মধ্যপ্রাচ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে থাকে না: সিএমজি সম্পাদকীয়
2023-05-09 16:31:09

মে ৯: ১২ বছর বিচ্ছিন্ন থাকার পর, সিরিয়া অবশেষে গত রোববার আরব লিগ পরিবারে ফিরে গেছে। এদিন অনুষ্ঠিত আরব লিগের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের বিশেষ সম্মেলনে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় যে, ‘আরব লিগের কাউন্সিল এবং এসব সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের সম্মেলনে অংশগ্রহণের জন্য সিরিয়ার সরকারি প্রতিনিধি দলের যোগ্যতা অবিলম্বে কার্যকর করা হবে।"

 

বেইজিংয়ে সৌদি আরব ও ইরানের সম্পর্ক পুনরুদ্ধারের পর মধ্যপ্রাচ্যের পুনর্মিলন প্রক্রিয়ায় এটি আরেকটি মাইলফলক বলে মনে করে বিশ্ব। ১৯৪৫ সালে আরব লিগ প্রতিষ্ঠিত হয়। এর ২২টি সদস্য রাষ্ট্র রয়েছে। সিরিয়া ছিল অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য রাষ্ট্র। ২০১১ সালে সিরিয়া সংকট শুরু হলে, আরব লিগ সিরিয়ার সদস্যপদ স্থগিত করে এবং সৌদি আরব ও অন্যান্য আরব দেশ সিরিয়ায় তাদের দূতাবাস বন্ধ করে দেয়। ফলে সিরিয়া কূটনৈতিকভাবে বিচ্ছিন্ন অবস্থায় পড়ে। সেই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা দেশগুলো সিরিয়ার বিরুদ্ধে আরও শাস্তি আরোপ করে।

 

১২ বছর পর, সিরিয়া আরব লিগের বড় পরিবারে ফিরে গেছে। এ বছরের শুরু থেকে, সিরিয়ার প্রেসিডেন্ট বাশার আল আসাদ সংযুক্ত আরব আমিরাত সফর করেছেন এবং তাকে বেশ ভালোভাবে অভ্যর্থনা জানানো হয়। তিউনিসিয়া ও সিরিয়া দুই দেশের দূতাবাস পুনরায় চালু করার জন্য একটি যৌথ বিবৃতি জারি করে এবং সৌদি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ফয়সাল সিরিয়া সফর করেন। বোঝা যাচ্ছিল যে, সিরিয়ার আরব লিগে ফিরে যাওয়া সময়ের ব্যাপার মাত্র।

 

মধ্যপ্রাচ্যের পরিস্থিতি পরিবর্তনের বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ দেখা যাক। সৌদি আরব ও ইরান শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য চীনের মধ্যস্থতায় হাত মেলায়, যা সরাসরি আরব লিগে সিরিয়ার প্রত্যাবর্তন এগিয়ে নিয়েছে। সিরিয়ার সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী আয়মান সুসান বলেন যে, সৌদি-ইরান সম্পর্ক উন্নয়নে সিরিয়া ইস্যু-সহ বেশিরভাগ আঞ্চলিক ইস্যু প্রতিফলিত হবে। আজ, এই প্রত্যাশা বাস্তবে পরিণত হচ্ছে।

 

আরও গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হল বর্তমান বিশ্ব অশান্ত ও পরিবর্তনের একটি নতুন যুগে প্রবেশ করেছে। আরব দেশগুলি বিশ্বের ‘জাগ্রত’ হওয়া পর্যবেক্ষণ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে, যুক্তরাষ্ট্র মধ্যপ্রাচ্যে হস্তক্ষেপ করে আসছে, সেখানে দ্বন্দ্ব ও বিভাজন উস্কে দিয়ে রেখেছে।

আরব লিগের সচিব জনাব ঘেইত বলেছিলেন, "আরব দেশগুলির সাধারণ মত হলো, সিরিয়া ইস্যু আর উপেক্ষা করা যাবে না।"

 

আরব লিগ কর্তৃক সিরিয়াকে গ্রহণ আন্তর্জাতিক সমাজ স্বাগত জানায়। বিশ্লেষকরা মনে করেন যে, এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ সিরিয়ায় আঞ্চলিক সহযোগিতা জোরদার করা, অর্থনীতির উন্নয়ন এবং যুদ্ধের পর দেশ পুনর্গঠনে সাহায্য করবে।

যেদিন আরব লিগ সিরিয়ার সদস্যপদ পুনরায় চালু করার ঘোষণা দেয়, সেদিনই মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা সুলিভান সৌদি আরব সফর করেন। ব্লুমবার্গ জানায়, আরব লিগের "যুক্তরাষ্ট্রকে উপেক্ষা করার" সিদ্ধান্ত তেল রপ্তানিকারক অঞ্চলে ওয়াশিংটনের প্রভাবের দুর্বলতা প্রতিফলিত করে।

 

একজন সিনিয়র আমেরিকান কূটনীতিক ফ্রিম্যান ‘নিউজউইকের’ একটি সাক্ষাত্কারে জানায়, "বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রের জবরদস্তিমূলক ক্ষমতা ক্রমাগত দুর্বল হয়ে পড়েছে।"

"আধুনিক কূটনীতি" ওয়েবসাইটে মন্তব্য করা হয় যে, "যখন মধ্যপ্রাচ্যে যুক্তরাষ্ট্রের প্রভাব হ্রাস পাচ্ছে, তখন মধ্যপ্রাচ্য সমস্যার সমাধান হচ্ছে এবং মধ্যপ্রাচ্যে বসন্ত ফিরে আসছে।"

 

 

(জিনিয়া/তৌহিদ)