বিজ্ঞানবিশ্ব ১৭তম পর্ব
2023-05-08 17:40:35

চীনের বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক সাপ্তাহিক আয়োজন: বিজ্ঞানবিশ্ব

১৭তম পর্বে যা থাকছে:

* চলচিত্র নির্মাণের ধরণে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

* সিগাল: কমদামে বাজারে চীনের নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি 

* ফ্ল্যাগশিপ ফোল্ডিং ফোন বাজারে আনলো ভিভো

 

চলচিত্র নির্মাণের ধরণে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা

 

বিশ্বজুড়ে এখন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার জয়জয়কার। আধুনিক এই প্রযুক্তির ছোঁয়ায় সহজ হয়ে উঠছে নানা দাপ্তরিক কাজ। এবার চলচিত্র নির্মাণেও লেগেছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাওয়া। চীনে চলচিত্র নির্মাণে ব্যবহার করা হচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। আগে যেসব কাজ সময় নিয়ে ম্যানুয়ালি করতে হতো, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে এখন সেসব কাজ নিমেষেই সেরে ফেলা যাচ্ছে। 

কিছু কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রাম শুধু টেক্সট লাইন থেকেই ডিজিটাল আর্ট বানিয়ে দিতে সক্ষম। আর এই সক্ষমতাই কাজে লাগাচ্ছে সাংহাইয়ের ফিল্ম স্কুলের শিক্ষার্থীরা। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্যে নিজেদের কল্পনাকে আর্টের মাধ্যমে ফুটিয়ে তুলছে তারা, যা তাদের ভিজ্যুয়াল স্টোরিটেলিংয়ে সাহায্য করছে।

ফিল্ম স্কুলটির একজন শিক্ষার্থী বলেন, “আমি এখন একটি পরাবাস্তব শর্ট ফিল্মের উপর কাজ করছি। এই ঘরানার শর্ট ফিল্মের ভিজ্যুয়াল উপকরণ খুঁজে পাওয়া অনেক কঠিন। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রোগ্রামগুলো আমাকে সাহায্য করছে।  আমি আমার কল্পনায় যেমনটি ভেবেছি এই প্রোগ্রামগুলোর মাধ্যমে তেমন ছবি বানিয়ে নিতে পারছি।” 

আরেক শিক্ষার্থী জানান কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আর্ট ও ডিজাইনের পাশাপাশি স্টোরি বোর্ড তৈরিতে তাদের সাহায্য করে। তিনি বলেন, “কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা আমাদের শুধু ছবি তৈরিতেই সাহায্য করে না, এমনকি আমাদের কল্পনাগুলোকেও আরো স্পষ্ট করে। ধারণা একবার সুস্পষ্ট হয়ে গেলে আমরা মিডজার্নিতে কমান্ড দেই। এতে ছবির আউটপুট অনেক ভালো হয়।”

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন আগের থেকেও অনেক আধুনিক। সম্প্রতি আধুনিক চলচ্চিত্রেও ব্যবহার বেড়েছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার। তাই এই ফিল্ম স্কুল তাদের শিক্ষার্থীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহারেও পারদর্শী করে তুলছে।

সাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংহাই ভ্যানকৌভার ফিল্ম স্কুলের ফিল্ম প্রোডাকশন ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র লেকচারার ওডেট আবাদিয়া গোমেজ বলেন চলচিত্র নির্মাণের শুরু থেকেই দৃশ্যায়ন একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ।

তিনি বলেন, “আগে অনেক চিত্রকরের সাথে যোগাযোগ করতে হতো। কল্পনাকে চিত্রে ফুটিয়ে তুলতে তাদের পেছনে অনেক খরচও করতে হতো। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার কল্যাণে চিত্রকর ছাড়া, বিনামূল্যে, নিজে নিজেই এই কাজটুকু সেরে ফেলা যাচ্ছে। চলচিত্র খাতে অনেকেই এখন এই প্রযুক্তি ব্যবহার করছে।” 

কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে চিত্র তৈরি করতে এই ফিল্ম স্কুল, শিক্ষার্থীদের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করতে শেখায়। এই স্কুলের শিক্ষকরা বিশ্বাস করেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অগ্রগতির সাথে সাথে চলচিত্রশিল্পে এর ব্যবহার আরো বাড়বে। 

স্কুলটির থ্রি ডি এনিমেশন্স এন্ড ভিজ্যুয়াল ইফেক্টসের হেড অব ডিপার্টপমেট সু ই রান বলেন কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার অভাবনীয় গতি তাকে মুগ্ধ করেছে। 

তিনি বলেন, “মাত্র ছয় মাস আগেই আমরা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার উপর কোর্স চালু করেছি। আর এখনই দেখতে পাচ্ছি চলচিত্রশিল্পখাতে সবারই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার জানা বাধ্যতামূলক হয়ে উঠেছে। আগে আমরা ভেবেছিলাম এটি শুধু আমাদের থ্রি ডি এনিমেনশন ও ভিজ্যুয়াল ইফেক্টে কাজে আসবে। তবে এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা প্রি-প্রোডাকশনেও সহায়তা করছে। আর এসবই ঘটে গেলো মাত্র দুই মাসের ভেতর।”

তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চলচিত্রশিল্পখাতের সকল কাজের কর্তৃত্ব নিয়ে নেবে এমনটা বিশ্বাস করেন না সু। তিনি মনে করেন সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কাজের মান বৃদ্ধিতে মানুষের প্রয়োজনীয়তা থাকবেই। পাশাপাশি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে উচ্চমানের চলচিত্র বানাতে এর ব্যবহার শেখার গুরুত্ব ভবিষ্যতে আরও বাড়বে বলেও মনে করেন সু।

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

 

 

 

সিগাল: কমদামে বাজারে চীনের নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি 

 

সম্প্রতি শেষ হয়ে গেল আন্তর্জাতিক অটোমোবাইল প্রদর্শনী অটো-সাংহাই ২০২৩। চীনের সাংহাই মিউনিসিপালটির ন্যাশনাল এক্সিবিশন অ্যান্ড কনভেনশন সেন্টারে আয়োজিত এবারের প্রদর্শনীর সেরা চমক ছিল বিওয়াউডির সিগাল গাড়ি। কম দামের এই বৈদ্যুতিক গাড়ির বৈশিষ্ট্য নজর কেড়েছে দর্শনার্থীও বিশ্লেষকদের।

 

চীনের বাজারে উন্মোচিত হয়েছে নতুন বৈদ্যুতিক গাড়ি সিগাল। এক চার্জে ৩০০ কিলোমিটার পর্যন্ত চলতে পারে এই গাড়ি। দাম মাত্র ১১ হাজার ডলার, যা ইউরোপের বাজারে বিক্রি হওয়া অধিকাংশ বৈদ্যুতিক গাড়ির এক-চতুর্থাংশ।

চীনের বৃহত্তম বৈদ্যুতিক গাড়ি নির্মাতা কোম্পানি বিওয়াইডি, সাংহাই অটো শোতে প্রদর্শন করেছে এই বৈদ্যুতিক গাড়ির। এই গাড়িতে রয়েছে ৫ ইঞ্চি ইন্সট্রুমেন্ট কনসোল। এ ছাড়া আছে ১২.৮ ইঞ্চি ইনফোটেইনমেন্ট ডিসপ্লে। ফ্ল্যাট বটম স্টেয়ারিং হুইল, হাই কোয়ালিটি ড্যাশবোর্ড, ইন্টিগ্রেটেড ওয়ারলেস চার্জিং প্যাড এবং কাপ হোল্ডার। দেখতে বাইরের

অংশটা সাধারণ মনে হলেও ভেতরটা অনেক বেশি প্রিমিয়াম।

এই গাড়ির বৈশিষ্ট্য দেখে রীতিমতো চমকে গেছেন বিশ্লেষকরা। এ গাড়ি দেখে মরগ্যান স্ট্যানলির বিশ্লেষক অ্যাডাম জোনস এক নোটে বিনিয়োগকারীদের উদ্দেশে বলেছেন, “চীনের গাড়ি কোম্পানিগুলো যে বৈদ্যুতিক গাড়ির দাম কমিয়ে দিচ্ছে, সিগাল তার আরেকটি নজির।”

বিশ্লেষকরা বলছেন, সাংহাইয়ের গাড়ি প্রদর্শনী ও সিগালের বিষয়-আশয় দেখে মনে হচ্ছে, কম দামের বৈদ্যুতিক গাড়ির বাজারে চীনের কোম্পানিগুলোই নেতৃত্ব দেবে। সেই সঙ্গে প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনেও তারা এগিয়ে থাকবে।

এক প্রতিবেদনে ফ্রান্সের গাড়ি সরবরাহকারী কোম্পানি ফরেসিয়ার প্রধান নির্বাহী প্যাট্রিক কোলার বলেন, চীনের ক্রেতাদের কাছে যে গাড়ি আকর্ষণীয়, তা ইউরোপীয় ক্রেতাদের কাছেও আকর্ষণীয় হবে”।

ইউরোপে প্রতিবছর ১০ লাখ চীনের বৈদ্যুতিক গাড়ি বিক্রি হতে পারে বলে পূর্বাভাস দিয়েছেন কোলার।

বিওয়াইডি কোম্পানির এই গাড়ির বুকিং ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বলছে, মাত্র ২৪ ঘন্টায় এই গাড়িটি বুক করেছেন ১০ হাজারের বেশি মানুষ। দ্রুত সাড়া ফেলা এই গাড়ি মার্কেটে সবথেকে জনপ্রিয় বৈদ্যুতিক গাড়ি হয়ে উঠবে বলে বলছেন বিশ্লেষকরা।

 

|| প্রতিবেদন: আফরিন মিম

|| সম্পাদনা: মাহমুদ হাশিম

 

 

ফ্ল্যাগশিপ ফোল্ডিং ফোন বাজারে আনলো ভিভো

 

চীনা প্রযুক্তি কোম্পানি ভিভো এবার বাজারে নিয়ে এলো ফ্ল্যাগশিপ ফোল্ডিং স্মার্টফোন। এই সেগমেন্টের দুটি ফোনের মডেল এক্স ফোল্ড টু এবং এক্স ফ্লিপ। সংশ্লিষ্টরা বলছেন বাজারে নিজেদের অবস্থান আরো পোক্ত করতে এই ফ্ল্যাগশিপ ফোন দুটি বাজারে এনেছে ভিভো।

স্মার্টফোন দুটি ব্যবহারকারীদের মন জয় করে নেবে বলে প্রত্যাশা সংশ্লিষ্টদের। এক্স ফোল্ড ফোনটি ট্যাবলেট পিসির মতো ব্যবহার করা যাবে। আর এক্স ফ্লিপ ফোনটি স্যামসাং জেড ফ্লিপের সাথে পাল্লা দেবে, এমনটাই বিশ্বাস কোম্পানিটির।

ভিভোর পণ্য বিষয়ক বিভাগের ভাইস প্রেসিডেন্ট হুয়াং থাও বলেন ভিভো তার ফোল্ডিং ফোনগুলোকে ফ্ল্যাগশিপ ফোন হিসেবে গড়ে তুলতে কোনো আপোস করেনি। তিনি আরো বলেন অতীতে দেখা গেছে ফোল্ডিং স্মার্টফোন তৈরি করার সময় ফোনের পারফরম্যান্স ও ব্যাটারিতে ছাড় দিতে হয়। এই ধারণা পরিবর্তন করতে চায় ভিভো, বলেন হুয়াং।

ভিভোর তথ্যমতে এক্স ফ্লিপে ব্যবহার করা হয়েছে ফ্ল্যাগশিপ কুয়ালকম চিপসেট। পর্যাপ্ত স্টোরেজের পাশপাশি ফোনটিতে ববহার করা হয়েছে উন্নত মানের ডিসপ্লে কভার।

বাজার গবেষণা সংস্থা কাউন্টারপয়েন্ট রিসার্চের এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, গতবছর বিশ্বজুড়ে ফোল্ডিং স্মার্টফোনের শিপমেন্ট এর আগের বছরের তুলনায় ৭৩ শতাংশ বেড়েছে।

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনশীল স্মার্টফোন মডেলের তালিকায় ফোল্ডিং স্মার্টফোন ক্যাটাগরি এই বছর এখনো সবচেয়ে এগিয়ে আছে। বর্তমান অর্থনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেও ফোল্ডিং স্মার্টফোনের শিপমেন্টের এই প্রবৃদ্ধি প্রমাণ করে যে বাজারে এই সেগমেন্টের ফোনের চাহিদা দিন দিন বাড়ছে। 

 

|| প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল মামুন

|| সম্পাদনা: সাজিদ রাজু

 

অনুষ্ঠান কেমন লাগছে আপনাদের তা আমাদের জানাতে পারেন facebook.com/CMGbangla পেজে। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক ভিডিও প্রতিবেদন দেখতে ভিজিট করতে পারেন আমাদের ইউটিউব চ্যানেল CMG Bangla।

 

পরিকল্পনা, প্রযোজনা ও অডিও সম্পাদনা- আব্দুল্লাহ আল মামুন

 

স্ক্রিপ্ট সম্পাদনা: সাজিদ রাজু, মাহমুদ হাশিম

 

সার্বিক তত্ত্বাবধান- ইউ কুয়াং ইউয়ে আনন্দী