাত গন্তব্যগুলোর মধ্যে ইউনেস্কো ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সাইট, উলং কার্স্ট সিনিক এরিয়া এবং দাজু রক কার্ভিংস অন্যতম।
সানইয়া…
"ওরিয়েন্টাল হাওয়াই" নামে পরিচিত দ্বীপ প্রদেশ হাইনানের সানিয়া শহর দীর্ঘকাল ধরে চীনের পর্যটকদের কাছে আকর্ষণীয় গন্তব্য।
এখানকার নীল সমুদ্রে মোটরবোটে চড়া পর্যটকদের অন্যতম পছন্দের বিষয়। সমুদ্রের তীরে বইয়ের দোকানে কফিতে চুমুক, মোমবাতি আলোয় ডিনার কিংবা তারাভরা রাতের আকাশের নীচে সমুদ্র সৈকতে অপার্থিব সৌন্দর্যে সময় কাটাতে পারেন।
চিপো….
আর পূর্ব চীনের শানতোং প্রদেশের চিপো শহর শুধু এর আইকনিক বারবিকিউর জন্য ভ্রমণকারীদের জন্য হয়ে উঠেছে একটি নতুন পছন্দ।
প্রতিবেদন- মাহমুদ হাশিম
সম্পাদনা- আফরিন মিম
৩। বেইজিং চিড়িয়াখানা
পৃথিবীর বিখ্যাত ও সুন্দর চিড়িয়াখানার মধ্যে অন্যতম বেইজিং জু। চীনের রাজধানী বেইজিংয়েই অবস্থিত এই বেইজিং জু। মূলত চীনের মিং সম্রাটদের আমলেই এটি প্রতিষ্ঠা করা হয় এই চিড়িয়াখানাটি।
এর অপূর্ব সুন্দর ল্যান্ডস্কেপের এই চিড়িয়াখানাটি বিশাল এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। চীনের যে কোনো পার্ক, যেমন-- জলাশয়, পাহাড়, বাগান, ভাস্কর্য নিয়ে গড়ে ওঠে। এই চিড়িয়াখানাও তার ব্যতিক্রম নয়। বিশেষ করে বাঘের একটি বিশাল ভাস্কর্য রয়েছে, যা শিল্প হিসেবে অনবদ্য।
চীনের জাতীয় পশু পান্ডা। এই পান্ডা পৃথিবীর খুব বেশি চিড়িয়াখানায় নেই।তাই এই পান্ডা সংরক্ষণ ও এর সংখ্যা বৃদ্ধিতে চীন সরকার নিয়েছে বিশেষ উদ্যোগ।
বেইজিং জু ‘তে পান্ডার জন্য বরাদ্দ রয়েছে বিশাল একটি এলাকা। কাচে ঘেরা বিশাল এক এলাকায় তাদের থাকার ব্যবস্থা। এই কাচের প্যাভিলিয়নের ভেতরে পান্ডার জন্য সবচেয়ে আরামদায়ক আবহাওয়া রয়েছে। পান্ডারা বাঁশের কচি ডগা খেতে পছন্দ করে। তাদের জন্য বাঁশঝাড় রয়েছে সেখানে। আরও রয়েছে তাদের বিভিন্ন পছন্দের খাবার।
পান্ডার প্যাভিলিয়নের ভিতর পান্ডার সফট টয়েজও পাওয়া যায়। ২২০ একর এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা এই চিড়িয়াখানায় এক হাজারের বেশি প্রজাতির ১৫ হাজারের বেশি জীবজন্তু আছে। বিরল প্রজাতির প্রাণীদের মধ্যে এখানে রয়েছে সোনালি নাক বানর, দক্ষিণ চীনাবাঘ, সাদাঠোঁট হরিণ, পিয়েরে ডেভিডস ডিয়ার, ক্রেস্টেড ইবিস, চীনা কুমির, চাইনিজ জায়ান্ট
পাখিদের জন্য আলাদা এলাকা। বিশাল লেক। রং বেরংয়ের অসংখ্য পাখি সেখানে। ঝাঁক বেঁধে উড়ছে, পানিতে ভেসে বেড়াচ্ছে। জলজ পাখিরা স্বাচ্ছন্দ্যে ঘুরছে এখানে। এখানকার দৃশ্য অপূর্ব সুন্দর।
বেইজিং জু বা চিড়িয়াখানা এক অপূর্ব সুন্দর জগৎ। সারাদিন ঘুরেও পুরো চিড়িয়াখানা দেখা সম্ভব নয়। তবে পান্ডা এবং গোরিলা, পেঙ্গুইন এবং জলজ প্রাণী ও মাছের জন্য মেরিন অ্যাকুরিয়াম দেখাটা কোন পর্যটকই বাদ দেন না।
প্রতিবেদন- শান্তা মারিয়া
সম্পাদনা- আফরিন মিম
অনুষ্ঠান পরিকল্পনা ও প্রযোজনা - আফরিন মিম
অডিও সম্পাদনা- আফরিন মিম ও রফিক বিপুল
সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী